গোপনে
২
#রিমা_বিশ্বাস
অফিসে আজ অন্য দিনের চাইতে একটু বেশি সময় নিয়েই তৈরি হয়ে এসেছে অরিত্র।গায়ের রঙ চাপার দিকে তাই শার্টের রঙ উজ্জল পরার প্রবনতা বরাবর।চুল সময় নিয়ে সেট করেছে হেয়ার জেল দিয়ে। ট্রিম করা দাড়ি।যে চশমাটা অকেশনে পরে আজও পরেছে সেটা। শখের সব চাইতে দামি হাত ঘড়িটা আজ শোভা পাচ্ছে মণি বন্ধে।গায়ে পারফিউম প্রয়োগ অন্য দিনের চাইতে বেশি কারণ এর রেশটা যে সন্ধে পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে।বেরবার সময় মা মাপছিল আপদমস্তক।একটা সময় বলল,কি ব্যাপার বল তো এত যে সেন্ট মাখলি তার ব্যাখ্যাটা কি শুনি?”
ভুরু বাঁকিয়ে অরিত্র বলেছে..”ব্যাখ্যাটা…’আপুন কি মরজি’!”
…”মরজি যে হঠাৎ হঠাৎ উদয় হয় এইটেই চিন্তার। যাক গিয়ে পরশু…”
মায়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই অরিত্র বলেছে….”মনে আছে মাতাশ্রী তার অন্যথা হবে না!পরশু মেয়ে দেখার আছে।আপনাকে ঘন্টায় ঘন্টায় সাইরেন বাজিয়ে তা মনে করাতে হবে না!”
এখন বাজে সোয়া ছটা। অরিত্র পৌনে সাতটায় বেরবে।কাল রাতে ইশিকাদি ওর বোনের ছবি পাঠিয়েছিল।ছবি দেখে খারাপ লাগেনি। নইলে অরিত্র তৈরি হওয়ার জন্য এত সময় মোটে নিত না!সুন্দরী হৃদয়ে একটা পোক্ত স্থান পেতে কে না চায়?
তবে মুশকিলটা হল এই যে, দেখা করার সময়টা যত এগিয়ে আসছে তত নার্ভাসনেসটা আকুপাকু করছে।প্রথম প্রশ্নটা কি করবে অরিত্র? আর প্রশ্ন যদি বা নাও করে কথা শুরু করবে কি ভাবে?বোকার মতন কি আমতা আমতা করবে?ফার্স্ট ইমপ্রেশন খুব ইমপরটেন্ট।এখানে যদি অরিত্র জমাতে পারে তবে বাজি মাত।আর নইলে, মে বি… কে জানে মেয়েটা হয়তো ইশিকাদির কাছে অরিত্রকে নিয়ে হাসাহাসি করবে!ইশিকাদি এও ভাবতে পারে ও ভুল করেছিল অরিত্রর কথা ওর বোনকে বলে!আর যদি ইশিকাদি এসব নাও ভাবে বা ওলি যদি ইশিকাকে কিছুই না বলে কিন্তু সে তার বন্ধুদের কাছেও তো অরিত্রকে নিয়ে….
নাহ অরিত্র বেশি ভাবছে।ভাবা ভালো ঠিকই তবে এতটা বাড়াবাড়ি।
হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ঢুকল।ইশিকাদির মেসেজ। “বেরিয়ে পড়!”
অরিত্র ঘড়ি দেখল।এখন না বেরলে ঠিক সময় পৌঁছন যাবে না।কোনও মেয়েকে একা অপেক্ষা করতে দেওয়াটা সৌজন্যতার বিরুদ্ধ।অরিত্র বেরল।অফিস থেকে বেরতেই মনে হল এক ঝাঁক টাটকা বাতাস ঝাপটা মেরে গেল।আজকের অনুভূতি একেবারে অন্য।এর আগে এমন কখনো হয়নি।
টেনশন?
না মৃদু উত্তেজনা?
নাকি শুধুই আকর্ষণ?
আকর্ষণ;না জানার প্রতি.. অচেনার প্রতি। একটা রহস্য বোধ!
