তুমিময় নেশায় আসক্ত শেষ পর্ব

0
3113

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত ?
#পর্ব- ৬৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
ললাটে জুড়ে অধৈর্য্য অধরের স্পর্শ পেয়ে,নেত্রপল্লব খানিক্টা বুজে ফেলে রিমি। জল এসে নেত্রকোণে জমে হয়ে থাকে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে, পুনরায় আখিজোড়া বুজে ফেলে। অয়ন রিমির হাত ধরে, ঠোট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিমির হাতে মোটা ক্যানেলা ঝুলছে,পাশে স্যালাইনের লাইন। স্যালাইন চলছে রিমির। রিমি অজ্ঞান ছিলো,কিন্তু অয়নের স্পর্শে কিছুক্ষনের জন্যে জ্ঞান ফিরে এলেও, তা সাময়িক। অয়ন রিমির হাত ধরে রিমির পার্লস চেক করলো, ধীর গতিতে চলছে। অয়ন কিছুক্ষন স্হীর নয়নে চেয়ে থেকে, পাশে থাকায় সোফায় বসে পরলো। আগের অয়ন হলে, সে হয়তো উত্তেজিত হয়ে পরতো। তার রিমিপরীর জ্ঞান ফিরা না পর্যন্ত, সবকিছু ছারখার করে দিতো, কিন্তু এখন অয়ন তা করবে না। তাকে শান্ত মাথায় পরিস্হিতি সামলাতে হবে। অয়নের ভাবনার মাঝেই, ফারহান, সুমাইয়া কেবিনে প্রবেশ করলো। তাদের সাথে গুটি গুটি পায়ে অয়রিও এলো। অয়রি মায়ের অবস্হা দেখে, ছুটে গিয়ে বাবার কাছে গিয়ে, কান্নার সুরে বললো,

‘ পাপা! মাম্মাম কেন শুয়ে আছে? কি হয়েছে মাম্মামের? ‘

অয়ন অয়রির মাথায় হাত বুলিয়ে, ভরসার সহিত বলে, ‘ তোমার মাম্মামের কিচ্ছুটি হয়নি আমার লিটেল চ্যাম্প! একটু দূর্বল হয়ে পড়েছিলো, কিন্তু এখন দেখবে তোমার পাপা এসে গেছে, এখন ঠিক হয়ে যাবে একদম। ‘

অয়রি তার বাবার কথায় ভরসা পেলো, তা তার চোখমুখে স্পষ্ট। সুমাইয়া এক পলক রিমির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

‘ রিমির অবস্হা এখন কেমন অয়ন? ‘

‘ স্যালাইন চলছে, শরীর দূর্বল থাকায়, অতিরিক্ত স্ট্রেস নেওয়ার ফলে হুট করে অজ্ঞান হয়ে পরেছিলো। কিন্তু এখন আশা করি কিছুক্ষনের মাঝেই, রিমিপরীর জ্ঞান ফিরে আসবে। ‘

অয়নের কথায় সুমাইয়াও কিছুটা চিন্তামুক্ত হলো। মেঘও সুমাইয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ ভাবি তুমি চিন্তা করো না, রিমিপু ঠিক আছে। ‘

সুমাইয়া মেঘের দিকে অবাক হয়ে বললো, ‘ মেঘ তার মানে তুমি সব আগে থেকে জানতে? তাই তোমার কোন চিন্তা ছিলো না তাইনা? ‘

মেঘ মাথায় নাড়িয়ে সুমাইয়ার কথায় সায় জানিয়ে বলে,

‘ ইশা আপু আমাকে আগেই সব জানিয়ে দিয়েছিলো। ‘

অয়ন হাতের ইশারায় সুমাইয়াকে ইশারা করলো, অয়রিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। সুমাইয়াও বুঝে, অয়রির হাত ধরে বুঝিয়ে শুনিয়ে, বাড়ির দিকে রওনা দিলো। ফারহান অয়নের পাশে বসে, গলার স্বর গম্ভীর করে সুধালো,

‘ তোর ভারি অন্যায় হয়েছে অয়ন, তা কী তুই বুঝেছিস? আজ রিমির কত বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো! তোর কোন ধারনা আছে। ‘

