টক ঝাল মিষ্টি পর্ব ৯

0
129

#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৯

শাহাদের ভ্রুদ্বয় কুচকে গেলো। হাতে থাকা জিনিসটা একটু এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখলো।এটা দিয়ে লেবু চিপে? ভালো কথা লেবু চিপে কিন্তু কুহু এটা নিয়ে ঘুরছে কেন? সে কৌতুহল দমাতে না পেরে জিজ্ঞেস করলো-
“লেবু চিপার জিনিস আপনি নিয়ে ঘুরছেন কেন?”

এই প্রশ্নের জবাবে কুহু কি বলবে ভেবে পেলো না।আসলেই তো লেবু চিপার জিনিস তো তার নিয়ে ঘোরার কথা না। কেন যে মিথ্যা বলতে গেলো, এর চেয়ে সত্যি বলে দিলেই হত যে এটা সাজগোজের জিনিস।কোনো এক ফাঁকে ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে গিয়ে হয়তো গাড়িতে পড়ে গেছে । কুহু আমতা আমতা করে বলল-

“ব্যাগে ছিলো আর কি। মায়ের জন্য কিনেছিলাম, পরে বের কর‍তে মনে নেই।”

কুহু মনে মনে নিজেকে গালি দিলো।একটা মিথ্যা বললে তা যে অনেকগুলো মিথ্যা নিয়ে আসে হাতেনাতে তার প্রমান পেলো।অনন্ত জলিলের মতো বলতে ইচ্ছে করলো “একটা মিথ্যা বললে সেটা অনেকগুলো আরো মিথ্যা বলে ঢাকার চেষ্টা করলে সেটা মিথ্যাই থেকে যাবে”।

শাহাদ এই জিনিসটা গাড়িতে পেয়ে যতটা না অবাক হয়েছে তার চেয়েও বেশি অবাক হলো কুহুর কথা শুনে। প্রথমদিন দেখেছে আধ খাওয়া রুটি নিয়ে ঘুরতে আর আজ জানলো লেবু চিপার জিনিস নিয়েও ঘুরে। আর কি কি নিয়ে ঘুরে এই মেয়ে? সে জিনিসটা গাড়ির সিটে রেখে দিলো৷ বললো-

” আপাতত আমার কাছেই রাখলাম কাল কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিব কেমন?”

কুহু ব্যস্ত হয়ে বললো-
“না না পাঠাতে হবে না আপনার কাছেই রেখে দিন?’

” আমি লেবু চিপার জিনিস দিয়ে কি করব?”

খুবই যুক্তিপূর্ন প্রশ্ন।আসলেই তো লেবু চিপার জিনিস হোক আর সাজগোজের জিনিস হোক তা রেখে শাহাদ কি করবে?ওর তো কোনো কাজে আসবে না। কুহু নিজের মাথায় একটা চড় দিলো। সব ভুলভাল কথা বলছে। শাহাদকে এটা কোন দুঃখে রাখতে বললো সে। কুহু মিনমিন করে বলল-

“তাহলে পাঠিয়ে দিন।”

“ঠিক আছে।আপনি ক্ষতটা ক্লীন করেছেন?”

কুহু পায়ের বুড়ো আংগুলের দিকে তাকালো। সেখানে একটা ব্যান্ডেজ লাগানো। বললো-
“হ্যা করেছি।”

“গূড। এখন তাহলে রাখছি।”

খট করে কলটা কেটে গেলো। কুহু মাত্র “গূড নাইট” বলার জন্য মুখ খুলেছিলো কিন্তু তা আর বলতে পারলো না। ফোনটা কান থেকে নামিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল-
“কি ভেবে রসগোল্লা নাম দিলাম? এর তো রসকষ কোনোটাই নেই।”

—–

শাহাদ বাড়ি ফিরলো সন্ধ্যা ৭ টার পর। বাড়িতে ঢুকলো কুহুর আইল্যাশ কার্লার হাতে নিয়ে। বাড়িতে ঢুকে কুলসুম বেগমের গলা শুনতে পেলো।তিনি সোফায় বসে পান চাবাচ্ছেন আর সামনে ফ্লোরে বসে থাকা মালাকে ধমকাচ্ছেন। শাহাদ হাতের জিনিসটা সোফায় রেখে কুলসুমা বেগমের পাশে বসে পড়লো।জিজ্ঞেস করলো-

“মেজাজ খারাপ নাকি আমার দাদীজানের?”