পারিজাত ক্লাবের ফুড কোটে কিছুটা চোখ বোলাতেই বেবি পিঙ্ক কুর্তি চোখে পড়ে গেল।অরেঞ্জ রঙের চেয়ারে একাকী বসে এক তরুণী। মোবাইলে চোখ নিবদ্ধ।মেয়েটার ছবি নয় ভালো আসে না নয় ইশিকাদি যা বদমাশ ও ইচ্ছে করেই ওর সব চাইতে খারাপ ছবিটা পাঠিয়েছিল।এ মেয়ে মারাত্মক সুন্দরী। কুর্তির রঙ বেবি পিঙ্ক আর ওর গায়ের রঙও তাই।চুল লালচে বাদামি। রেশমের মতন।বেনীটা লুটিয়ে পড়েছে কাঁধ বেয়ে।দূর থেকে দেখে যে কেউ বলবে এ অসামান্য সুন্দরী যদিও অরিত্র ওর মুখটা ঠিক মতন দেখতে পাচ্ছে না।অরিত্র এগোল।মনে হচ্ছে সঙ্গে কিছু অন্তত আনতে পারত।লিলি কি অর্কিড…
গলা খাঁকারি দিয়ে অরিত্র দাঁড়াল টেবিলের সামনে।
মোবাইল থেকে মেয়েটা মুখ তুলতে অরিত্র হালকা একটু ধাক্কা খেল।সাইড ফেস আর ফ্রন্ট ফেসে বিস্তর ফারাক।চোখের চশমা আর নাকের মাঝ খানে এঁটে রয়েছে একটা পুচকে নোজ রিং যাকে নথ বলা চলে।এই নথটা যেন হুশিয়ারি দিচ্ছে ডোন্ট ইউ এভার ডেয়ার টু মেস উইথ মি..
অরিত্র ঢোঁক গিলল…”হাই!মে আই?”
মেয়েটি কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল…”ইয়া!শিওর!”
অরিত্র উল্টো দিকের চেয়ার টেনে বসল।সে চেয়ে অরিত্রর দিকে।
হেসে পরিস্থিতি সরল করল অরিত্র। তারপর বলল….”অনেকক্ষণ?”
…”নো!এই কিছু আগে!”
অরিত্র মাথা নাড়ল।অস্ফুটে বলল..”ওকে!”
…”কিছু বললেন?”মেয়েটি বলল।
…”নাহ!আজ বাইরের ওয়েদারটা ভালো। না?”
…”ভালো?আমি তো গরমে পাগল হয়ে এসিতে এসে বসেছি! “
অরিত্র মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল …”হুম গরম যে নেই তা নয়.!..আ..আপনি কফি খাবেন?”
…”আপনি খাওয়াবেন?”
অরিত্র মাথা নেড়ে বলল… “ইয়া! আফকোর্স!”
…”তবে নিশ্চয়ই খাব।এখানের কফি কিন্তু খুব এক্সপেন্সিভ! “
…”আপনি..আপনি তবে এর আগেও এসেছেন?”
…”প্রায়ই..”
..”ও!ফাইন!ভালো লাগে নিশ্চয়ই এখানের এনভায়রনমেন্ট? “
…”খারাপ কি?”
…”রাইট!”
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আরও কথা চালাতে অরিত্র প্রশ্ন করল…”তা আপনি এখন কি করছেন?মানে আগে প্ল্যানিং কি আছে?”
…”নাথিং স্পেশ্যাল। আম লুকিং ফর আ জব উইথ ডিসেন্ট স্যালরি।“
…”ওয়াও!কোন ফিল্ডে জব করতে চান?”
…”সে তো ভাবিনি।বাট..অ্যাকচুয়ালি আমার গ্র্যাজুয়েশনটা লটকে দিল।অনার্সটা ছুটে গেল।এখন বাড়ি থেকে বলছে ম্যানেজমেন্ট পড়তে।কিন্তু ঐ ক্যাট ম্যাট মাথায় ঢোকে না।বাট আমি জানি আমার ক্যালিবার আছে।ইফ আই গেট আ জব দেন আই ক্যান প্রুভ মাইসেল্ফ! “
অরিত্র কনফিউজড একটা হাসি হাসল।
কফি দিতে আসা বয়টি জিজ্ঞেস করল…”সামথিং এলস স্যার?”
অরিত্র মেয়েটির দিকে চেয়ে বলল….”ডু ইউ লাইক টু হ্যাভ সাম..”বলে বয়টিকে জিজ্ঞেস করল.. “হোয়াটস ইউর স্পেশালিটি?”