অয়ন সঙ্গে সঙ্গে নেত্রপল্লব বুজে ফেললো। চোখের ভেঁসে উঠলো সকালের সেই ভয়ংকর দৃশ্য। অয়ন বরাবরই, রিমির সাথে সাথে, রিমির অগোচরে কিছু দেহরক্ষীদের নিয়োযিত রেখেছিলো, যারা রিমির অগোচরে রিমির সব খবরাখবর অয়নকে দিতো। রিমি যখন পুলিশ স্টেশন থেকে বেড়িয়ে যায়, সেই খবর পাওয়া মাত্র, অয়নও বেড়িয়ে পরে গাড়ি নিয়ে রিমির অবস্হা বুঝার জন্যে, কিন্তু যখন রিমি অজ্ঞান হয়ে পরে এবং রিমির সামনে যখন ট্রাক চলে আসে, তখন এক মুহুর্তের জন্যে স্তব্ধ হয়ে পড়ে অয়ন। রিমি তখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো, অয়ন গাড়ি থেকে বেড়িয়েই, দৌড়ে গিয়ে রিমিকে পাজকোলে তুলে, দ্রুত সরে যায়, সাথে সাথে ট্রাকটা রাস্তা ক্রস করে চলে যায়। অয়ন রিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘন ঘম নিঃশ্বাস ফেলে। অয়ন রিমির মুখস্রীর দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,

‘ খুব করে ইচ্ছে করছে পরী, তোমায় বুকের পিঞ্জিরায় বন্ধী করে রাখি, যেন কেউ তোমাকে কখনো আমার থেকে আলাদা করতে না পারে, দেখো তোমার ডক্টর এয়ারসি চলে এসেছে। ‘

রিমি অয়নের কথায় কোনপ্রকার প্রতিক্রিয়া করলো না। অজ্ঞান হয়ে ঢলে পরলো অয়নের গাঁয়ে। রিমির অবস্হা দেখে অয়ন বিচলিত হয়ে হাক ছেড়ে ডাকলো দেহরক্ষীদের। তারাও সঙ্গে সঙ্গে হাজির হয়ে গেলো। অয়ন তাদের দিকে তাকিয়ে আদেশের সুরে বললো, ‘ এখুনি গাড়ি রেডি করো। ফাস্ট। ‘

দেহরক্ষীগন মাথা নিচু করে সায় জানালো। অয়ন রিমির গালে হাত রেখে বার বার রিমিকে ডেকে চলেছে, কিন্তু রিমির কোন প্রতিক্রিয়া নেই, সে নিশ্চুপ, প্রতিক্রিয়াহীন। অতঃপর অয়ন রিমিকে নিজের হসপিটালে নিয়ে এসে, দ্রুত কেবিনে নিয়ে গিয়ে, চিকিৎসা শুরু করে দেয় এবং রিমির অবস্হা কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর, ইশাকে দিয়ে বাড়ির সবাইকে জানিয়ে দেয় সবকিছু। ফারহান আরো কিছু বলার পূর্বে, অয়ন তাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে, ধীর কন্ঠে বলে,

‘ আমি জানি ভাইয়া আমার এতোটা বাড়াবাড়ি করা ঠিক হয়নি, আমি তো জানি রিমিপরীর কাছে আমাদের লিটেল চ্যাম্প কতটা গুরুত্বপূর্ণ! আমার কাছেও আমাদের সন্তান আমাদের জীবন। আমি যতদিন দূরে ছিলাম, ততদিন আমাদের জানকে তো আমার পরী একাই আগলে রেখেছিলো, কিন্তু যখন তার বিপদের কথা জানতে পারলো, তখনি রিমিপরী অসুস্হ হয়ে পরলো। এর জন্যে দায়ী আমি নিজেই। আমার শুধু মনে হচ্ছিলো আজ আমার পরীর যদি কিছু হতো, তাহলে আমার কি হতো ভাই? আমার তো ভেবেই হাত-পা কাঁপছে। ‘

অয়নের কথার মাঝেই, ফারহান অয়নের কাঁধে হাত রেখে বললো, ‘ কিচ্ছু হবেনা তোর রিমিপরীর। যতদিন তুই আছিস, তোর পরীর কোন ক্ষতি হবেনা। নিজের উপর ভরসা রাখ, আর কালকে তো একটা স্পেশাল দিন, তাই সেই স্পেশাল দিনটাকে নিয়ে ফোকাস কর বুঝলি? আমি বরং এখন আসছি। অনেক আয়োজন করতে হবে তো। ‘

