ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ৩০

0
1469

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব_৩০

মিহিকে মাঝ পথে রেখে ঈশান বললো,আপনি বাকি পথটুকু লিরার সাথে যাবেন। আমার একটা জরুরি কাজ আছে। সেটা আমাকে করতে হবে। টেক কেয়ার।

লিরা বাইক নিয়ে এসেছিলো। ঈশান লিরার থেকে বাইকের চাবি নিয়ে চলে আসলো। লিরা ড্রাইভিং করছে।

মিহি লিরাকে উদ্দেশ্য করে বললো, তুমি কোথায় ছিলে?আর ঈশান কোথায় গেলো?

– আমি তো ইনভেস্টিগেশনের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। আর স্যার তো কোয়ার্টারে গেলেন। আপনাদের রুমে কোন ভাবে আ*গু*ন লেগেছে।

মিহি হতাশ হলো, একটা চিরকুট রেখে এসেছিলো কিন্তু সেটাও শাফিনের হাতে পরলো না। মনটা খারাপ হয়ে গেলো।

লিরা বললো, মন খারাপ কেন করছিস?

মিহি অবাক হয়ে হয়ে বলে তুমি কে?লিরা বেখেয়ালী ভাবে মিহিকে তুই করে বলে ফেলেছে। শতহোক ক্লাস ফ্রেন্ড বলে কথা। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।
বলে ফেলেছে।

লিড়া তুতলে বললো, আ,আ আমি আবার কে? লিরা শ্যান্যাল। জানোই তো তুমি। আর ঈশান স্যারের এসিস্ট্যান্ট।

– মিথ্যে বলছো আমাকে। তুমি লিপিকা সরদার।

– কি বলছেন এসব।

এইতো তোমার গলার আইডি কার্ড বলছে।

লিরা বললো,না আইডি কার্ডে এই নাম কি করে থাকবে। এই নামে তো আমি আইডি কার্ড করিনি।

মিহি হেসে বলে তারমানে লিরা নামে আইডি কার্ড করে লিপিকাকে আড়াল করে রেখেছো?

লিরা ড্রাইভিং অফ করে চিৎকার করে বলে হ্যাঁ করেছি। আর বেশ করেছি আড়াল করেছি লিপিকা সরদারকে? একটা ভীতু দূর্বল আসহায় কে খু*ন করে নতুন কাউকে জন্ম দিয়েছেি।যে শুধু কোনঠাসা হয়ে ছিলো। আজ যাকে দেখতে পারছো তাকে কষ্ট দেয়া এতো সহজ নয়। সে এখন ভাঙা তো দূর মচকাবে ও না।

লিপিকা তুমি ভুল ভাবছো। ভার্সিটি লাইফ ছিলো ভিন্ন তখনকার পরিবেশ সিচুয়েশন সব ছিলো ভিন্ন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো তোমাকে কেউ কোনঠাসা করেনি। তুমি ফাহিনকে দেখো। ফাহিনও তো সুমু কে ভালোবাসতো। সুমু ওকে প্রত্যাখান করেছিলো। তাতে কি ফাহিন সু*ই*সা*ই*ড করেছিলো।আর উদয় ছিলো আমাদের সিনিয়র সেখানে তার স্বাধীনতা রয়েছে সে কি করবে।তারজন্য সু*ই*সা*ই*ড করতে হবে?

লিরা দু’হাত দিয়ে মিহির গ*লা চে*পে ধরে বলে, সব দোষ ছিলো তোর। তোর মিষ্টি কথা আর ইনোসেন্ট ফেস করে ঘুরে-বেড়ানো। সবাইকে তোর প্রতি আকৃষ্ট করে রেখেছে। তাই তোর কারণে উদয় আমাকে প্রত্যাখান করেছে। তোর এক পুরুষে মন ভরেনি। তুই শাফিনের মতো একজনকে পেয়েও আরো কত জনকে লাইনে রেখেছিস।