কুলসুমা বেগম সামনে মালাকে দেখিয়ে বললেন-
“দেখিস না একটা কাজও করতে পারে না।এতদিন আমার কাছে থেকে কিচ্ছু শিখলো না।”

শাহাদ মালার দিকে তাকিয়ে দেখলো মালা ফ্লোরে বসে টি টেবিলের উপরে একটা ডালায় চাল নাড়াচাড়া করছে। কুলসুমা বেগম রাগী স্বরে বললেন-

“আর কদিন পর বাড়িতে বিয়ে এখনো চালগুলো বেছে রাখা হলো না। তোর মা-চাচীদের কি কোনো হুঁশ আছে এই বিষয়ে? তারা শাড়ীর আঁচল দুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”

“চাল তো কিনেই আনা যাবে। ওইসব চাল বাছতে হয় না।”

কুলসুমা বেগম নাতির দিকে তাকিয়ে খ্যাক করে উঠলেন-
“তুইও তো তোর মা-চাচীদের মতো হয়েছিস। নতুন বউ এসে বাজারের চাল খাবে? এইগুলো আমাদের জমির ধান থেকে করা চাল। এরকম চাল বাজারে পাবি?’

শাহাদ মুচকি হেসে মাথা নেড়ে জানালো সে পাবে না। কুলসুমা বেগম আরো একবার সামনে বসে চাল খুটতে থাকা মালাকে তাড়া দিলেন। মালা বেজার মুখে বাছতে লাগলো। জয়া বেগম শ্বাশুড়ির জন্য চা নিয়ে এলেন। শব্দ যেন না হয় এমনভাবে টেবিলের উপর রাখলেন চায়ের কাপ। মুখে বল্লেন-

” মা,চা।”

কুলসুমা বেগম ছোট পুত্রবধূর দিকে একবার নজর দিলেন। গোলগাল সুশ্রী মুখশ্রীতে ঘাম দেখে তার হৃদয় ভরে গেলো। বাড়ির বউ রান্নাঘরে থেকে নিজের হাতে সবার জন্য রান্না করছে, সবাইকে আদর করে খাওয়াচ্ছে এইটা আল্লাহর রহমত নিয়ে আসে। তাঁর দুই পুত্রবধূরই এই গুণ আছে।বাড়িতে এত কাজের লোক থাকার পরও তারা নিজের হাতে সব কিছু সামলায়।পুত্রবধূর থেকে চোখ সরিয়ে বললেন-

“এতক্ষনে চা দেয়ার সময় হলো তোমাদের। দাও, হাতে তুলে দাও।টেবিলে রেখেছো কোন বুদ্ধিতে।”

জয়া বেগম জলদি হাতে চা নিয়ে বিনয়ের সাথে শ্বাশুড়ির হাতে চায়ের কাপ টা প্লেট সহ দিলেন। কুলসুমা বেগম চা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-
“তোমরা দুজন চা আর নাস্তা নিয়ে এখানে এসে বসো। হালকা নাস্তা করে তারপর রাতের রান্না করো।”

“আপা আর আমি ডায়নিং এ নাস্তা করছি মা।আপনি খান।”

জয়া বেগম এক প্রকার পালিয়ে গেলো শ্বাশুড়ির সামনে থেকে। তার শ্বাশুড়ি অনেক ভালো মানুষ। বাড়ির বউদের তিনি আদরে রাখেন কিন্তু বউ দের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে ব্যাঘাত ঘটলে তিনি এক চুল ছাড় দেন না।কুলসুমা বেগম চায়ে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললেন। বেশ ভালো চা বানায় তার ছোট পুত্রবধূ। তাকে চা খাওয়ার সময় দিয়ে শাহাদ জিজ্ঞেস করলো-
“দাদাজান কোথায়?”

