চাঁদের কলংক পর্ব ৬

0
1510

#চাঁদের_কলংক (৬ )
#রেহানা_পুতুল
তন্দ্রা ঘাড় ঘুরিয়ে আদিলকে দেখে আৎকে উঠে। চিৎকার দিতে গিয়েও পারেনা। তার আগেই তন্দ্রার মুখ চাপা পড়ে যায় আদিলের বলিষ্ঠ হাতের তালুর নিচে।

আদিল তন্দ্রাকে বাহুবন্দী রেখেই ঘরের সব দরজা জানালা বন্ধ কিনা চেক করে নেয়। তন্দ্রা হাজারো চেষ্টা করেও পুরুষের বাহুশক্তির কাছে পরাজয় বরণ করে। আদিল তন্দ্রাকে টেনে হিঁচড়ে বিছানার উপর এনে চিৎ করে শুইয়ে দেয়। মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিল। একহাত চেপে ধরে রাখল। আদিল এদিক ওদিক তাকালো। চোখের সামনে পড়ল কাঠের আলনাটায় কয়েকটি ওড়না। হ্যাঁচকা টানে নিয়ে ফেলল দুইটি ওড়না। তন্দ্রার দুইহাত উল্টিয়ে দুইপাশে খাটের সাথে বেঁধে নিল।

মুখ বাঁধার আগে শেষবারের মতো জিজ্ঞেস করল,
” বিশ্বাস কর তন্দ্রা আমি তোকে অনেক চাই। তুই আমার চোখের সামনে দিয়ে অন্যের বউ হবি। এটা নিতেই পারছিনা। তুই আমাকে ভালোবাসিসনা। আমার বউ হয়ে আমার সামনে ঘুরঘুর করবি। তাতেই আমার শান্তিরে। বল রাজি কিনা। নয়তো আমি এমন কাজ করব এখন। সেটা কিন্তু শুধু তোকে পাওয়ার অন্যতম অবলম্বন হিসেবেই আমি দেখছি। এছাড়া যে আর কোনভাবেই তোর বিয়ে বন্ধ করার পথ নেই। আপোষে রাজী হয়ে যা বলছি। শত অনুরোধ করে বলল আদিল।”

তন্দ্রা কান্নাজড়িত গলায় দুইহাত একত্র করে করজোড়ে ক্ষমা চাইল আদিলের কাছে। নিত্যদিনের দেখা চেনা ভালোলাগার মুখটা মুহুর্তেই অচেনা হয়ে গেল তন্দ্রার কাছে। যে আদিলকে দেখলেই তন্দ্রা আদিল ভাই বলে হেসে উঠতো। নিজের হাতের আচার, পিঠা খেতে দিত। সেই আদিলকে তন্দ্রার এখন খু’ন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। নর্দমার কীটের চেয়েও জঘন্য ঠেকছে তার কাছে। জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্ট পশু মনে হচ্ছে।

” আদিল ভাই প্লিজ এত অমানুষিক বর্বর আচরণ আপনি করতে পারেন না আমার সাথে। ছেড়ে দিন আমাকে। ”

” ওহ তার মানে তুই রাজী হবিনা আমাকে বিয়ে করতে। ”

বলেই আদিল মোবাইলের ভিডিও অন করে নিদিষ্ট স্থানে সেট করে রেখে দেয়। তন্দ্রাকে বিবস্ত্র করে ফেলে আপাদমস্তক। তন্দ্রার কোমল শরীরটাকে ইচ্ছেমতে কচলে হাতের সুখ করে নেয়। তারপরে ঠোঁটের খেলা শুরু করে। অবশিষ্ট কাজটাও করে নেয় দীর্ঘসময় ধরে। তন্দ্রার হাতের বাঁধন খুলে দেয়। মাটি থেকে শাড়িটি ছুঁড়ে মারে উদাম বুকের উপরে। বলে, এবার দেখি কে করে বাসি তোকে বিয়ে আমি ছাড়া। এতদিন পূত পবিত্র ছিলি। এবার চাঁদের মতো তোর গায়েও কলংকের দাগ লেগে গেল। খুউব রূপ হয়েছে নাহ। খুব বড়াই না যৌবনের! ”

আদিল দরজা খুলে বের হয়ে যায় বীর পুরুষের মতো। চোখেমুখে বিজয়ের হাসি রাজ্য জয়ের মতো। বুক ফুলিয়ে তন্দ্রাদের বাড়ি পার হয়। কেউ কেউ আদিলকে দেখলেও অন্যদিনের মতই স্বাভাবিকভাবে নেয়। কেননা পাশের বাড়ির ছেলে আদিল। সময়ে অসময়ে, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে যেকোনো সময়ে সে তন্দ্রাদের ঘরে নিয়মিতভাবেই আসা যাওয়া করে।

