তারকারাজি- (১৫)
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী
বিকেলের অনন্য রূপের স্তুতিবাক্য লিখেন-নি, এমন কোনো কবি-সাহিত্যিক আছেন কি-না জানা নেই নীলাশার। বা এই দুনিয়ায় এমন কোনো রমণী দ্বিতীয়টি আছে, যে কি-না না-হওয়া এক বান্ধবীর জন্যও মন খারাপ করে বসে থাকে… তা-ও জানা নেই নীলাশার। স্বর্ণাভ রোদে যেমন বদ্ধ জলাশয়ের থৈথৈ জল চিকচিক করছে, তেমন-ই স্বর্ণাভ সূর্যালোকে ঝকমকিয়ে উঠছে নীলাশার বিষণ্ণ মুখ। নীলাশার আজ হঠাৎ করেই নিজের বাবা-মায়ের মতো মনে হচ্ছে, বন্ধুত্ব নিয়ে এতটা বাড়াবাড়ি করা স্বাস্থ্যের জন্য মাত্রাতিরিক্তভাবে ক্ষতিকর। নীলাশার মনে হয় যে, বিষাক্ত ড্রাগসের নেশা কাটানো যায়। কিন্তু বন্ধুপ্রিয় মানুষের মন থেকে বন্ধুপ্রিয়তা দূর করা মানবজাতির জন্য অসম্ভব প্রায়! সে যাইহোক, চকিতেই রোদের কড়া ঝাপটায় নীলাশা তার অবসন্ন চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। তিরতির করে কাঁপতে দেখা যায় বিষাদপ্রিয়ার গলদেশের মধ্যিখান। পাশ থেকে উদ্দীপ্ত পিহুর কণ্ঠ আসে,
“ ওই মেয়ে! মুখ কালো বানায় রাখছিস ক্যান? ”
পিহুর প্রশ্নে চোখ মেলে তাকায় না নীলাশা। সে শুনতে পায় কলকল জলধ্বনি, ঝাঁকে ঝাঁকে ঘুরে বেড়ানো পাখিদের কিচিরমিচির আর একদল প্রসন্ন ছেলেদের আলাপচারিতা। নীলাশা যখন এ-পথ দিয়ে যাচ্ছিল তখনই নিশান ধমকি-ধামকি দিয়ে তাদের সাথে নীলাশাকে বসতে বলে। যদিও একদম-ই তাদের সাথে না কারণ, নিশানরা ছিল আরাভের পুরো বন্ধুদলের সাথে৷ তাদের থেকে বেশ অনেকটা দূরে বসে আদ্রাফের সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত পিহুর পাশেই জায়গা নিতে হয়েছে নীলাশার। নিশানের কথা যে খুশি মনে মেনে নিয়েছিল সে, তা নয়। বরং তাদের এই নিয়ে কথা কাটাকাটির মাঝে যখন আরাভ বলেছিল,
“ নীলা, এতো জেদ কিন্তু ভালো না। একা একা ঘুরে কী করবা তুমি? পিহুর সাথে বসো, যাও। ”
তখন নীলাশার কী যেন হলো! সেই মুহূর্তে এই ব্যক্তির আদেশ মান্য করাই তার একমাত্র কর্তব্য বলে মনে হয়েছিল। নীলাশার বিষণ্ণ মুখ পড়তে পেরেছিল আরাভ। কিন্তু মানুষ কি আর মানুষের মনের কথা নিখুঁতভাবে পড়তে পারে? আরাভও পারেনি সেই বিষণ্নতার পিছনের কারণটি পড়তে। তবে হ্যাঁ, সেই মুহূর্তে নিশান-রিশানদের উপর বিরক্তটা কম হয়নি নীলাশা। অনেকদিন আগে সে একবার প্রশ্ন করেছিল,
“ আচ্ছা, তোরা জুনিয়র মানুষ জুনিয়রদের সাথে মিশবি। সিনিয়রদের সাথে কেন এতো আড্ডাবাজি তোদের? কলেজেও কোন-কোন সিনিয়র ভাইদের সাথে চলাফেরা করতি আর এখন ভার্সিটিতেও। ”
