ঘর বাঁধিব তোমার শনে পর্ব ১০

0
1510

#ঘর_বাঁধিব_তোমার_শনে
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব -১০

মিহি চোখ খুলে নিজেকে বেডে আবিষ্কার করলো।মিহি উঠতে চাইলে শাফিন বললো, তুমি রেস্ট নাও আমি শ্বাশুড়ি আম্মুকে ডেকে দিচ্ছি। মিহি উঠে বসলো, শাফিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,আমি এখানে কি করে আসলাম?

– তুমি মাথা ঘুরিয়ে পরে গিয়েছিলে। আমি তোমাকে নিয়ে এসেছি রুমে। ডক্টর শফিক আঙ্কেল কে কল করেছি। উনি আসছেন।

-ডক্টর আঙ্কেলকে আসতে নিষেধ করে দাও।আমি একদম ঠিক আছি।

– তুমি বললেই তো আর তুমি ঠিক নেই। ডক্টর আসছেন তার কাজ তিনি করবেন।

– আমি তো বলছি আমি সুস্থ।

– আজ পর্যন্ত কোন পাগল স্বীকার করছে সে পাগল?

– তুমি আমাকে পাগল বলছো।

– না আমার ঘরে সেওরা গাছের পেত্নী আছে তাকে বলেছি।

– তোমার সাহস তো কম না তুমি আমাকে পেত্নী বলছো।

– এই কিছুক্ষণ আগেই না তুমি মাথা ঘুরিয়ে পরে অজ্ঞান হয়ে গেলে। আর উঠেই ঝগড়া শুরু করছো। কোথায় ধন্যবাদ দেবে তা-না উল্টো চটাং চটাং কথা বলছো।

– তা মিস্টার মাহমুদ আপনাকে আমি কোন সুখে ধন্যবাদ দেবো?

– থাক মিসেস মাহমুদ আপনাকে ধন্যবাদ দিতে হবে। আপনি জ্ঞান হারিয়ে ফ্লোরে পরে যেতেন আপনার মাথা ফে*টে র*ক্ত পরতো। এসব থেকে হিরোদের মতো আপনাকে ধরে কোলে নিয়ে এসব দূর্ঘটনা থেকে বাঁচালাম এরজন্য কেউ ধন্যবাদ দেয়!

মিহি মলিন কন্ঠে বললো,ঠিক বলেছেন এই উপকার টুকু না করলেও পারতেন। বেঁচে থাকার ইচ্ছে যেখানে ম*রে গেছে। সেখানে বেঁচে আছি সেটা কতটা যন্ত্রণার আপনি বুঝবেন না।

শাফিন রুম থেকে বেড় হয়ে গেলো কোন উত্তর দিলো না মিহির কথার।

মিহি ভেবে পাচ্ছে না যেই মানুষটা এক সময় ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখতো। সামান্য আঁচ লাগতে দিতো না। সে এতোটা পরিবর্তন কি ভাবে হয়ে গেলো। মনে মনে বলছে, তুমি তো সব সময় বলতে তুমি এক নারীতে আসক্ত। সেই কথা কি মিথ্যে ছিলো! তুমি কি এখন অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে গেছো।তোমার হৃদয় থেকে কি মিহি নামটা মুছে গেছে? মিহির ভাবনার মাঝেই মিহির মোবাইল বেজে উঠলো। বর্ষা নামটা দেখে মিহি সাথে সাথে রিসিভ করলো। বর্ষা বললো,কিরে কোথায় তুই?

-তোকে না বললাম শাফিনের বাসায় যাবো।

– সব সমস্যা কি শে? এখনি আবার এক হলি তোরা।

– নারে এবার মনে হয় আর আমাদের এক হওয়া হবে না। আমার এক বছর আলাদা থাকার প্লানটা বৃথা যাবে মনে হচ্ছে।

– আমি ঠিক বুঝতে পারছি না শাফিন ভাই এতো পাল্টে গেলো কিরে। তোকে ছাড়া যার চলতোই না। সে আজ তোকে এতোটা অবহেলা করছে?

