#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৮
শাহাদ পার্টি অফিসের সামনে এসে গাড়ি থেকে নামলো। গেট থেকেই দেখতে পেলো অফিসের পরিস্থিতি বেশ গরম। অল্প বয়স্ক কয়েকটা ছেলের হাতে লাঠি,চোখেমুখে উত্তেজনা। শাহাদ গাড়ি লক করে চাবি পকেটে ঢুকিয়ে গেট দিয়ে ঢুকলো। অফিসের চারদিকেই দেয়াল দেয়া,অফিসের সামনে গাড়ি পার্ক করার জন্য কিছুটা খোলা জায়গা রাখা হয়েছে। খালি জায়গাটায় দেয়ালের পাশে অনেকগুলো বাইক।সেগুলোর আশেপাশেও উত্তেজিত অবস্থায় কয়েকজনকে দেখা গেলো। শাহাদকে দেখে সবাই বাইক থেকে নেমে এলো। “ভাই” ডেকে কিছু বলতে চাইলো। শাহাদ হাত উচিয়ে চুপ করতে বললো সবাইকে। শাহাদের সাথে সাথে ছেলেগুলোও পার্টি অফিসের ভিতরে ঢুকলো।
অফিসের সামনের ঘরটায় অনেকগুলো প্লাস্টিকের চেয়ার দেয়ালের সাথে রাখা। সেগুলোতে অনেকেই বসে আছে, অনেকে ঘরের মাঝখানে ভীড় করে আছে। শাহাদকে দেখে তারাও আলোচনা থামিয়ে দিলো।শাহাদ এই ঘর পেরিয়ে মিটিং ঘরে ঢুকলো। ঘরে ঢুকে দেখতে পেলো তমালকে। সে কানে ফোন নিয়ে গালিগালাজ করছে। মিটিং রুম টা বেশ বড়।লম্বা একটা টেবিল, তার দুই পাশে নেতাকর্মীদের জন্য রাখা আরামদায়ক চেয়ার। টেবিলের এক দিকে একটা বেশ দামি কাঠের চেয়ার। এটাতে দলের সভাপতি বসে।
শাহাদ সব চেয়ার পেরিয়ে সভাপতির চেয়ারের কাছের চেয়ারটায় বসে পড়লো। লম্বা শ্বাস টেনে পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে বসলো। সবাই এসে টেবিলের আশেপাশে ভীড় জমালো। তমাল দ্রুত কল শেষ করে দৌড়ে শাহাদের এক পাশে দাঁড়ালো। শাহাদ প্রশ্ন করলো-
“ওরা কোথায়?”
“এখুনি নিয়ে আসছি ভাই।”
তমাল ভীড়ের মাঝের কয়েকজনকে ইশারা করে কিছু একটা বুঝালো। কিছুক্ষন পর ধরাধরি করে কয়েকজন ছেলেকে নিয়ে আসা হলো।সবারই শরীরের এখানে ওখানে ব্যান্ডেজ।কারো হাত ভাঙা,কারো মাথা ফেটে গেছে, কারো আবার মুখের এখানে সেখানে ব্যান্ডেজ।। একজনের পা ভেঙে যাওয়ায় তাকে দুজন দুদিক থেকে ধরে কোলে করে নিয়ে এসে টেবিলের অপর পাশে একটা চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলো। শাহাদ বাকিদেরকেও বসার জন্য ইশারা করলো। সবাই বসলে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলো।মোট ছয়জন আহত হয়েছে।খুব ভালো ভাবেই আহত হয়েছে। শাহাদ প্রশ্ন করলো-
“কিভাবে হয়েছে?”
তমাল শাহাদের দিকে ঝুঁকে বললো-
“ভাই বললাম না ওই মিজান আর তার দল……”
শাহাদ বাধা দিয়ে বলল-
“ওদের কাছ থেকে শুনব। তোরা বল কিভাবে হয়েছে?”