অয়ন মুচকি হাসি দেয় বিপরীতে, ফারহান বেড়িয়ে যায়। অয়ন ও উঠে দাঁড়িয়ে, রিমির কাছে এসে, রিমির হাতজোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে, আলতো করে চুমু খেয়ে, শীতল কন্ঠে বললো,

‘ সরি পরী, প্লিয ফরগিভ মি! ‘

কয়েকটা মুহুর্ত পেরিয়ে গেলো, বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলো। ধরনী সূর্যকে বিদায় জানিয়ে, ঘন কুচকুচে এক ফালি অন্ধকারকে আমন্ত্রন জানালো। রিমির নেত্রপল্লব ধীরে ধীরে নড়লো কিছুটা। রিমি লাফ দিয়ে দ্রুত গতিতে উঠে পরলো। নিজেকে অয়নের হসপিটালে আবিষ্কার করে, ভ্রু কুচকালো। মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো সকালের ঘটনাটি তার কাছে আবছা আবছা ধরা দিলো, রিমি তো অজ্ঞান হয়ে পরে গিয়েছিলো, কিন্তু তাকে এই হসপিটালে কে নিয়ে আসলো?রিমির তখনি হুট করে মনে পরে গেলো, তার মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না, তাকে খুঁজতে হবে তার অরুকে। কথাটি ভেবে তড়িৎ গতিতে রিমি উঠতে চাইলে, মেঘ এসে রিমিকে বাঁধা দিয়ে বলে,

‘ রিমিপু এই অবস্হাতে তুমি কোথায় যাচ্ছো? ‘

মেঘকে দেখে রিমি বলে উঠে,

‘ মেঘ তুমি এখানে? তুমি আমায় বাঁধা দিচ্ছো কেন? আমাকে যেতে দাও। আমার মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না। ‘

রিমিকে উত্তেজিত হতে দেখে, মেঘ রিমিকে শান্ত করার জন্যে বললো,

‘ অরু একদম ঠিক আছে এবং একদম সেফ আছে। তুমি আমার সাথে চলো এখন। ‘

রিমি মেঘের কথায় অবাক হয়ে দ্রুত প্রশ্ন ছুড়ে বলে, ‘ তুমি জানো অরু কোথায়? কোথায় আমার অরু? আমাকে এখুনি নিয়ে চলো। ‘
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

কথাটি বলতে বলতে নিজের হাতের ক্যানেলা এক টানে খুলে ফেলে দিয়ে, অস্হির হয়ে উঠে দাঁড়ালো রিমি। মেঘ বুঝলো, রিমিকে বুঝিয়েও শান্ত করা যাবেনা। তাই রিমিকে নিয়ে চলে গেলো, অয়নের দেওয়ায় সেই ঠিকানাতে। গাড়ি থামলো একটি অন্ধকার জায়গায়। রিমি দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেলো। মেঘ ও বেড়োলো, কিন্তু রিমির চোখের আড়ালে চলে গেলো। রিমি অন্ধকারে কিচ্ছু দেখতে পারছে না। রিমি বার বার ‘ মেঘ মেঘ ‘ বলে হাক ছেড়ে ডাকলো, কিন্তু মেঘকে দেখতে না পেয়ে তার মনে আরেকদফা ভয়ের জন্ম হলো। রিমি নিজে মনে বিড়বিড় করে আওড়ালো,

‘ এখানে হচ্ছে টা কী? আমার তো কিছুই মাথায় আসছে না। আমার অরুই বা কোথায়? মেঘ তো বললো, অর‍ু নাকি এখানে, কিন্তু আমি তো কাউকেই দেখতে পারছি না। অরু.. মা আমার কোথায় তুমি? ‘

‘তখনি রিমি শুনতে পেলো, কারা রিমির অগোচরে একসাথে চিৎকার করে বলে যাচ্ছে,

‘ 3. 2. 1 And 0. ‘

সঙ্গে কেউ আদো আদোভাবে মিষ্টি গলায় পিছন থেকে গেঁয়ে উঠলো,

‘ হ্যাপি বার্থডে টু ইউ! হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার মাম্মাম! হ্যাপি ব্যার্থডে টু ইউ। ‘

অয়রি গানটি গাইতে গাইতে এগিয়ে এলো রিমির দিকে। রিমি নিবার্ক হয়ে তাকিয়ে আছে। অয়রির পড়নে মিষ্টি বারবি ফ্রক। আকাঁবাঁকা দাঁতে চমৎকার হাসি ঝুলছে। রিমি দ্রুত অয়রির কাছে ছুটে গিয়ে, অয়রির হাতে মুখে চুমু খেয়ে, বুকে টেনে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

