গোধূলিলগ্ন ৪৭

0
264

উপন্যাসঃ”গোধূলিলগ্ন”
শান্তনা আক্তার
পর্বঃ৪৭

ঘোর তমিস্রা কাটিয়ে ধরণী এখন উজ্জ্বল ভোরের দখলে। ভয়ংকর একটা রাত পাড়ি দিয়ে বেশ ক্লান্ত মিতু। চোখে রাজ্যের নিদ্রা থাকা সত্ত্বেও সে ঘুমোতে নারাজ। তার অস্থির চোখদুটো বারবার কাব্যর ক্যাবিনের দিকে আটকে যাচ্ছে। রেখা ভেতরে আছেন। কাব্যকে ওটি থেকে বের করে ক্যাবিনে শিফট করার পর রেখাও থেকে যান সেখানে। রেখা বানু অনুরোধ করে তৌসিফকে বাড়িতে পাঠান সেই রাতেই। বর্তমানে কাব্য সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত৷ নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্তের আগেই বিষের প্রতিক্রিয়া নিষ্ক্রিয় করা গিয়েছিল বিধায় এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেল কাব্য। তবে জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে জানিয়েছেন ডাক্তার। করিডোরে বসে ঝিমোচ্ছে মিতু। হঠাৎ- হঠাৎ লাফিয়ে উঠে আশা নিয়ে কাব্যর ক্যাবিনের পানে তাকাচ্ছে। আর প্রতিবারই নিরাশ হচ্ছে। সে চাইলেই দরজা ঠেলে কাব্যকে দেখে আসতে পারে। কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বিবেকের কাছে হেরে যেতে হচ্ছে তাকে। সে বিধবা। স্বামী পরলোকগমন করেছে মাত্র এক মাস হলো। এমতাবস্থায় একজন পরপুরুষকে দেখতে চাওয়াটা ঘোর অপরাধ। যদিও সেই দেখায় রয়েছে মায়া, সম্মান, শ্রদ্ধা- তবুও তা সমাজের নিকট দৃষ্টিকটু। এসব ভাবনা থেকে নিজেকে দমিয়ে রাখছে মিতু।
কিছু সময় পর তৌসিফ সাহেব হন্নে ছুটে আসেন হাসপাতালে। তার হাতে টিফিন-কারিয়া। তাকে দেখে মিতু ওড়নার আড়ালে মুখ ঢেকে নিল দ্রুত হাতে। রাত থেকে এই একই কাজ মিতু অগণিত বার করে ফেলেছে। তৌসিফ বোঝে, তাকিয়ে ভাবে, তবে এ প্রসঙ্গে কিছু বলে না শুধু। কি মনে করে মিতুর দিকে তিনি এগিয়ে গেলেন। মিতু তখনও অন্য দিকে মুখ করে। তৌসিফ নিতিবিতি করে বলে বসে, ‘তুমি রাত থেকে এখানেই ছিলে?’
মিতু মাথা ঝাকিয়ে ‘হ্যাঁসূচক’ জবাব দেয়।
‘আর তোমার সাথের মেয়েটি? সে কি চলে গিয়েছে?’
মিতু আগের ন্যায় মাথা ঝাকায়। তৌসিফ আবার শুধালেন, ‘খেয়েছো তুমি?’