তন্দ্রা কোঁকাতে কোঁকাতে শোয়া থেকে উঠে বসে। পুরো শরীর ব্যথায় টনটন করছে। আকস্মিক ঘটনায় নির্বাক তন্দ্রা থরথর করে কাঁপছে প্রবল বৃষ্টিতে ভেজা বিড়াল ছানার মতো।

জামাকাপড় পরে পা টেনে টেনে ওয়াশরুমে গেল। অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে। স্রষ্টাকে শতকোটিবার স্মরণ করেও তন্দ্রা রক্ষা পেলনা আদিলের কামুকতা থেকে। বিছানায় এসে জুবুথুবু হয়ে পড়ে রইলো। তন্দ্রার বাবা ছিল ঢাকায়। মা আর ছোটবোন গেল খালার বাড়ি। ভার্সিটিতে পোগ্রাম থাকার জন্যই তন্দ্রা বাড়িতে থেকে গেল। কে জানে আজকের এই দিনটাতেই তন্দ্রার জীবনে কালোছায়া নেমে আসবে। এমন কতই না দিনে বাড়িতে একা ছিল। তখন কোন সমস্যাই পড়েনি তন্দ্রা।

শেষ বিকেলে তার মা বোন ফিরে এলো বাড়িতে। তন্দ্রার চোখমুখের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে রাহেলার কলিজা মোচড় খায়।
মেয়ের সামনে গিয়েই,
” কি হয়েছে মা? তোকে এমন ছিন্নভিন্ন লাগছে কেন?”

তন্দ্রা মুখে কিছুই বলতে পারেনা। শব্দরা দলা পাকিয়ে গলায় এসে আটকে আছে। তনু তন্দ্রার পিঠে হাত দিয়েই,
” কিরে বুবু ভুতে ধরল নাকি তোরে? কথা বলিসনা কেন?”

তন্দ্রা মা বোনকে জড়িয়ে ধরে বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো আছাড়িপিছাড়ি করে কান্না জুড়ে দিল। রাহেলা বোবা কান্নায় আর্তনাদ শুরু করলেন নিঃশব্দে। পাশে কেউ জানতে পারলে বিয়েই হবেনা তন্দ্রার এ ভয়ে। সাথে সাথেই স্বামীকে জানালেন।

ফোনের দুইপাশে দুজন আদিলকে কি করা যায় ভাবতে লাগলেন। একবার ভাবছেন মামলা দিয়ে দিবেন। আবার ভাবছেন আদিলের বাবা মায়ের কাছে বিচার দিবেন। পরক্ষণেই ভাবছেন চেয়ারম্যানকে জানাবেন। আবার তারা সিদ্ধান্ত থেকে সরে গেলেন।

তাহের উদ্দীন স্ত্রীকে বললেন,
” পুলিশকে জানালেও সারা গ্রাম জেনে যাবে। আদিলের বাবা মাকে জানিয়েও কোন লাভ নেই। তারা আদিলকে ভয় পায়। চেয়ারম্যানকে জানালেতো বিয়েই হবেনা। ময়লা যতই ঘাটবে ততই দুর্গন্ধ ছড়াবে। এবং তা নিজেদের নাকেই লাগবে বেশী। খবরদার তুমি নিজের কারো কাছেও এটা শেয়ার করবেনা। পরে তন্দ্রার সাথে সাথে তনুর ও কোনদিন বিয়ে হবেনা। জীবনের কিছু কিছু ঘটনা মাটিচাপা দিয়েই ফেলতে হয় নিজেদের ভালোর জন্যই। ”

” তার মানে আমরা নিরবে সয়ে সব? কি বলছেন এটা? আমার মেয়ের সাথে এত বড় অন্যায় করল। এর কোন বিচার হবেনা? শাস্তি পাবেনা সে? অপরাধী পার পেয়ে যাবে? ”

রাগে ফোসঁফোঁস করতে করতে বলল রাহেলা।

” তাদের যাত্রা ভঙ্গ করতে গেলে আমাদের ও নাক কাটা যাবে। এটা বুঝনা তুমি?একটু চুপ থাক। আমি দেখি কিভাবে কি করা যায়। আল্লাহ কোন পাপীকে ক্ষমা করে দেয়না। ইহজগতে হোক আর পরজগতে হোক সে স্বাস্তি পাবেই। এটা অবধারিত। ওই জা’ নো’ য়া’ র’ কে ফোন দিচ্ছি এক্ষুনি। তুমি রাখ এখন। মেয়ের দিকে খেয়াল রেখ।”