‘ কোথায় ছিলে আমার মা তুমি? তুমি জানো না? তোমার মা তোমায় কত খুঁজেছে। তোমাকে না পেয়ে, তোমার মাম্মামের কি অবস্হা হয়ে গিয়েছিলো। ‘

অয়রি কপালে হাত দিয়ে বললো, ‘ হায় আল্লাহ, আমার এই বড় মেয়েকে আমি কী করে সামলায় বলো তো? এতো বড় হয়ে গিয়েছে তাও কান্না করে, ছিচকাদুনি মাম্মাম আমার। ‘

অয়রির কথা শুনে রিমির অয়নের কথা মনে পড়ে যায়। অয়ন ও তাকে ছিচকাদুনি বলতো। সঙ্গে সঙ্গে রিমি হেঁসে উঠে অজান্তে। রিমি অয়রির হাত ধরে পরক্ষনে কিছুটা কড়া গলায় বলে,

‘ কিন্তু তুমি কোথায় ছিলে অরু? তুমি জানো না? তোমাকে ছাড়া তোমার মাম্মামের কতটা খারাপ অবস্হা হয়ে গিয়েছিলো। ‘

‘জানি মাম্মাম! কিন্তু তোমার বার্থডে স্পেশাল একটা বিরাট সারপ্রাইজ আছে, সেই সারপ্রাইজ টা দেখলে তুমি একেবারে হেপ্পি হয়ে যাবে। সব কষ্ট ভুলে যাবে। ‘

রিমি প্রশ্নবোধকদৃষ্টিতে অয়রির দিকে তাঁকায়। তখনি শুনতে পায় গিটারের টুংটাং শব্দ। অন্ধকারের মাঝে পুরুষকন্ঠে গেঁয়ে উঠে,

Meri Zindagi Hai Tu
Meri Zindagi Hai Tu

Gham Hai Ya Khushi Hai Tu
Meri Zindagi Hai Tu
Meri Zindagi Hai Tu

গানের গলা শুনে রিমি পুরো শরীর কেঁপে উঠে। রিমির বুঝতে বাকি থাকে কে গাইছে। রিমি নিজেও গেঁয়ে উঠে,

Kabhi Na Bichhadne Ke Vaaste Hi
Tujhse Jude Hain Hath mere

যুবকটিও তাল মিলিয়ে গাইতে থাকে,
Saya Bhi Mera Jahan Sath Chhode
Wahan Bhi Tu Rehna Sath Mere

রিমি পুনরায় গাইতে থাকে,
Sach Kahun Tere Naam Pe
Dil Dhadakta Hai Yeh Aaj Bhi
Ho Dekh Ke Tujhe Ik Dafa
Phir Kisi Ko Na Dekha Kabhi

যুবকটি গাইতে গাইতে গাইতে, রিমির পিছনে দাঁড়িয়ে রিমির কানে আস্তে করে কামড় দিয়ে, পুনরায় গেঁয়ে উঠে,

Sham Hai Sukoon Ki
Tu Sham Hai Sukoon Ki
Chain Ki Ghadi Hai Tu

Haal Aisa Hai Mera
Aaj Bhi Ishq Tera
Raat Saari Jagaye Mujhe

Koyi Mere Siwa Jo
Paas Aaye Tere Toh
Bekarari Sataye Mujhe

Jalta Hai Yeh Dil Mera
Oh Yaara Jitni Dafa
Chand Dekhti Hai Tu
mere jendegi ha tu

রিমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তার বুঝতে বাকি থাকেনা তার পিছনে স্বয়ং অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। যার জন্যে এতো বছর ধরে, তার এতো প্রতিক্ষা। রিমি অনুভতিশূন্য পিছনে ঘুড়ে রয়েছে, পিছনে ঘুড়ে তার কাঙ্খিত প্রেমিক পুরুষটিকে দেখার শক্তি কিংবা সাহস কোনটাই তার হচ্ছে না। অয়ন গানটি গাওয়া থামিয়ে দিয়ে, রিমির কানের কাছে গিয়ে,শীতল কন্ঠে বলে,

