তুমিময় আসক্তি ২ পর্ব ৮

0
707

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“৮”

–” এত সেঁজেছো কেনো? হুট করে বলে উঠে রুদ্র৷ দোলা ছোট ছোট চোখ করে তাকায় রুদ্রর দিকে। বিয়েতে যাচ্ছো নাকি বিয়ে করতে? দোলা দাঁতে দাঁত চেপে শুধু তাকিয়ে থাকে রুদ্রর দিকে।
– শুরু হয়ে গেছে গন্ডার’গিরি৷ এই জন্য আমাকে ডেকে নিয়ে আসলো ঘরে। যাতে ইচ্ছে মতো কথা শোনাতে পারে। যাওয়ার আগে মুড নষ্ট না করলে তো হবে না উনার। মনে মনে বলে দোলা।
– কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না? এত সেঁজেছো কেনো? মানুষকে দেখাতে চাও তোমার সৌন্দর্য। আচ্ছা বাই এ্যানি চান্স! তুমি কি বিয়ে বাড়ি ছেলের ইমপ্রেস করার জন্য.. দেখুন ভালো হবে না কিন্তু। আমি মোটেও কোনো কিছু ভেবে সাঁজিনি। তাছাড়া আমি তেমন ভাবে সাঁজিনি। জাস্ট লেহেঙ্গাটা পড়েছি আর চুলটা খোপা করেছি৷ মুখটা ফ্যাকাসে করে বলে দোলা।
– এইটুকু বা কে করতে বলেছিলো তোমায়? এতেই তো চোখ ফেরানো দ্বায় হয়ে যাচ্ছে আমার বেশি সাঁজলে না জানি কি করতাম! মিনমিন করে বলে রুদ্র। দোলা কৌতুহলী হয়ে বলে কিছু বললেন?

– রুদ্র চমকে উঠে। গলাটা পরিষ্কার করে বলে হ্যাঁ বলেছি তো। শাড়ি না পড়ে লেহেঙ্গা কেনো পড়েছো?
– তানিয়া জোর করলো তাই। সোজাসাপটা জবাব দোলার।
– ও জোর.. রুদ্র কথা শেষ করার আগে রত্না চৌধুরী দোলাকে ডেকে উঠে।
– মা ডাকছে! নুয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে দোলা। রুদ্রর সামনে থাকতে একটু ইচ্ছে করছে না দোলার। মনটা ছটফট করছে কখন এখানে থেকে যেতে পারবে।
– শুনো একদম বাড়াবাড়ি করার চেষ্টা করবে না। যে কাজে যাচ্ছো সেটার দিকে ফোকাস দিবে৷ সব সময় মায়ের সাথে থাকবে৷ আর ছেলেদের আশেপাশে যেনো না দেখি৷ দোলা চোখ মুখ কুচকে তাকায়।
– ভেবো না আমি নেই বলে যা ইচ্ছে তাই করবে। আমার নজর সব সময় তোমার উপর আছে। সো মাইন্ড ইট।
– রাক্ষস একটা! সব সময় চোটপাট করা। ধুর মুড’টাই নষ্ট করে ছাড়লো। রুদ্রর দিকে চাহনি রেখে মনে মনে ভাবে দোলা।
– কি বললাম কথা কানে গেছে৷ দোলা ছোট করে হুম বলে। এর মধ্যে আবার রত্না চৌধুরী ডেকে উঠে দোলাকে।
– এবার তো আমি যায়৷ মা কিন্তু বকবে আমাকে। অস্ফুটস্বরে বলে দোলা।
– হ্যাঁ যাও৷ ধরে রেখেছে কে তোমাকে? গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে রুদ্র৷ এইদিকে দুই হাত দেয়ালে রেখে আবদ্ধ করে রেখেছে সে দোলাকে। দোলা রুদ্রর হাতের দিকে তাকিয়ে তেজী কন্ঠে বলে আমি কি আপনার হাতের উপর দিয়ে লাফিয়ে যাবো স্পাইডার ম্যান হয়ে?
– যদি পারো তাই যাও। তাছাড়া ওইটা স্পাইডার ম্যান নয় স্পাইডার ওম্যান হবে। রুদ্র কথায় দোলা বিরক্ত নিয়ে বলে সরুন তো। রুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় দোলা। এরপর দ্রুত পায়ে বেরিয়ে আসে৷ আসার আগে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠে আসলেই গন্ডার একটা । এরপর আর কে পাই দোলাকে। দোলার থেকে ওই কথাটা শুনে রুদ্র ভ্রু কুচকে বলে হোয়াট? কি বলে গেলো ষ্টুপিড। এরপর রুদ্র আনমনে হেসে উঠে।

