তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫

0
2752

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত
#পর্ব- ৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
গুলির শব্দে রিমি উঠে দাঁড়িয়ে দেখে অয়ন রক্তচক্ষু নিয়ে তার দিকে তাঁকিয়ে আছে। হাতে তার বন্দুক। রিমি আতকে উঠে কেননা অয়নকে এইসময় তার কাছে ভয়ংকার লাগছে। অয়ন রাগে ফুশফুশ করছে তার শব্দ রিমির কানে এসেছে। রিমি ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখে একজন গার্ড হাতে হাত দিয়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এই গার্ডটাকে রিমি আগেও খেয়াল করেছিলো প্রায় কুদৃষ্টিতে রিমির দিকে তাকিয়ে থাকতো। রিমি ভেবেছিলো লোকটা
আচ্ছামতো কাল কথা শুনিয়ে দিবে কিন্তু লোকটার করুন অবস্হা দেখে বেশ ভয় পেয়ে যায় রিমি।রিমি ভয়ে ভয়ে অয়নের দিকে তাকায়। অয়ন এখনো ভয়ানক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তারমানে গার্ডটাকে অয়নই গুলি করেছে কিন্তু কেন? রিমি কিছু বলার আগেই অয়ন প্রখর কঠোরতার সহিত বলে,

‘ ভিতরে যাও রিমিপরী। ডোন্ট টক। ‘

অয়নের আদেশের সুরে কথাটি শুনে রিমি কেন যেন
অমান্য করার সাহস পেলো না। ধীর পায়ে স্হান ত্যাগ করলো। সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা গুলির আওয়াজ এলো এবং তার সঙ্গে ভেঁসে আসলো কারো চাপা
আর্তনাদ। রিমির এইবার নিজেকে ঘরে রাখতে পারছে না। অয়ন নিশ্চই লোকটাকে আবার গুলি করেছে কিন্তু কেন? না অয়নকে আটকাতে হবে
নাহলে লোকটাকে সম্পূর্ন মেরে ফেলবে। রিমি বেড়োতে নিলে, অয়নের ছোট কাকী রেজা চৌধূরী
সামনে আসেন। সন্দেহের গলায় বলে,

‘ এই মেয়ে এতো রাতে ঘর থেকে বেড়িয়ে কোথায় যাচ্ছো তুমি? ‘

‘ গুলির শব্দ এলো। আমাকে যেতে দিন। নাহলে উনি লোকটাকে মেরেই ফেলবে। ‘

রেজা চৌধূরী এইবার খানিক্টা মুখ বেকিয়েই বললেন,

‘যত্তসব ঢং! বলি মেয়ে এইসব কিছু নতুন কিছু না।
অয়নের মাথায় একবার রক্ত চরে গেলে যা খুশি তাই করে। পাগল হিংস্র বাঘ একবার রেগে গেলে কি হয় জানো?একবার থাবা মারলে আর বেঁচে থাকার উপায় থাকেনা। অয়ন হচ্ছে সেই পাগল হিংস্র বাঘ।
এখন ওর ধারে কাছে যাওয়া মানে নিজ ইচ্ছেয়
বাঘের গর্তে ঢুকা। তাই বলছি নিজের ঘরে যাও তো মেয়ে। ‘

রেজা চৌধূরী কথাটি বলে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রিমি দমে যায় না।অয়ন এইবার একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে। তার কৈফিয়ত অয়নকে দিতেই হবে কেন সে এমন করছে।

অয়ন বন্দুক তাক করে গার্ডের চোখ বরাবর আরেকটি গুলিয়ে করে। গার্ডটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। রক্তাক্ত হয়ে পড়েছে একপ্রকার। অয়ন অন্য গার্ডদের দিকে তাকিয়ে গর্জে উঠে বলে,

‘ এই নর্দমার কিটকে এখুনি বাইরে ছুড়ে ফেলে আয়।
চোখ একেবারে অন্ধ করে দিবি। যেন কারো দিকে চোখ তুলে তাকানোর আগে ওর হৃদয় কেঁপে উঠে। ‘

গার্ডরা সঙ্গে সঙ্গে সেই রক্তাক্ত গার্ডকে নিয়ে চলে যায়। অয়ন এখনো রাগে ফুশছে। সামনে যা পাচ্ছে তাই ছুড়ে ফেলছে। তার ইচ্ছে করছে নিজ হাতে ওই গার্ডের চোখটাকে উপড়ে ফেলে দিতে। কেমন বাজে দৃষ্টিতে তার রিমিপরীর দিকে তাকিয়ে ছিলো। অয়ন
চুল খামচে বিছানায় বসে থাকে কিছুক্ষন। রাগে এখনো ফুশছে সে। কারো পায়ের শব্দে অয়ন মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে রিমি। রিমিকে দেখেই অয়নের মেজাজ বিগড়ে যায়। অয়ন উঠে দাঁড়িয়ে দরজা থেকে রিমিকে একপ্রকার টেনে ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে, ভিতরের দরজাটা বন্ধ করে দেয়। অতঃপর রিমিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। অয়নের তপ্ত নিঃশ্বাস রিমির গলায় উপচে পড়ছে। অয়ন রিমিকে চেপে উগ্র সুরে বলে,

