গুছিয়ে রাখা আবেগ

0
1530

ভাইয়া কোথায় তুমি? সেই কখন থেকে তোমার
জন্য দাঁড়িয়ে আছি। আমি কিন্তু এবার বাসায় চলে যাবো।

আরুহি এই তো আর পাঁচ মিনিট একটা কাজে ফেসে গিয়েছিলাম তাই তো লেট হচ্ছে সরি।

আচ্ছা পাঁচ মিনিটই শুধু বলে দিলাম।

আরে বাবা হ্যা পাঁচ মিনিটই শুধু।

আরুহি ফোনটা রেখে সামনের দিকে তাকালো। লন্ডনের ব্যস্ত শহরের দিকে লক্ষ্য করলো। এখানে কেউ কারো জন্য অপেক্ষা করছে না। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত কারো দিকে কারো নজরই নেই। কিন্তু সে লন্ডনের একটা বড় বাঙালি রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে তার ভাই আরহামের জন্য অপেক্ষা করছে । কিন্তু তার আসার নামই নেই। তবে সে খুব একটা বিরক্ত হচ্ছে না। কারন আজ সে আরহামের কাছে একটা আবদার রাখবে। ওর বিশ্বাস ওর ভাই আবদার টা ফেলতে পারবে না। সে ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আরহাম চলে আসলো আর এক কানে হাত দিয়ে সরি বলতে লাগলো। আরুহি ভাব ধরে অন্য দিকে দাঁড়িয়ে রইল। তখন আরহাম বলল,,

“প্লিজ আরু এবারের মতো মাফ করে দে না। আমি তো বললাম একটা কাজে ফেসে গিয়েছিলাম। নাহলে বল এই আরহাম মাহমুদ খান কি কখনো লেট করি।”

আরুহি ওর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,

হুম সেটাই তো আরুহি মাহমুদ খান এর ভাই কখনো লেট করে না। কিন্তু আজ তো হলো তুমি তো সেই কখন বেরিয়েছিলে অফিস থেকে তাহলে দেরি হলো কেন?

আসলে রাস্তায় একটা ছোট্ট এক্সিডেন্ট হয়েছিল তাই।

এক্সিডেন্ট এর কথা শুনতেই আরুহি ব্যস্ত হয়ে আরহাম কে জিজ্ঞেস করল,,

এক্সিডেন্ট! তোমার কিছু হয় নি তো? তুমি ঠিক আছো? আগে বলবে না কোথায় লেগেছে চলো হসপিটালে।

আরহাম আরুহির কাঁধ ধরে বলল,,

রিল্যাক্স বোনু আমি একদম ঠিক আছি। হুট করে একটা লোক আমার গাড়ির সামনে পড়ে গিয়েছিল। লোকটা খুব একটা আঘাত পায় নি। তবুও আমার একটা দায়িত্ব আছে না। তাই লোকটাকে বাড়ি পৌঁছে দিলাম।

ওহ আচ্ছা ভালো করেছো! মানুষ হয়ে যদি মানুষের সাহায্যই না করতে পারলে তাহলে কিসের মানুষ। এখন চলো তোমার জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি আমার ক্ষুদা লেগেছে তো।

আমি বুঝলাম না তুই রাতে কেন বেরিয়েছিস আমরা আজ ডিনার না করে কাল লাঞ্চ তো বাইরে করতে পারতাম।

আমার এখন বাইরের খাবার খেতে ইচ্ছে হয়েছে তাই এসেছি। তাছাড়া আমি আজ তোমায় খাওয়াবো। আমার ইচ্ছে হয়েছে আমার ভাইকে আমি খাওয়াবো। আর তোমার সাথে আমার ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে।

আচ্ছা বাবা চল তোর সাথে কোনদিন আমি কথায় পেরে উঠবো না।

ওরা বাঙালি রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকলো। এই জায়গাটা ওদের পরিচিত এখানে প্রায়ই ওরা আসে। তাই চেনাজানা ও আছে। ওরা ঢুকে একটা টেবিলে বসলো আরুহি আরহামের সব প্রিয় জিনিস অর্ডার করলো। তা দেখে আরহাম বলল,,