মিতু এবারও ‘হ্যাঁসূচক’ মাথা নাড়ায়। যদিও মিথ্যে, তবুও তখন তার সেটাই শ্রেয় বলে মনে হলো। মিতুর খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো সেই সময়টায়। তৌসিফের দিকে ফিরে তাকানোর সাহসটুকু জোগাড় করতে পারছিল না সে। বিষয়টা তৌসিফ বুঝতে পেরেছিল রাতেই। এখন আরও স্পষ্ট ভাবে বুঝল তা। তার আর ইচ্ছে হলো না মিতুর অস্বস্তির কারণ হতে। ফলে পা বাড়ালেন কাব্যর ক্যাবিনের দিকে। তৌসিফ চলে যাবার সময় মিতু তাকে পিছু ডাকতে চেয়েছিল। ইচ্ছেটাকে পূর্ণতা দিতে পারল না মনে সংকোচবোধ কাজ করায়। শুধু অস্ফুটে বলল, ‘আমারে মাফ কইরেন হেডমাস্টার স্যার। একদিন আপনি শিখাইছিলেন শিক্ষক/শিক্ষিকাগো দেখামাত্র সালাম দেওনের লাইগ্যা। সালাম পাওন নাকি তাগো অধিকার। বিশ্বাস করেন, আপনারে অপমান করার কোন ইচ্ছা আছিলো না আমার।’
বুক ফুড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল মিতুর। হঠাৎ কাঁধে হাতের স্পর্শে চকিতে তাকিয়ে পড়ে। নাবিলা মিতুর চোখ দেখেই বুঝে উঠে সে কতটা ক্লান্ত।
‘ঘুমোওনি তাইনা?’
মিতু দ্রুত চোখ সরিয়ে আনলো চোরের মতো করে।
‘রাতে কতবার বলেছি আমার সাথে যাওয়ার জন্য? এখন আর একটাও কথা শুনবো না আমি। মিস্টার কাব্য আহমেদ এখন লাইফ রিস্কে নেই। তাই সোজা আমার বাড়ি যাবে তুমি। তারপর খেয়ে, শাওয়ার নিয়ে বড়ো একটা ঘুম দেবে। তোমার মেয়ে আসার সময় বলে দিয়েছে তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাবার জন্য।’
মিতু বলল, ‘অনেক কেঁদেছে হয়তো মেয়েটা। কিন্তু আমার যে এখন একখান জরুরি কাজ আছে ম্যাম।’
‘কিসের জরুরি কাজ? রাত থেকে কিছু খেয়েছো তুমি? এই তুমি না খেয়ে কিভাবে থাকো বলোতো?’
‘নিজের আপন মানুষরা বিপদে থাকলে আমার গলা দিয়ে খাবার নামে না।’
চকিতে প্রশ্ন ছুড়ে নাবিলা, ‘আর কোন আপন মানুষ বিপদে আছে তোমার?’
‘আমার বুবু।’ বলল মিতু।
‘ও হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম!’
‘কিন্তু আমি যে ধানমন্ডি চিনি না। আপনি তো আমার অনেক উপকার করলেন৷ আমি অনেক ঋণি আপনার কাছে। আরও একটা ঋণ করতে চাই।’
নাবিলা রাগী ভাবটা স্পষ্ট করে ফুটিয়ে মিতুর মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
‘এই গেঁয়ো, আটকালচারড! এত বেশি বলো কেন তুমি? তুমি বলবে, আরেকটা ভালো কাজ করবেন কি ম্যাম? বলো!’
মিতুর ঠোঁটে হাসি ফুটল।
‘আরেকটা ভালো কাজ করবেন কি ম্যাম?’
নাবিলা হেসে বলল, ‘অবশ্যই। তবে তোমার বুবু ধানমন্ডির কোথায় জানো কি?’
‘হুঁ।’
_____
নাহিদ বাহিরে গিয়েছে। সে যাবার দশ মিনিটের মাথায় মিতু ও নাবিলা পৌঁছালো সেখানে। নাবিলা বেল চাপতেই নাহিদ মনে করে ছুটে আসে সেতু। দরজা খুলে সেতুর চোখ থমকাল সামনের নীল কাফতান পরিহিত পরিপাটি মেয়েটির দিকে। তার চোখের পানি দেখে সেতুর চোখজোড়াও লোভ সামলাতে পারলো না। মিতু গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে তার বুবুর বুকে। ক্ষণকাল দু’বোনের কান্না চলল সমান বেগে। সহসা সেতু বলল, ‘তুইতো দেখতাছি শহরের ম্যাডাম হইয়া গেছোস রে মিতু! মেলা সুন্দর লাগতাছে তোরে। কিন্তু আমার মায়া? হে কই?’
নাবিলা বলল, ‘আমার বাসায়, আমার মেয়ের সাথে খেলছে সে। ভালো আছে।’
‘আপনি কেডা?’