…”আরে অডার পিজ্জা অ্যান্ড কোক না ইয়ার!ভাইয়া দো চিজ পিজ্জা ওর কোক লানা।আর শুনিও যারা জলদি…মুঝে আভি নিকাল না ভি হ্যায়।এহি পাস মে…”বলে অরিত্রর দিকে তাকিয়ে বলল…”আরে জো পাশ মে হসপিটাল হ্যায় না..”
অরিত্রকে হতবম্ভ হয়ে চেয়ে থাকতে দেখে সে বলল….”ওখানে আমি জব করছি বাট বেশি দিন করব না।ইটস নট মাই ড্রিম জব!”
অরিত্রর মাথা পুরো ঘেটে গেল।এ কি বলছে কি মেয়েটা?অরিত্রকে ঘুলিয়ে দিতে চাইছে নাকি?আর হুট করে হিন্দি বলতে শুরু করল কেন? আবার বাংলা বলছে…ইশিকাদি কি তবে কোনও বদমাইশি করল?কিন্তু যতই ইয়ার্কি ফাজলামো করুক অরিত্র জানে ইশিকা ওকে ছোট ভাইয়ের মতন দেখে তার সঙ্গে এমন কেন করবে?এ কি হচ্ছে?
মোবাইল বাজতে অরিত্র চমকে উঠল। চিন্তার জট ছাড়িয়ে মোবাইল ধরেছে।মোবাইল স্ক্রিনে ইশিকার নামটা দেখে কেন যেন রাগে গা জ্বলে উঠল।কি বলেছিল আর কি বলছে এই মেয়েটা?যদি দুর্গাপুরে থাকে তো এখানে জব করবে কেন?আর হিন্দিতে কথা শুরু করলই বা কেন….
কানে ফোন চাপতে ইশিকা বলল…”তুই কি রে? আজব ছেলে তো?কোথায় তুই? “
রাগে রাগে অরিত্র বলল…. “যেখানে থাকার!”
…”যেখানে থাকার মানে?তুই কি বাড়ি চলে গেছিস নাকি?”
…”কি ভাট বকছ?এই তো বসে আছি তোমার বোনের সঙ্গে! “
…”ওলির সঙ্গে? “ইশিকা যেন আকাশ থেকে পড়ল।
…”ইয়েস অফকোর্স! “
…”কই ওকে ধরাত ফোনটা!”
মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে অরিত্র বলল….”ওলি আপনার দিদি কথা বলতে চাইছেন! “
মেয়েটি হতবাক দৃষ্টিতে চেয়ে বলল…. “মেরা নাম ওলি নেহি হ্যায়।আম শ্রুতি।শ্রুতি আগরওয়াল।“
বিস্মিত অরিত্র হাঁ হয়ে গেল।বিস্ফারিত চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল… “অ্যাঁ!”
তারপর আকস্মিক ধাক্কাটা সামলে নিয়ে বলল…”মানে?আর ইউ ম্যা… “ম্যাড বলতে গিয়েও বলতে পারল না।থেমে গেল। বলল…”আগে বলেননি কেন?”
…”কি বলব?”মেয়েটিও হতবাক।
…”এই যে আপনি আমাকে চেনেন না!অ্যান্ড ইউ আর নট ওলি!”
…”আরে ইয়ে কি বাত হোলো?আপনি থোরি না জিজ্ঞেসা করেছেন আমার নাম!আজিব আদমি…”
মেয়েটির উত্তর যথেষ্ট সঙ্গত বুঝে অরিত্র তর্কে না গিয়ে ফোন ফিরিয়ে নিয়ে কানে চেপে ধরল। শুকনো গলায় বলল…”একটা মিস আণ্ডারস্ট্যাণ্ডিং হয়ে গেছে!তোমার বোন কোথায়?”
…”ও তোকে খুঁজে না পেয়ে হাজার বার কল করেছিল কিন্তু ফোন নট রিচেবল আসছিল।আমিও কল করছিলাম বাট এখন লাইন লাগল।ও বাড়ি ফিরে এসেছে।কি যে করিস না অরিত্র! কার সঙ্গে বসে এতক্ষণ ভাটটা বকলি বলবি?আর কবে তুই মানুষ হবি বল?এই জন্য কাকিমা তোকে নিয়ে এত চিন্তা করে।তুই মাইরি একটা… একটা.. একটা পিউর গাণ্ডু!”
