তারকারাজি সিজন 1 পর্ব-১৩

0
270

তারকারাজি- (১৩)
লেখনীতে- অহনা নুযহাত চৌধুরী

পিহুর ফোনের পর্দায় চোখ রেখে অবিচলে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেল সাইফকে। অত্যন্ত গোপনে বক্ষস্থলে ভার অনুভব করতে লাগল সে। দীর্ঘ কয়েক দিনের আক্রোশ মুহূর্তেই কেমন সংক্ষিপ্ত হতে লাগল তার কাছে। পিহুর দেখানো ছবিটা ছিল একটা ডায়েরির পাতার। যাতে লেখা,

‘ আব্বু? আম্মু? যখন বাবা-মা হিসেবে দায়িত্বই পালন করার সুযোগ পাবে না তখন জন্ম কেন দিছো? এখন তোমরা তো মৃত। তাহলে কেন এখনো আমার তোমাদের দেওয়া দায়িত্ব পালন করতে হয়? এটা কেমন জঘন্য নিয়ম বলতে পারবা কি তোমরা? তোমরা শিখায়ছো, কখনো মা-বাবাদের কষ্ট দিতে হয় না সেইটা নিজের হোক কি অন্যের। আমি সেই দায়িত্ব পালন করেছি। তাহলে সাইফ কেন আমার ক্যামেরা ভাঙলো? আমার প্রিয় জিনিসগুলা কেন আমার থেকে কেড়ে নেওয়া হয় বলো তো? আমি তো পারলাম না তোমাদের দেওয়া শিক্ষা ভঙ্গ করে সাইফের সাথে বিবাদটা চালিয়ে যেতে। তাহলে ওই ছেলেটা কেন সাহস করল আমার প্রিয় জিনিসটাকে ভেঙে, আস্ত আমিটাকেই ভেঙে দেওয়ার? Revenge of nature বলে একটা কথা আছে। তাহলে কি চুরির টাকায় ক্যামেরা কিনছিলাম দেখে এমন শাস্তি হলো আমার? নিষ্ঠুর সাইফ না, নিষ্ঠুর তোমরা। জন্ম দিয়ে কেন আমার পাশে থাকলা না? আমি কেন অনাথ হলাম বলো? তোমরা আমাকে জন্ম না-দিলে হয়তো কোনোদিনও হারাতে হতো না আমার নিজের বাবা-মাকে। টাকা চুরি করে ক্যামেরা কিনতে হতো না, হারাতে হতো না সেই ক্যামেরাটাকে। কোথাও কারো দোষ নেই। দোষটা আমার আর তোমাদের। তোমরা তো সেই কবেই ভুলে গেছ আমাকে। আমি কেন ভুলি না? তোমরা জানো তোমাদের মেয়ে এখন viral girl? তাকে নিয়ে ট্রোল করা হচ্ছে ভার্সিটিতে? প্রতিশোধ নিতে গিয়েও থেমে গেছি শুধু তোমাদের শিক্ষার জন্য। নিজেকে একদম নিঃস্ব করে দিছি শুধু তোমাদের জন্য। কেন করলা আমার সাথে এটা? জন্ম না দিলে কি হতো না তোমাদের? দিয়েছ যখন তখন আমিও কেন মরে গেলাম না? কেন এত নিষ্ঠুরতার শিকার হলাম আমি? সব তোমাদের দোষ, সব তোমাদের। আমি কী-করে আবার সবকিছু ফিরে পাব বলতে পারো তোমরা? অবশ্য পারবে কী-করে? তোমরা তো মরে গিয়ে দায়মুক্ত হয়ে গেছ। আর আমি? নিজের মান-সম্মান, শখের ক্যামেরা, বন্ধুত্ব, আত্মমর্যাদা এভরিথিং বিলিয়ে দিয়ে কি-না অন্যের মা-বাবাকে অসম্মানের হাত থেকে বাঁচিয়ে সমাজ সেবা করছি। খুব খুশি তো এবার তোমরা? ’

