ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৫

0
1298

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -২৫

শাওয়ারের নিচে ঘন্টা খানিক সময় বসে রইলো। তারপর বেড় হয়ে চেঞ্জ করে নিলো। দীর্ঘ সময় শাওয়ার নেয়ার কারনে শাফিনের চোখ লাল হয়ে গেছে।
এরিকা শাফিনের উদ্দেশ্য বললো,আপনি ঠিক আছেন মিস্টার মাহমুদ?

– হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।

খাবারের প্যাকেট থেকে খাবার বের করে খেয়ে নিলো। রাত তখন বারোটা ছাড়িয়েছে। শাফিন এরিকাকে বললো আমি ছাড়া অন্য কেউ আসলে দরজা খুলবে না।

– আপনি এতো রাতে কোথায় যাচ্ছেন?

– আমার চিন্তা করে লাভ নেই এই অগোছালো কাজ গুলো না গোছানো অব্দি আমার শান্তি নেই। বলেই বের হয়ে গেলো।

এরিকা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।তবে এটা ভেবেই তার কেমন ভয় করছে, এই বাড়িতে সে একা। বাড়িটা শহর থেকে একটু দূরে। ফার্ম হাউস চারপাশে গাছপালা দিয়ে ভরা। এরিকা কোনমতে নিজের রুমে যেয়ে শুয়ে পরলো।

______________________________________________
একটা বছর পর নিজের বাড়িতে পা রেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পরে মিহি ঘরের যেদিকে তাকাচ্ছে, মনে হচ্ছে নিজের আর শাফিনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে। মিহি ছুটে ডাইনিং টেবিলের সামনে আসলো। শেষবার শাফিন যেই চেয়ারে বসে খাবার খেয়েছিলো হাত দিয়ে সেটি ছুঁয়ে দিলো। চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে।

ঈশান একটু দূরে দাঁড়িয়ে এসব দেখছে। মিহির চোখে জল দেখে বলে,আপনাদের কাঁদতে কোন কষ্ট হয় না।

মিহি ভ্রু কুঁচকে তাকালো ঈশানের দিকে।

– না মানে যখন তখন ফেস ফেঁস করে কেঁদে দেন। বুঝলাম আপনাদের মন তুলার মতো নরম না থুরি হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো নরম। তাই বলে যখন তখন শুরু হয়ে যাবেন। জীবনে সিরিয়াস বলতে কিছু নেই।

– কি বোঝাতে চাইছেন?

– এতো কাঠখড় পু*ড়ি*য়ে এখানে এসেছি কোথায় নিজেদের কাজ করবো। তা-না উল্টো ইমোশনাল হয়ে কান্নাকাটি করছেন!

– আপনি প্রফেশনাল তাই আপনার কোন ইমোশন নাই। এই ফ্লাটের প্রতিটি কোনায় কোনায় রয়েছে আমার ভালোবাসার স্মৃতি।

– এক কাজ করুন আজকে আপনি এখানে থাকুন। এখানে থেকে স্মৃতিচারণ করুন। স্মৃতিচারণ শেষ হলে আমাকে ডেকে নিয়েন।

– বাজে কথা বন্ধ করুন আর চলুন।

মিহি আর ঈশান বেড রুমে আসলো বেডরুম তন্নতন্ন করে খুঁজেও কিছু পেলো না। মিহি বলল,কেউ হয়তো এসব আগেই সরিয়ে নিয়েছে। এসব খোঁজাখুঁজির মধ্যে মিহির চোখ গেলো দেয়ালে টাঙানো শাফিন আর আয়রার কাপল পিকের দিকে। মিহি ঈশানকে বলে,এগুলো সব এডিট করা নাকি রিয়েল?ঈশান মিহিকে উদ্দেশ্য করে বলে,এরচেয়ে অনেক ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে। আর আপনি এই পিক নিয়ে পরে আছেন। কবি ঠিকি বলেছিলেন সুন্দরী মেয়ারা থাকে নির্বোধ, বোকা। এদের বুদ্ধি বলতে কিছু থাকে না।

– একদম বাজে কথা বলবেন না। কোন কবি বলেছে এসব?