ইশিকাদি ফোন রেখে দিল।
অরিত্র উঠে পড়ল চেয়ার ছেড়ে। মাথাটা রাগে ঝঁ ঝাঁ করছে।
মেয়েটা বলল…”আরে… হ্যালো?বিল কোন দেগা?আজিব আদমি হ্যায়!খানে কে লিয়ে বলকর আভ যা রাহা হ্যায়!”
অরিত্র চলে যাচ্ছিল।ঘুরে তাকিয়ে বলল….”প্রথমে বাংলায় পিটির পিটির করে এখন এমন হিন্দি বলছেন কেন?প্রথমে হিন্দি বললেই তো আর এত কনফিউশান হত না!”
…”আরে রিল্যাক্স ব্রাদার!কাহে গুসসা হো রহে হো?চিল না!আমি ভাল বাংলা বলি কারণ বলতে পারি বলে।আমাদের তিন পুরুষ এখানে আছে বাট মাঝে মাঝে নিজের ভাষা চলেই আসে।এখানের বাঙালি বন্ধুদের সঙ্গেও আমি এভাবেই কথা বলি।আপনি এসে বসতে চাইলেন কথা বললেন সো আই থট ইউ মাইট বি অ্যালোন সো ওয়ান্ট টু স্পেণ্ড টাইম উইথ সামবডি হু ইজ টোটালি আননোন ফর ইউ।ইজ অ্যনি থিংক রং?কই গলতি হ্যায় ইসমে?”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসে পড়ল অরিত্র।বলল… “নো।নাথিং ইজ রঙ!”
….”ইউ ক্যান শেয়ার। মাতলব, কই বাত হ্যায় তো..”
বয় দুটো পিজ্জা দিয়ে গেল।
শ্রুতি একবার তাকাল অরিত্রর দিকে। অরিত্র ঠোঁট উলটে হাতের ইশারায় বোঝাল শুরু করে ফেল।
শ্রুতি দু কামড় দিল।খেতে খেতে বলল….”সিঙ্গেল? “
একটা ভয়ংকর রকমের ভুল বোঝাবুঝি তো হয়েই গেছে।একটা দুর্ঘটনা হতে হতে প্রায় আটকে গেছে।অরিত্র এরপর কি বলত আর এই মারোয়ারী মেয়েটি তাতে কি প্রতিক্রিয়া দিত এ আর কে জানে? লোক জরো হত কি না তাও বলা যায় না!তবে অরিত্র বুঝতে পারছিল না এই মেয়েটার সঙ্গে নিজের ব্যাক্তিগত ব্যাপারে আর আলোচনা করা চলে কি না।তবু কি যে হল।মেয়েটাকে দেখে মনে হতে লাগল এরা কারও ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেও তাকে হয়তো আলোচনার খোরাক করে না।অহেতুক রঙ্গ রসিকতাও করে না।
খেতে খেতে শ্রুতি আবার বলল…”আরে না বললে ফ্রেণ্ডশিপ হোবে কি করে?”
…”ফ্রেণ্ডশিপ? “অরিত্র একটু অবাক হল।
…”কেন?আপনি দোস্তিতে বিলিভ করেন না?”
…”নিশ্চয়ই করি!”
…”দেন?কিসমত যখন দু জনকে মিলাল তো ওর মধ্যে উপরওয়ালার কোনও ঈশারা তো আছেই!”
অরিত্র হাসল।
শ্রুতি বলল…”ফার্স্ট আপনার নাম বলুন তারপর শুনব আপনি কনফিউজড কেন হলেন!”
…”সত্যি কারও সঙ্গে ফার্স্ট আলাপে আগে যেটা জানা দরকার সেটা হল নাম।আমার নাম অরিত্র। কনফিউশান একটা হল ঠিকই। বাট অ্যাজ ইউ সে…সব কিছুর পিছনে হয়তো ঈশ্বরের ইঙ্গিত থাকে।তবে শ্রুতি একটা কথা বলব আপনার সঙ্গে কথা বলে বেশ ভালো লাগল! “
শ্রুতির ফর্সা মুখটা উজ্জ্বল হল…”আপনি খুব ভালো লোক আছেন।তবে এখনো বললেন না সিঙ্গেল কি না?”