‘হেয় আমার ম্যামরে বুবু। হেয় ই আমারে এমনভাবে সাজাইছে। আমারে আরও মেলা জিনিস শিখাইছে। কিন্তু এহন তোরে এগুলা কওনের সময় না। তুই চল আমগো লগে। কিন্তু ভাইজান কই? হেরে ডাক, এক লগেই যামু।’
সেতু কাঠ গলায় বলল, ‘হেরে যাইতে হইব না৷ হেয় একটা খুনী। নিজের ভাইরে খুন হইতে দেইখ্যাও হেয় বাঁচানোর চেষ্টা করে নাই।’
মিতু বুঝল না সেতুর কথার মানে।
‘মানে বুবু? বাদশা যহন নুরুলরে মারছে, তহন ভাইজান আছিলো সেইহানে?’
‘হ আছিলো। আর এইহানে আমারে হেই বাদশার কথাতেই আনছে যাতে তুই ফিরা আহোস। আর মায়ারে হেয়-ই বাদশার হাতে তুইল্যা দিছিলো ফাঁক পাইয়া।’
মিতুর কপালের রগ তাজা হয়ে উঠল। দাঁত চেপে সে বলল, ‘আমি আইজ ভাইজানরে শিক্ষা দিয়াই ছাড়মু। আমি ভুইল্যা যামু হেয় তোর বর।’
সেতুও সায় দিল। বলল, ‘ছাড়িস না। আর ওরে ভাইজান কইস না তুই। ওয় তোর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। তোর নয়নারে খুন করছে। ওর মতো পাপীরে আর হাত-পা ছাড়াইয়া ঘুরতে দিস না।’
এমন একটা পরিস্থিতিতে এমন এক সত্যের মুখোমুখি হয়ে হতবুদ্ধি হয়ে যায় মিতু। সে চকিতে প্রশ্ন করল, ‘নয়নারে ভাইজান খুন করছে?’
‘হ, হেয়-ই খুন করছে। তিন বছর আগে বতোর দিন শেষের কথা। বৃষ্টি হইয়া উঠান কেদায় মাখামাখি হইয়া আছিলো। আমি বাড়ির পেছনের আম গাছতলায় গেছিলাম আম কুড়াইতে। আইয়া দেহি পাষান্ড নাহিদ ওর মার ঘরে দৌঁড়াইয়া ঢুকল। বুঝলাম না আমি হের ওইরহম করার কাহিনি৷ দরজাও দেহি লাগায় ফেলছে ঘরের ভেতর যাইতে না যাইতেই। হেইডা দেহার পর ভেতরে কি হইতাছে না হইতাছে সেইডা জানার বিশাল আগ্রহ জন্ম নিল আমার মনে। আমি ভাবতে ভাবতে ওইহানে যাই। দরজায় কান পাতি। কিছুই হুনতে পারি না। কিন্তু আমার তো জানতেই হইব কি চলতাছে মায়-পুতের মইধ্যে। তারপর আমার মাথায় আইলো জানলার ব্যাপার। ভাবার লগে কাজও করলাম। কূটনী মহিলা যেই রুমে থাহে, ওই রুমডার জানলা খোলা ছিল। আমি তহন মহা খুশি। হেরপর ধীরেসুস্থে জানলার থেইক্যা একটু দূরে খাড়াইয়া কান পাতি আবারও।’
সেতু থেমে গেল মিতুর শরীর কাঁপুনী দেখে। অঝোরে চোখের পানি পড়ছে মিতুর। সেতু ধাক্কা দিল মিতুকে। ‘কিরে তোর কি হইছে মিতু?’
মিতু তখন গর্জে উঠল, ‘তুই কইতে থাক বুবু!’
সেতু পুনরায় বলতে শুরু করল, ‘কান পাতার লগে লগে নাহিদরে কইতে হুনলাম, ‘মা এবার আমি কি করবো? ওই ঝিকাতুলীর দারোগা হুমকি দিয়েছে আবারও। প্রতিমাসে তাকে ত্রিশ হাজারের মতো টাকা দেই, কিন্তু এই মাসে সে লাখ টাকার দাবি করছে। না দিলে ফাঁসি দেবে বলেছে।’
তারপর হেই মহিলা চিল্লাইয়া কইল,
‘তোরা যা সব কান্ডকারখানা করিস না! তখন থেকে বাঁচাও, বাঁচাও করছিস। তোকে কেন সেই গ্রামের দারোগা হুমকি দেবে শুধু-শুধু? বিনা দোষে তোকে ফাঁসিই বা দিবে কেন?’
