তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব ৫১

0
1421

#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত ?
#পর্ব- ৫১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
কবুল বলার আগ মুহুর্তে বিয়ের আসরে অয়নকে বাঁধা দেয় রুহানা চৌধুরী। রুহানা চৌধুরীর বাঁধা পেয়ে থেমে যায় অয়ন। অবাক হয়ে রুহানা চৌধুরীর দিকে তাকাতেই, রুহানা চৌধুরী স্টেজের সামনে গিয়ে, সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,
‘ আজ আমার সবথেকে প্রিয় নাতী অয়নের বিয়ে। তার জীবনের স্পেশাল একটা দিনে আমি চাই,তার বিয়েটাকে আরেটকু স্পেশাল করতে একটি বিশেষ সারপ্রাইজের মাধ্যমে। ‘
সারপ্রাইজের কথা শুনে রুজা চৌধুরী এবং
আশরাফ চৌধুরী তৎক্ষনাৎ একে-অপরের দিকে তাকায়। তারা বুঝতে পারছে না কি এমন সারপ্রাইজের কথা বলছেন রুহানা চৌধুরী। রুহানা চৌধুরী তার একজন সেক্রেটারিকে ডেকে পাঠান। রুহানা চৌধুরীর আদেশ পাওয়া মাত্র একজন সেক্রেটারি কিছু কাগজপত্র রুহানা চৌধুরীর হাতে এসে দিয়ে যায়। রুহানা চৌধুরী কাগজটা হাতে নিয়ে অয়নের হাতে তুলে দেন। চোখের ইশারায় ফাইলটা দেখতে বলেন। অয়ন ফাইলটা দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। হতভম্ব হয়ে রুহানা চৌধুরীর দিকে তাকাতেই, রুহানা চৌধুরী মাইক হাতে নিয়ে অয়নের কাঁধে হাত রেখে বললেন,

‘ মিট আউয়ার নিউ সিউ অফ চৌধুরী ফ্যাশন, অয়ন রওযাক চৌধুরী। ‘

রুহানা চৌধুরীর মুখে থেকে নির্গত বানী বিস্ফোরনের মতো লাগে সমস্ত পরিবেশে। রুহানা চৌধুরীর কথায় সমস্ত প্রেস -মিডিয়া সমস্ত ক্যামেরা রুহানা এবং অয়নের সামনে তাঁক করে। রুজা চৌধুরী চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে। আশরাফ চৌধুরীও হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। তিনি বুঝতে পারছেন না তাকে না জানিয়ে, এতো বড় একটা সিধান্ত নিবেন রুহানা চৌধুরী। অয়ন তার হাতে থাকা ফাইলটাকে ফেলে দিয়ে, পিছন থেকে এসে রুহানা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে,গম্ভীর সুরে বলে,

‘ তুমি জানো গ্রেন্ডমা। আমার এইসব বিসনেজে কখনোই কোন ইন্টেরেস্ট ছিলো না। আমি শুধুমাত্র তোমার কথায় কম্পানিতে যোগ দিয়েছিলাম, তাছাড়া আমি এইসব কম্পানির কোনপ্রকার দায়িত্ব নিতে পারবো না। ‘

অয়নের বারণে রুহানা চৌধুরী অয়নের হাত ধরে করুন চোখে বললেন,

‘ আমাকে মানা করো না অয়ন। এই কম্পানিটা আমার বড় কষ্টের। এই কম্পানির জন্যে অনেক সম্পর্ক আমি নষ্ট করে ফেলেছি। তুমিও আমার থেকে দূরে সরে গিয়েছিলে। আমি আর কাউকে হারাতে চাই না। তাই এই কম্পানির দায়িত্বভার তোমার কাঁধে অর্পিত করলাম, আমি জানি তুমি পারবে আমার বাচ্চা। ‘

অয়ন রুহানা চৌধুরীর কথার বিপক্ষে কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু রুহানা চৌধুরীর অসহায় মুখস্রীর দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো। রুহানা চৌধুরী অয়নের হাত ধরে বিয়ের আসরে বসিয়ে দিলেন। রিমি পর্দার আড়াল থেকেই, চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলো অয়ন যেন নিজের উপর ভরসা রাখে। রিমির ভরসা পেয়ে অয়নও ভরসা পায়। কাজি সাহেব রিমিকে কবুল বলতে বলে। রিমি কিছুক্ষন স্হীর হয়ে বসে থেকে, নিজের ফোনের স্ক্রিনে থাকা অয়নের হাসজ্জ্বল মুখস্রীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কবুল বলে ফেলে। অয়নের পর্দার আড়ালে থেকেই রিমির মুচকি হাসি দেখে, তৃপ্তির হাসি দেয়। কাজি সাহেব অয়নকে কবুল বলতে বলে, অয়নও ফটফট করে কবুল বলে ফেলে। দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে আজীবনের মতো আবদ্ধ হয়ে পড়ে রিমি এবং অয়ন। অয়নের কবুল বলার কিছুক্ষন এর মাঝেই, আকাশে বড় বড় আতশ বাজি ফুটতে শুরু করে। ফানুশে রঙ্গিন হয়ে উঠে আকাশে। ফানুশে প্রতিটি জায়গায় বড় বড় লেখা, ‘ রিয়ন। ‘