…”সিঙ্গেল হলে বা না হলে তাতে কি কিছু আসে যায়?”
…”আসে যায়?”
কথাটা বোধহয় ঠিক করে বুঝতে পারল না শ্রুতি। তাই একই প্রশ্ন রিপিট করে চেয়ে রইল।
অরিত্র বলল… “আপনি খুব ভালো মেয়ে শ্রুতি!”
…”আর আপনি খুব সোজা মনের ছেলে।“
…”সোজা?”বলে খানিক চুপ করে থেকে অরিত্র আলগা হাসল… “তা খারাপ বলেননি!”
দু জনের পিজ্জা খাওয়া শেষ। শ্রুতি কোকের ক্যানে স্ট্র লাগিয়ে টানছিল।অরিত্র কোক শেষ করে উঠে পড়ল। বলল…”বাই শ্রুতি! আজকের দিনটা মনে থাকবে!”
…”আর যদি কখনো আমার আপনাকে মনে পড়ে তো?”শ্রুতির চোখে রহস্য।
…”তবে মনে করব আম রিয়েলি ভেরি লাকি!”
…”উহু!”শ্রুতি মাথা নাড়ল দু পাশে।
…”কেন?”
…”লাকি মনে করলে আপনি আমার নাম্বার চাইতেন। আমরা আবার মিট করতে পারতাম।এটা আচানাক হল বাট আমরা প্ল্যান করে ডেট করতেও পারি।আই রিয়েলি লাইক ডিসেন্ট গাই লাইক ইউ মিস্টার অরিত্র!”
…”রিয়েলি?আমার ধারণা ছিল দ্যট গার্লস লাভ ব্যাড গাইজ উইথ হার্শ টেম্পার অ্যাণ্ড লোডস অফ মানি!”
…”বাট দে নেভার মেট ইউ…”এক দৃষ্টিতে অরিত্রর দিকে চেয়ে শ্রুতি বলল খুব আস্তে।অরিত্র কথাটা শুধু আঁচ করল স্পষ্ট শুনল না।
কি যে ছিল ঐ চাহনিতে অরিত্র যে নাকি এতক্ষণ ধরে এই মেয়েটার সঙ্গে থেকেও ছিল না হঠাৎ করে এই মেয়েটার হতে মন চাইল।
দু জনে একে অপরের দিকে চেয়েছিল। নির্বাক!
শ্রুতি বলল…”বাই অরিত্র। এভাবে তাকিয়ে থাকলে… অ্যাজ হিন্দি মুভি সেইস, ইউ ফল ইন লাভ উইথ মি। “
অরিত্র কিছু না বলে চলে আসছিল শ্রুতি পিছু ডাকল…”অরিত্র… আই হোপ উই উইল ফাইণ্ড মি ইন ফেসবুক। টেন ডিজিটের নাম্বার কেউ মনে রাখে না বাট থ্রু মেসেঞ্জার উই উইল কানেক্ট উইথ ইচ আদার। রাইট?”
ঘাড় নেড়ে অরিত্র বলল…”ডেফিনিটলি!”
বাড়ি ফিরেছে প্রায় চল্লিশ মিনিট হল।আর এই আসার পর থেকে প্রতি মুহুর্তে অরিত্রর মনে পড়ল শ্রুতিকে।না একবারও মনে পড়েনি ওলির কথা যে ওর জন্য এসে ওকে খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছে বা ইশিকাদির কথা যে অরিত্রর সজাগ থাকার অভাবে চরম বিরক্ত হয়ে গালমন্দ করে বসেছে।অরিত্রর মনেও এল না আগামী কাল যেই মেয়েটাকে দেখার কথা তাকে।অরিত্র ভাবছে কেবল শ্রুতির কথা।শ্রুতি ওর সঙ্গে ডেটে যেতে চায়।শি লাইকস ডিসেন্ট গাই লাইক অরিত্র। শ্রুতি শিওর ওকে ফেসবুকে খুঁজবে অরিত্র!