কি ব্যাপার আজ এতো খাতির দারি করছিস।সব আমার পছন্দের আইটেম।কি বলবি বলে ফেল এসব ঘুষ দিতে হবে না।

ছিঃ ঘুষ একটা হারাম জিনিস আমি কেন তোমাকে দিব। আমি তো জানি আমার ভাই আমার সব কথা রাখে আর এটাও রাখবে।

আচ্ছা ঠিক আছে বল দেখি কি কথা।

খেয়ে নেই তারপর বলবো। এমনিতে খাবার সামনে রেখে দেরি করতে নেই।

আচ্ছা ঠিক আছে।

ওরা দুজন খাওয়া শেষ করলো। খাওয়া শেষ করে আরহাম বলল,,

এখন বলে ফেল?

আরুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,

ভাইয়া আমি বাংলাদেশে যেতে চাই। আমি আমার মাতৃভূমির কাছে ফিরতে চাই এখানে আমার একদম ভালো লাগছে না।

আরহাম ঠান্ডা মাথায় আরুহির কথা শুনলো।আরুহি আরহামের দিকে তাকালো না আরহামের কোন প্রতিক্রিয়া নেই।এই জিনিসটাই আরুহি ভয় পাচ্ছে। আরহাম রেস্টুরেন্টে পার্সোনাল কথা বলতে চায় না। তাই সে বলল,,

এই বিষয়ে বাড়ি গিয়ে কথা হবে। এখন চল তোর কোন বিল পে করতে হবে না। আমি করে দিচ্ছি।

আরুহি মাথা নারালো আর কোন কথা বললো না। চুপচাপ ভাইয়ের সাথে বাড়ি চলে গেল। আরহাম ওকে সোফায় বসতে বলল ও ও বসে পরলো আরহাম ওর সামনে মাটিতে বসলো। তা দেখে আরুহি ভরকে গেল ও কি ওর ভাইকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। ও বলল,,

ভাইয়া কি হয়েছে তোমার তুমি,,,

আরহাম আরুহিকে বলতে না দিয়ে বলল,,

বাংলাদেশ যাওয়া কি খুব প্রয়োজন। এই পাঁচ বছরে তুই একবারো বাংলাদেশ এ যাওয়ার কথা বলিস নি তাহলে আজ কি এমন হলো?

আমি যেতে চাই তাই। আমি এখানে থাকতে চাই না।

আমার বোনু তখন এখানে থাকতে চায় না। আমিও জোর করবো না। আমি জানি আমার বোন কোন কারন ছাড়া কোন কাজ করে না। আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আমি তো এখন যেতে পারবো না। আর আমি তোকে একা ছাড়তেও পারবো না। তুই রাস্তাঘাট কিভাবে চিনবি এই পাঁচবছর এ অনেক কিছু বদলেছে।

তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া আমি সব সামলে নেব।

তুই যখন বলেছিস তাহলে আর কি!

আমি সবকিছুর ব্যবস্থা করছি।

ধন্যবাদ ভাইয়া আমি ভাবতেই পারি নি। তুমি এত তাড়াতাড়ি রাজি হয়ে যাবে।

এখানে শুধু তোর জন্য তোকে পাঠাচ্ছি না। আমার নিজের জন্যও পাঠাচ্ছি।

মানে?