‘ হ্যাপি বার্থডে মাই লেডি রিমিপরী। ‘

সঙ্গে সঙ্গে আকাশে বড় বড় আতশবাজি ফুটতে শুরু করে। রিমি পিছনে ঘুড়ে তাকায় সঙ্গে সঙ্গে। কোথা থেকে সঙ্গে সঙ্গে রিমি এবং অয়নের উপর সরাসরি লাইট ফোকাস হয়। আকাশ থেকে হেলিকপ্টার থেকে ফুলের বর্ষন শুরু হতে শুরু করে। রিমি নিষ্প্রান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার প্রেমিক পুরুষটার দিকে। সাদা ব্লেজার পরিহিত সুদর্শন যুবকটি শুধুমাত্র রিমির। একান্ত রিমির। রিমির হুট করে মনে হলো, তার সামনে অয়ন নয়, বরং সে হয়তো কোন স্বপ্ন দেখছে। রিমি হাত ছুঁইয়ে অয়নের গাল স্পর্শ করে। ফর্সা গালে নতুন করে চাপ দাড়ি গজিয়েছে। চুলগুলো আগের থেকেও উষ্কোকষ্ক দেখালেও, অয়নকে পরিপাটি লাগছে। অয়ন রিমির হাত নিজের সামনে এনে চুমু খেয়ে বললো,

‘ এইবার বিশ্বাস হলো তো পরী? তোমার ডক্টর এয়ারসি তোমার জন্যে আমাদের লিটেল চ্যাম্পের জন্যে ফিরে এসেছি। ‘

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
রিমি শুধু অয়নের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। কোনরুপ প্রতিক্রিয়া করছে না। অয়ন হাত দিয়ে চুটকি বাজালো। অয়নের ইশারা পেয়ে, চারদিক থেকে কালো পোষাক পরিহিত দেহরক্ষীগণ মাথা নিচু করে উপরের দিকে ফায়ার করে। সঙ্গে সঙ্গে আকাশে বড় করে আতশবাজি ফুটে উঠে, তার মাঝে হরেক রকমের লেখায় ভেঁসে উঠে,

‘ শুভ জন্মদিন আমার পরী, আমি তোমায় ভালোবাসি। খুব বেশি ভালোবাসি। ‘

চারদিক থেকে ক্যান্ডেলের আলো নিয়ে রিমি এবং অয়নের চারপাশে কিছু বাচ্চা ছেলে-মেয়েরা ঘুড়ছে। আলোকিত হয়ে উঠেছে মুহুর্তেই পরিবেশটি।

আকাশের দিকে তাকিয়ে মুখে হাত দিয়ে হেঁসে উঠে রিমি। অয়ন রিমির দিকে ঝুঁকে, প্রশ্ন করে,

‘ পছন্দ হয়েছে সারপ্রাইজ রিমিপরী? ‘

রিমি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার প্রেমিকপুরুষকে। অতঃপর কান্নাভেজা গলায় উত্তর দেয়,

‘ আমার জন্মদিনের সেরা উপহার তো আপনি ডক্টর এয়ারসি। আপনার কাছে হাজারো আলো ফিকে আমার কাছে। আমার আকাশের চাঁদ যেখানে উপস্হিত, সেখানে অন্য আলো আমার কাছে মূল্যহীন ডক্টর এয়ারসি। ‘

রিমির কথায় অয়নও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার রিমিপরীকে।

‘ এহেম এহেম! আমরাও কিন্তু আছি। ‘

সুমাইয়ার কথা শুনে, রিমি পিছনে ঘুড়ে তাঁকিয়ে দেখে,
রুহানা চৌধুরী, ফারহাম, সুমাইয়া, মেঘ এবং ইশা দাঁড়িয়ে আছে। অয়রি ঠোট টিপে হাঁসছে। সকলকে একত্রে দেখে রিমি লজ্জায় সরে যেতে নিলে, অয়ন রিমিকে যেতে দেয় না বরং নিজ বক্ষে শক্ত করে চেপে ধরে। রিমি অয়নের দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙ্গিয়ে, নিচু স্বরে বলে,

‘ আপনি এখনো অসভ্যই রয়ে গেলেন ডক্টর এয়ারসি। ‘

অয়ন রিমির কথার বিপরীতে, চোখ মেরে জবাবা দেয়,

‘ এতোবছর কাছে পেলাম, অসভ্যতামি তো কেবল শুরু।’

রিমি অয়নের বক্ষে মাথা রেখে বললো, ‘ আপনার বক্ষে আজীবন ঠায় পাবো তো ডক্টর এয়ারসি?’