– সেটাও আমাকে বলে দিতে হবে খুঁজে বের করুন। এখন একটা কথা বলুন আপনাদের বাসায় কোন গোপন রুম আছে?

– না নেই।

– আপনি শিউর নেই?

– না নেই। থাকলে তো আমি জানতাম নাকি?

ঈশান বিড়বিড় করে বলে কচু জানতেন। নিজের হ্যাসবেন্ড এতো বড় একজন অফিসার ছিলো সেটা জানতো না আর সে নাকি জানবে গোপন রুমের কথা!

– এই আপনি ধিরে ধিরে আমাকে গালি দিচ্ছেন কেন?

– একটাও বাড়তি কথা বলবেন না। বলুন স্টোর রুম কোথায়?

স্টোর রুমের কথা শুনেই মিহি ঈশানের হাত আঁকড়ে ধরলো। মিহির চোখে মুখে ভয়ের চাপ ফুটে উঠলো।

ঈশান মিহির হাতের উপর হাত রেখে বলে,মিসেস মাহমুদ আর ইউ ওকে?

– আমি যাবো না স্টোর রুমে।

– প্লিজ রিলাক্স মিস। আমি তো আছি।

– না যাবো না ওইখানে ইঁদুর আর তেলাপোকা আছে।

মিহির কথা শুনে ঈশান হাসতে হাসতে বলে,সিরিয়াসলি! আপনি ইঁদুর আর তেলাপোকার ভয়ে যেতে চাইছেন না।

– একদম হাসবেন না আমার বাজে অভিজ্ঞতা আছে এদের নিয়ে।

– আচ্ছা হাসবো না তবে চলুন আমি কথা দিচ্ছি আপনার কিছু হবে না।

মিহি ঈশানের সাথে গেলো। তবে ঈশানের হাত আঁকড়ে ধরে আছে ছাড়ছে না। অনেক খোঁজখুঁজি করে তেমন কিছু পেলো না। কিন্তু হঠাৎ কেমন যেনো শব্দ আসতে লাগলো। শব্দ শুনে মিহি চিৎকার দিয়ে ঈশানকে ধরে বলে, ভূত, ভূত।

______________________________________________
ডক্টর শফিক সবে মাত্র ড্রিংক করা শুরু করেছে। এটা তার প্রতিদিনের কাজ। রাতভর গলা ডুবিয়ে নে*শা করা। আর মেয়েদের নিয়ে ফূর্তি করা।এই বয়সে তার মতো সনামধন্য একজন ডক্টর রাতের আধারে এসব করতে পারে! দিনের আলোতে-তা কল্পনাতীত।

শাফিন একটা কালো হুডি পরা। চেহারা কালো মাস্ককে আবৃত। পাচিল টপকে এসে হাজির হলো ডক্টর শফিকের বাসায়। মেইন ডোর খুলে ( সব রকম তালা খোলার একটা যন্ত্র আছে শাফিনের কাছে। তাই কাজটা সহজ হলো। মেইন গেটও খুলতে পারতো,তবে দারোয়ানের জন্য পাঁচিল টপকে এসেছে) সোজা চলে গেলে শফিকেরে স্টাডি রুমে শফিক তখন মোটামুটি নে*শা*য় বুদ।শাফিন এসে ডক্টর শফিকের পাশে বসলো।
ডক্টর শফিক ভূত দেখার মতো চমকে যেয়ে বলে,শা*লা ম*রে যেয়েও শান্তি দিলিনা। তাও ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াস।

– শাফিন বলে, তোদের মতো মুখোশ ধারী শয়তানদের শাস্তি না দিয়ে ম*রে*ও শান্তি নেই। তাই ভূত হয়ে চলে আসলাম।

ডক্টর শফিক চোখ কঁচলে বলে,কিরে ভূত আবার কথা বলছে!

– এবার বল ওই এম,কে কে? তার সাথে তোর সম্পর্ক কি?