পরে বলবো।

(এতক্ষন যাদের কথা হচ্ছিল তারা হচ্ছে আরহাম মাহমুদ খান ও আরুহি মাহমুদ খান। বাবা মাহমুদ খান মা রেহানা খান। ওর মা দশ বছর আগে মিসিং হয়েছে তার তিন বছর পর ওদের বাবা এ পৃথিবী ত্যাগ করেছে। মাহমুদ খান বড় বিসনেস ম্যান ছিল উনি মারা যাওয়ার পর আরহাম ওদের বিসনেস দেখাশোনা করে।সেও একজন নাম করা বিজনেস ম্যান। পাঁচ বছর হয়েছে ওরা কোন কারনে লন্ডনে থাকে। আরুহি এবার অনার্স থার্ড ইয়ারে আর আরহাম পড়াশোনা শেষ করেছে আরো আগেই। )
___________________

আরহাম আরুহিকে এয়ারপোর্ট এ ছাড়তে এসেছে। আরহাম আরুহির মাথায় হাত রেখে বলল,,

বারবার হেড়ে গিয়েও মনে মনে নিজেকে বিজয়ী রুপে দেখেছি কিন্তু আজ জিতে গিয়েও মনে হচ্ছে কোথাও হেরে গিয়েছি। আমি জানি তুই কিসের জন্য যাচ্ছিস। তবুও মুখ ফুটে তুই আমাকে বললি না। আমি জানি আমার বোনটা কষ্ট পায় কিন্তু আমি তোর কষ্ট লাঘব করতে পারি না। এখানেই আমি হেরে গিয়েছি। ইনশাআল্লাহ যা হবে ভালোই হবে। তুই শুধু শক্ত হয়ে থাকিস। আর হ্যা সর্বদা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখবি‌।
” ভেঙে পড়ো না, নিরাশ হয়ো না, আল্লাহর সাহায্য আসবেই – এটা আল্লাহর ওয়াদা। জেনে রেখো আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে। ”

[সূরা বাকারাঃ-২১৪]

আরুহি মুচকি হেসে বলল,,

তুমি টেনশন করো না ভাইয়া। যা হবে সব ভালোই হবে। নিজের যত্ন নিও আমাকে সময়মতো সব আপডেট দেবে। আমি নেই দেখে সাপের পাঁচ পা দেখো না আবার আমি সব খবর নেব।

সাবধানে যাস কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবি আগে। আমি এখানে থেকে ব্যবস্থা করবো।

হুম তুমিও সাবধানে থেকো। আল্লাহ হাফেজ!

আল্লাহ হাফেজ!”

আরুহির আর আরহামের চোখ ছলছল করে উঠলো। এই প্রথম দুজন দুজনের থেকে আলাদা হচ্ছে। আরহাম আরুহির সাথেই যেতো কিন্তু ওর ইম্পোর্টেন্ট কাজ আছে।

আরুহি ভেতরে চলে গেল। আরহাম যতক্ষন পর্যন্ত আরুহিকে দেখা যায় সেদিকে তাকিয়ে রইলো। নিজের সিটে বসে আরুহি চোখ বন্ধ করে আপন মনে বলল,,

সব কিছু সহজ হলে কি খুব ক্ষতি হতো। সাধারণ ভাবে বেচে থাকাটাও বোধহয় এখন কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে।

তখন পাশ থেকে আওয়াজ আসলো,,

আপনি ঠিক বলেছেন মিস সাধারণ ভাবে বেঁচে থাকাটাই কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। তবে কি জানেন তো সবকিছু সহজ হলে বিষয়টা এক ঘেয়ে হয়ে যেত আর আপনি ছোট ছোট বিষয়ে আনন্দ কম পেতেন। আপনার জীবনের কঠিন জিনিস কে সহজ করে তোলা কিন্তু আপনার দায়িত্ব।

আরুহি চোখ খুলে পাশে তাকালো। সে দেখতে পেল তার পাশের সিটে একটা সুদর্শন পুরুষ মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরুহি বলল,,

ভালো বললেন তো!

আচ্ছা মিস আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

বাংলাদেশ!

আমিও তো বাংলাদেশেই যাচ্ছি। তবে আপনাকে আমার খুব চেনা চেনা লাগছে কোথায় যেনো দেখেছি।

ফ্লাট করছেন?