ছয়জনের একজন অসুস্থ কন্ঠে বললো-
“ভাই, আমরা ছয়জন স্টেশন রোড গেছিলাম ক্যারাম খেলতে। স্টেশনে বইসা ক্যারাম খেলতাছি। তখন বিকালের ট্রেন আসার সময় হইছে। এমন সময় দেখলাম একজম যাত্রী টিকিট কাউন্টারে চিল্লাপাল্লা করতাছে। আমরা দুই জন গেলাম। গিয়া দেখি মিজানের গ্যাং এর এক ছেলের সাথে এক মধ্যবয়স্ক লোকের ঝামেলা হইছে। ঘটনা শুইনা বুঝলাম কাউন্টারে টিকিট না থাকায় ওই লোক জরুরি প্রয়োজনে ব্ল্যাক-এ টিকিট কাটতে চাইতাছে। কিন্তু টিকিটের দাম চাইতাছে তিনগুন বেশি।এইটা নিয়ে তাদের ঝামেলা। ঝামেলার এক পর্যায়ে ব্ল্যাক-এ টিকিট বিক্রি করা ছেলেটা ওই ভদ্রলোকরে ধাক্কা মারলো। তখন আমরা প্রতিবাদ করলাম। তখন ওই ছেলে আমাদেরকেও ধাক্কা মারলো।”
তমাল রাগী কন্ঠে বললো-
“দেখছেন ভাই,ওদের সাহস কতটুক বাড়ছে।”
“আহ!ওদের বলতে দে।”
শাহাদের কথায় তমাল থেমে গেলো। ছেলেটা আবার বলতে শুরু করলো-
“আমাদের ধাক্কা দেয়ার পর আমরাও ধাক্কা দেই। এতে ওই ছেলেটা ইচ্ছে করে আমাদের উপর এলোপাথাড়ি ঘুষি মারতে থাকে।
তারপর পাশে বসা আহত হওয়া বাকিদের দিকে দেখিয়ে বলল-
” গন্ডগোল বুঝতে পেরে ওরাও ছুটে আসে। ওরা এসে আমাদেরকে ছুটিয়ে নিয়ে যায়৷ কিন্তু ওই ছেলেটা সহ আরো কয়েকজন মিলিত হয়ে আমাদেরকে গালাগাল দেয়,তেড়ে আসতে চায়। ওদের সাথের একজন ফোন করে আরো কয়েকটা ছেলে নিয়া আসে। আমরা ওইখান থাইকা সইরা আসতে চাইলে ১০-১২ জন এক হয়ে আমাদেরকে ঠেলতে ঠেলতে স্টেশনের বাইরে ফাঁকা জায়গাটায় নিয়া যায়। তারপর লাঠি দিয়া যে যেভাবে পারে আমাদেরকে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে স্টেশনে থাকা পুলিশ আসলে ওরা পালিয়ে যায়।”
শাহাদ সবটা শুনলো।এক হাত টেবিলে রেখে তর্জনি দিয়ে কয়েকটা টোকা দিলো। তমালকে জিজ্ঞেস করলো-
“এই দলের সবাইকে একসাথে কোথায় পাওয়া যাবে?”
“ভাই ওরা ইদানীং স্টেশন রোডেই বেশি আড্ডা দেয়। ওইখানে ব্ল্যাক এ টিকিট ব্যবসা শুরু করছে।”
তমালের কথায় শাহাদ ঠোঁট ঘষলো। প্রশ্ন করলো-
“কবে থেকে?”
“বেশিদিন না ভাই। এই কয়েকমাস হবে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে এরা ততই মাথা ছাড়া দিয়ে উঠছে।”
“আগে যেই গ্রুপ ব্ল্যাকে টিকিট দিত তারা এখন কোথায়?”
“তারা তো স্টেশনের বস্তিতেই থাকে।আপনি নিষেধ করায় ব্যবসা বন্ধ করে দিছিলো।এখন মিজানের গ্যাং এই ব্যবসা দখল করছে।”
“এক কাজ কর ওদেরকে ব্যবসায় ফিরতে বল। ওদের যে লিডার ছিলো তাকে লোকজন জোগাড় করে দল ভারী করে ব্যবসায় নামতে বল।”
সাব্বির নামের একটা ছেলে বিস্মিত কন্ঠে বললো-
“ভাই ব্ল্যাকের ব্যবসার অনুমোদন দিয়ে দিবেন?”