– ডক্টর শফিক হেসে বলে,আরে ভূত তুই জানিস না এম কে, কে!এম,কে, মাফিয়া ডন। আর সম্পর্কের কথা বলছিস এতো বিলাসিতা কোথা থেকে আসে বল!এসব তো আমার অবৈধ, কালো ধান্দা।

শাফিন জগ ভর্তি পানি ডক্টর শফিকের মুখে ঢেলে দিলো। সামনে থাকা লেবুর টক নিয়ে জোড় করে শফিকে খাইয়ে দিলো।
কিছু সময়ের মধ্যেই ডক্টর শফিকের নে*শা কেটে গেলো। সামনে শাফিনকে দেখে আত্মা শুকিয়ে গেলো।

ভয়ে ভয়ে বললো আমাকে ক্ষামা করে দাও।

– শাফিন নিজের পকেট থেকে একটা ব*ন্ধু*ক বেড় করে ডক্টর শফিকের সামনে রাখলো। শান্ত কন্ঠে বললো,আমার এম,কের সব ডিটেইলস চাই।

– তার কোন ডিটেইলস নাই। একেক সময় একেক ভাবে ডিল করে। সত্যি বলছি।

– শেষবার কবে কথা হয়েছে?
– আজ রাতেই বলেছে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে একটা বড় চালান প্রবেশ করবে। সেটার বিষয়ে কথা হয়েছে।

শাফিন ডক্টর শফিকের ফোন নিয়ে সেখান থেকে কিছু ডিটেইলস সংগ্রহ করে নিলো। অতঃপর ডক্টর শফিকে উদ্দেশ্য করে বললো,তোকে বাঁচিয়ে রাখা মানে একটা নর্দমার কিটকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেয়া। সো গুড বায়। বলেই সোজা মাথায় স্যু*ট করে দিলো।মূহুর্তে ফ্লোরে লুটিয়ে পরলো ডক্টর শফিক। শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগে বলে,আমাকে মে*রে ভুল করলি। তোর বউ আর….

শফিন ডক্টর শফিকে ধরে বলে আর কি? বল আর কি? ততক্ষণে ডক্টর শফিক শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে।

শাফিন নিজেকে সামলে সব প্রমাণ বিলুপ্ত করে চলে গেলো।

বাসায় ফিরতে ফিরতে ভোর চারটে। বাসায় ফিরে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করে ভাবছে, তোমাকে আমি কোথায় খুঁজবো? তুমি কেমন আছো? তোমার কোন ইচ্ছে আমি পূরণ করতে পারলাম না। তোমার কত সখ ছিলো ঘর বাঁধিবে আমার সনে। কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেলো। শাফিনের চোখ দু’টোতে অশ্রু টলমল করছে।

______________________________________________
ঈশান কি বলবে বুঝতে পারছে না। মিহির এতোটা কাছে এসে সে কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এ কেমন অনূভুতি?এ অনূভুতির সাথে ঈশান পরিচিত নয়। নিজেকে শান্ত করে বলে, আপনি আমাকে এভাবে কেন ধরে আছেন?

ঈশানের কথা শুনে সাথে সাথে মিহি ঈমানকে ছেড়ে দিলো। লজ্জায় আর ঈশানের দিকে তাকাতে পারছে না।

ঈশান পরিবেশ স্বাভাবিক করতে বলে,আপনার মতো সুন্দরী মেয়ে এভাবে কাছে আসলে প্রেমে পরে যাওয়ার রিস্ক আছে। যেটা ঈশানের ডায়রিতে নিষিদ্ধ।

মিহি চুপ করে রইলো, লজ্জা আর ভয় উভয় এসে যেনো তাকে জাপ্টে ধরেছে।

রাতের নীরবতা ভেদ করে আওয়াজ যেনো আরো স্পষ্ট হলো। মিহি কিছু বলবে তার আগেই ঈশান মিহিকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে, নিজের রুমাল বেড় করে মিহির মুখ চেপে রেখে। শোনার চেষ্টা করছে কিসের আওয়াজ। কিছুক্ষণ চুপ থাকতেই বুঝতে পারলো। কোন মানুষের আওয়াজ। ঈশান নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো। মিহির মুখ ছেড়ে দিয়ে বলে,তাড়াতাড়ি চলুন শেহরোজের ঘুম ভাঙ্গার সময় হয়ে গেছে। মিহি কিছু বলবে তার আগেই ঈশান বলে, যা বলার বাসায় যেয়ে বলবেন।

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here