আরে আপনার আমাকে দেখে কি ওরকম ছেলে মনে হয়। তাছাড়া এই নিশান আবরার কখনো অনৈতিক কাজ করে না। পারলে লোক কে সাহায্য করে। সত্যি আপনাকে কোথাও দেখেছি ওহ হ্যা মনে পড়েছে আপনি বিসনেস ম্যান আরহাম মাহমুদ খান এর বোন না। আমি আপনার ভাইয়ের অফিসে আপনাকে দেখেছি।

লোকটার কথায় আরুহি একটু ঘাবড়ালো কিন্তু প্রকাশ করলো না। ওর চোখটা কোন একটা কারনে ছলছল করে উঠলো ও নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

হ্যা আমি আরহাম মাহমুদ খান এর বোন। কিন্তু আপনি আমার ভাইয়ার অফিসে কি করেছিলেন?

আসলে আমি একটা ডিলের জন্য এসেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ আপনার ভাইয়ের সাথে আমাদের ডিলটা সাকসেসফুল হয়েছে। তাই আজ চলে যাচ্ছি।

ওহ আচ্ছা।

হুম।

আরুহি আর কিছু বললো না। আবরার ও আর ওকে ঘাটালো না।পুরো জার্নিতে ওরা আর কোন কথা বলে নি। তাতে কারো কিছু যায় আসে না। এয়ারপোর্ট থেকে চেক আউট করে দুজনে একসাথেই বের হলো। ওদের যারা দেখছে তারা সকলেই ভাবছে ওরা কাঁপল। আবরার একটা কালো শার্ট আর জিন্স পড়েছে শার্ট ইং করা। আরুহি কালো কুর্তি আর কালো প্যান্ট আর কালো হিজাব বেঁধেছে। আরুহি দেখতে আহামরি সুন্দরী নয় একজন সাধারণ মেয়ে যে অতিরিক্ত ফর্সাও না আবার কালোও না উজ্জ্বল শ্যামবর্ন গায়ের রং। আবরার অনেক ফর্সা, হাইট বডি মিডিয়াম। আরুহির গাড়ি এসে দাড়িয়ে আছে তাই ও কোনদিকে না তাকিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে পড়লো। আরহাম আগে থেকেই আরুহির সব ব্যবস্থা করে রেখেছে তাই কোন সমস্যা হয় নি। আবরার একবার পেছনে তাকিয়ে দেখলো। আরুহি চলে যাচ্ছে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবরার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আবরারের কাকাতো ভাই রিয়াদ এসেছে ওকে নিতে। আবরার ও গাড়ির ভেতরে বসে চলে গেলো। কিন্তু পেছনে তাকালে হয়তো দেখতে পেত কেউ তার দিকে অশ্রু চোখে তাকিয়ে আছে।

_________________

ফজরের আজান কানে আসতেই চোখ খুললো আরুহি। ঘুম থেকে উঠার দোয়া পড়ে বিছানা ছেড়ে উঠলো।ওয়াশরুম থেকে ওযু করে ফজরের নামাজ আদায় করে নিল। তারপর বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আরহাম বাংলাদেশ এ থাকার জন্য আলাদা একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়েছে যদিও এখানে থাকা হয় না। তবুও ওর বাবার জমির ওপর একটা বাড়ি বানিয়েছে। আজ আরুহি ভার্সিটি যাবে। এখানে আসার তিন দিন হয়ে গেছে। আরুহি একেবারে কালো বোরকা আর হিজাব বেধে রেডি হয়ে নিচে আসলো।আজ চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা ও পড়েছে। নিচে আসতেই দুটো মহিলা কে দেখতে পেল দুজনেই এবাড়ির পুরোনো কাজের লোক আরুহিকে একদম মেয়ের মতো ভালোবাসে । আরুহি বসলে তারা ওর প্লেটে খাবার তুলে দিল। তখন আরুহি বলল,,

তোমরা খেয়েছো?