— দোলারা বেরিয়েছে আধা ঘণ্টা মতো হয়েছে৷ এখনো রাস্তার মধ্যে আছে৷ দুইটা গাড়ি আসছে তাদের। একটায় জেসমিন চৌধুরী, রত্মা চৌধুরী আর তানভীর আহমেদ আছেন৷ আরেকটায় দোলা আর তানিয়া শুধু। দোলা বার বার গাড়ির পেছনে তাকাচ্ছে। তাই দেখে তানিয়া বিস্ময় নিয়ে বলে কি হয়েছে ভাবি? তুমি বারবার পেছনে ফিরে কি দেখছো?
– আমাদের কেউ মনে হয় ফলো করছে তানিয়া। দেখো পেছনে একটা কালো রঙের গাড়ি আমাদের ফলো করছে কখন থেকে। আমি সেই প্রথম থেকে লক্ষ্য করছি। কিছুটা চিন্তিতও দেখায় দোলাকে। দোলার কথায় তানিয়া মুচকি হেসে বলে ওইটা তোমার স্বামীর লোকজনের গাড়ি। আই মিন সিকিউরিটি গার্ডের।
– মানে? বিস্মিত চাহনি রেখে বলে দোলা।
মানে হলো এই যে! রুদ্রনীল চৌধুরী ওয়াইফ রাস্তায় বের হবে আর সেটা সিকিউরিটি ছাড়া। তাই আবার হয় নাকি। যদি কেউ তুলে নিয়ে যায় এত সুন্দরী বউ। তাই ব্রো একদম কড়া সিকিউরিটির ব্যবস্থা করে রেখেছে৷ রসিকতা করে বলে তানিয়া।

– ওও আচ্ছা৷ তা রুদ্রনীল চৌধুরীর বউ-ই কি শুধু রাস্তায় নেমেছে নাকি তার বোনসহ আছে বলে এত সিকিউরিটি ব্যবস্থা ব্যাপারটা ভাবার আছে। ভাবান্তর হয়ে বলে দোলা। দোলার কাহিনি দেখে তানিয়া শব্দ করে হেসে উঠে। তাই দেখে দোলাও হেসে দেয়।

— রাজ ফাইলটা রেডি তো? আর আধা ঘন্টা পর আমরা মিটিং-য়ে বসবো। আচ্ছা নাস্তার ব্যবস্থা কমপ্লিট না? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলে রুদ্র৷
-তুই একদম চিন্তা করিস না রুদ্র৷ সবকিছু রেডি আছে। শুধু উনারা আসলে ডিল ফাইনাল। আমি ফাইভ-স্টার হোটেল থেকে সব খাবার অর্ডার করে দিয়েছি। ওইখানে থেকে নাস্তা আর লাঞ্চের খাবার চলে আসবে। হাস্যজ্জ্বল মুখে বলে রাজ।
– আজ একবার ডিলটা ফাইনাল হয়ে গেলে আমার কোম্পানি দেশের এক নাম্বার পজিশনে অবস্থান করবে। অনেক দিনের স্বপ্ন আমার এটা৷ রুদ্রকে বেশ হাসিখুশি দেখায়।
– সামির চৌধুরী খুবই চেষ্টা করেছিলো ডিলটা তাদের কোম্পানিতে নেওয়ার জন্য। কিন্তু সফল হতে পারিনি৷ কারণ ওদের কোম্পানির আগে আমাদের কোম্পানি এগিয়ে আছে। তাই মিস্টার কেদারনাথ মজুমদার ডিলটা আমাদের দিতে রাজী হয়৷ তবে! কোনো ভাবে যদি আমরা ডিলটা মিস করি তাহলে এটা সামির চৌধুরীর কোম্পানিতে হ্যান্ডওভার করা হবে। সংকট নিয়ে বলে রাজ।