আমানের চৌধুরীর বাড়ির সেন্টারের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো। এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো আমান। আকাশে থাকা ফানুশ দেখে গাড়ি থামাতে বলে। ফানুশের দিকে একপলক তাকিয়ে, নেত্রকোণে জমে থাকা জলটুকু মুছে বিড়বিড় করে আওড়াতে থাকে,

‘ ভালো থেকে রিমিপাখি। খুব সুখে থেকো। জীবনের এক বড় আক্ষেপের জায়গা হয়ে আজীবন তুমি আমার মনের গহীনে থেকে যাবে। ভালোবাসি। ‘

আমান এক মুহুর্ত ও অপেক্ষা করলো না। ড্রাইভারকে বললো গাড়ি চালাতে। ড্রাইভার গাড়ি চালানো শুরু করলো। মেঘ কোন একটা কাজে সবেমাত্র বের হচ্ছিলো, আমানের গাড়ি দেখে সে দ্রুত তার নিজের গাড়িতে উঠে যায়। ড্রাইভারকে বলে আমানের পিছনে পিছনে যেতে। সে জানে আমান আজকে চলে যাবে। চলে যাওয়ার আগে কিছু কথা যে আমানকে বলতেই হবে তাকে।

_________________

অপরদিকে, ফারহান চলে যাওয়ার পর পরেই সুমাইয়ার কেবিনে লোড শেডিং হয়ে যায়। সুমাইয়া কিছু বুঝার পূর্বেই কেউ পিছন থেকে সুমাইয়ার মুখ চেপে ধরে, একপ্রকার বাইরের দিকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে থাকে। সমস্ত হসপিটালে লোডশেডিং হওয়ায় ফারহান ভ্রু কুচকায়। হুট করে কি এমন হলো হসপিটালে? ফারহানের ভাবনার মাঝেই, সঙ্গে সঙ্গে বিদুৎ চলে আসে। ফারহান ভাবতে পারছে না, হসপিটালে হলো কি। একজন নার্সের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে, তিনি জানান,

‘ হুট করে কি হলো আমরা নিজেও বুঝলাম না। ‘

নার্সের কথায় কোনপ্রকার পতিক্রিয়া না করে, ফারহান সুমাইয়ার কেবিনের সামনে যায়। সুমাইয়ার কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। চারপাশে জিনিসপত্র ছড়ানো। সুমাইয়া নেই। ফারহান কিছু একটা ভেবে দৌড়ে বাইরে এসে, হাক ছেড়ে সুমাইয়াকে ডাকতে থাকে। ফারহানের চিৎকারে নার্স-ডক্টর সকলে উপস্হিত হয়। ডক্টর প্রশ্ন করেন,

‘ কোন সমস্যা মিঃ ফারহান চৌধুর? ‘

ডক্টরের প্রশ্নে উত্তর দেয় না ফারহান। ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে। মস্তিষ্ক শূন্য লাগছে তার। সে ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছে তার সুমাইয়াকে কেউ অপহরণ করেছে।

______________________

অয়ন ও রিমির বিয়ের শেষ পর্যায়ে, অয়ন সমস্ত পর্দাকে হাতের ইশারায় উঠাতে বলে। পর্দা উঠে যায়।
পর্দার আড়াল থেকে নিজের সদ্য বিবাহিত লাল টুকটুকে বউকে দেখতে পায় অয়ন। বিয়ের সাঁজে স্টেজে লজ্জারাঙ্গা মুখস্রীতে বসে আছে রিমি। অয়ন এগিয়ে গিয়ে, হুট করে সকলের সামনে রিমিকে কোলে তুলে নেয়। রিমিও কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে, অয়নের গলা জড়িয়ে ধরে। রিমিকে কোলে তুলে স্টেজ থেকে নামতে নামতে গাইতে থাকে,

Sun meri shehzadi

Main hoon tera shehzada
Bahon mein leke tujhe
Main karta hoon waada

Sun meri shehzadi
Main hoon tera shehzada
Bahon mein leke tujhe
Main karta hoon waada