‘আমার বক্ষে ঠায় তোমার আজীবন থেকে যাবে রিমিপরী। একান্তভাবে শুধুই তোমার। ‘
অয়নের পাল্টা জবাব। রিমি মুচকি হাসি উপহার।

‘ এহেম এহেম! সাহেব বিবির প্রেমালাপ শেষ হলে, এখন কেক কাটার পর্ব শেষ করা যাক? কি বলো সবাই? ‘

সবাই ইশার কথায় একসাথে বলে উঠে, ‘ একদম। ‘

অয়ন রিমির হাত ধরে, স্টেজে যাওয়ার পূর্বে অয়রিকে কোলে নিয়ে এবং রিমির হাত ধরে স্টেজে উঠে। রিমিকে কেক কাটতে বলে। রিমি অয়রি এবং অয়নের হাত ধরে কেক কাটে। সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় তাদের উপর ফুলের বর্ষন হতে শুরু করে। অয়রি হাত দিয়ে খুশিতে তালি বাজাতে থাকে। অয়রির খুশি দেখে, রিমি এবং একসাথে হেঁসে উঠে। রিমি কেক কেটে অয়রিকে প্রথম খায়িয়ে দিলে, অয়ন মুখ বেঁকিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে, রিমির কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বললো,

‘ অরুকে আগে খাওয়ালে কেন? তুমি আমার বউ, তুমি আমায় আগে খাওয়াবে বুঝলে? ‘

অয়নের কথায় রিমি কোমড়ে হাত দিয়ে অবাক হয়ে বলে,

‘ এখন নিজের মেয়েকেও হিংসা করবেন আপনি ডক্টর এয়ারসি? ‘

‘ তোমার বেলায় নিজের মেয়েকেও হিংসা হয় বড্ড রিমিপরী। ‘

অয়নের কথা শুনে হেসে ফেলে রিমি। অতঃপর অয়নের গালে কেক মাখিয়ে দেয়। অয়ন নাক উচু করে রাগ দেখিয়ে, রিমিকেও কেক মাখিয়ে দেয়। বাবা- মায়ের কান্ড দেখে অয়রি হাঁসতে থাকে। অয়ন এবং রিমি মেয়ের হাসি দেখে, একসাথে অয়রির গালে কেক লাগিয়ে দিয়ে হেঁসে উঠে। অয়রি গাল ফুলিয়ে ফেলে। ছোট্ট পরিবারের এমন মূল্যবান হাসিমাখা মুহুর্ত ক্যামেরায় বন্দী করে রাখলো ইশা।

অয়ন রিমিকে পুনরায় বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ ভালোবাসি রিমিপরী। ‘

‘ আমিও অনেক বেশি ভালোবাসি। ‘

ফারহান রিমি, অয়ন এবং অয়রির মুহুর্ত দেখে, সুমাইয়ার পেটে হাত রেখে বললো,

‘ আমাদের পরিবারও পরিপূর্ন হয়ে উঠবে কয়েকদিন পর তাইনা সুমু? ‘

সুমু মুচকি হেসে জবাব দেয়, ‘ সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছি আমি। ‘

__________________

এয়ারপোর্টে অপেক্ষারত একজন রমনী দাঁড়িয়ে আছে তার প্রেমিকপুরুষের অপেক্ষায়, সে কি আদোও আসবে কিনা,জানে না। শুধু অপেক্ষা করছে তার ভালোবাসার টানে মানুষটি ঠিকই আসবে। মেঘ ঘড়ির দিকে তাকালো, রাত ৩ঃ৩০ বাজে। মেঘ হতাশ হলো। কিছুক্ষনের মাঝে অস্ট্রেলিয়ার প্ল্যান ল্যান্ড করলো। মেঘ অনেক্ষন অপেক্ষা করলো, কিন্তু আমানকে দেখতে পেলো না।
মেঘ হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে, পিছনে ঘুড়ে তাঁকায়। সঙ্গে সঙ্গে পিছন থেকে কেউ ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে আলতো সুরে বলে,

‘ তোমার অপেক্ষার অবসানের সময় আসন্ন মেঘ। আমি এসেছি তোমার ভালোবাসার টানে, তোমার দারপ্রান্তে।’