আমি খেয়াল করছি নাহিদের হাত পাও তহন থরথর কইরা কাঁপতাছিল। হেয় কইল, ‘সাত বছর আগে সেতুকে যখন ওর বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলাম, তখন আমার নজর পড়ে নয়না নামের ছোট মেয়েটির দিকে। মিতুর সাথেই পড়াশোনা করতো সে। একদিন মিতু আর নয়না স্কুল ছুটি হলে একসাথে বাড়ির দিকে আসছিল। আমি ওদের ওই পথ দিয়েই আসছিলাম। দূর থেকে ওদের দেখে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। ততক্ষণে নয়না মিতুর থেকে বিদায় নিয়ে তার বাড়ির পথে পা ফেলে দিয়েছিল। আমি তখন নয়নার সামনে প্রকট হলাম। কেউ ছিল না আশেপাশে। আমাকে দেখে নয়না বলল, ‘আপনি এই দিক দিয়া কই যাইতাছেন দুলাভাই?’
কোন কথা না পেয়ে আমি বলে ফেললাম,
‘এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম জানো তো, কিন্তু আমার মানিব্যাগটা কোথায় যেন পড়ে যায়। খুঁজছি আমি, তুমিও সাহায্য করো না!’
নয়না সরল মনে রাজী হলো। খুঁজতে থাকল আমার মানিব্যাগ। খুঁজতে খুঁজতে আমরা চলে গেলাম পাশের এক জঙ্গলে। আমি জানি না সেদিন আমার মধ্যে কি ভর করেছিল। আমি সুযোগ বুঝে নয়নার মুখে রুমাল চেপে জঙ্গলের ভেতরে চলে যাই। তারপর তো সবই জানো। নয়নাকে ধর্ষণ করে নিজ হাতে মেরে, সেখানেই ফেলে চলে আসি। খুব কাতরাচ্ছিল নয়না, কিন্তু আমি ছাড়িনি। বরং ওর বাঁচার সেই আকুতি, মিনতি আমাকে আরও হিংস্র করে তুলছিল যেন৷ হাতজোড় করে বলেছিল ওকে যেন না মারি। আমি শুনিনি মা, আমি শুনিনি। তখন আমি আমার মধ্যে ছিলামই না। যখন বুঝলাম নয়না মারা গেছে, তখন ভয়ে আমার চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসে। নিজেকে বাঁচাতে আগে ভাগেই সেখানকার বড়ো পর্যায়ের দারোগা, অতুল ঘোষকে হাত করে কেসটাকে ধামাচাপা দিয়ে দেই। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত তাদের মাসে মাসে টাকা দিতে হচ্ছে আমাকে। তাদের টাকা দেওয়া বন্ধ করলেই আমাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেবে বলে রেখেছিল। সেই সময় নিরুপায় হয়ে মেনে নেই। ভুল যখন করেই ফেলেছি, তখন মাশুল তো দিতে হবেই। যা এখনো দিচ্ছি। এবারটা তার ডিমান্ড আকাশছোঁয়া! আমি কি করবো মা?’