রিশান তখন হেসে উত্তর দিয়েছিল,
“ বিদেশ ফেরত ছাত্রী হইলে যা হয়! শোন, এই দেশের স্কুল থেকে শুরু করে চাকরি-বাকরির স্টেজ পর্যন্ত একটা কমন বিষয় আছে। সেইটা হলো জুনিয়র-সিনিয়র ভাইদের বণ্ডিং। আমরা তো সেই স্কুল লাইফ থেকে ভাইদের সাথে মিশতাম। আবার আমাদের নিচেরগুলার সাথেও মিশতাম। তুই তো এই দেশের স্কুল লাইফ পাস নাই তাই জানোস না। ”
নীলাশার কাছে খুব অদ্ভুত লেগেছিল এই কথাটা। পরে অবশ্য হাতেনাতে বিষয়টার প্রমাণ পেয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন আসে, মেয়েদের মাঝে এমন সম্পর্ক হয় না কেন? এই উত্তর নীলাশার জানা নেই। সে খেয়াল করেছে, অনেক মেয়ে হিংসা না-করলেও নিজের জুনিয়র অথবা সিনিয়র মেয়েদের সাথে মিশতে পারে না যেমনটা একজন ছেলে পারে। কিন্তু কেন বিষয়টা এমন? বর্তমানে ঘাটের কাছে বসে কথাটা আবারও ভাবতে থাকে নীলাশা। ঠিক তখনই রিশান ডেকে উঠে বলল,
“ ওই নীলের বাচ্চা! কহন থেকে বলতাছি এদিক আয়, কথা কি শুনোস না? ”
চকিতেই নীলাশা চমকে তাকায়। পিহু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে তার জন্য। ওদিকে মিশমিও এসে গেছে সেই কখন! নীলাশা আর পিহুও উঠে আগের থেকে অল্প দূরত্ব বজায় রেখে, মিশমির পাশে বসে পড়ে। তখনই নিশানকে বলতে শোনা যায়,
“ মুখেরে হাড়ি বানায় রাখছোস ক্যান তুই? ”
নীলাশা উত্তর দেয় না। দৃষ্টির উদাসীনতা হারিয়ে ফেলে পলকা মেঘের গায়ে। সেই সময় পিহু কেমন বিজ্ঞদের মতো বলল,
“ আরে, ও ছিল তো সানামের সাথে। দেখ ওরা দুই আইলা-সুনামি মিলে লাগালাগি করে আসছে। ”
মিশমি মিনমিনে গলায় বলল,
“ এইভাবে বলতেছিস কেন? ওরা তো ভালোই ছিল একসাথে। তোরা তিনজন ইচ্ছা করে ওদের মাঝে ঝামেলা বাজায় দেস। আম্মু তো বলে, মানুষের মাঝে ইচ্ছা করে ঝামেলা বাজায় দিলে সম্পর্ক নষ্ট হয়। আর তোরা তো ওদের পিছেই সুপার গ্লুয়ের মতো চিপকায় থাকিস। ”
রিশান ঝাড়ি মেরে উত্তর দিল,
“ ঝাণ্ডুবাম! এতো হাম্মা-হাম্মা করিস ক্যান তুই? তোর মায়ের আলাপ শুনতে শুনতে কান পঁচে গেল আমার। একদিনের জন্য তো অফ যাইতে পারোস? আরেকবার হাম্মা-হাম্মা কইরা দেখ। সোজা পানিতে ফেলে দিমু এইবার। ”
“ হু, ভালো কথা তো ভালো লাগবেই না তোদের। খালি গণ্ডায় গণ্ডায় সিগারেট টানতে দাও আর বাইকের তেল ভরায়ে দাও! আরেকবার আসিস বাইকের তেল ভরানোর টাকা চাইতে! ”
নিশান বিস্মিত হওয়ার চেষ্টায় অভিনয় করে বলল,
“ ওরে বাপ রে! আমি তো জানতাম আমাদের নীল আলালের ঘরের দুলালি। কিন্তু এহন তো দেখি ওই ওর টাকার ফুটানি দেখায় না, তুই দেখাস রে মাদারবোর্ড। বলি এটাও তোর আম্মু শিখায় দিছে যে বাপের টাকার ফুটানি দেখায়ে চলবি? ”