Aay-ye jane tamanha meri
Mein khake kasam teri
Karta hoon ikraar

গানটি গাইতে গাইতে রিমির ললাটে চুমু খায় অয়ন। রিমিও মুচকি হেসে অয়নের বুকে মাথা ঠেকায়। ফুলে সজ্জিত হয়ে উঠে তাদের পথ। সমস্ত আলো এসে ঘিড়ে ধরে তাকে। অয়ন রিমির কানে ফিসফিস করে ধীর কন্ঠে বলে,

‘ গোলাপ যেমন সুন্দর, তেমন গোলাপ ফুলের মাঝে হাজারো কাটা থাকবে, কিন্তু সেই একটি কাটাও তোমাকে স্পর্শ করতে দিবো না। তোমার ডক্টর এয়ারসি প্রমিজ আজকের বিশেষ দিনে। ‘

রিমিও অয়নের বুকে মাথা রেখে নিচু সুরে বললো,

‘ আমিও প্রতিজ্ঞা করছি, আমার জীবনের রাস্তায় যতই কাটা থাকুক না কেন, আজীবন আপনার হাত শক্ত করে ধরে, সেই পথ অতিক্রম করবো। ‘

______________________

ফুলসজ্জিত বাসরঘরে বসে আছে রিমি। অয়নের বউয়ের মর্যাদা পেয়ে সে অয়নের ঘরে রয়েছে। হ্যা এমন একটি দিন রিমির জীবনে আরো একবার এসেছিলো, কিন্তু সেদিন রিমি মন থেকে বিয়েটা মানেনি, কিন্তু আজ ভালোবেসে সে তার ডক্টর এয়ারসিকে বিয়ে করেছে। রিমি অনেক্ষন যাবত অপেক্ষা করছে, কিন্তু এখনো অয়নের আসছে না। খানিক্টা অভিমানে রিমি গাল ফুলিয়ে বসে থাকে।
হুট করে একটা চিরকুট জানালা দিয়ে কেউ ছুড়ে ফেলে। রিমি পিছনে ঘুড়ে তাকিয়ে দেখে, ইটের সাথে একটি ছোট্ট চিরকুট পায়। রিমি চিরকুট টা হাতে নিৈ দেখে, অয়নের হাতের লেখা। রিমি মুচকি হাসে। দ্রুত তার বিছানার পাশে দেখতে পায় কালো একটি তাতের শাড়ি। রিমি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

পুলের চারিপাশে অজস্র ক্যান্ডেল লাইট দিয়ে পরিবেশ টা মুখরিত হয়ে রয়েছে। রিমি বাগানের শেষ অংশে চলে আসে। সেখানে বিশাল অংশ জুড়ে একটি পুল রয়েছে। রিমি কালো শাড়িটি পড়ে, সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পিছন থেকে কেউ ফিসফিস করে সুধায়,

‘ ইউ লুক সো মাচ চার্মিন। মাই লেডি। ‘

রিমি পিছনে না ঘুড়েও দিব্যি বুঝতে পারে, পিছনে অয়ন দাঁড়িয়ে। অয়নের ঘন ঘন নিঃশ্বাস রিমির পিঠে উপচে পড়ছে। রিমির পিঠে চুল ছুইছুই করছে। অয়ন রিমির চুলগুলো সরিয়ে, নিজের থুত্নি রিমির কাধে রেখে, দুষ্টু হেসে বলে,

‘ আজ আমার ভালোবাসায় পরিপূর্ন করে তুলবো আমাদের সম্পর্ক,কিন্তু আমার অফুরন্ত ভালোবাসায় কিন্তু বিষাক্তের ছোঁয়া রয়েছে। সহ্য করতে পারবে তো রিমিপরী? ‘

রিমি পিছনে না ঘুড়েই, তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে উত্তর দেয়,

‘ আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা এতোটাই তীব্র যে, আপনার বিষাক্ত ভালোবাসার বিষ আমি সাধরে গ্রহণ করবো। ‘

অয়ন রিমিকে তৎক্ষনাৎ রিমিকে কোলে নিয়ে, পাশে থাকা ছোট্ট রুমে নিয়ে যায়। অতঃপর রিমিকে সজ্জিত বিছানায় শুয়িয়ে দেয়। রিমির হাত আলতো করে চেপে ধরে, ললাটে ভালোবাসার স্পর্শ একেঁ দেয়। সময়ের সাথে সাথে নিঃশ্বাস ঘন হতে থাকে।পূর্নতার রেশ অবশেষে ঘিড়ে ধরলো রিমি এবং অয়নকে। তাদের মিষ্টি পূর্নতায় স্বয়ং চাঁদ মুখ লুকিয়ে ফেললো, কিন্তু হঠাৎ রাতে….

চলবে কী?

( এই পর্বটি দুইবার লিখতে হলো?আবার ও হুট করে আমার এক্সাম শুরু হয়েছে মানে কি একটা অবস্হায় আছি?চুরি করে গল্প লিখছি। তাড়াতাড়ি শেষ করে দিবো?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here