তাহের উদ্দীন আদিলকে ফোন দিলেই সে রিসিভ করে। তাহের বি’ শ্রী ভাষায় গালাগাল করতে থাকে নিজের ক্রোধকে সংবরণ করতে না পেরে।

” এখন আমার মেয়েটাকে কে আর বিয়ে করবে এটা জানাজানি হলে? হা’ রা’ মি’ র বাচ্চা বল তুই? ”

আদিল ওপাশ থেকে কন্ঠকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
” কাকা কেউ যেন না করে বিয়ে ওকে। সেজন্যই তো কলংকিত করা। আমিই করব ওকে বিয়ে। আর কাকপক্ষীও জানবেনা আপনারা শব্দ না করলে। চিল্লাপাল্লা না করে মাথা ঠান্ডা রাখেন। আপনার মেয়ের শরীরের কোন অংশ আমি কেটে নিয়ে আসিনি যে পচন ধরবে। সে অক্ষতই আছে। ”

আদিল লাইন কেটে দিল। তাহের হতাশ কন্ঠে স্ত্রীকে জানাল সব। রাহেলা তন্দ্রাকেও সব জানাল।
তনু বলল,
” আপা শয়ন ভাইতো এখন আর তোকে বিয়ে করবেনা। যেহেতু আদিল ভাইও তোকে পছন্দ করে নাকি তাকেই বিয়ে করবি?”

তন্দ্রা সপাটে চ’ড় বসিয়ে ছোট বোনের গালে। ধরা গলায় বলল,
” তুই কর পারলে তাকে বিয়ে। মরে যাব। তবুও আমি আদিলকে বিয়ে করবনা। জেনে রাখ। ”

তনু নিজের রুমে চলে গেল মেঘমুখ করে। তন্দ্রা নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দিল। নির্জীবের মতো বিছানায় পড়ে পড়ে থাকে। শয়ন জানলে কি হবে এই ভেবেই তার দম বন্ধ হয়ে আসে। শয়নের সাথেও তেমন যোগাযোগ করছেনা।

তাহের উদ্দীন বাড়ি এলো। খবর নিল আদিল বাড়ি নেই। কাজের কথা বলে গ্রাম ছেড়েছে। সে স্ত্রীর পরামর্শ নিয়েই তিনি চেয়ারম্যান কামরুল মির্জার সাথে নিরিবিলি দেখা করলেন। সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন করুণ কন্ঠে মাথা নত করে।

চেয়ারম্যান কিছুসময় চুপ করে ছিলেন। পরক্ষণেই তাহের উদ্দীনের কাঁধে নির্ভরতার হাত রাখলেন। আস্বস্ত করে বললেন,
” এতে আপনার মেয়ের কোন ভুল বা দোষ নেই। শয়ন ওকে ভালোবাসে। সুতরাং বিয়ে আমার ছেলের সঙ্গেই হবে। আপনি ভেঙ্গে পড়বেন না।”

” শয়ন বাবা শুনলে পরে কোন সমস্যা হবেনাতো ভাইজান?”

” সেটা আমি দেখব। আশাকরি তেমন সমস্যা হবেনা। আমি ওকে বুঝিয়ে নিব।”

এরপর শয়ন দেশে আসে। নিদিষ্ট দিনে বিয়েও হয়ে যায়। তন্দ্রার মনে ছিল দারুণ উচ্ছ্বাস। কারণ সে জানতো শয়ন সব শুনেও হাসিমুখে মেনে নিয়েছে। এবং শয়নের চালচলনে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও তার চোখে পড়েনি। তন্দ্রার ভালোবাসা হুহু করে মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেল শয়নের জন্য।

_______

কপট ঘৃণা নিয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন শয়ন ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে উঠেই নাস্তা সেরে বের হয়ে গেল রোজকার মত আদিলের খোঁজে। আদিলকে হন্যে হয়ে খুঁজছে সে। একবার হাতের কাছে পেলেই ছু’রিকাঘাতে তার পেটের নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলবে।

বাজারে পা রাখতেই শয়ন যা শুনল। তাতে সবার আফসোস হলেও তার কোন দুঃখবোধ হলনা।

চলবে ঃ ৬ ( শেয়ার ও মন্তব্যর আশাবাদী। 💗)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here