হু আম্মা খাইছি তুমি খায়া নাও। আজ তোমার প্রথম ক্লাস আরহাম বাপজান কইছে তোমার হগল প্রিয় খাবার রাইন্দা দিতে আর পায়েস ও করতে।

আরুহি কিছু বললো না। মুচকি হেসে খাবার খেল। সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আজ প্রথম দিন তাই ভাবলো রিক্সায় যাবে সবাই গাড়ি নিয়ে যেতে বললেও ও কারো কথা নিল না। আজকে রিক্সায় যাওয়ার কারন আছে এটা ভালো ওই বলতে পারবে। ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকতেই কিছু মেয়ে ওর পথ আটকালো তা দেখে ও ভ্রু কুঁচকে তাদের দিকে তাকালো। ও শান্ত স্বরে বলল,,

কোন সমস্যা এভাবে পথ আটকে দাঁড়িয়েছেন কেন?

তখন একজন বলল,,

সমস্যা না তবে আমাদের কথামতো কাজ না করলে তোমার সমস্যা হতে পারে।

তাই বুঝি!

হুম তাই!

আমার জানামতে আমি আপনাদের বেতনভুক্ত কর্মচারী নই। যে আপনাদের কথা মতো আমাকে চলতে হবে। না চললে সমস্যা হবে।

এই কথা শুনে মেয়েগুলো রেগে গেল। নিতু নামের একটা মেয়ে বলল,,

তোমার সাহস তো কম নয় সিনিয়র দের মুখে মুখে তর্ক করছো!

আমি কি ভুল কিছু বলেছি বলি নি তো তাহলে। যাক সেসব কথা বাদ দিন। এখন বলুন তো প্রিন্সিপাল স্যার এর রুম টা কোন দিকে।

আরুহির কথা শুনে মেয়েগুলো একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। তা দেখে আরুহি মুচকি হেসে বলল,,

ভয় পাবেন না আমি কোন কমপ্লেইন করতে যাচ্ছি না। ওনার সাথে আমার একটু দরকার ছিল।

তুমি জিজ্ঞেস করলেই আমরা বলবো কেন? এমনিতেও তুমি আমাদের সাথে বেয়াদবি করছো!

যা ফ্যাক্ট তাই বলেছি। আচ্ছা সমস্যা নেই আপনাদের বলতে হবে না। আল্লাহ হাফেজ।

তখনি সাইড থেকে আওয়াজ আসলো,,

এখানে হচ্ছে টা কি? তোমরা ওনার রাস্তা ব্লক করে রেখেছো কেন? বাই এনি চান্স তোমরা কি ওনাকে র্যাগ দিচ্ছেলে।

আরুহি সহ সকলেই সেই আওয়াজের দিকে তাকিয়ে চমকে গেল। এটা তো আবরার ভার্সিটির কম বেশি সকলেই আবরার কে চেনে। বলা যায় ভার্সিটির বড় ভাই সকলকে হেল্প করে। কারো সাথে অন্যায় কিছু দেখলে তাকে শাস্তি দেয়। আবরার কে দেখে সকলেই অবাক হলো। তখন নিতু ভয়ে বলল,

না আবরার ভাইয়া আমরা র্যাগ দিচ্ছিলাম না। আমরা তো শুধু কথা বলছিলাম। মেয়েটা নতুন এসেছে তো তাই কিছু চেনে না। তাই আমাদের জিজ্ঞেস করছিল!

তখন আবরার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে অবাক হলো এ তো আরুহি। ওদের কথায় আবরারের ঠিক বিশ্বাস হলো না। তাই আরুহিকে জিজ্ঞেস করলো,,

ওরা যা বলছে তা কি সত্যি মিস?

তখন আরুহি বলল,,

কিছুটা সত্যি আর কিছু টা মিথ্যা। আচ্ছা বাদ দিন আপনি বলুন তো প্রিন্সিপাল স্যার এর রুম টা কোন দিকে।

আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে?