মিশমি মুখ কালো করে তাকাল। ভীষণ নিচু স্বরে বলল,
“ আমি এগুলা কিছু মিন করি নাই নিশান। কেন কথাকে উল্টা দিকে ঘুরায় দেস? আম্মুর ব্যাপারে কিছু বললে আমি চলে যাব এক্ষুনি। তুই জানোস আম্মু তোদের কতটা গুরুত্ব দেয়? আর তোরা আম্মুকে নিয়ে খালি… ”
রিশান হাসে, “ সেইটা তো তার সুন্দরী মেয়েরে পাহারা দেওয়ার জন্য দেয়। নইলে তোর যা মাও! তোরে তো আঙুলে-আঙুলে নাচায়। দেখা যাবে তোর জামাইরে তোর মাও বলতাছে যে, ‘ জামাই! আমার মেয়ে যেন একটুও কষ্ট… ’ আচ্ছা পরের টুকু না বলাই শ্রেয়! ”
তখনকার হাসাহাসি থামল মিশমির কাঁদোকাঁদো মুখের দিকে তাকিয়ে। রিশানের অসমাপ্ত কথাটা যে কী পরিমাণ অশ্লীল ছিল তা মিশমির এবার-ই নতুন করে জানা নয়। তবে রাগটা হচ্ছিল তখন যখন এই অসমাপ্ত অশ্লীল বাক্যটি আরাভরা সকলে বুঝে নিয়েছিল তাদের নিজস্ব ভাষ্যমতে। মিশমি মোটেও পছন্দ করে না কোনো বাইরের মানুষের সামনে নিজেদের বন্ধুমহলের ভিতরকার কথা বলতে। তাই রাগে-দুঃখে, লজ্জায় তুষারশুভ্র মুখটা লাল-ই করে ফেলেছিল মিশমি। মিশমির নত মুখের আড়ালে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া নোনাজল যখন টুপ করে ভিজিয়ে দিল মেয়েটির উরুর উপর পড়ে থাকা গোলাপি ওড়নার অংশ, তখন-ই তা খেয়াল করে ইশারায় সবাইকে চুপ করিয়ে দিল রিশান। নীলাশাকে বলতে শোনা গেল,
“ বাদ দে তো মিশা! জানিস-ই তো ওরা ওইরকম। খালি কলসি বাজে বেশি। ”
রিশানও এইবার নিশানের মতো অভিনয় করে বলল,
“ ওররে ব্রিটিইশ্শা! তুই তো দারুণ বাংলা শিখে গেছোস বান্ধবী। আমারে একটু শিখাইবি না-কি? ”
আবারও একতরফা হাসাহাসি হলো। নীলাশা বিরক্তিপ্রকাশক কোনো উত্তর দিবে ঠিক সেই সময় পিছন থেকে কারো হ্যাঁচকা টানে কেঁপে উঠল সে। তার মনে হলো যেন কেউ তাকে এই জলাশয়ে ফেলতে চেয়েছিল! নীলাশা কম্পিত বক্ষে হাত রেখে পিছনে তাকায়। দেখে, হেলমেট মাথায় সানাম তার আরেকটি হাত ধরে টানছে এবং বলছে,
“ নীলশাক, ওঠ তো। তোর সাথে আমার কথা আছে। ”
সানামকে এভাবে দেখে সবাই খানিকটা বিস্মিতই হলো বটে! নিশান সানামের পিছনে উঁকি দিল। একটু আগেই এখানে বাইকের শব্দ শুনেছিল। সানাম যে বাইক চালাতে পারে তা তাদের দুই ভাইয়ের জানা কথা। তারা এটাও জানত সানামের নিজস্ব কোনো বাইক নেই। নিজের চাচাতো ভাইয়েরটা চালাতো এককালে। কিন্তু এই মেয়ে বাইক পেল কোথায়? নিশান প্রশ্ন করে,
“ ওই ছেড়ি! কার বাইক ছিনতাই করলি তুই? ”
সানাম নীলাশার হাত ছেড়ে দাঁড়াল। ব্যস্ত ভঙ্গিতে হাতের ঘড়িটি দেখে নিয়ে বলল,
“ তিহাম ভাইয়ের টা। ”