হয়ত খুঁজবেও অরিত্র।বা হয়তো খুঁজবে না।হয়তো কাল যেই মেয়েটাকে দেখতে যাবে তাকে দেখে এসে ভুলেই যাবে শ্রুতিকে। তবু এই খনিকের আলাপের মেয়েটা যে কিছুতেই স্মৃতির আড়াল হতে চাইছে না।বিছানায় শুয়ে যখন অরিত্র আজ সন্ধের ঘটনার খুটিনাটি ঘাটছে মগজের ফিডে তখন ফোন করল ইশিকা…”হ্যাঁ রে তোর কি একটা সরি বলা উচিত নয় ওলি কে?তুই আমার ওপর রাগ করে ওই বেচারির সঙ্গে রুড হবি?”
অরিত্র চমকে উঠে বিছানায় সোজা হয়ে বসল।
সরি!হ্যাঁ তা ঠিক। ওলিকে একটা সরি বলা তো খুবই উচিত ছিল। কিন্তু ইশিকাদির উপর কখনোই অরিত্র রাগ করেনি।তাই বলল….”তোমার ওপর রাগ করব কেন দি?দোষ তো আমারই ছিল!”
…”তবে আমাকে যে আর কল করলি না?ফোনে বকেছিলাম বলে?”
অরিত্র হাসল…”তোমার বকুনি আর মায়ের হোমিওপ্যাথি টিনচার একই!”
…”ওয়াও!কম্প্যারিজনটা দারুণ করলি ভাই।পদার্থের সঙ্গে জুড়ে দিলি!”
…”পদার্থের সঙ্গে জুড়েছি দি অপদার্থের সঙ্গে তো আর জুড়িনি!”
…”তাতেই আমার মোক্ষ!এবার শোন আমার কথা!বলি ওলিকে কি মানা করে দেবো?”
অপ্রতিভ হল অরিত্র… “আরে তা কেন?আমি নিশ্চয়ই ওর সঙ্গে মিট করব!কাল।কাল ফাইনাল!”
…”কাল যে মেয়ে দেখতে যাচ্ছিস!ভুলে গেলি?”
…”সে তো বিকেলে আমরা সকালে মিট করতে পারি মানে যদি ওলির অসুবিধা না হয়!”
…”ওকে!দেখি ওলিকে বলে!”
ফোন রেখে অরিত্র শুয়ে রইল চুপ করে।একটা হালকা পুলকা ভালো লাগার স্রোত বার বার যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে!কি হল হঠাৎ করে?
একা নয় একে একে অনেকেই?
দ্যাখা যাক ওলি কি বলে!
আর তো কয়েক ঘন্টা। কাল মনে হয় সকাল থেকে পুরো দিনটা উত্তেজনায় কাটবে।মেসেজ ঢুকল উইসেলের শব্দ করে।ইশিকাদি লিখেছে ওলিকে এখন একবার ফোন কর!
শিথিল স্নায়ুতন্ত্র টাল খেল।অরিত্র ধড়মড়িয়ে উঠে বসল।ফোন কর মানে?হুট করে একটা অচেনা মেয়েকে ফোন করে কি জানতে চাইবে?বলবেই বা কি?
কিন্তু ইশিকাদিকে আর রাগানো যায় না তাই ভয়ে ভয়েই ইশিকাদির দেওয়া ওলির নাম্বারটা ছুঁয়ে দিল। কিছুক্ষণ ফোন বাজার পর মিষ্টি কন্ঠস্বর ওপাশ থেকে শুধু বলল…”হ্যালো! “
হ্যালো বলার মধ্যে একটা সুর ছিল। ছিল একটা ছন্দ!
অরিত্র বলল…”আমি…আমি অরিত্র বলছিলাম!”
কিছুক্ষণ ওপাশ থেকে সাড়া পাওয়া গেল না।অরিত্র মনে মনে ভাবল মেয়েটা ওর প্রতি যথেষ্ট বিরক্ত তাই হয়তো নামটা শুনে নিজের রাগটা সামলাতে সময় নিচ্ছে।তবে সেই সময় যাতে অতিব দীর্ঘ না হয় তার জন্য অরিত্র আবার বলল…”আমি অরিত্র..মানে ইশিকাদি…”
আর বেশি ব্যাখ্যায় যেতে হল না।ওপাশ থেকে ওলি বলল….”বুঝতে পেরেছি।বলুন!”