সানামের ব্যক্তিগত ডায়েরির এই পাতার ছবি তোলার উদ্দেশ্য-ই ছিল সাইফকে একটা শক্তপোক্ত ধাক্কা দেওয়া। রাগের উত্তাপে এই সমাজের মানুষ ও মানুষের মানসিকতাকে ভুলে বসেছে সাইফ। পিহু জানে যে, এই ডায়েরির পৃষ্ঠা কোনো কিছুর সমাধান হতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, সানামের অভিযোগ তুলে নেওয়া নিয়ে মশকরা করাটা তো বন্ধ করানো যাবে? তা-ই ঘটল অবশ্য। ফোনটা সরিয়ে নিয়ে পিহু খুব গুরুগম্ভীর গলায় বলে উঠল,

“ আশা করা যায় আপনি এতটাও মূর্খ না যে, লেখাটা পড়তে পারবেন না। আপনারা তো গোটা ভার্সিটিতে রাজনীতি করে বেড়ান। তাই বলে কোনো মেয়ের মন-মানসিকতা, ফিলিংস এমনকি তাদের গায়ের উপর দিয়েও নিজেদের রাজনীতি চালা… ”

পিহু নিজের কথা শেষ করার আগেই কে যেন তার হাতটা খপ করে ধরে ফেলল। মিশমি বাঁধা দিচ্ছে তাকে। মিশমিকে ফিসফিসিয়ে বলতে শোনা গেল,

“ ছিঃ পিহু! এইসব কী ধরণের ব্যবহার করছিস ভাইয়াদের সাথে? মানুষ নাই, জায়গা নাই… এমন সব কথা বলিস কেন যাতে লজ্জায় মাথা কাটা যায়? ”

বান্ধবীর এই বাঁধায় পিহুর রাগ এবার তুঙ্গে উঠে গেল। সে আবারও কিছু কড়া কথা বলবে বলে প্রস্তুতি নিতেই মিশমি দৃষ্টি নত করে বলল,

“ মাফ করবেন সাইফ ভাই। তবে এটা সত্য যে, সানামের এতে যতটা না দোষ আছে তার থেকেও বেশি দোষ আপনাদের আছে। আচ্ছা, আপনার তো বোন আছে। নিজের বোনকে গিয়ে একটা বার জিজ্ঞাসা করবেন তো যে, সানামের সাথে যা ঘটছে তা তার সাথে ঘটলে সে কী করতো? বিশ্বাস করতো কয়েকটা অচেনা-অজানা ছেলের কথা? আমার মনে হয় না কোনো মেয়ের পক্ষে এই যুগে এসেও এটা বিশ্বাস করা সম্ভব যে, এটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল। কিন্তু সানাম শেষে বিশ্বাস করছিল আপনাদের৷ কারণ আপনাদের ব্যাকগ্রাউণ্ড সম্পর্কে এই ভার্সিটির কার কতটা জানা আছে তা আমার জানা না থাকলেও সানাম যে আগে থেকেই আপনাদের সম্পর্কে… স্পেশালি আপনাদের ক্যারেকটার সম্পর্কে জানত, তা আমাদের জানা। এইটা ও নিজের মুখেই স্বীকার করছে পিহুর কাছে। তাও ও এমন কেন করল জানেন, সাইফ ভাই? ”

কথা বলার মাঝে এই প্রথম মিশমি সাইফ, আরাভ, তনয় ও সায়ানের চোখে চোখ রাখল। তরুণীর প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি গিয়ে স্থির হলো আরও কয়েক জোড়া প্রশ্নবিদ্ধ চোখে। সেই চোখের চাহনিতে উপুড় করে দিল এই চার যুবকের প্রতি অশেষ ঘৃণা। পাল্টা কোনো প্রশ্ন না পেয়ে মিশমি আবারও দৃষ্টি নত করল। সে বলল,