“ঘরের ভিতর বই পড়ছে।”

“দাদাজানকে চা দাও নি।”

“দিয়েছি। খাবে বলে মনে হয় না।আজ চায়ে চিনি পড়েনি কিনা!”

শেষের কথাটা বলার সময় মালার দিকে একবার তাকালো কুলসুমা বেগম।মালা চোরের মতো কাচুমাচু মুখে এদিক ওদিক তাকালো। শাহাদ বুঝতে পারলো তার মিষ্টিপ্রিয় দাদা ধরা পড়ে গেছে দাদীর হাতে। কুলসুমা বেগম মালার দিকে ইশারা করে বল্লেন-

“এই হচ্ছে তোর দাদাজানকে চিনি দেয়ার মূল কারিগর।প্রতিবার চিনি দেয়ার বিনিময়ে ৫০০ টাকা করে নেয়।এই জন্য আজ শাস্তি হিসেবে চাল বাছার কাজ দিয়েছি।”

মালা নড়েচড়ে বসলো। আজ দাদাজানের চায়ে চিনি দিতে গিয়ে যে ধরা পড়ে যাবে তা ভাবে নি। এখন দাদীর রোষানলে পড়েছে সে। শাহাদ হেসে জিজ্ঞেস করলো-
“আর দাদাজানকে কি শাস্তি দিলে?”

“তার ভাত খাওয়া বন্ধ।শুধু রুটি খাবে।আর সকালে এক ঘন্টা পার্কে হেঁটে আসবে।”

শাহাদ হেসে দুপাশে মাথা নাড়লো।আব্দুল গাফফার খান যা একবেলা অল্প ভাত খেত এখন সেটাও বন্ধ করে দিলো কুলসুমা বেগম।এইবার আব্দুল গাফফার খানকে তিনবেলাই রুটি খেতে হবে। শাহাদ পাশ থেকে আইল্যাশ কার্লারটা নিয়ে উঠে নিজের ঘরের দিকে হাঁটা দিলো।সিদ্ধান্ত নিলো ফ্রেশ হয়ে তার দাদাজানের ঘরে যাবে। নিশ্চয়ই বেচারা বউ এর চাপে কোণঠাসা হয়ে আছে। সিড়ি দিয়ে উঠে দুতলায় এসে রাফার সাথে দেখা। সে নিচে যাচ্ছিল, শাহাদকে দেখে ডেকে বললো-

“ভাইয়া তোমাকে চাচাজান খুঁজেছিলো।”

“বাবা এখন কোথায়?”

“স্টাডিরুমে।”

“আচ্ছা।”

শাহাদ যেতে নিলে রাফার নজর পড়লো শাহাদের হাতের দিকে। জিজ্ঞেস করলো-
“তোমার হাতে এটা কি?”

শাহাদ হাতে থাকা জিনিসটার দিকে তাকিয়ে বলল-
“এটা কুহুর,গাড়িতে ফেলে গেছে।লেবু চিপে এটা দিয়ে।”

“লেবু চিপে?”

“হুম।”

শাহাদ কুহুর কথিত “লেবু চিপার জিনিস” নিয়ে ঘরে ঢুকে গেলো। রাফা বিস্ময়ে হা হয়ে তাকিয়ে থাকলো শাহাদের যাওয়ার দিকে।

শাহাদ ফ্রেশ হয়ে আশফাক খানের স্টাডিরুমের সামনে এলো। দরজায় টোকা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
“বাবা আসব?”