…”খুব খারাপ লাগছে জানেন।আপনি আমায় খুঁজলেন অথচ না পেয়ে ফিরে গেলেন।আম এক্সট্রিমলি সরি ফর দ্যাট!”
….”ইটস অলরাইট অরিত্র বাবু।আসলে দোষটা আমারই হয়েছে।আমি কলকাতা শহর তেমন চিনি না।যখন আসি ইশিদির সঙ্গেই ঘুরি।মে বি সেই কারণে মিসকমিউনিকেশন হয়েছে!”
…”তা হতে পারে কিন্তু আপনি কি পারিজাতে গিয়েছিলেন?”
…”হ্যাঁ গিয়েছিলাম।তেমন কাউকের চোখে পড়েনি তবে…. “
…”তবে কি?”
….”ইশিদি আপনার যে ছবিটা পাঠিয়েছিল তা থেকেও আপনাকে যতটুকু চিনেছি…মানে ওরকমই একজনকে দেখেছি… বাট সে অন্য কারও সঙ্গে ছিল।সো আমি বুঝলাম নিশ্চয়ই আপনি হবেন না।সো…আমি কিন্তু তারপর কলও করি কিন্তু তখন বার বার ফোন নট রিচেবেল আসছিল!”
শুনে বুকের ভিতরটা হিম হয়ে গেল অরিত্রর।ওলি তার মানে ওকেই দেখেছিল আর দেখেছিল শ্রুতির সঙ্গে।এবার সামনে থেকে অরিত্রকে দেখলে কি প্রতিক্রিয়া হবে মেয়েটার?ব্যাপারটা এত কনফিউজিং যে না ওলিকে বোঝানো যাবে না ও বিশ্বাস করবে যে পুরো ঘটনাটা আকস্মিক।
ওলি নীরবতা দেখে বলল…”হ্যালো.. অরিত্র বাবু! শুনছেন?”
অরিত্র মনে মনে বলল শুনছি মানে শুনে শুনে বুকের ভিতরের ছোট্ট প্রাণ পাখিটা যে পাঁজরার পিঞ্জরে কেঁপে কেঁপে উঠছে।কিন্তু মুখে বলল….”শুনছি ওলি।কিন্তু ভালো লাগত যদি আপনি আমায় শুধু অরিত্র বলতেন।বাবু বললে আমাকেও আপনাকে বলতে হয় ওলি দেবী।“
ওলি ফিক করে হাসল…”না না দেবী ঠেবি বলতে হবে না।আমি নয় অরিত্রই বলব!”
…”থ্যাংকস!আচ্ছা ওলি আপনি কি গান করেন?”
…”হুম ওই একটু আধটু! “
…”আপনার গলা তাই বলছে।কি গান করেন?আইমিন ক্লাসিকাল না রবীন্দ্র সঙ্গীত? “
….”নজরুল গীতি।কলকাতায় আসা একটা প্রগরামের জন্যই।এখানকার একটা মিউজিক কম্পানি একটা কম্পিটিশন ওরগানাইজ করেছে যে জিতবে তার গানের সিডি বেরবে ফেমাস সিঙ্গারের সঙ্গে! “
…”ওয়াও!দ্যাটস গ্রেট!”
…”উইশ মি গুড লাক!”
…”আই অ্যাম উইশিং ইউ গুড লাক।আমি বলছি দেখো এই কম্পিটিশনের উইনার তুমি.. সরি সরি আপনিই হবেন!”
ফোনের ওপাশের খিলখিল হাসি কানে সারেঙ্গী বাজিয়ে গেল।ওলি বলল….”থ্যাংকস আ লট।তবে তুমি চলবে।বাবু আর দেবীর সঙ্গে আপনিও বর্জিত হোক!”
…”ওওউকে…ফাইন!”
কথা শেষ হতে ফোন রেখে অরিত্রর মনে হল যেন নতুন অনুভূতির সাগরে ডুব দিল।
সন্ধের শ্রুতি এখন বিস্মৃতি। জ্বলজ্বল করছে শুধু ওলি।
আর মেঘা?
বুকটা এখনও কুনকুন করে নামটা মনে পড়লে। হয়ত এও মিলিয়ে যাবে ধীরে ধীরে যখন আবছা অনুভূতি গুলো প্রকট হবে মন আকাশের প্রত্যুষে।
©রিমা বিশ্বাস
চলবে…