– তোর এখনো মনে হয় ডিলটা আমাদের হাত থেকে যাবে। আগে যখন যায়নি! এখনো যাবে না৷ চিন্তা করিস না। তুই মিটিং রুমে যা আমি আসছি। রাজ রুদ্রর কথায় বেরিয়ে যায়। রাজ যেতেই রুদ্রর ফোন বেজে উঠে। স্ক্রিনে তানিয়ার নাম্বার দেখে রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকায়।
– তানিয়া এই সময় ফোন দিলো কেনো আমায়? রুদ্র আর কিছু না ভেবে ফোনটা রিসিভ করতেই তানিয়া কান্নারত কন্ঠে বলে ব্রো! ভাবিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
– হোয়াট? খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মানে কি? তানিয়ার কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে যায় রুদ্র।
– জানি না ব্রো ভাবি কোথায় চলে গেছে৷ আমরা এখানে আসার পর একসাথে ছিলাম। ভাবি বলল তার নাকি ওয়াসরুম যাওয়া দরকার । মামি একজনকে ডেকে তার সাথে ভাবিকে পাঠিয়ে দেয়৷ আমি যদি ভাবির সাথে যেতাম তাহলে হয়তো এমন কিছু হতো না৷ অনেকটা সময় চলে যায় ভাবি আসেনা৷ আমি পুরো বাড়ি খুঁজে দেখেছি ব্রো ভাবি কোথাও নেই। এমনকি ভাবির ফোনটাও সুইচ অফ বলছে।

– রুদ্র চিন্তায় পড়ে যায়। টেনশনে ঘামতে শুরু করে। মাথায় কাজ করা বন্ধ করে দেয় যেনো তার৷ তানিয়া আবারও বলে ব্রো কিছু একটা করো। আমার মনে হয় ভাবি কোনো বিপদে পড়েছে। মামি চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছে।
তুই চিন্তা করিস না তানিয়া আমি দেখছি৷ মাকে সামলা। আমি দেখছি। দোলার কিছু হবে না। রুদ্র ফোন কেটে দিয়ে ওর পাঠানো সিকিউরিটিকে ফোন দেয়।
– তোমরা থাকতেও দোলা উধাও হয় কি করে। আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম এমন কিছু একটা হবে৷ তাই তোমাদের সাথে পাঠায় আমি। আর তোমরা কি করলে ড্যামিট। এই জন্য মাইনে দিয়ে রেখেছি তোমাদের আমি। চিৎকার করে বলে রুদ্র। ভীষণ রেগে যায় সে।
– সরি স্যার আমরা বুঝতে পারিনি এমন কিছু হবে। তাছাড়া আমরা কড়া গার্ড দিয়ে সবটা নজর রাখছিলাম। ম্যাম কোথায় কিভাবে গেছে কিছু বুঝতে পারছি না। রুদ্র ফোন কেটে দেয় রেগে। মাথা চেপে ধরে বসে পড়ে । রুদ্রর ঘড়ির দিকে তাকায়। আর মাত্র দশ মিনিট। এরপর মিটিং শুরু হবে৷ কি করবে রুদ্র ভেবে পাইনা৷ দোলাকে কিভাবে খুঁজবে কিছুই বুঝতে পারছে না।
– রুদ্রর ফোনে একটা এমএমএস আসে আননন নাম্বার থেকে। রুদ্র ফোনটা তাড়াতাড়ি করে হাতে তুলে ওপেন করতেই একটা ভিডিও দেখতে পাই। যেখানে দোলাকে অচেতন অবস্থায় চেয়ারে বাধা দেখা যাচ্ছে। রুদ্রর হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আসে৷ রাগে পুরো শরীর লালাভ ধারণ করে । ভিডিওটা শেষ হতেই ফোন আসে ওই নাম্বার থেকে। রুদ্র এক সেকেন্ডও দেরি করে না ফোন রিসিভ করতে।
– যদি তোমার বউকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতে চাও তাহলে ডিলটা ক্যানচেল করে দাও। ডিলের ফাইল একদম সাইন করো না। রুদ্র কন্ঠটা ভালো ভাবে বোঝার চেষ্টা করে। কার হতে পারে৷ কিন্তু রুদ্র ব্যর্থ হয়। একদম অচেনা একটা কন্ঠস্বর।