ভিতর থেকে ভেসে এলো গুরুগম্ভীর স্বর-
“এসো।”

শাহাদ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো।আশফাক খান সিংগেল সোফায় বসে পেপার পড়ছেন। সামনের টেবিলে চায়ের কাপ রাখা। সোফার অপর পাশে একটা বড় টেবিল আর আরামদায়ক চেয়ার রাখা।টেবিলের উপর ফাইল আর বইয়ের স্তূপ। ঘরে কয়েকটা আলমারি আছে।কয়েকটায় বই রাখা আর বাকিগুলায় সব ফাইল। রুমটাকে স্টাডি রুম না বলে বরং আশফাক খানের অফিসই বলা যায়।এখানে বসেই উনি সব কাজ সারেন। কাজের প্রয়োজনে বাইরের লোকের সমাগম আছে বলে এই রুমটা বাড়ির এক পাশে রেখেছেন যেন বাড়ির প্রাইভেসি নষ্ট না হয়।

শাহাদ পাশের সোফাটায় বসে পড়লো। আশফাক খান পেপার পড়ছে। শাহাদ তাঁকে পেপার পড়ার সময় দিলো।সে শান্তভাবে বসে রইলো। আশফাক খান পেপার পড়া শেষ করে পেপারটা ভাঁজ করে একপাশে রাখলেন তারপর শাহাদকে জিজ্ঞেস করলেন-
“শুনলাম ছেলেদের উপর হাম*লা হয়েছে?”
“জী বাবা।তবে এতটা চিন্তিত হওয়ার মতো কিছু হয় নি।আমি সামলে নেব।”
“কিভাবে সামলাবে শুনি।”

শাহাদ একটু চুপ করে থেকে বললো-
“মা*রের বদলে মা*র দেব।”

“এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে না?এমপির লোকজন সাধারন মানুষের উপর হাম*লা করছে সাথে এমপির ছেলেও আছে। এই ব্যাপারটা খুব চটকদার নিউজ হয়ে যাবে।”

“দলের কারো কোনো সংযোগ থাকবে না এই ঘটনায়।ইভেন মা*রামা*রির কারনটাও এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যে দলের উপর কেউ আঙুল তুলবে না।”

আশফাক খান নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে সোফায় হেলান দিলেন। ছেলে রাজনীতি শিখছে। প্রয়োজনে যে হাত নোংরা করতে হয় তা বুঝতে পারছে। পারিবারিক এই প্রথা আরেক পুরুষ টিকিয়ে রাখতে পারবে এই ছেলে।
শাহাদ নির্বিকার ভাবে বসে রইলো কিন্তু মনে মনে কিছুটা নার্ভাস ফিল করছে সে। তার এই কাজ আশফাক খানের মনঃপূত হলো কিনা তা নিয়ে সামান্য চিন্তিত হলো। আশফাক খান চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বললেন-
“ঠিক আছে তাহলে। শুধু খেয়াল রেখো বাড়াবাড়ি যেন না হয়।যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুতেই সীমাবদ্ধ রাখবে।”

বাবার অনুমোদন পেয়ে শাহাদ ভিতরে ভিতরে চিন্তামুক্ত হলো।সম্মতি জানিয়ে মাথা নাড়লো। এই পুরো ঘটনায় সবকিছু সীমার মাঝেই রাখবে সে।
_______

সকাল সকাল খটখট শব্দে ঘুম ভাঙলো আনিশার। বিছানায় উঠেবসে শব্দের উৎস খুঁজতে ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো। দেখতে পেলো টাওয়াল পড়া রাহাতকে।সে লাগেজের চেন ধরে টানাটানি করছে। আনিশা প্রশ্ন করলো-
“কি করছো তুমি?”

রাহাত আনিশার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল-
“আমি তোমার জামাকাপড় গুছিয়ে দিয়েছি লাগেজে। উঠে ফ্রেশ হও তো। ব্রেকফাস্ট করে আমরা রওয়ানা দিব।”

“কোথায় রওয়ানা দিব?”

আনিশার প্রশ্নে রাহাত মুখ তুলে অবাক হওয়ার ভান করে বলল-
“কোথায় আবার!! আমার শ্বশুর বাড়ি। আমার একমাত্র শালার বিয়ে না?”

আনিশার মন চাইলো দৈত্যের মতো “মুহুহুহাহাহা” করে একটা হাসি দিতে।পুরুষ মানুষ আয়ত্তে আনা তেমন কঠিন কিছু না শুধু জায়গামতো টাইট দিতে হয়। আনিশা জিজ্ঞেস করলো-
“চেন টানাটানি করছো কেন?”

