ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ২৩

0
1512

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -২৩

সময়ে চলে যাচ্ছে কিন্তু রহস্যের কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না ঈশান। আজ তিনটা দিন পার হয়ে গেছে বাংলাদেশে তার। কিন্তু সব কেমন জটিল থেকে জটিল হয়ে যাচ্ছে। মিহি এক কাপ রং চা ঈশানেরর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, এতোটুকুতেই এই অবস্থা। সামনে তো আরো কত কিছু বাকি আছে।
ঈশান মিহির হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে বলে,কেসটা হেরে গেলেও আমারই লাভ। রোজ রোজ তোমার হাতের এই অসাধারণ চা খেতে পারবো।জানো রং চা-টা সবাই পার্ফেক্ট বানাতে পারে না।

– আপনি কেস যেদিন হারবেন সেদিন রং চায়ের বদলে বি*ষ পাবেন।

মিহির কথা শুনে নুহাস হেসে দিয়ে বলে,বাপরে রাঙা বউ দেখি রেগে গেলো।

মিহি আঙুল সামনে এনে বলে, দেখুন একদম বাজে কথা বলবেন না আমার সাথে। আমি আরেকজনের স্ত্রী।

– সুন্দরী মেয়েরা রেগে গেলে তাদেরকে ভয়ংকর সুন্দরী লাগে। তবে সুন্দরী মেয়েরা বোকা হয় সেটা শুনেছিলাম। আজ প্রমাণ পেলাম। বলেই সোফায় আয়েশ করে বসে টিভি অন করলো।

মিহি জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে ঈশানের দিকে তাকালো। পর মূহুর্তেই টিভির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। যেখানে একজন সংবাদ পাঠ করছেন…. সিক্রেট অফিসার শাফিন মাহমুদের মিথ্যে স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে এসেছেন তার সহকারী অফিসার আয়রা।আজ সোমবার বিকেলে তার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। জানা যায় কোন ভাবে আয়রা হয়তো মাফিয়া চক্রের সাথে যুক্ত আছে। অফিসার শাফিন মাহমুদের স্ত্রী মার্শিয়া জাহান মিহিকে গু*ম করার পিছনে হয়তো তারই হাত আছে। সে বিষয়ে তদন্ত শুরু হবে খুব শীগ্রই। আয়রাকে কিছু মহিলা পুলিশ নিয়ে যাচ্ছে। মিহিও সোফায় বসে পরলো। মিহির অজান্তেই মিহির চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পরছে। সেদিন প্রমান করতে ব্যার্থ ছিলো মিহি। আজ সব সমানে। সে চাইলেই বুক ফুলিয়ে নিজেকে শাফিনের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে।
ঈশান চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বলে আরেক কাপ রং চা হবে ম্যাডাম। ঈশানের দূর্বলতা মানেই আদা,লেবু আর তুলসীপাতা দিয়ে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা রং চা।

মিহি বলে হবে না কেন এক্ষুনি এনে দিচ্ছি তবে তুলসীপাতা এই মূহুর্তে নেই।

এই আপনারা মেয়ে মানুষরা এক জটিল সমীকরণ। কখন রেগে যান আর কখন আনন্দিত হন বুঝতেই পারিনা। এই মেঘ তো এই বজ্রপাত।এই বৃষ্টি তো এই রোদ।

মিহি কোন উত্তর না দিয়ে চলে গেলো কিচেনে।

ঈশান নিজের ফোন বের করে কল করলো, লিরাকে। রিসিভ করতেই ঈশান বলে, কি অবস্থা ওইদিকের?

– স্যার শাফিন স্যারের বাবাকে খুঁজে বের করতে হবে।কারণ এতো কিছু হয়ে গেলে সে না নিজের ছেলের খোঁজ করেছে।আর না ছেলের বউয়ের! শাফিন মাহমুদের বাবা বেঁচে আছে?

– আমি উদয়ের মোবাইল আর ল্যাপটপ ঘেটে তো তাই বুঝতে পারলাম।

– এক কাজ করো আজকে আবার যাও উদয়ের সাথে দেখা করতে। আর হ্যাঁ উদয়দের জামিনের ব্যবস্থা করো।

– জ্বি স্যার।

মিহি চা এগিয়ে দিয়ে বলে,আপনার চরিত্র ঘোলের মতো হলেও আপনার কাজ হিরের মতো।

ঈশান চায়ের কাঁপ হাতে নিয়ে বলে,এই ঈশান মুখার্জির চরিত্র সম্পর্কে আপনার ধারণা নেই। যেদিন ধারণা হবে সেদিন দু’লাইনে ঈশানের চরিত্রের বর্ননা করতে পারবেন না।

মিহি মৃদু স্বরে বললো, ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য।

– ধন্যবাদ দিতে হবে না। ঈশান নিজের বেনিফিট ছাড়া কোন কাজ করে না। সেসব কথা ছাড়ুন। এবার এটা বলুন আপনার শ্বশুর বাড়িতে কে, কে ছিলো?

– শ্বশুর বাড়ি বলতে?

– সেটাও বলে দিতে হবে?

– না মানে আমি বলতে চাইছি শ্বশুর বাড়ির মানুষ বলতে শাফিন একাই ছিলো।

– কেন? আপনার শ্বশুর শ্বাশুড়ি বা ফ্যামিলিতে আর কেউ ছিলো না!

– না ছিলো না। আমি যতটুকু জানি আমার শ্বাশুড়ি মা শাফিন ছোট থাকতেই পরপারে চলে গেছেন।

– আর শ্বশুর?