– আমি জানি তুমি সামিরেরই লোক। আমার ওয়াইফের যদি একটা ফুলের আঁচড়ও পড়ে তাহলে আমি একটাকেও ছাড়বো না বলে রাখছি৷ আর রইলো ডিল! যেটা তো আমি সাইন করবো আর আমার ওয়াইফকেও ফিরে নিয়ে আসবো। হুংকার ছেড়ে বলে রুদ্র।
– এর মধ্যে আবার রাজ ফিরে আসে। রুদ্রকে উত্তেজিত হতে দেখে রাজ ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে কি হয়েছে রুদ্র? রুদ্র আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে চুপ হতে বলে রাজকে৷ এরপর ফোনটা লাউডে দিয়ে রাজকেও শোনায়৷

– বেশি বাড়াবাড়ি একদম ভালো নয় মিস্টার চৌধুরী। বউকে যদি ভালোবেসে থাকেন, কাছে পেতেন চান আবারও তাহলে আমার কথা মানা ছাড়া কোনো উপায় নেই আপনার। রাজ অবাক হয়ে তাকায় রাজের দিকে৷ তাহলে কি শেষ পর্যন্ত ডিলটা হাতছাড়া হয়ে যাবে। ভাবতে থাকে রাজ।
লোকটা ফোন কেটে দেয় কথাটা বলে। রুদ্র রাগে আআয়া করে চিৎকার দিয়ে উঠে।
– শান্ত হো রুদ্র। আমি আগেই এই ভয়টা পেয়েছিলাম। এটা নিশ্চয় সামির চৌধুরীর প্ল্যান। এখন কি করবি রুদ্র তুই? ওরা তো চলে এসেছে৷ তাই আমি ডাকতে আসলাম তোকে। রুদ্রর মাথায় আগুন জ্বলে উঠে। জ্ঞ্যানশূণ্য লাগছে নিজেকে। কি করবে? সত্যি যদি দোলার কোনো ক্ষতি করে দেয় তাহলে?
— রুদ্র সামিরকে ফোন দেয়। দুইবার রিং হতেই সামির ফোন ওঠায়।
– আরে কেয়া বাত-হে! স্বয়ং রুদ্রনীল চৌধুরী আমাকে ফোন করেছে দেখছি। আজ সূর্য কোনদিকে উঠেছে ইয়ার।
– বাজে বকা রাখ সামির। রসিকতা করার অবস্থায় নেই এখন। দোলাকে কোথায় রেখেছিস তুই? আমি জানি দোলাকে তুই নিয়ে গেছিস। দোলাকে টাচ করার একদম চেষ্টা করবি না তুই। তাহলে কিন্তু এর ফল
ভালো হবে না। রুদ্রর কথায় সামির অবাক হয়ে বলে কি বলছো এইসব রুদ্র! আমি কেনো দোলাকে নিয়ে আসবো। তাছাড়া কোথায় আছে দোলা? কি হয়েছে ওর?
– একদম ন্যাকামি করবি না তুই। আমি জানি তুই-ই নিয়ে গেছিস দোলাকে। যাতে করে আমি ডিলটা সাইন না করি। কারণ ডিলটা আমার হাত থেকে বেরিয়ে গেলে সেটা তুই পাবি।
– বিশ্বাস করো রুদ্র আমি জানি না দোলা কোথায়। ইনফ্যাক্ট আমি দোলাকে তুলে নিয়ে আসিনি। ওকে নিয়ে আর যাই হোক কোনো খেলা আমি করবো না। তোমার সাথে ঝামেলা আমার ওর সাথে নয়।
– সামিরের কথায় রুদ্র আরো চিন্তায় পড়ে যায়।
– তার মানে সামির সত্যি জানে না দোলা কোথায়? তাহলে দোলাকে কে নিয়ে গেলো? কোথায় আছে দোলা। রুদ্রর মধ্যে হতাশা গ্রাস করে।