‘ কেন গিয়েছিলে ছাঁদে? হ্যা কেন গিয়েছিলে তুমি?
তুমি জানো ওই ডাফারটা তোমাকে কত বাজে নজরে দেখছিলো।’

অয়ন যথেষ্ট রেগে আছে। রাগে তার ফর্সা কপালে
এতো শীতের মধ্যে ঘাম সৃষ্টি হয়েছে। রিমি কিছু চাইলেও বলতে পারেনা অয়নের রাগান্বিত চেহারা দেখে। রিমি ভয়ে গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন তা দেখে আলতো হাঁসে। এতোটা রাগের মাঝেও রিমির ভয়ার্থ মুখশ্রীর দিকে তাকালে আলাদা ভালোলাগা কাজ করে অয়নের। অয়ন চোখ বন্ধ করে ধীর কন্ঠে বলে,

‘ ভয় পেও না রিমিপরী। তোমার ভয়ার্থ মুখশ্রী আমার বুকে তোলপাড় সৃষ্টি করে। অদ্ভুদ ভালো লাগে সবকিছু। কিন্তু কেন? ‘

___________________

রিমি ধীর পায়ে রুমে ঢুকে সঙ্গে সঙ্গে দরজা বন্ধ করে জোড়ে জোড় নিঃশ্বাস নিতে থাকে। অয়নের ঘরে ঢুকেছিলো কয়েকটি কড়া কথা শুনিয়ে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু অয়নের ধীর কন্ঠে কথাটি শুনে একমুহুর্তের জন্যে ঘোরে চলে গিয়েছিলো রিমি। কেমন আগোছালো লাগছিলো নিজেকে। অয়নকে যেই কথাটি বলত চেয়েছিলো তা বলতে গিয়েও বলতে পারলো না সে। কোন একটা জড়তা কাজ করছিলো তার ভিতর। অয়নের চাহনীতে অন্যরকম কিছু ছিলো। খুব সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে সে রিমির দিকে তাকিয়ে কথাটি বলে দিয়েছিলো। রিমির কাছে নিজেকে খুব দূর্বল মনে হচ্ছিলো। রিমি রুমের চারদিকে পাইচারি করতে করতে নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো,

‘ রিমি তুই কী ভুলে গেলি? তুই কেন এই বাড়িতে এসেছিস। তোর উদ্দেশ্য তো অয়ন চৌধূরী না। তাহলে অয়নের বিষয় তুই কেন এতো ভাবছিস। ফোকাস কর নিজের উদ্দেশ্যের উপর। যা করতে তুই এই বাড়িতে এসেছিস।’

(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)

উদ্দেশ্যের কথা মনে পড়তেই রিমির মুখশ্রীতে কাঠিন্যভাব চলে আসে। হাতজোড়া শক্ত হয়। চোখদুটো টলমল করে উঠে। মনে হচ্ছে এখুনি গড়িয়ে পড়বে তবুও রিমি তার অশ্রুকে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে মুছে নিয়ন্ত্রন করে নেয়। এখন তার কাঁদলে চলবে না। শক্ত হতে হবে। রিমির ভাবনার মাঝেই তার দরজায় কেউ শব্দ করে বাইরে থেকে। শব্দের উৎস পেতে রিমি উঠে দরজা খুলে দেখে
কম বয়সী হাঁসিখুশি মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পড়নে তার লং স্কাট। মেয়েটাকে দেখেই মনে হচ্ছে পনেরো কিংবা ষোলো বছর বয়স হবে।মেয়েটি রিমিকে দেখেই মিষ্টি হেসে বললো,

‘ আমি মেঘলা। অয়ন ভাইয়ের ছোট বোন মানে
এই বাড়ির একমাত্র ছোট মেয়ে। যদিও সবাই আমাকে মেঘ বলেই ডাকে। তোমার সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছে ছিলো জানো? আমি স্কুলের পিকনিকের একসপ্তাহের জন্যে সাজেক গিয়েছিলাম তাই তোমার সাথে আমার এতোদিন দেখা হয়নি। আজ কেবল আসলাম। এসেই তোমার সাথে দেখা করতে চলে এলাম। ‘