মিতু গলা ছেড়ে যত জোরে সম্ভব চিৎকার দিয়ে উঠল। তার কাছে মনে হচ্ছে কেউ যেন তার কলিজা টেনে ছিড়ে আনছে। পাগলপ্রায় মিতু কিছুতেই তার মনকে আশ্বস্ত করতে পারছে না। নয়নাকে ঘিরে দশ বছর আগের সেই পুরনো ক্ষত নতুন রূপে তাজা হয়ে উঠল যেন! মিতুকে দুপাশ থেকে সেতু ও নাবিলা মিলে চেপে ধরে বসানোর চেষ্টা করল। কিছুক্ষণ আগেও মিতু বেশ দুর্বল ছিল খুদার তাড়নায়। তবে এখন তা আর নেই। সে এখন পাগল, উম্মাদ। এভাবে বেশ কিছু সময় পার হলো। কিন্তু মিতুর কান্নার বেগ কমলো না। গলা বসে গিয়ে বিচ্ছিরি অবস্থা হলো তার। তবুও সে গলাকে বিশ্রাম দিল না। তার কান্না থামল বেলের শব্দে। ঘনঘন বেল বেজে চলেছে। সেতু রাগান্বিত গলায় বলল, ‘অমানুষটায় আইছে এইবার। ওর মুখ দেহনও পাপ! দরজাই খুলমু না আমি।’
মিতু স্বর ভাঙা গলায় বলল, ‘আমি খুলতাছি। আইজ আমি ওরে তিলেতিলে মারমু। আমার নয়নারে যেমনে কষ্ট দিয়া মারছে, তার থেইক্যাও ওরে দ্বিগুণ কষ্ট দিয়া মারমু। ওরে মাইরা আমি আমার নিজেরে দেওয়া কথা রাখমু।’
সেতু বাঁধা দিল না আজকের ওই প্রলয়ঙ্কারী মিতুকে। মিতু তুমুল আক্রোশে দরজা খুলল গিয়ে। নাহিদ সামনে কে তা না দেখেই সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে দিল। যা মুহুর্তেই মিতুর নাক মুখ জড়িয়ে নিল। কেশে উঠল সে। হতবুদ্ধিভাব নিয়ে নাহিদ বলল,
‘কিরে মিতু তুই এখানে? কিভাবে আসলি? ভালোই হয়েছে এসেছিস, এবার তোকে বাদশার হাতে তুলে দিয়ে আমি বখশিশ পাব।’ মিতু কাশতে-কাশতেই থাবা বসায় নাহিদের পাঞ্জাবীতে। মাটিতে ফেলে এলোপাতাড়ি লাথি বসায় নাহিদের বুকে। বেশ কয়েকটি লাথি মারার পর নাহিদ মিতুর পা ধরে বসে। জোরে-জোরে শ্বাস নিতে-নিতে বলে,
‘মারছিস কেন আমাকে? আমি তোর থেকে বয়সে বড়ো, ভুলে গিয়েছিস?’
মিতু কিছু না বলে অন্য পা দিয়ে নাহিদের মুখে লাথি মারে। সেতু খুন্তি সেক দিয়ে এনে বলল, ‘এইডা দিয়া পুড়ায় দে ওরে। গরম আছে।’
মিতু বলল, ‘না, ওরে অন্যভাবে কষ্ট দিমু আমি।’
নাহিদ এবার শরীরের সমস্ত জোর লাগিয়ে সরিয়ে ফেলল মিতুকে। এরপর উঠে গিয়ে মিতুর চুলের মুঠি ধরতেই পেছন থেকে সেতু গরম খুন্তিটা নাহিদের উন্মুক্ত গলায় চেপে ধরে। ব্যথা পেয়ে কুঁকড়ে যায় নাহিদ। মিতুকে ছেড়ে সে এবার সেতুর গলা চেপে ধরল। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
‘বিধবা হওয়ার রঙ লেগেছে তোর মনে! আজ তোকে আর তোর বোনকে দুনিয়া ছাড়া করবো, নইলে আমি হিংস্র পশু না।’
মিতু ফুলদানি দিয়ে নাহিদের মাথার পেছনটায় আঘাত করল। মাথা সামান্য ফেটেছে। নাহিদ তখন বুঝল, এভাবে সে পেরে উঠবে না। সেতুকে ছেড়ে সে মাথা চেপে দৌঁড় লাগায়। মিতু দ্রুত গিয়ে নাহিদের পাঞ্জাবি টেনে আবারও মেঝেতে ফেলে দিল তাকে। মুখ থুবড়ে পড়ল নাহিদ৷ তখন মিতু গিয়ে নাহিদের এক হাতে পর পর বেশ কয়েকবার পা দিয়ে আঘাত করতেই নাহিদ গড়াগড়ি খেয়ে ছটফট করতে থাকে৷ কয়েক মুহুর্ত পর সে উঠে বসার আগেই মিতু আঙুল ঢুকিয়ে দিল নাহিদের চোখে। এত জোরে ঢুকালো যে চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসল৷ নাহিদ তা দেখে ভয়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠল, ‘আমাকে ছেড়ে দাও। আমি মরতে চাইনা। এত কষ্ট দিও না। আমার চোখ!’