“হুম। সব ব্যবসারই দরকার আছে। ওরা ট্রেনপ্রতি ৫০ টা টিকিট ব্ল্যাকে পাবে।প্রতি টিকিটে ৫০ টাকা লাভ। ব্ল্যাক টিকিট ছাড়বে ট্রেন ছাড়ার দশ মিনিট আগে।যাদের খুব প্রয়োজন তারা কিনবে।”
তমাল বললো-
“কিন্তু ভাই এটা তো বেআইনি।থানা পুলিশ জানলে….”
“এই কাজ আমি বন্ধ রাখলেও বন্ধ থাকবে না কেউ না কেউ চালু করবে,ঝামেলা করবে।এর থেকে এই ব্যবসা টা আমাদের আন্ডারে থাকবে, ঝামেলা কম হবে।সাধারন জনগন পর্যাপ্ত পরিমান টিকিট ব্ল্যাক ছাড়াই পাবে। বাকি যারা থাকবে তারা ব্ল্যাকে কাটবে।”
“ঠিক আছে ভাই আমি কথা বলে দেখছি।”
“সাথে এটাও বলবি এই ব্যবসা চালু করে দেয়ার বিনিময়ে ওরা আমার একটা কাজ করে দিবে।”
“কি কাজ ভাই?”
“এই মারামারির সাথে যারা যারা জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেককেই একই রকমভাবে এই মারের উত্তর দিতে হবে। এবং এই ঘটনায় আমার দলের কেউ যাবে না। ওরা বস্তি থেকে ছেলে নিয়ে এই কাজ সারবে। ব্যাপারটা যেন এরকম হয় যে ব্ল্যাকে টিকিট ব্যবসা নিয়ে দুই দলের মারামারি। ঠিক আছে?”
সামনে বসে থাকা মার খাওয়া ছেলেগুলো খুশিতে টেবিলে দিলো। শাহাদ সামনে দাঁড়ানো দলের বাকি ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বলল-
“ইট মারলে পাটকেল খেতে হবে। ছাড় দিলে এর পরের বার লাশ ফেলবে। তাই ক্ষমা করার প্রশ্নই আসে না।আমি এখানে রাজনীতি করতে বসেছি, চ্যারিটি করতে নয়।”
_________
রাত আনুমানিক ৮ টা বাজে। রাহাত বিরস মুখে খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে। তার পড়নে টাওয়াল আর স্যান্ডো গেঞ্জি।বাইরে থেকে এসে বাইরের জামাকাপড় পড়ে রাখার অভ্যাস নেই তার। হাত মুখ ধুয়ে নরমাল জামাকাপড় পড়লে তবেই তার শান্তি। কিন্তু আনিশা তার সকল জামাকাপড় এমনভাবে কেটেছে যে গায়ে দেয়ার উপায় নেই।এক্টা পুরাতন লুংগি পর্যন্ত ছাড় দেয় নি। রাহাত খুলে রাখা শার্ট আর প্যান্টটা আনিশার ভয়ে নিজের কাছে রেখেছে। বলা তো যায় না কখন এই দুটোকেও কেটে ফেলে। ঘাড় ঘুরিয়ে ডিভানে বসে থাকা আনিশার দিকে একবার তাকালো।আনিশা কোলের উপর বালিশ নিয়ে আয়েশ করে বসে রসমালাই খাচ্ছে। সামনের টেবিলে রাখা ল্যাপটপটায় বোধ হয় খুব ইন্টারেস্টিং কিছু চলছে, কারন আনিশা সেদিকে তাকিয়ে হেসে গড়িয়ে পড়ছে।রাহাত চাইলেই জামা কাপড় অর্ডার দিয়ে নিয়ে আসতে পারে।কিন্তু এতে আনিশার রাগ দ্বিগুন বেড়ে যাওয়ার আশংকায় তা করলো না।বরং সিদ্ধান্ত নিলো আনিশাকে মিষ্টি কথায় ভুলি ভালিয়ে যদি এইবারের মতো মাফ পাওয়া যায়। রাহাত একটু ভেবে আনিশাকে ডাক দিলো-
“অনি..অনি”
আনিশা তাকালো না। তার মনোযোগ ল্যাপটপের দিকে। রাহাত গলাটা পরিষ্কার করে মধুর কন্ঠে ডাক দিলো-
“বউ, ও বউ, সোনা বউ।”
এই ডাকে কাজ হলো।আনিশা কঠিন চোখে তাকালো। আনিশার দৃষ্টি দেখে রাহাত খুব কষ্ট পেলো। স্ত্রীদের কোমল চোখে তাকানো উচিত স্বামীর দিকে। অথচ তার বউ এমন দৃষ্টি দিয়েছে, যে দৃষ্টিতে একজনকে ভষ্ম করে দেয়া সম্ভব। আনিশা কোনো সাধু সন্যাসী হলে রাহাত নিশ্চিত ভষ্ম হয়ে যেত। আনিশা খেকিয়ে উঠলো-
“ডাকছো কেন?”