মিহির গলা দিয়ে কথা বেড় হচ্ছে না। চোখ দিয়ে পানি বেড় হয়ে গেছে। শেহরোজ কি বুঝলো কে জানে। জোড়ে কেঁদে উঠলো।

লিরা নিজের হুশ আসল সাথে সাথে মিহিকে ছেড়ে দিলো। মিহি কাশতে কাশকে বা’হাত দিয়ে পানি নিযে মুখে দিলো।

______________________________________________
শাফিন সামনে থাকা ব্যাক্তিকে দেখে বলে,ঈশান তুই!

হ্যাঁ আমি! অন্য কাউকে আশা করছিলি বুঝি। তোকে ট্রাপে ফেলার জন্য এটা আমার ছোট্ট আয়োজন ছিলো।
মিহিকে মিথ্যে বলে এখান থেকে সরিয়ে নেয়া। মিহির চুড়ি রাস্তায় ফেলে রাখা সব আমি করেছি। তোর সাথে মিহির যোগাযোগ আছে এটা আমি সেদিন রাতে মিহির ঠোঁট দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু সরাসরি তো আর জিজ্ঞেস করা যায় না। ঠোঁটের উপর কে হামলা করেছিলো। তাই মথা খাটিয়ে বুঝে নিয়েছি।বউ একটা পেয়েছিস ভাই বুক ফাঁটবে তবুও মুখ ফুঁটবে না। কত করে জিজ্ঞেস করলাম স্বীকার করলোই না। উল্টো কত লজিক দেখালো।

– তুই আমার পথে কেন আসছিস?

– হিসেবটা সোজা এই কেস আমি জিতবো। তুই হারবি।

– এখানে হার জিতের চেয়ে বেশি জরুরি দেশ থেকে দেশের শত্রুরদের উপড়ে ফেলা।

– সেটা তোকে আমাকে শেখাতে হবে না

– তাহলে এটা নিয়ে কেন জেদ করছিস।

– আমি মানুষ হিসেবে কেমন তুই জানিস ট্রেনিংয়ে তোর জন্য আমি ফাস্ট হতে পারিনি।

– তুই তো তোর দেশের মধ্যে ফাস্ট ছিলি।

– সে যাই হোক এই কেস সলভ আমি করবো।

– আচ্ছা দু’জনে মিলেই করবো। তবে নাম থাকবে তোর।

– না আমি তোর সাথে কাজ করবো না। তোর আর আমার মত মিলবে না।

– ভুল করছিস তুই। কেন মিলবে না। মেলালেই মিলবে।

– ওকে ডান। এক সাথে কাজ করবি তো?তাহলে একটা কন্ডিশন আছে। সেটা মানলে আমি রাজি।

– কি?

– যদি এই কেস সলভ করার ক্রেডিট তুই নিস। তবে মিহি আর শেহরোজ আমার। আমার ক্রেডিট আমার হলে ওরা তোর।

– ওরা মানে!

– ওরা মানে ওরা। কচি খোকা যেন কিছুই বোঝে না।

– বুঝিয়ে বলবি তো?

– তোর ওয়াইফ আর তোর ছেলে। ওহহ তুই হয়তো জানিস না ছেলে হয়েছে নাকি মেয়ে। ছেলে হয়েছে তোর। নাম শেহরোজ।

শাফিন ঈশানকে জড়িয়ে ধরে বলে, তুই সত্যি বলছিস। আমাদের সেহরোজ পৃথিবীতে চলে এসেছে।

ঈশান বললো,তাহলে এবার বল তুই কি চাস?