এক চোখবিহীন নাহিদকে দেখতে বেশ ভয়ংকর লাগছে। নাবিলা পুলিশে ফোন দিয়েছে অনেক্ষণ হয়েছে। সে ভয়কাতুরে দৃষ্টিতে দেখছিল সবকিছু। তবে নাহিদের এখনকার অবস্থা দেখে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। মিতু নাহিদের থুতনি চেপে হুংকার ছেড়ে বলল, ‘এখন বাঁচার লাইগ্যা এমন করতাছোস ক্যান? যহন নয়নারে মারছিলি তহন তো ভালোই আনন্দ লাগতাছিল তোর!’
নাহিদের আহাজারি, ‘আমি যথেষ্ট শাস্তি পেয়েছি, এবার আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও। এত নির্দয় হয়ো না। হায়রে আমার একটা চোখ চলে গেল!’
নাহিদ পাগলের ন্যায় কেঁদে চলেছে চোখের জন্য।
সেতু বলল, ‘ওরে এহন মাইরা ফেল মিতু। বাতাস আর দূষিত করিস না ওর নিশ্বাসে।’
মিতু পৈশাচিক হাসি হেসে বলল, ‘নারে বুবু। আমি ওরে একটা সুযোগ দিমু প্রাণে বাঁচার। ওয় যদি পালাইতে পারে, তাইলে আমি ছাইড়া দিমু।’
মিতু এবার নাহিদের উদ্দেশ্যে বলল, ‘পালা, নিজেরে বাঁচা যা!’
নাহিদ উঠে দৌঁড়াতে থাকল। মিতুও তার পেছনে ছুটল। সাথে সেতুও। রক্তে মাখামাখি নাহিদের শরীরের বেশ কিছু অংশ। শরীরের সব ব্যথা আজ তুচ্ছ হলো তার বাঁচার একটু আশায়। মেইন রাস্তা দিয়ে দৌঁড়ে চলেছে তিনজন, এক জনের পেছনে অন্যজন। মিতু একটা ইট ছুড়ে মারল নাহিদের দিকে। লাগেনি সেটা। এরপর আবার চেষ্টা করল। বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরও লাগলো না। নাহিদ পায়ের গতি ধরে রেখে পেছনে তাকাচ্ছে মাঝে মাঝে। একটা সময় খাম্বার সাথে বারি খেয়ে পড়ে গেল সে। আশেপাশে জনগণের শেষ নেই। ঝাঁক বেঁধে তেড়ে আসছে তারা। কিছু লোক সেতুকে ঘিরে ধরল। সমস্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘এভাবে দৌঁড়াচ্ছেন কেন আপনারা?’
সেতু হাঁপাতে-হাঁপাতে বলল, ‘ধর্ষকরে ধরি আমরা। সামনের লোকটা একটা বাচ্চা মেয়েরে ধর্ষণ করছে। খুনও করছে। তার লাইগ্যা….! সেতুর সম্পূর্ণ কথা না শুনেই লোকজন ‘ধর্ষক, ধর্ষক’ বলে ছুটে গেল। মিতুর সঙ্গে যোগ হয়ে তারাও মারা ধরল নাহিদকে। যদিও তারা পৌঁছানোর আগেই মিতু বড়ো ইটের টুকরো দিয়ে নাহিদের মাথায় আঘাত করে তাকে আধমরা বানিয়ে ফেলেছিল। শেষে গণধোলাইও বাদ পড়ল না নাহিদের কপালে।
চলবে ইনশাআল্লাহ…..
বিঃদ্রঃ একবার অর্ধেক লিখার পর ডিলেট হয়ে যায়। মনটাই নষ্ট হয়ে যায় তখন। ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here