তার দরকার নেই মিস্টার নিশান আবরার আমাকে বলে দিলেই হবে।

নিশান আবরার নামটা শুনে সকলেই কম বেশি অবাক হলো। যতদূর মনে হচ্ছে সকলেই বুঝতে পারছে মেয়েটা নতুন আবরার কে চেনার কথা না। আবারারের নামটা যে আরুহি মনে রেখেছে এটা ভেবে আবরার খুশি হলো। আর মুচকি হেসে বলল,,

তা কি করে হয় আপনি আমাদের ভার্সিটিতে নতুন এসেছেন আপনাকে সবকিছু দেখানো আমাদের দায়িত্ব মিস আরুহি।

আরুহি নামটা শুনে আরুহি অবাক হলেও কিছু বললো না। আরুহি হাঁটা ধরলো তা দেখে আবরার ও পেছনে হাঁটা ধরলো আর আরুহিকে ধরে বলল,,

আপনার নাম কিভাবে জানলাম জিজ্ঞেস করলেন না তো?

ইন্টারেস্ট হচ্ছে না তাই জিজ্ঞেস করলাম না।

আপনি এমন কেন বলুন তো?

কেমন?

স্বল্পভাষী! আচ্ছা বাদ দিন আপনার ভাই আমাকে ফোন করেছিল আপনি নাকি আমার ভার্সিটিতেই ভর্তি হয়েছেন তাই আপনাকে যেন দেখে রাখি আর সাহায্য করি।

আপনি ভার্সিটিতে পড়েন আবার বিজনেস ও দেখেন?

হুম দেখি তো আসলে আমার বাবা একটু অসুস্থ হয়েছিল দু তিন বছর আগে তখন বাবার অবস্থা দেখে আমি জয়েন করি তাই বাইরে ডিল করার জন্য আমাকে পাঠান। আপনিও তো বিজনেস দেখেন এটা আমি জানি। যদিও বেশি না।

আমার একটা কথা রাখবেন মিস্টার নিশান আবরার?

কি?

আমি কে এটা এখানকার কাউকে জানাবেন না।

কেন?

আমি সাধারন মানুষ সাধারন ভাবেই চলতে চাই। আমার ভাই বা আমার নামের জন্য কেউ আমাকে এক্সট্রা কেয়ার করুক এটা আমার পছন্দ নয়।

ইম্প্রেসিভ। আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি তো অনার্স থার্ড ইয়ারের ছাত্রী।

হুম আপনি ?

মাস্টার্সে!

ওহ আচ্ছা।

এই তো প্রিন্সিপাল স্যার এর রুম কথা বলতে বলতে কখন পৌঁছে গেলাম বুঝতেই পারলাম না।

ধন্যবাদ মিস্টার!

মেনশন নট।

আবরার চলে গেল আরুহি প্রিন্সিপাল স্যার এর রুমে ঢুকে পড়লো।
___________________

আবারারের ব্যবহারে সকলে অবাক হলো কিছু কিছু জনের তো রাগ ও হলো। আবরার কোন মেয়ের সাথে কথা বলে না। কিন্তু এই মেয়েটার সঙ্গে যেচে পড়েই কথা বলল। নিতু বলল,,

কে এই মেয়ে আবরার ওকে চেনে কিভাবে ওর সাথে আবরারের কিসের সম্পর্ক।

আমরা কিভাবে জানবো বল তুই যেখানে আমিও সেখানে। তবে মেয়েটা যা করলো তা ঠিক করলো না এর জন্য মেয়েটার শাস্তি পাওয়া উচিৎ আমাদের সবাইকে অপমান করেছে।

চিন্তা করিস না সবে তো এলো সব হবে।

এ কথা শুনেই সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠল। আরুহি প্রিন্সিপাল স্যার এর সাথে কথা বলে বের হতেই আরহামের কল এলো। আরহাম এর সাথে সাথে কথা বলতে বলতে ও মাঠে চলে এলো। তখনি কোথা থেকে একজন এসে আরুহিকে জরিয়ে ধরলো। তা দেখে আরুহি ঘাবড়ে গেল।

~চলবে,,,

#গুছিয়ে_রাখা_আবেগ
#সূচনা_পর্ব
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। সূচনা পর্বটা কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here