– আমার শেহরোজ আর মিহির বিনিময়ে আমি তো জীবনও হাসতে হাসতে দিয়ে দিতে রাজী আর তো। সাধারণ নাম,খ্যাতি। এসব তো কিছুই না।

শাফিন আর ঈশান নিজেদের মধ্যে বোঝাপরা করে চলে গেলো।
শাফিন বসে আছে একটা খেলার মাঠের সাইডে। রাতে জনশূন্য মাঠ আকাশে পূর্ণ চাঁদের আলো।শাফিনের মনে পরলো মিহির আদুরে কিছু কথা।

এই দেখো এই ড্রেসগুলো কত কিউট। আমি এগুলো নেবো।মিহির কথা শুনে শাফিন হেসে বলে,কি বলো এসব বাচ্চাদের ড্রেস তোমার শরীরে ফিট হবে না।জান তুমি অন্য কিছু দেখো।

– আমি কি এতোটাই অবুঝ যে এতোটুকুও বুঝবো না। কোন ড্রেস আমার ফিট হবে আর কোন ড্রেস ফিট হবে না।

– ও হ্যাঁ তাইতে! আমার বোকাফুল তো বড্ড চালাক তাই হয়তো বিয়ের আগেই বেবিদের ড্রেস কিনে রাখতে চায়।

– শাফিন, এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। আমি এই ড্রেস নেবো মানে নেবোই।

– আরেহহ পাগলী বিয়ের পর যদি ছেলে না হয়ে মেয়ে হয়। তখন?

– ঊঁহু আমার ছেলেই হবে। আর আমার ছেলের নাম হবে শেহরোজ মাহমুদ।

– এখনও বিয়ে করতে পারলাম না।এদিকে বেবিদের ড্রেস আর নামও ঠিক করা হয়ে গেছে!

– এই চলো বিয়ে করে ফেলি।

– বিয়ে করে ফেলি মানে! তোমার বাবা, মা।

– আরেহহ বাবা তো এই বিয়ে মানবেও না। তারচেয়ে আমরা নিজেরাই বিয়ে করে ফেলি।

– এভাবে বিয়ে করবে? বউ সাজবে না।মেহদী পরবে না?হুলদ দেবে না। কত কি স্বপ্ন থাকে মেয়েদের বিয়ে নিয়ে।

– কিছু দরকার নেই আমি বিয়ে করবো,মানে আজই বিয়ে করবো।এখন তুমি উদয় আর নুহাস ভাইয়াকে আসতে বলো। মতিঝিল কাজী অফিসে। আর আমি বর্ষাকে আর সুমুকে আসতে বলছি।

– মানে কি? কি পাগলামি শুরু করলে। এভাবে কেউ বিয়ে করে?

– কেউ করলে করুক। না করলে না করুক আমরা করবো।আচ্ছা এটা বলো তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও তো?

– এটা কোন প্রশ্ন হলো!করতে চাও তো মানে কি? তুমিই আমার ভবিষ্যত বউ।

– তাহলে কোন প্রশ্ন ছাড়া আজকেই আমাকে বিয়ে করবে। না করলে আর কখন হবে না।

– ওকে চলো বিয়ে করবো এক্ষুনি।

কথাটা শুনেই মিহি শাফিন গলা জড়িয়ে ধরে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বলে,ভালোবাসি।

শাফিন মিহির কোমড়ে হাত রেখে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে,তুমি না বাসলেও আমি বাসি।
মিহি বলে তাহলে আর দেরি কিসের। ভালোবসা যখন আছেই তবে…#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে

– তো মিস মিহি রেডি তো মিসেস মাহমুদ হওয়ার জন্য?

– রেডি মানে! আমার তো আর তর সইছে না। মিস থেকে মিসেস মাহমুদ হতে। শাফিন মিহিকে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে বলে,আমার বোকা ফুল।মিহিও শাফিনকে আর একটু গভীর ভাবে আঁকড়ে ধরলো।

তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রইলো রাতের নীরবতা। আকাশের নীলচে তারা আর ওই জোসনা ঝরানো চাঁদ।
শাফিন এসব ভাবছে আর মিটিমিটি হাসছে। এমন সময় একজন শাফিনের দিকে পি*স্ত*ল তাক করে বলে গুড বায় মিস্টার শাফিন মাহমুদ।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here