মেঘের নেত্রপল্লব ছলছল হয়ে উঠে। ঠোট কামড়ে দাঁড়িয়ে থাকে সে। কাঁদতে ইচ্ছে করছে খুব করে তার। তার অপেক্ষার অবসান অবশেষে ঘটলো তবে? তার প্রেমিক পুরুষ অবশেষে ফিরে এলো তবে? মেঘকে ছেড়ে দিয়ে, আমান মেঘের সামনে এসে, নিজের গাঁয়ের ব্লেজার খানা খুলে, মেঘের গাঁয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,

‘ আমার আকাশের মেঘের টুকরোকে সকলের থেকে আড়াল করে দিলাম। ‘

মেঘ আমানের দিকে অবাক হয়ে তাঁকাতেই, আমান পিছনে সরে গিয়ে সকলের সামনে চিৎকার করে বলে,

‘ আই লাভ ইউ মেঘ, ডু ইউ লাভ মি? ‘

মেঘ মুখ চেপে কেঁদে ফেলে। আমান তাকে সকলের সামনে নিজের ভালোবাসার কথা স্বাকীর করবে, তা মেঘের ধারণার বাইরে ছিলো, মেঘ নিজেও কাঁদতে কাঁদতে বলে,

‘ ইয়েস! আই লাভ ইউ মোর দেন ইউ। ‘

আমান তৃপ্তির হাঁসি মেঘকে উপহার দিলো।

__________________

অয়রি ঘুমিয়ে পরেছে। অয়ন অয়রির মাথার পাশে বসে, অয়রির মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, রিমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনমনে সাঁজছে। নিজেকে আজকে সাঁজাতে বড্ড ইচ্ছে করছে তার। অয়ন বিছানা থেকেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে, নিজের রিমিপরীর দিকে। অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

‘ বার বার আমাকে মুগ্ধ করো কেন রিমিপরী? আমি আজও তোমার নেশায় আসক্ত। ড্রাগ্সের নেশা না হয় মাদক নেরাময় কেন্দ্রে গিয়ে সারানো যায়, কিন্তু তোমার নেশা ছাড়ানোর জন্যে, কোন কেন্দ্রে যেতে হবে? ‘

রিমি ঠোট ফুলিয়ে, অয়নের বুকে মাথা রেখে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে, ‘ আমার নেশায় আসক্ত হয়ে থাকবেন আপনি আজীবন। শুধুমাত্র আমার। সেই নেশাকে ছাড়ানোর সাধ্যি নেই আপনার নেই, কারো নেই ডক্টর এয়ারসি। ‘

কথাট বলে রিমি অয়নের দিকে কাজল বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

‘ আমি আপনার কথামতো, কাজল দেয়নি কখনো আখিঁতে, শুধু প্রতিক্ষায় ছিলাম, আপনি কবে আসবেন এবং নিজ হাতে আমার কাজল পরিয়ে দিবেন। আজ সেই প্রতিক্ষার অবসান ঘটলো ডক্টর এয়ারসি। ‘

অয়ন স্মিত হেসে কাজলখানা হাতে নিয়ে, তার রিমিপরীর আখিতে কাজল লাগিয়ে দিলো। সাঁজিয়ে দিলো মনের মতো করে। অতঃপর রিমির দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ গলায় বললো,

‘ প্রেয়সী তুমি কাজল পরো না। তোমার আখিঁতে কাজল পরা পাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

‘ কেন? ‘

রিমির প্রশ্নে অয়ন উত্তর দেয়,

‘আমার যে তোমার আখিজোড়ার কাজলের মায়ায় বারংবার মরণ হয়। সুখকর মরণ। ডুবে যেতে ইচ্ছে করে। শত শত যুগ পার করে দিতে ইচ্ছে করে তোমার কাজল কালো আখিজোড়ার দিকে তাকিয়ে। ‘

রিমি লাজুক হাঁসে। মুখশ্রী তার ক্রমশ লাল হয়ে উঠেছে। রিমি পিছনে ঘুড়ে তাঁকায়। অয়ন কি ভেবে জেনো রিমিকে পাজকোলে তুলে নেয়। রিমি অবাক হয়ে তাঁকাতেই, অয়ন তাকে নিরব হয়ে থাকতে বলে। অয়ন রিমিকে কোলে নিয়ে, গাড়িতে বসিয়ে দেয়। অতঃপর অজানা গন্তব্যের দিকে রওনা দেয়।