“চেনটা লাগছে না। তোমার অনেক জামাকাপড় নিয়েছি তো তাই। ”

আনিশা উঠে গিয়ে লাগেজের চেনটা টেনে খুললো।লাগেজ খুলে ভেতরের অবস্থা দেখে সে হতবুদ্ধি হয়ে গেলো। তার ইস্ত্রি করা সব জামাকাপড় এক প্রকার দলা পাকিয়ে রাখা হয়েছে।সবকটারই ইস্ত্রি নষ্ট হয়ে গেছে। রাহাত গর্বে বুক ফুলিয়ে বললো-
“দেখেছো কি সুন্দর করে তোমার লাগেজ গুছিয়ে দিলাম।তোমার কাজ কমিয়ে দিয়েছি।”

আনিশার মুখ থেকে কোনো কথা বের হলো না।কাজ কমিয়ে দিতে গিয়ে আরো বাড়িয়ে ফেলেছে এই লোক।আবার গর্ব করে বলছে।সে অবিশ্বাসী চোখে জামাকাপড় গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। রাহাত গাইগুই করে বলল-

“এখন তাহলে আমার জামাকাপড় বের করে দাও।এসব পরে কি শালার বিয়েতে যাওয়া যাবে?”

আনিশা উঠে রাহাত যে পাশে বিছানায় শোয় সেই পাশের তোষক তুলে কয়েকটা প্যান্ট শার্ট বের করে বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে চলে গেলো। রাহাত বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো। নিজের জামাকাপড়ের উপরেই সে টাওয়েল পড়ে ঘুমিয়েছে? এজন্যই সকালে সারা ঘর খুঁজেও সে জামাকাপড় পায় নি। কারন আনিশা রেখেছে তোষকের নিচে।নিজের। নিজের চেয়ে বুদ্ধিমতি স্ত্রী পেলে পুরুষ মানুষের পদে পদে বিপদ।
_________

কুহু বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। তার চোখের দৃষ্টি উদাস। যেন দুনিয়ার কোনো কিছুতেই তার কিছু যায় আসে না। যেই জিনিসকে সে লেবু চিপার জিনিস নাম দিয়েছে সেই জিনিস শাহাদ নাকি আবার তাকে ফেরত পাঠাবে! কি কান্ড!!হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।আর সেও বা কেমন,এই জিনিস শাহাদের গাড়িতেই ফেলতে হলো কেন?

কুহুর ঘরের দরজা খোলাই ছিলো। যিয়াদ মাথা ঢুকিয়ে উঁকি দিলো। কুহুকে এভাবে ম*রা মানুষের মতো শুয়ে থাকতে দেখে গলা উঁচিয়ে বললো-

“এই হুকু,তোমার বান্ধবী এসেছে।উঠে নিচে আসো।”

কুহু তড়াক করে বিছানায় উঠে বসলো।বিছানায় থাকা একটা কুশন নিয়ে রাগের চোটে ঢিল দিলো যিয়াদকে লক্ষ্য করে। যিয়াদ সাথে সাথে দরজা থেকে সরে গেলো। ফলাফলস্বরূপ কুশনটা পড়লো ফ্লোরে। যিয়াদ পুনরায় দরজায় উঁকি দিয়ে বলল-

“শাহাদ ভাইয়াকে যদি এই ” হুকু” নাম আমি না বলেছি তাহলে আমার নাম যিয়াদ না।”

বলেই একটা শয়তানি হাসি দিয়ে দরজা থেকে সরে গেলো যিয়াদ। কুহু কিছুক্ষন বিরক্ত চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বিড়বিড় করে বলল-

“তোর বলতে হবে না৷ এই কাজ আমি অনেক আগেই সেরে ফেলেছি।”