বিস্ময়ের উপর বিস্ময় এসে জমা হলো সবার মস্তিষ্কে। সাইফ-ও দেখছে সানামের কাণ্ডকারখানা। আর আন্দাজও করতে পারছে যে, সে এখানে আছে বলেই সানামের যত তাড়া! তখন মিশমিকে মিনমিনিয়ে প্রশ্ন করতে শোনা যায়,
“ তুই চাইলি আর সে দিয়ে দিল? ”
সানাম মেকি হাসে। সে বুঝতে পারে যে, তিহাম আর তার একটা নামহীন সম্পর্ক আছে তা আরাভদের বুঝতে না-দেওয়ার জন্যই মিশমির এইভাবে কথা বলা। তাই সানাম উবু হয়ে মিশমির কানে-কানে বলে,
“ পটায় নিছি তোর জামাইরে। বলছি, সে বাইকটা এক ঘন্টার জন্য দিলে তুই ওরে আই লাভ ইউ বলবি। আর মজনু চ্যাংড়া তোর প্রেমে পাগল হয়ে আমারে বাইকটা দিয়ে দিল। দারুণ না ব্যাপারটা? ”
মিশমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল সানামের দিকে৷ কত সহজেই ব্যাপারটা বলে দিল সে। অথচ মিশমি কি-না জবুথবু হয়ে বসে রইল এই কথা শুনে। তিহাম নিশ্চয়ই তাদের সম্পর্কের কথাটা বলে দিয়েছে সানামকে। মিশমির পেটে তো একটু হলেও কথা থাকে। কিন্তু এই ছেলের তো তা-ও থাকে না! মিশমিকে কথাটা বলে, সানাম সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পিহু জিজ্ঞাসা করল,
“ দোস্ত আমাদের বলবি না? এখানেই বল না! সবাই শুনি। ”
“ না, এখানে বলা যাবে না। আসলে কী বল তো? ধবধবা সাদা বন্যপ্রাণীতে আমার এলার্জি আছে। তাই এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেও গায়ে জ্বালা করছে রে! তোদের পরে বলব। ”
কথাটা যার গায়ে লাগার তা লেগেই গিয়েছে। কিন্তু সেই ব্যক্তি একটা ‘টু’ শব্দও করেনি। কেন যেন তার রাগ হলো না এই কথায়! কিন্তু অন্যদিকে মিশমি মুখ কাঁচুমাচু করে বলে উঠল,
“ তুই কি আমাকে মিন করলি দোস্ত? ”
পিহু মিশমির পেটে আলতো করে খোঁচা দেয়। ফিসফিসিয়ে বলে,
“ হাবলি, নিজেকে বিশ্বসুন্দরী ভেবে বসে থাকিস কেন এতো? যারে মিন করছে সে শুইনে নিছে। তোর এতো প্যানপ্যান করা লাগে ক্যান? ”
মিশমি শান্ত হয়ে বসল। সেই নির্দিষ্ট মানুষটির দিকে লুকিয়ে-চুরিয়ে তাকাতেই একদম হাতেনাতে ধরা পড়ে গেল। সাইফ বুঝতে পেরেছে যে, তারা দুজন তাকে নিয়েই কথা বলল। কিন্তু এবারও সে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করল না৷ এদিকে তাড়া পড়ল নীলাশার,
“ নীলশাক, উঠে আয় না ভাই! তিহাম ভাইরে তো আবার চাবিটা ফেরত দেওয়া লাগবে। ”
নীলাশা উঠে দাঁড়াল। অত্যন্ত ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
“ মাই ন্যাইম ইজ নীলাশা। ডোন্ট কল মি নীলশাক, লালশাক, পালংশাক। একটু আগে কী বলছিলা মনে নাই? এখন কেন কথা বলতে এসেছো আমার সাথে? নিজে তো পাটশাক আর আমায় ডাকে নীলশাক, হাহ্! যেমন তিতা মানুষ ওইরকম তিতা-তিতা কথা তার। ”