– কখনো শ্বশুর সম্পর্কে কোন কথা জানতে পারিনি। শাফিনের কাছে তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে বলতো, আমার আমি ছাড়া পৃথিবীতে আপন কেউ নেই। এটা জেনে তুমি আমাকে আপন করতে পারো। আর ইচ্ছে হলে রিজেক্ট করতে পারো। সব সময় এরিয়ে যেতো। তাই আমিও কিছু জানতে চাইতাম না।

– তার মানে আপনি জানেন না! আপনার শ্বশুর আছে?

– মানে!

– মানে শাফিন মাহমুদের বাবা জীবিত আছেন।

– সে জীবিত থাকলে কোথায় আছে এখন?

– সেটা তো আমারও প্রশ্ন? তবে এতোটুকু জানতে পেরেছি সে বাংলাদেশ নেই।

– আচ্ছা তাহলে কি আমেরিকায় আছে?

– এটা কেন মনে হচ্ছে?

– কারণ শাফিন ভার্সিটি লাইফ বাংলাদেশ কাটিয়েছে। এর আগে আমেরিকায় ছিলো।

– আর কিছু জানেন আপনি?

– না তেমন কিছু জানিনা তবে…

– তবে কি?

– শাফিন আমাকে তিনটা চাবি দিয়েছিলো বলেছিল সময় মতো কাজে লাগবে।তবে সেগুলো কিসের চাবি আমি জানিনা। আর জিজ্ঞেস করলেও বলতো না।

– তা দু’বছর সংসার জীবনে ঘোড়ার ঘাস কেটেছেন?

– একদম বাজে কথা বলবেন না। আমি কি তখন জানতাম নাকি আমার অগোচরে এতো কিছু হচ্ছে। আমি তো সারাদিন ভেবে যেতাম শাফিন এভাবে বদলে কেন যাচ্ছে?

– আচ্ছা আজ আপনি আর আমি আপনাদের বাসায় যাবো। মনে রাখবেন অন্যদের সামনে তুমি করে বলবেন।

______________________________________________
নুহাসের সামনে চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় পরে আছে ফাহিন। সেদিন ফাহিন কে নিয়ে এসে আটকে রেখেছে। তবে এতো কিছুর পরেও ফাহিনের মুখ থেকে কোন কথা বের করেতে পারেনি। নুহাস এক জগ পানি এনে ফাহিনের মুখে ছুড়ে মারে। ফাহিন নিভু নিভু চোখে তাকায়। নুহাস ফাহিনের চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বলে, বাঁচতে চাইলে এখনো সময় আছে সত্যি বল।

– ফাহিন ক্লান্ত স্বরে বলে,তুই কাকে ম*রা*র ভয় দেখাচ্ছিস?আমার জীবনের কোন মূল্য নেই আমার কাছে। আমি অনাথ সেটা তো জানিস। আর জীবনে কোন প্রেম ভালোবাসাও নেই। তাই বাঁচা ম*রা*র কোন চিন্তা আমার নেই।

– ওহহহ তাই নাকি। তাহলে ভালো করে দেখ সামনে কে?

– সুমু!

– চিনতে পেরেছিস তাহলে?

ফাহিন অট্টহাসি দিয়ে বলে,এ হলো আমার ক্লাস ফ্রেন্ড আমি এক সময় তাকে ভালোবাসতাম। তবে সেটা অতীত। এখন ঘৃণা করি এটা বর্তমান। তাই ওর সাথে যা ইচ্ছে কর আমার কিছু যায় আসে না।

নুহাস রাগে ফাহিনের গ*লা চে*পে ধরে বলে এখনো বলছি বলে দে তুই কার হয়ে কাজ করিস?

ফাহিন কোন উত্তর দিলো না। নুহাসের মোবাইল সাইলেন্ট করা সেই কখন থেকে রিং হয়েই যাচ্ছে। বেশ কিছু সময় পর মোবাইল বের করে দেখে,রমিজ রাজের এতোগুলো কল। সাথে সাথে কল ব্যাক করে,
রমিজ রাজ কল রিসিভ করে বলে, কোথায় থাকো তুমি?কোন খবর আছে এদিকে কি হচ্ছে? আয়রাকে এরেস্ট করেছে ডিবি পুলিশ। দ্রুত আমার বাসায় আসো। আয়রা একবার মুখ খুললে আমরা দু’জনেই ফিনিশ। নুহাস কল কেটে ফোনটা পকেটে রাখলো। মনে মনে বলছে, আয়রা তোমার জন্য আমি কিছুতেই রিস্ক নেবোনা। প্রয়োজনে তোমাকে শেষ করে দেবো।

______________________________________________
অনেক ঝড়ঝাপটা পার করে এরিকাকে সাথে করে বাংলাদেশ এসে পৌঁছিয়েছে শাফিন।

এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে এরিকা বলে,এখন আমরা কোথায় যাবো?

– এখন যাবো আমার ফার্ম হাউসে। সেখানে থেকে আগে মিহির খোঁজ করতে হবে।

গাড়ী নিয়ে সোজা চলে আসলো ফার্ম হাউস। তখন প্রায় রাত দশটা ছাড়িয়েছে। শাফিন এরিকাকে বললো,তুমি ফ্রেশ হও আমি খাবারের জন্য কিছু নিয়ে আসছি।শাফিনের মুখে কালো মাক্স চোখে কালো চশমা। শাফিন একটা রেস্তোরাঁ থেকে কিছু খাবার প্যাক করে নিলো। দু’বোতল মিনারেল ওয়াটার কিনে নিলো। বিল পরিশোধ করে সামনে হাটঁতে লাগলো। হাঁটছে আর ভাবছে, মিহিকে খুঁজে পাবো তো? মিহি ঠিক আছে তো?এসব ভাবছে আর হাঁটছে হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লেগে দু’জনেই নিচে পরে যায়।

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here