রাহাত হেসে বলল-
“তুমি তো আমার লক্ষী বউ। স্বামীর কষ্ট কস্মিনকালেও তোমার সহ্য হবার কথা নয়।নিশ্চয়ই তুমি কোথাও আমার টি শার্ট ট্রাউজার লুকিয়ে রেখেছো। তাই না? দাও না বের করে।।টাওয়াল পড়ে কতক্ষন থাকব।”
আনিশা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বললো-
“তাহলে টাওয়াল খুলে ফেলো। অসুবিধা কি।”
রাহাত অবশ্বাসী দৃষ্টিতে তাকালো। নিজের স্বামীকে ন্যাংটো করে রাখতে চায়, জামাকাপড় পড়তে দিতে চায় না।এটা কোন প্রজাতির বউ? রাহাতের ভিতরে তার বিপ্লবী সত্তা জেগে উঠলো।তড়াক করে দাঁড়িয়ে গিয়ে রাগী স্বরে আনিশাকে শাসিয়ে বলল-
“এক্ষনি আমাকে জামাকাপড় বের করে দাও।এক্ষনি।নাহলে……”
“নাহলে কি?”
আনিশার কঠিন স্বরে করা প্রশ্নে রাহাতের ভেতরের বিল্পবের প্রদীপ নিভু নিভু হয়ে গেলো।সে তাড়াতাড়ি মনে মনে অংক কষলো। রাহাতের নিজের বাপ এমপি। প্রেম করে বিয়ে করেছে আরেক এমপির মেয়েকে। এখন যা পরিস্থিতি তাতে কিছু বললে এই মেয়ে রাগ করে ব্যাগপত্র নিয়ে বাপের বাড়ি রওয়ানা দিবে।একমাত্র মেয়ের চোখে পানি দেখে তার এমপি বাপ রাগে গর্জে উঠবে।সাথে তার জল্লাদ ভাই শাহাদ বোনের চোখে পানি দেখে সৈন্য সামন্ত নিয়ে রওয়ানা দিবে রাহাতকে শিক্ষা দিতে।।এদিকে রাহাতের এমপি বাবা ছেলেকে রক্ষা করতে নিজের সৈন্য নিয়ে রওয়ানা দিবে আক্রমণ প্রতিহত করতে। খোলা প্রান্তরে দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হবে। প্রান্তরের দুই পাশে দাঁড়িয়ে রাহাত আর আনিশা তখন একজন আরেকজনের প্রতি সকল অভিমান ভুলে কাছে আসতে চাইবে। কিন্তু যুদ্ধ পেরিয়ে আসা সম্ভব হবে না।ফলাফলস্বরূপ তারা দুজনেই কপাল চাপড়ে কান্না করবে।
“কি হলো কথা বলছো না কেন?”
আনিশার চিৎকারে রাহাত চমকে গিয়ে বাস্তবে ফিরে এলো। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে দেখলো তার বউ তার কাছেই আছে, আর কোনো যুদ্ধও বাঁধে নি। আনিশা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল-
“কি হয়েছে তোমার?”
রাহাত আমতা আমতা করে বলল-
“কই না তো, কি হবে? জামা কাপড় গুলো বের করে দাও কাল বাপের বাড়ি নিয়ে যাব।কসম।”
আনিশা ক্ষেপে গিয়ে বললো-
“এই, একদম কসম কাটবে না।মিথ্যাবাদী কোথাকার।”
দরজায় টোকা পড়লো। সাহারা বেগমের কন্ঠ শোনা গেলো।রাতে খেতে যাওয়ার জন্য ডাকছে। আনিশা রসমালাইএর বাটিটা কোল থেকে নামিয়ে বললো-
“খেতে চল।’
” এইভাবে? টাওয়েল পড়ে?”