নীলাশার কথা শুনে হাসির আওয়াজে মেতে উঠল পরিবেশ। পিহু যেন হাসতে-হাসতে জলে পড়তে গিয়েও পড়ল না, ধরে ফেলল মিশমি। সানাম এগিয়ে এসে নীলাশার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগল। নীলাশা বাঁধা দেয়নি একটুকুও। অনাকাঙ্ক্ষিত এক প্রশান্তির দোলায় মুহূর্তেই মনটা প্রাণবন্ত হয়ে গেল। তবে মুখে আঁটল অভিমানিনীর অভিনয়। সানামকে বলতে শোনা গেল,
“ একটা বললে তোর দশটা উত্তর দেওয়া লাগবে ক্যান? ভাঙা রেডিওর মতো ভ্যা-ভ্যা, প্যা-প্যা না করলে কি তোর চলে না? ”
নীলাশার উত্তর শুনতে পারে দুই বন্ধুদল,
“ না চলে না। আর যাইহোক, তোমার মতো ফালতু কথা তো বলি না। আর কোথায় যাচ্ছি আমরা? তুমি বাইক চালাতে পারো তো? ”
“ পারি শুধু? উড়াইতেও পারি। দেখবি না-কি? ”
“ না থাক, মরতে চাই না আমি। এমনিই তো তোমার মতো টর্নেডোর সাথে যাচ্ছি! ”
“ এই শোন? আমার নামে ফালতু কথা বললে কিন্তু সত্যিই তোরে উড়ায় দিব। আমি সানাম, এতো মায়া-দয়া আমি দেখাইতে পারি না। ”
দুই যুবতীর কথাগুলো দূর থেকে বহুদূরে মিলিয়ে যায়। বিকেলের শৈত্য হাওয়ায় অস্পষ্ট হয়ে যায় তাদের কণ্ঠ। বাইকের মহাবিরক্তিকর আওয়াজটা হারিয়ে যায় রাস্তার বাঁকে। কয়েক জোড়া চোখ সেই পানে তাকিয়ে থেকেই পুনরায় শুরু করে তাদের বাঁধ না মানা আড্ডা। অত্যন্ত কৌতুহলী মিশমি বলে,
“ এরা দুইটা একটু আগেই ঝগড়া করে আসলো। এখনও কি ঝগড়া করতে গেল না-কি? ”
রিশান মিশমির মাথায় সজোরে চাটি মেরে বলল,
“ হাই রে ঝাণ্ডুবাম! ঝগড়া করার জন্য কেউ এইরকম করে ডাইকে নিয়ে যায় না-কি? অবশ্য করতেও পারে। সাধে কি পিহু বলে যে, আইলা আর সুনামি! ”
এই কথা শুনে পিহু হাসতে-হাসতে ঢলে পড়ে মিশমির উপর। ফিসফিসিয়ে অভিনয় করে বলে,
“ দোস্ত, যদি তোর কথা-ই সত্যি হয় তো ভাবছিস কী হইতে পারে? আইলা আর সুনামির মাঝখান থেকে তিহাম ভাইয়ের বাইকটা শ্যাষ! ”
মুহূর্তেই সরলমনা মিশমির মুখ কালো হয়ে যায়। মিশমি জানে যে, এমন কিছুই হবে না। তাও যেন মনে শান্তি আসে না। ছেলেটাকে তার জন্য এত পাগল হতে কে বলেছিল যে, সানামকে বাইকটার চাবি দিয়ে দিতে হলো? মিশমি বিড়বিড় করে বলে উঠে,
“ চারদিকে সবগুলাই পাগল! সানাম এক পাগল, নীল এক পাগল, তিহাম এক পাগল আর আমিও কম পাগল না! সত্যিই তো, এতো মিষ্টি-মিষ্টি করে ডেকে নিয়ে কোন আবালে ঝগড়া করে? আবার করতেও পারে। একটা তো আইলা, আরেকটা সুনামি। অসম্ভব কিছুই না। মাঝখান থেকে তিহামের বাইক বাবাজীবন বিপদে, ধুর! ”
#চলবে ইন শা আল্লাহ!