“ সেদিনকার সেই ঘটনার পর, সানাম কি আপনাদের থেকে একটা ছোট্ট সরি-ও উইশ করতে পারে না? ভুল হলে সরি বলাটা কি দোষের? আচ্ছা, সানামের ভাষ্যমতে সানাম এর জন্যেও কমপ্লেইন করে নাই। সবাই ভুল করতে জানে। কিন্তু ক্ষমা চাইতে জানে কয়জন? সেদিন আপনারা সানামকে সরি বলেন তো নাই-ই, উল্টে কী বলছিলেন? মেয়েদের এতো দাম দিস না, রাইট? কতটা নিচু মন-মানসিকতার মানুষ হলে এমন চিন্তা-ভাবনা করা যায়? যেখানে তখনই আপনারা মাত্র দুইটা মিনিট নষ্ট করে সানামকে বিষয়টা বুঝাতে পারতেন, সানামকে সৌজন্যের খাতিরে-ও সরিটুকু বলতে পারতেন। সেখানে আপনারা কী করেছেন? ওকে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন। এরপরও কিন্তু ও পিহুকে বলে নাই এই সবটাই আপনাদের প্ল্যান ছিল ওকে কৌশলে হ্যারাস করার বৈ কোনো এক্সিডেন্ট না, এটাই কি বেশি না? ভাইয়া, জন্ম কিন্তু আপনার এমনি এমনিই দশমাস ব্যয়ে হয় নাই। মেয়েদের নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার আগে একবার নিজের বাড়ির দিকে ঘুরে দেখবেন। সরি টু স্যা, ও আমার কেউ না হলেও একটা মেয়ে হিসেবে কথাটা কিন্তু কম গায়ে লাগেনি! আমি সানামের মতো এতটাও সাহসী না যে, এমন অপমানের প্রতিশোধ নিতে আপনাদের নামে অভিযোগ করার মতো দুঃসাহসিকতা দেখাব। বাট আমি যদি ভুলবশতও এমন অভিযোগ করতাম তো জীবনেও অভিযোগ তুলে নিতাম না। সানামের বাবা-মা নাই দেখে ও সেই মর্ম বোঝে। নয়তো আপনি ওকে সবার সামনে থাপ্পড় মেরে ওর শখের ক্যামেরাটার বিশ্রী অবস্থা করে দেওয়ার পরও ও আপনার উপর থেকে অভিযোগ তুলে নিত না-কি? সেইদিন যেই মেয়েটাকে ভ্যালুলেস বলছিলেন, সেই মেয়েটাই কিন্তু আপনার মা-বাবাকে এদিককার কোনো খবর জানাতে দেয় নাই। এরপরও ওকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করার আগে একটু চিন্তা-ভাবনা করে নিয়েন। যাই আমরা। ”

মিশমি সাইফদের দিকে আর একবারও তাকায় না। পিহুর হাত ধরে ক্ষিপ্রগতিতে দূর থেকেও সুদূরে হাঁটতে থাকে সে। কথায় কথা বাড়ে। এমনিই বহুত কথা বলে ফেলেছে সে। তাই বোধহয় আর কথা বাড়ানোর ইচ্ছা থাকেনি তরুণীর মনে। এদিকে অপমানে, অপরাধবোধে, রাগে বুদবুদ করছে সাইফের রক্ত। টগবগে যুবকের সফেদচূর্ণ মুখে ক্ষিপ্ততা প্রকাশ পাচ্ছে। ফুলে উঠেছে নাকের পাটাতন। মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যর্থ চেষ্টাকারী সাইফের মনে পড়ে সেই রাতের কথা। সানামের ভুল ভাঙাতে যখন সে কথা বলতে চেয়েছিল তখন তনয়-ই বলেছিল,

“ ও তোকে ভুল বুঝছে মানে তোকেও ওর ভুল ভাঙানোর জন্য উঠেপড়ে লাগা লাগবে না-কি? মেয়েটারে হুদাই এত দাম দেওয়ার দরকার তো নাই! ”