— আমি এখন কোথায় খুঁজবো দোলাকে রাজ? কে নিয়ে গেছে দোলাকে কিছুই বুঝতে পারছি না।
– আমরা কি তাহলে মিটিংটা ক্যানচেল করে দেবো রুদ্র? অসহায় কন্ঠে বলে রাজ। রুদ্র আহত চোখে তাকায় রাজের দিকে।

— অন্ধকার রুমে চেয়ারে বসে আরামে দোল খাচ্ছে একজন। ঠোঁটের কোণে প্রত্যাশিত উজ্জ্বল হাসি। হাতের একটা আঙ্গুল দিয়ে চেয়ারের চারিপাশে আকিঁবুকিঁ করছে।
– তোমার ধারণাও নেই রুদ্র, তোমার প্রাণ পাখি কার খাচায় বন্দী আছে। তুমি উন্মাদ হয়ে যাবে আমাকে খুঁজে বের করতে গিয়ে। দিশেহারা হয়ে পড়বে৷ আমি তোমার হেরে যাওয়া লুকটা দেখতে চাই রুদ্র। তোমার কষ্টে কাতর হওয়া আমি দেখতে চাই।

– তুমি দোলাকে তুলে নিয়ে এসেছো তাই না? রাগী কন্ঠে বলে সামির। সামিরকে দেখে চেয়ারে থাকা ব্যক্তি বেশ প্রফুল্লচিত্তে বলে আরে সামির যে! আমি তো তোমারই অপেক্ষা করছিলাম। বসো বসো ফিসফিস কন্ঠে বলে ব্যক্তিটি।
– আমি এখানে বসতে আসিনি। তুমি দোলাকে কেনো তুলে নিয়ে এসেছো বলো। আমি তোমাকে বলেছি না দোলাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করবে না। ওর যেনো কোনো ক্ষতি না হয়। তাও কেনো তুমি এইসবে টেনে নিয়ে এসেছো ওকে। বলো দোলা কোথায়? আমি এখনি নিয়ে যাবো ওকে।
– কাম ডাউন সামির। এত উত্তেজিত কেনো হচ্ছো তুমি? দোলা ঠিক আছে আর যেখানে আছে অনেক ভালো আছে। কোনো ক্ষতি হবে না দোলার ট্রাস্ট-মি।
– তাহলে কেনো নিয়ে এসেছো দোলাকে জবাব দাও।