___________

টানা সাড়ে তিন ঘন্টা জার্নি করে খান বাড়ির গ্যারেজে রাহাতের গাড়ি এসে থামলো। এতদিন পর বাপের বাড়ি আশায় গাড়ি থামতেই দরজা খুলে লাফিয়ে নেমে পড়লো আনিশা। রাহাতও নামলো পাশ থেকে। সামনে দাঁড়ানো বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আনিশার চোখ ছলছল করে উঠলো। সে রাহাতকে ফেলেই ছুটে গেলো সদর দরজার দিকে। পেছন থেকে রাহাত আস্তে যেতে বললেও শুনলো না।রাহাত ড্রাইভারকে ব্যাগগুলো নিয়ে আসতে বলে সেও বড় বড় পা ফেলে আনিশার পিছু নিলো।

আনিশাকে প্রথম দেখতে পেলো মালা।সে বাড়ির সদর দরজার সামনের গাছের টবে পানি দিচ্ছিলো।আনিশাকে ছুটে আসতে দেখে হাতে থাকা পানি দেয়ার ঝাঁঝরি ফেলে দিয়ে বাড়ির ভেতর দৌড় দিলো। ড্রয়িং রুমের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললো-

“ও চাচীআম্মা,ও দাদীজান,বড় আপা আইছে। সাথে দুলাভাইও আছে।”

এই কথা বলে পিছন ফিরে দৌড় দিলো সদর দরজার দিকে। আনিশা ততক্ষনে সদর দরজা দিকে ঢুকে পড়েছে। মালা আনিশার দিকে ছুটে গেলো। “ও বড় আপা গো” বলে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আনিশাও জড়িয়ে ধরলো মালাকে।তারপর মালাকে ছাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো-
“কেমন আছিস?বাকিরা সব কোথায়?”

মালা গাল বেয়ে নেমে আসা চোখের পানি মুছে বললো-
“তুমি এতদিন পর আইসো আপা,এইবার আমি তোমারে যাইতে দিতাম না।”

ভর দুপুরে মালার চিৎকার চেঁচামেচিতে রেজিয়া সুলতানা নেমে এলেন। আনিশাকে দেখে বিস্ময়ে থ হয়ে গেলেন। আনিশা দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে। এতদিন পর মেয়েকে দেখে রেজিয়া সুলতানা বিশ্বাস কর‍তে পারলেন না নিজের চোখকে। আনিশা কেঁদে দিলো মা কে জড়িয়ে ধরে। ততক্ষণে রাহাতও চলে এসেছে। আনিশাকে বাপের বাড়ি এসে এত আবেগপ্রবণ হতে দেখে তার নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হলো। এত দিন মেয়েটা কত বায়না করেছে,,
রাগ করেছে অভিমান করেছে কিন্তু তাও সে বাপের বাড়ি নিয়ে আসতে পারে নি।সে চেষ্টা করেছে কিন্তু সময় সুযোগ হয় নি। নিজের উপর বেশ রাগ হলো রাহাতের। আনিশার কান্না দেখে সে সিদ্ধান্ত নিলো এরপর যখনই আনিশা আসতে চাইবে তখনি নিয়ে আসবে, বাকিসব গোল্লায় যাক।তার বউ এর ইচ্ছা সব কিছুর উর্ধ্বে তার কাছে।শুধু সিদ্ধান্তই নিলো না মনে মনে কঠিন প্রতিজ্ঞাও করলো।কিন্তু তখন তার মনে হলো কে জানি মাথায় একটা বাড়ি দিয়েছে সাথে মাথার ভিতর কে একটা বললো-
“যে প্রতিজ্ঞা কস্মিনকালেও রাখতে পারবি না তা করছিস কেন? বাটপার কোথাকার!!”

রাহাত মিইয়ে গেলো। বুঝতে পারলো ভুলভাল প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছে সে। ক্রন্দনরত আনিশার দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল-
“মাফ করে দাও বউ।তোমার স্বামী একটা বাটপার।বাটপার স্বামীর প্রতিজ্ঞা ধরে বসে থাকতে নেই।”

পাশ থেকে মালা ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো-
“দুলাভাই বিরবিরাইয়া কি কন?”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here