____________________

রাতের আধার গড়িয়ে ভোরের মিষ্টি আলো ফুটতে শুরু করেছে।
পুব আকাশে রক্তিম আভা। গাছে গাছে পাখিদের ডাকাডাকি।

নদীর কিনারে ঠায় দাঁড়িয়ে গগনমূখী ঝাউবন। সমুদ্র তীরে ভোরের নীরব-নিস্তব্ধতা।

ভাটার টানে বিক্ষুব্ধ নদীটি যেন একেবারেই শান্তশিষ্ট। মাঝিঁ তার নৌকা কেবল পাড়ে নিয়ে এসেছে। অয়ন তাকে দেখেই হাক ছেড়ে ডাকলো। অতঃপর রিমির হাত ধরে রিমিকে নৌঁকায় বসিয়ে দিলো। রিমির গাঁয়ে টুকটুকে লাল শাড়ি, চুলগুলো বাতাশ বার বার অয়নের মুখে লেপ্টে যাচ্ছে। অয়নের গাঁয়েও সাদা পাঞ্জাবি। মুখে চমৎকার হাঁসি। রিমি বুঝতে পারছে না, অয়ন হঠাৎ তাকে এখানে কেন নিয়ে এলো? রিমির ভাবনার মাঝেই, অয়ন রিমির সামনে রিমির উপন্যাসের ডাইরি তুলে ধরে। রিমি অয়নের দিকে ছলছলে দৃষ্টি তাকাতেই, অয়ন মাথা নাড়িয়ে বলে,

‘ সময় হয়েছে আমাদের উপন্যাসের সমাপ্তির। ‘

রিমি মাথা নাড়িয়ে মুচকি হেসে সায় জানিয়ে বলে,

‘ আমাদের অপেক্ষাকৃত সুখকর মিলনেই আজ সমাপ্তি ঘটবে আমাদের দীর্ঘ উপন্যাস। ‘

অয়ন রিমির ললাটে জুড়ে ভালোবাসার স্পর্শে একেঁ দেয়। নৌঁকা নিজের গতিতে নদীতে বয়ে চলেছে। অয়ন রিমির হাত ধরে কলম ধরে, উপন্যাসের শেষ পাতায় তাদের সমাপ্তি ঘটালো। যার নাম রাখলো,

‘ তুমিময় নেশায় আসক্ত। ‘ ?

সমাপ্ত ?

লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি
লেখিকার কিছু কথা..?
দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শেষ হলো
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত উপন্যাসটি। বিশ্বাস করুন আমি প্রায় কেঁদে দিয়েছিলাম অন্তিম পর্ব লিখতে গিয়ে।,?আমি কোন গল্প এতোটা সময় নিয়ে লিখিনি।প্রায় ৪ মাসের বেশি সময় নিয়ে গল্পটা লিখেছি। গল্পটি লেখার সময় আমি অনেকটা অনিমিয়ত থাকায়, গল্পটার এতো সময় হয়ে গেলো,?টানা পরীক্ষা, অসুস্হ সবকিছুর ফলে এতোদিন লেগে গেলো। আমি আমার পাঠকদের কাছে কৃতজ্ঞ আমাকে এবং গল্পটাকে এতোটা ভালোবাসা নিয়ে ধৈর্য্য সহকারে পড়ার জন্যে ?আমি সত্যি অনেক গ্রেটফুল। আমি জানি না আমি আবার কবে ব্যাক করবো, আদোও করবো কিনা তারও নিশ্চয়তা নেই। পড়ার চাপে হয়তো হারিয়ে যাবো, কিন্তু একটা অনুরোধ আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকাদের কাছে, আমাকে অন্তত্য ভুলে যাবেন না। আপ্নারা সবাই আমার মনের গহীনে রয়ে যাবেন, আমিও চাই আমি এবং আপনাদের প্রিয় ‘ রিয়ন ‘ জুটিকে আজীবন ভালোবেসে যাবেন ?। আমি আশা করবো কখনো যদি নতুন কোন গল্প নিয়ে ফিরে আসি, তবে যেন আপনাদের পাশে পাই ??। আপনাদের প্রতি ভালোবাসা রইলো। আপ্নাদের ভালোবাসা এবং দোয়া কাম্য রইলো। সবাইকে অনেক মিস করবো ?। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্হ থাকবেন।আপনাদের পিচ্চি লেখিকা আবার ভুলে যাইয়েন না।
আল্লাহ হাফেজ ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here