– সেটা তো আমিও বুঝতে পারছিনা। কি থেকে কি হয়ে গেলো।

– আচ্ছা শাফিন ভাইয়ের কোন রিলেশন আছে নাকি অন্য কারো সাথে।?

-আমি জানিনা। বুঝতেও পারছিনা। সব তো ঠিক ছিলো হুট করেই সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।

– থাক মন খারাপ করিস না। ফিরবি কবে?

– বাবা,মা এসেছে ওনারা চলে গেলেই ফিরে আসবো।

– আচ্ছা বেশি টেনশন করিস না যা হওয়ার তা-তো হবেই।

ফোন কেটে দিয়ে মিহি ভাবতে বসলো সত্যি কি শাফিন কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে? এটাও কি সম্ভব।

বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে ডায়েরি আর কলম বের করে কিছু লিখলো,,,,
অবেলায় যেমন মেঘ করে হুট করেই আলোকিত শহরটাকে আধারে ঢেকে দেয়। ঠিক সেরকম ভাবেই হুট করে মনের আকাশে মেঘ জমে ঝড়ের মতো ভেতরটাকে মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিলো। তোমার প্রতি কোন অভিযোগ নেই শুধু চাই
ভালো থাকো ভালোবাসা।

সময়ে সাথে সাথে ভালোবাসার মানুষটাও কেমন পাল্টে যায়। তারা বুঝতেও পারে না তাদের এই পাল্টে যাওয়াতে বিপরীত পাশের মানুষটা কতটা বিধ্বস্ত হয়ে পরে। বেঁচে থেকেও জেনে মৃত লাশ। কেন ভালোবাসা বদলে যায়। কেন ভালোবাসা রং বদলায়। আমার কেনর উত্তর হয়তো কখন তুমি দিতে পারবে না শাফিন। তবে এমন একটা দিন আসবে, যেদিন তুমি আমাকে পাগলের মতো খুঁজবে। বুঝবে যেদিন তুমি কি পেয়ে কি হারিয়েছো সেদিন খুঁজবে। তবে সেদিন আর আমাকে খুঁজে পাবে না। অবহেলায় তো লোহাতেও জং ধরে আর আমি তো মানুষ। আমার হৃদয় তো পাথর হয়ে যাচ্ছে। আরো কিছু লিখবে তার আগেই ডক্টর শফিক আর শাফিনের কন্ঠ শুনে দরজার পানে চাইলো। দ্রুত হাতে থাকা ডায়েরিটা বালিশের নিচে রেখে দিলো। শাফিন আর ডক্টর ভেতরে আসলো। মিহিকে চেকাপ করে বললো, আমার তো মনে হচ্ছে, আর কিছু বলবে তার আগেই মিহি বললো,সামন্য দূর্বলতা ঠিক হয়ে যাবে তাইতো।

– হ্যাঁ আমি যা ভাবছি তা হলে এই সময়ে এতটুকু দূর্বলতা স্বাভাবিক।

মিহি শাফিনকে বললো, তুমি একটু বাহিরে যাবে ডক্টর আঙ্কেলের সাথে আমার কথা ছিলো।মিহি সাথী বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,মা তোমরাও যাও।

শাফিন চলে গেলো সাথে, সাথী বেগম আর রুবের সাহেবও।

মিহি ডক্টর শাফিকে উদ্দেশ্য করে বললো,এবার আমাকে বলুন আঙ্কেল তখন কি বলতে চেয়েছিলেন?

– আমার যতটুকু অভিজ্ঞতা আছে আর চেকাপ করে যা বুঝলাম মনে হচ্ছে তুমি সন্তান সম্ভবা।আমি তোমাকে কিছু টেস্ট আর ঔষদ প্রেসক্রাইব করে দিচ্ছি। তুমি টেস্টগুলো করিয়ে শিউর হয়ে নিবা।

মিহির চোখ থেকে দু’ফোটা অশ্রু গরিয়ে পরলো। মিহি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলো।

ডক্টর শফিক বললেন,তোমার চোখে জল কেন মা? তুমি কি এখন বাচ্চা চাওনি?