রিমি মেঘের কথার প্রেক্ষিতে মুচকি হেসে বলে,

‘ বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তুমি ভিতরে এসো।’

মেঘ খুশিমনে ভিতরে ঢুকে গেলো। মেঘ হলো অয়নের ছোট কাকার একমাত্র মেয়ে। রুহানা চৌধূরীর একমাত্র ছোট নাতী। সবে টেনে উঠেছে।
বেশ মিশুকে স্বভাবের। রিমির সাথে প্রথম আলাপেই বেশ ভাব জমে গিয়েছে তার। সে তো মুখ ফুশকে বলেই উঠেছিলো,

‘ জানো রিমিপু? তুমি না ভাইয়ার জন্যে বেস্ট চয়েজ।
তুমি ভাইয়াকে ডিভোর্স দিও না। পায়েল আপু আমার ভাইয়াকে কখনো সু্খি রাখতে পারবে না। ‘

মেঘের কথা শুনে রিমি একপলক মেঘের দিকে তাকিয়ে কথাটি ঘুড়ানোর চেষ্টা করে বলে,

‘ দূর বোক কিসব যে বলো না। অয়ন চৌধুরীর বউ হওয়ার জন্যে আমি আসেনি। আমি তো কয়েকদিনের অতিথি মাত্র। তাছাড়া পায়েল আপু উনাকে ভালোবাসে। আমাকে বলেছো কিন্তু বাড়িতে কাউকে বলো না কিন্তু। ‘

রিমির কথায় মেঘ মুখটা ঘোমড়া করে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।

____________

ড্রাইনিং টেবিলে রুহানা চৌধূরী এবং তার ছোট ছেলে আশরাফ চৌধূরী ব্রেকফাস্ট করছে। রুজা চৌধুরী দাঁড়িয় সার্ভেন্টদের দিয়ে ব্রেকফাস্ট পরিবেশন করাচ্ছে। তখনি সেখানে ফারহানের
আগমন ঘটে। ফারহান চৌধুরী অয়নের বড় ভাই।
সবসময় পরিবার থেকে দূরত্ব বজিয়ে রেখে থাকে।
চৌধুরী কম্পানিতেও সে কোনপ্রকার যুক্ত থাকেনা।
আলাদা একটা কম্পানিতে বেশ বড় পদে সে চাকরী করে। ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে সে বেড়াচ্ছিলো তখনি রুহানা চৌধুরী তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

‘ ফারহান তুমি নাকি আজ নিজের ঘরে ব্রেকফাস্ট করো নি। না খেয়ে একদম অফিসে যাবে না তুমি
কাম মাই বয় টেক ইউর সিট। ‘

রুহানা চৌধুরীর কথায় তাচ্ছিল্যের হাঁসি ফুটে উঠে তার। তাচ্ছিল্যের সুরেই বলে,

‘ আমার জন্যে এতো কনসার্ন এর জন্যে থ্যাংকস গ্রান্ডমা। বাট আমার তোমার এতো কনর্সান লাগবে না। সো সরি গ্রেন্ডমা। ‘

ফারহাম আর দাঁড়ায় না। গটগট করে বেড়িয়ে যায়।
রুহানা চৌধুরী অপমানবোধ করেন। রিমি মেডিকাল এর বই পত্র গুছিয়ে সিড়ি থেকে নামছিলো কিন্তু ফারহানকে দেখে সে থেমে যায়। ফারহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন।
সেই দৃষ্টিতে ছিলো একরাশ ঘৃণা কিন্তু কেন? মেঘ রিমির পাশে দাঁড়িয়ে একরাশ দুঃখ নিয়ে বলে,

‘ আমাদের বাড়িতে কি অদ্ভুদ তাইনা? সবাই কতটা
দূরে সরে যাচ্ছে একে অপরের থেকে। আমার ভাই থাকতেও নেই। অয়ন ভাইয়া তো ছোট থেকেই গ্রেন্ডমা ছাড়া কারো সাথে কথা বলতো না। ফারহান ভাইয়াই আমাকে আগলে রাখতো সবসময় কিন্তু এমন একটা এক্সিডেন্ট ভাইয়ের জীবনে ঘটলো যে ফারহান ভাইয়া সম্পূর্ন বদলে গেলো। কেমন একটা
গুটিয়ে নিলো নিজেকে। ‘

রিমি এইবার মেঘের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,

‘ কিরকম এক্সিডেন্ট? ‘

………চলবে কী?

লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি
[কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। প্লিয নাইস নেক্সট লিখবেন না। আপ্নারা নেক্সট না লিখলেও
আমি নেক্সট পার্ট দিবো। পারলে ঘটনমূলক কমেন্ট করবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here