— চেয়ারে থাকা ব্যক্তিটি উঠে দাঁড়ায়। জানালার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বাইরে দৃষ্টি রাখে। সামিরের যেনো রাগটা তরতর করে বাড়তে থাকে।
– শুনো সামির! আমি যা কিছু করেছি সব তোমার ভালোর জন্য করেছি। মুচকি হেসে বলে সে।
– মানে? কৌতুহলী হয়ে বলে সামির।
– মানে! রুদ্র আজ একটা ডিল ফাইনাল করছে জানো তো? যেটা অনেক বড় একটা ডিল। এই ডিলটা যদি রুদ্র আজ সাইন করে তাহলে ওর কোম্পানি আকাশচুম্বী হয়ে উঠবে। মানে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বুঝতে পারছো তুমি আমরা কতটা পিছিয়ে যাবো তাহলে। এরপর তো আমরা কিছু করতেই পারবো না রুদ্রর এগেইন্সটে।
– আমি চাই রুদ্র ডিলটা ক্যানচেল করুক। যার জন্য দোলাকে নিয়ে আসা। কারণ দোলাকে না নিয়ে আসলে রুদ্রকে থামানো যেতো না। আমি চাই রুদ্র মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ুক। গো-হারা হারবে রুদ্র। আমি চাই রুদ্র ভেতর থেকে ভেঙেচূড়ে শেষ হয়ে যাক। আমি কোনো ভাবে ওকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবো না। আমার পায়ের নিচে এনে ফেলতে চাই। রুদ্র ডিলটা বাতিল করলে সেটা তোমার কোম্পানি পাবে অনায়াসে। কটাক্ষ কন্ঠে বলে।

– তার মানে বলতে চাইছো যে! দোলাকে জাস্ট গুটি হিসেবে ইউজ করেছো তুমি?
– ইয়েস বেব! ইন্টেলিজেন্ট বয়। বুঝতে পেরেছো তাহলে।
– দোলার কোনো ক্ষতি করবে না তুমি? ভ্রু কুচকে বলে সামির।

নো। একদম নয়। রুদ্র আমার কথা মতো ডিলটা ছেড়ে দিলে আমি দোলাকে মুক্ত করে দেবো।
– সামির এতখনে শান্তি পাই ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে।
– থ্যাঙ্কিউ আমার জন্য এতকিছু করার জন্য। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে সামির।
– তুমি তো আমার সব সামির। আলাদা করে থ্যাঙ্কিউ দেওয়ার কি আছে। এখন যাও রুদ্রর প্রতি নজর রাখো। আমার মনে হয় রুদ্র এতখনে ডিলটা ক্যানচেল করে দিয়েছে কথাটা বলে শব্দ করে হেসে উঠেন তিনি।

— দোলা এখনো সেন্সলেস অবস্থায় আছে। পাঁচ- ছয়জন পাহারা দিচ্ছে দোলাকে ঘরের বাইরে। গোডাউন মতো একটা জায়গায় দোলাকে এনে রাখা হয়৷ কিন্তু ভেতরে ঘরের ব্যবস্থাও আছে।
– হঠাৎ একদল মানুষ এসে হামলা করে পাহারা দেওয়া লোকগুলোর উপর। তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলে পড়ে তারা। ঘাবড়ে যায় সবাই। এরপর রুদ্র প্রবেশ করে ভেতরে। চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝরছে রুদ্রর। শরীরের প্রতিটি রগ ফুলেফেঁপে আছে ক্রোধে।

রুদ্র সামিরকে বিশ্বাস করলেও পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। তাই রাজকে মিটিং সামলাতে বলে রুদ্র সামিরের ফোন ট্রেক করে এখানের লোকেশন পাই। কারণ সামির দোলাকে দেখার জন্য আসে একবার। রুদ্র অল্পবিস্তর জানতো এই গোডাউন সম্পর্কে। তার জানা মতে এখানে কেউ আসে না খুব একটা। যেহেতু সামির এসেছে কোনো কারণ আছে। তাই রুদ্র অনুমান করে এখানে আসে। আর তার অনুমানই ঠিক হয়।

– চলবে..

– ❌❌কপি করা নিষেধ ❌❌ আজ বাইরে যাওয়ার কথা ছিলো। তাই গল্প দেবনা বলেছিলাম। কিন্তু সেটা আগামীকাল হয়ে গেছে আবার। যার জন্য আজ দিলাম গল্প আগামীকাল শিওর দিতে পারবো কি-না জানি না। ভুলক্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষে বিবেচনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here