– তেমন কিছুনা আঙ্কেল। আঙ্কেল একটা কথা রাখবেন?

– কি কথা বলো রাখার মতে হলে রাখবো।

– এই সংবাদটা আপনি আর আমি ছাড়া আর কেউ যেনো জানতে না পারে। বিশেষ করে শাফিনের কানে যেনো কথাটা না পৌঁছে।

– তুমি না চাইলে আমি কাউকে বলবো না। তবে আগামীকাল একবার চেম্বারে এসে টেস্টগুল করিয়ে নিও।

– আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো আঙ্কেল।

– আচ্ছা নিজের যত্ন নিও আমি আজ উঠি।

শফিক সাহেব বাহিরে আসতেই শাফিন তাকে জিজ্ঞেস করলো, কি সমস্যা হয়েছে ওর?

– তেমন কিছু না। মনে হয় কোন বিষয় নিয়ে ভিষণ ডিপ্রেশনে আছে। আর শরীর দূর্বল। ঠিক মতো যত্ন নিলে ঠিক হয়ে যাবে।

– শাফিন ডক্টর শফিকের পিছু পিছু নিজ অব্দি আসলো। ডক্টর শফিক যখন গাড়িতে বসছে তখন শাফিন জিজ্ঞেস করলো, আঙ্কেল তখন যে বললেন, এই সময় এমন হয় এটার কি মানে ছিলো?

– ডক্টর শফিক বিচক্ষণ মানুষ তিনি অত্যান্ত স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলেন,আমি বলতে চেয়েছি শরীর দূর্বল থাকলে এমন হওয়াটা স্বাভাবিক।

শাফিন ডক্টর শফিক কে বিদায় জানিয়ে সোজা চলে গেলো ছাদে। মনের সাথে একা একা যু*দ্ধ করতে করতে ক্লান্ত। না পারছে কাউকে কিছু বলতে আর না পারছে সইতে। পকেট থেকে সি*গা*রে*ট বেড় করে। একটার পর একটা টান দিচ্ছে আর ধোয়া ছাড়ছে। সি*গা*রে*টে*র ধোঁয়ায় হৃদয় পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। তবুও মনে হচ্ছে এই ধোয়াগুলো হৃদয় থেকে দুঃখগুলো বেড় করে নিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছু সময় ছাদে দাঁড়িয়ে থেকে নিচে আসলো। বাসায় ঢুকতেই দেখে মিহিকে সাথী বেগম নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছে। শাফিন একপলক তাকালো। তারপর নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতেই। সাথী বেগম ডেকে বললেন। বাবা তুমিও আসো। কিছু খেয়ে নাও। তুমিও তো না খাওয়া।
শাফিন টেবিলের সামনে এসে চেয়ার টেনে বসলো। মিহি আড় চোখে শাফিনকে দেখছে। সুন্দর ঠোঁট দুটো কেমন কালছে হয়ে আছে। চেহারায় কেমন বিষন্নতার ছাপ। মিহি চোখ ফিরিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
সাথী বেগম বললেন, জানো বাবা। কত চিন্তা ছিলো মেয়েটাকে নিয়ে। নিজের ইচ্ছে তে বিয়ে করছে ছেলে কেমন না কেমন। তবে আজ নিজের চোখে মিহির প্রতি তোমার ভালোবাসা দেখে আমি কতটা আনন্দিত বোঝাতে পারবো না।সাথী বেগম আরো কিছু বলবে তার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো।শাফিন উঠতে চাইলে। সাথী বেগম বলেন, তুমি খাও বাবা। আমি দেখছি কে এসেছে। দরজা খুলে দিতেই চার পাঁচজন পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করলো। সবে মাত্র মুখের সামনে খাবারের লোকমা তুলেছিলো শাফিন। খাবার আর মুখে দেয়া হলো না। এরমধ্যেই একজন পুলিশ বলে, মিস্টার শাফিন মাহমুদ আপনাকে আমাদের সাথে একবার থানায় যেতে হবে।

#চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here