সাইফ আগুন চোখে তনয়ের দিকে তাকালেও তনয় ব্যাপারটা বুঝতে পারে না। সেখানে দাঁড়িয়েই তনয়কে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে সাইফ। মাথা থেকে ঘামের নহর বয়ে যায় গৌরবর্ণের ত্বক ছুঁয়ে৷ কিন্তু সাইফ থামে না। দুই বন্ধুও তাকে বাঁধা দেয় না। আরাভ সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে-উড়াতেই চলে যায় সেখান থেকে। তখনই তনয় আকুতি করে বলল,

“ আরে ভাই আমি কি মেয়ে মানুষরে দাম না-দেওয়ার কথা বলছিলাম? আমি তো শুধু সানামের কথা বলছিলাম। হুদাই ভুল বুঝে আমারে মারিস ক্যান? ”

সাইফের গর্জন, “ শালার ব্যাটা! সানাম হিজরা? তোর জন্য এত বড় ব্লেন্ডারটা হইলো। তোরে যদি আধমরা না করছি আজকে তাহলে আমিও সাইফ না! ”

“ আরে ভাই, তাহলে তুই নিজের নামটা পাল্টায় ফেল না! তোরে সেদিন আমি বলছিলাম যে, আমার কথা শুনতে? এমন একটা ভাব করতাছোস যেন আমার কথায় উঠোস আর বসোস? আর মারিস না ভাই এমনিই আমি মোটা মানুষ! ”

সাইফ থামে না। লাথি, কিল, ঘুষি… যতভাবে মারা যায় ঠিক ততভাবেই মারছে তনয়কে। এদের মারামারি দেখে কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থাকল সায়ান। অতঃপর আরাভের মতো সে-ও প্রস্থান করতে-করতে বলল,

“ শালার কি প্যারাটাই-না গেল এই কয়দিন! এতদিন ধরে কোনো মেয়েলি ঝামেলায় ঝুলতে হয় না-কি? হুদাই-হুদাই এতো ডিগবাজি খাইলাম সবাই। এর থেকে তো বাচ্চা পোলাপাইনদের ঝগড়া-ও অনেক মিনিংফুল হয় বা*। ”

মিশমি আর পিহু যখন পার্কে এসে পৌঁছাল তখন মধ্যাহ্নের সমাপ্তি ঘটেছে। সীসেরঙা নীল আকাশের তলে মানুষের কর্মচঞ্চল জীবনের যান্ত্রিকতা লক্ষ্য করে যাচ্ছে। তারা দুজন ঘাড়ের উপর থেকে ব্যস্ততা ঝেড়ে নিয়ে বন্ধুদলে যোগদান করল। ভ্রমণ বিষয়ক বৈঠক বসার কথা আজ। কিন্তু বান্ধবী দুজন এসে দেখল, এখানে বাকি তিনজনের মধ্যে ভয়াবহ বাক-বিতণ্ডার আগুন লেগে গেছে ইতোমধ্যেই। নীলাশা ও নিশান-রিশানের কথপোকথন থেকে জানা গেল যে, ইয়াসিন চৌধুরী বন্ধুদের সাথে মেয়ের ভ্রমণে যাওয়া নিয়ে নিমরাজি। ভ্রমণে যাওয়া থেকে শুরু করে ফিরে আসা পর্যন্ত যদি সবকিছুই তার নির্দেশনা মতো হয়, তবেই তিনি রাজি হবেন এই ভ্রমণে। এ-কথা নীলাশার থেকে জানার পর বন্ধুরা চোটে গেলেও নীলাশার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাটা মলিন হয়েছিল ঠিক গতরাতে বাবার প্রস্তাবটা শোনা মুহূর্তেই। নৌশিন আহমেদ অবশ্য প্রতিবাদ করেছিলেন এ-ই বলে যে,