“হুম।”
“নিচে এতগুলো বুয়া।”
“এইটা তোমার শাস্তি।”
অগত্যা রাহাতকে টাওয়াল পড়েই নিচে নামতে হলো। তবে আসার সময় সে আরেকটা টাওয়াল কোমড়ে পেচিয়ে এসেছে।সাথে শার্টটাও গায়ে দিয়েছে।শুধু সারাদিনে ময়লা হওয়া প্যান্টটা পড়তে পারলো না। হাত মুখ ধোয়ার পর ঘামে ভিজা প্যান্ট পড়লে তার আবার গোসল করতে হবে। রাহাতকে এইভাবে দেখে সাহারা বেগম চোখ কপালে তুলে বললেন-
“একি!! তুই এইভাবে নেমেছিস কেন?”
রাহাত একবার সামনের চেয়ারে বসে রুটি ছিড়তে থাকা আনিশাকে দেখলো। বউ এর দোষ ঢাকতে মিথ্যা করে বলল-
” এটা নতুন স্টাইল বের হয়েছে মা।বাসায় সবাই এসবই পড়ছে এখন।”
“তুই নিজে পাগল নাকি আমাকে পাগল পেয়েছিস। ঘরভর্তি বুয়াগুলোকে তোর চোখে পড়ে না।এভাবে এসেছিস।নির্লজ্জ!! একদম বাপের মতো হয়েছিস।”
রাহাত টু শব্দ না করে খাবার গিলতে লাগলো।চাবানোরও চেষ্টা করলো না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপরে চলে গেলেই মঙ্গল।
________
কুহু বিছানায় বসে একটা একটা করে কাপড় ভাজ করছে।বিকালে বের হওয়ার সময় যেগুলো আলমারি থেকে নামিয়েছিলো তাই এখন ভাঁজ করে রাখছে। শিরিনা বেগম জোর গলায় ঘোষনা দিয়েছেন এখন থেকে কুহুকে সংসারের সব কাজকর্ম শিখতে হবে।ওড়না দুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো আর চলবে না। কুহু ভীষন অসহায় অনুভব করলো। এই কদিনে এত কাজ কিভাবে শিখবে। বিয়ে যদি দেয়ারই ছিলো তাহলে আরো আগে থেকে এসব শিখানোতে জোর দিলে কি এমন হতো। কুহুর মোবাইলটা বেজে উঠলো। বালিশের কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে সামনে ধরলো।স্ক্রিনে ভাসলো শাহাদের নাম্বার। কুহু গলাটা একটু পরিষ্কার করে কল টা রিসিভ করলো।
“হ্যালো।”
অপাশ থেকে ভেসে এলো শাহাদের ভারী কন্ঠ-
“আপনি আপনার একটা জিনিস ফেলে গেছেন আমার গাড়িতে।”
কুহু সোজা হয়ে বসলো। শাহাদের গাড়িতে আবার কি ফেলে আসবে সে? কুহু মনে করার চেষ্টা করলো কিন্তু তেমন কিছু পেলো না। সে প্রশ্ন করলো-
“কি ফেলে এসেছি?”
“আই ডোন্ট নো।এটা মেটালের।দেখতে কাঁচির মতো।এখানে আপনার নাম লেখা।”
কুহু জিভে কামড় দিলো।এটা তো তার আইল্যাশ কার্লার। সাজগোজের কয়েকটা জিনিস ব্যাগে রাখা তার অভ্যাস তার মধ্যে এটা একটা।তনয়ার সাথে এটা নিয়ে ঝগড়া লেগে সে তারটায় নেল পলিশ দিয়ে নাম লিখে রেখেছিলো। শাহাদ প্রশ্ন করলো-
“এটা দিয়ে কি করেন?কাঁচির মতো দেখতে হলেও কোনো ব্লেড তো নেই।”
কুহু তড়িঘড়ি করে বলল-
“লেবু চিপি।”
চলবে