“ নিজের মেয়েকে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যেতে দিবে না, ভালো কথা। কথাটা তো এখানেই শেষ করতে পারতে? সেখানে নতুন করে শর্ত অ্যাড করার কী প্রয়োজন যে, তোমার ডাইরেকশন্স মেনে তাদের ঘুরতে যেতে হবে? এইবার কী আমিও সো-কল্ড মানুষের মতো ভেবে নিব যে, তুমি নিজের টাকার গিয়ার দেখাও? শোনো, তোমার মেয়ে তোমার কথা শুনতে পারে। কিন্তু মেয়ের বন্ধুদের উপর এমন তদারকি করা বাদ দাও। নয়তো তোমাদের এই নাটকের জন্য আমিই একদিন নাজিফকে নিয়ে ইংল্যান্ডে চলে যাব। ”

ইয়াসিন চৌধুরী ঠাণ্ডা মাথার মানুষ বলে নৌশিন আহমেদের এই সাময়িক রাগটাও ঢেকে ফেলতে পেরেছেন বোধশক্তির জোরে। মেয়ের বন্ধুরা বুঝদার। কিন্তু নিজের মেয়ে-ই তো ভালো না! দেখা যাবে বন্ধুদের সাথে নূন্যতম কথা কাটাকাটি হয়েছে আর নিজে ওস্তাদি করে ফিরে আসতে গিয়ে বিপদে পড়েছে। তখন সবটা সামলাবে কে? কিন্তু নীলাশার বাবার এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি নিশানরা। নিশান তো স্পষ্ট বলেই ফেলল,

“ দেখ ভাই, এত রঙঢঙ করে ঘুরতে যাইতে পারমু না আমি। নীল, তোর যাওয়া লাগবে না কোথাও। তোরে নিয়ে গেলে যখন এতো অশান্তিই হবে তখন তুই থাক। আমরা চারজন গিয়ে ঘুরে আসি। তারপর না-হয় কাছে কোথাও ঘুরতে যাব সবাই মিলে। আমি এই ট্র‍্যাভেলিং-এ কোনো ঝামেলা মানতে পারব না। ”

এই কথা শুনে নীলাশার রাগটা খুব ভালো করেই চেপে বসল মস্তিষ্কে। সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“ সমুদ্রের লোভ দেখিয়ে এখন নদী দেখানোর কথা বলছিস আমাকে? ”

“ শোন, সমুদ্র দেখার জন্যও সমুদ্রের মতো বিরাট স্বপ্ন দেখা লাগে। আর তুই কীসের জন্যে ভুলে যাস যে, তোর সমুদ্রের মতো স্বপ্ন দেখা নিষেধ? তুই নিজের লিমিটেশন ভুলে গিয়ে স্বপ্ন দেখিস ক্যান? কক্সবাজারে যাওয়ার কথা ছিল রিশান আর আমার। তুই নিজেই দুই বছর থেকে আমাদের আটকিয়ে রেখে এই প্ল্যান বানাস নাই? তোর কথা আমরা মানছি, তোরে রেখে কক্সবাজারে যাই নাই। এইদিক দিয়ে মিশমির মা-ও এতদিনের জন্য বাসার বাইরে থাকে না। আবার কবে এমন সুযোগ আসবে তা-ও জানি না। তাহলে তুই কি বলতে চাচ্ছিস যে, এইবারও তোর জন্য না-যাই আমরা? দেন সরি, পারব না। তোরা তিনজন থাকলে থাকিস। বাট আমি আর রিশান যাচ্ছি আর এটাই ফাইনাল! ”

সবাই খেয়াল করল নীলাশার নত মুখটা। বোধহয় ঘাসের দিকে তাকিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু নীলাশার পক্ষে নিজের রাগ, জেদ, অভিমান নিয়ন্ত্রণে রাখা কি এতটাই সহজ? নীলাশা নিজের বাবা-মা এমনকি ইংল্যান্ডে থাকাকালীন নিজের চাচা-চাচি, পরিবারের বড় ভাই-বোনের কাছে যে আদরে-আহ্লাদে বড় হয়েছে… তাতে করে হঠাৎই শুরু হওয়া এমন কড়া শাসন মেনে নিতে পারে না সে। এই মুহূর্তে বন্ধুদের প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই তার। যেখানে নিজের বাবা-ই এমন বেঁকে বসেছে সেখানে বন্ধুকে দোষারোপ করে কী লাভ? নীলাশার দুঃখ, সে পিহুর মতো বন্ধুসুলভ পারিবারিক পরিবেশ পায়নি। কেন সে সবার মতো প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন হতে পারে না? রাগে-দুঃখে মুখটা আষাঢ়কালো হয়ে যায় তার। বন্ধুরা দেখছে তাকে। কিন্তু স্বান্তনা কী দিবে তাকে? বুদ্ধিমান রিশান-ও নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। আর কত মেনে নেওয়া যায়? আর কোনো উপায় নেই এই আদুরে কন্যাকে সামলানোর। আর তখনই মিশমির ডাক শোনা যায়,

“ গাইজ, একটা নিউজ ছিল। ”

মিশমির কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে নিশানরা ভ্রু কুঁচকায়। নিশ্চয়ই কোনো রাগিয়ে তোলার মতো বার্তা জানাতে চলেছে সে! তখন মিশমি সরল মনে হেসে বলে,

“ কিছু মনে করিস না নিশান। আসলে আম্মুর নানুর বাসায় যাওয়ার ডেট পিছায়ছে। মানে যাবে, কিন্তু আরও দুই সপ্তাহ পর। ”

নিশান ধমকে উঠে, “ বাহ্, খুবই ভালো খবর জানাইলা তুমি মিশমির বাচ্চা! তোরা থাক। আমরা একলাই গিয়ে ঘুরে আসমু। ”

মিশমি কিছু একটা বলতে চায়। তখনই রিশান বাঁধা দিয়ে বলে,

“ আহ্ নিশান! ব্যাপারটা আরেকটু ভেবে দেখ। আমাদের নীলকে কিন্তু ওর বাপ কম ভালোবাসে না। ও যদি এই কয়েকদিনে আঙ্কেলকে রাজি করায় ফেলে তাহলেই কিন্তু ঝামেলা শ্যাষ! না-হয় ডেটটা কিছুদিনের জন্য পিছায়ে দিলাম। কিন্তু একসাথে ঘুরতে যাওয়াটা তো হবে? তুই আর একটা বার দেখ। নীলের পক্ষে ওর বাপরে রাজি করানো কিন্তু অতটাও কঠিন কিছু না। ব্যাটা একবার রাজি হয়ে গেলেই কিন্তু আমাদের প্ল্যান সাকসেসফুল! ”

নীলাশার মুখটা জ্বলজ্বল করে ওঠে এই কথা শুনে। তাকে বুঝ দেওয়ার জন্য এমন নিখুঁত একটা যুক্তি ছাড়া আর কী থাকতে পারে রিশানের কাছে? কিন্তু নিশান প্রথমেই রাজি হলো না। না-না করতে করতেই সে কিছু একটা ভেবে দেখল। রাজি হওয়ার লক্ষ্যণ দেখা যাচ্ছে তার মাঝে। অতঃপর সবার এই উত্তেজনাকে দমিয়ে নিশান বলে উঠল,

“ ওকে, ডেট পিছানো হবে। বাট এইবার যদি তোরা কেউ বেঁকে বসিস তাহলে কিন্তু আর ছাড় পাবি না। এটাই তোর এন্ড তোদের সবার লাস্ট চান্স, নীলু! ”

#চলবে ইন শা আল্লাহ!

(#বিঃদ্রঃ কালকে পর্বটা পোস্ট করতে গিয়েই ডিলিট হয়ে গিয়েছিল। তাই নতুন করে লিখে, এই মুহূর্তে লেখা শেষ করেই পোস্ট করে ফেললাম। বানানে অথবা বাক্যগঠনে ভুল থেকে থাকলে অবশ্যই জানাবেন। লেখায় এমন টুকিটাকি ভুলগুলো নিজের কাছেই খুব বিরক্তিকর লাগে আমার। অবশ্যই জানানোর অনুরোধ রইল, ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here