গুছিয়ে রাখা আবেগ পর্ব ২

0
970

#গুছিয়ে_রাখা_আবেগ
#পর্ব_২
#আজরিনা_জ্যামি

আরুহি প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও পরে পরিচিত মুখ দেখে শান্ত হলো। হুট করে এমন হওয়ার ও পুরো থমকে গেছিল।তখন ওপাশ থেকে আরহামের আওয়াজ পাওয়া গেল।

“কি হলো বোনু চুপ মেরে গেলি কেন? সব ঠিক আছে তো।”

“এভরিথিং ইজ ফাইন ভাইয়া। আসলে হুট করে একজন বেডি মানুষ আমারে জরাইয়া ধরছে তাই একটু ঘাবড়ায়া গেছিলাম। সমস্যা নাই এহন আমি ঠিক আছি।”

ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ শোনা গেল।আরুহির কথা বলার ভঙ্গিতে আরহাম হাসলো ও বুঝতে পেরেছে কে ওকে জরিয়ে ধরেছে। এদিকে আরুহির কথা শুনে মেয়েটা আরুহিকে ছেড়ে দিয়ে হাতে চিমটি কাটলো। তখন আরুহি হেসে বলল,,

“আউচ এত জোরে চিমটি কাটিস কেন? আচ্ছা ভাইয়া পড়ে কথা বলছি।

তখন মেয়েটি বলল,,

“আরহাম ভাইয়া ফোন করেছে তাই না। আমার কাছে দে আমি কথা বলছি।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া!

“ওয়ালাইকুমুস সালাম রোজা! কি খবর তোমার?

“এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?

“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

“তোমার বোন এত বজ্জাত কেন বলো তো। তিন দিন হলো এখানে এসেছে অথচ আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করে নি।

তখন আরুহি বলল,,

“একদম আমার নামে মিথ্যা বলবি না। আমি বলেছিলাম না আমি আসছি। তোরাই তো পাত্তা দিস নি। তিনদিন পর তুই ফোন দিয়েছিস তাই আমি বলছি তিনদিন হলো আমি ফিরেছি। এখানে আমার দোষ কোথায়!”

“দেখলে ভাইয়া তোমার বোন কোন লেভেলের বজ্জাত।”

তখন আরহাম বলল,,

“তোমাদের বান্ধবীদের ব্যাপার আমি কিছু জানি না। তোমরা যা ইচ্ছে করো। আমি এই ফ্যাসাদে নাই ভাই।”

“তাই বলে তুমি ওকে কিছু বলবে না। তোমার আশকারা পেয়েই ও এমন হয়েছে।”

“বারে এখন আমি খারাপ হয়ে গেলাম। ওকে ডিয়ার আমি আরুকে খুব করে বকে দেব।”

“আমি জানি তো কি করবে বজ্জাত বোনের বজ্জাত ভাই।

“ইউ এন্ড আই! বজ্জাত বোন আর বজ্জাত ভাই।”

“আরহাম ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু!”

“ওকে বাবা রাখছি আল্লাহ হাফেজ।”

বলেই আরহাম ফোন কেটে দিল। এদিকে রোজা গাল ফুলিয়ে আরুহির দিকে তাকালো। তা দেখে আরুহি হেসে উঠলো। আর জরিয়ে ধরে বলল,,

“আই মিস ইউ সো মাচ রোজ!”

“আই মিস ইউ টু! তুই তিনদিন হলো এসেছিস আবার আমার ভার্সিটেই ভর্তি হয়েছিস।”

“তোদের সারপ্রাইজ দেব তাই। তা আর একজন কোথায়?”

“ওর ইম্পোর্টেন্ট একটা ক্লাস আছে। সেটাই করছে আমার নেই তাই লেট করে এসেছি। ”

“ওহ আচ্ছা তাহলে চল দেখি ক্যান্টিনে তোকে গরম কফি খাওয়াবো।”

“না বাবা এই গরমে গরম কফি খাবো না। তুই চল কোল্ড কফি খাবো।”

“তাও কফিই খেতে হবে।”

“তুই বোধ হয় ভুলে গেছিস আমার কফি কতো ফ্রেভারিট।”

“ভুলি নি তুই যে লোক আইসক্রিম খাওয়ার সময় ও কফি ফ্লেভার খুজতি।”

ওরা দুজন ক্যান্টিনে গেল। মেয়েটা হচ্ছে রোজা আরুহির বেস্ট ফ্রেন্ড এর মধ্যে একজন। ওরা যখন এস এস সি পাশ করে তখন আরহাম আরুহিকে নিয়ে চলে যায়। ওখানে যাওয়ার পর ও আরুহি ওদের সাথে যোগাযোগ রেখেছে ভিডিও কলে কথাও বলেছে। ওরা তিনজন বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। এই যে পাঁচ বছর পর ওদের দেখা হলো মনে হচ্ছে যেন কালকেই ওরা একসাথে আড্ডা দিয়েছে। এত বছর দুরে থাকলেও ওদের সম্পর্কে পরিবর্তন আসে নি। এমনকি এখানে তাড়াতাড়ি ফেরার মক্ষম কারণটাও তারা।

__________________

আবরার আজ ক্লাস করবে না। কোন একটা বিষয় নিয়ে সে বেশ চিন্তিত। মাথা ঠান্ডা করতে এখন একটু কফি ব্রেক দরকার। ও ক্লাস করবে না দেখে ওর বন্ধু ইমান আর নিবিড় ও ক্লাস করবে না। ওরা তিনজন ক্যান্টিনে গেল। আরুহি বসে আছে আর ফোনে কিছু একটা দেখছে। রোজ পাশে থেকে বকবক করেই যাচ্ছে। আবরার আরুহি কে দেখে খুশি হলো। ওদের পাশের টেবিলে বসে বলল,,

“মিস আরুহি প্রথম দিনের ক্লাস মিস করছেন কেন?

তখন আরুহি বলল,,

“প্রথম ক্লাসের থেকেও ইম্পোর্টেন্ট জিনিস আছে তাই করছি না।”

“তা আপনার ইম্পোর্টেন্ট জিনিস কি আপনার বন্ধুরা?”

“তা বলতে পারেন তবে আমি যতদূর জানি আপনি প্রয়োজন ছাড়া কথা বলেন না। তাহলে আমার সাথে এত যেচে কথা বলতে আসেন কেন?”

“একটু বেহায়া হয়ে যদি সুভাসিনীর খোঁজ পাওয়া যায়।তাহলে বেহায়া হতে ক্ষতি কি?!

সুভাসিনী নামটা শুনে আরুহি চমকে উঠলো কান্না গুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে বোধহয়। আরুহি কোন রকম নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“সুভাসিনী এখন নেই সে হাড়িয়ে গেছে বিভীষিকা হয়ে। তবে এটা ভেবে খুশি হলাম সুভাসিনীকে আপনি ভুলে যান নি। আপনার মনের গহীনে কোথাও না কোথাও সে জায়গা করে নিয়েছে হয়তো দুর্বাফুলের মতো।”

কথাগুলো শুনে আবরার একটু থমকে গেল। কিন্তু কিছু বলতে গিয়েও বললো না। এই সময় সবাই ক্লাস করছে ক্যান্টিনে তেমন কেউ নেই। ওরা ছাড়া আর দুজন স্টুডেন্ট তাও ওদের থেকে অনেকটা দূরেই তাই ওদের কথা কেউ বুঝতে পারল না। রোজা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলল,,

“আবরার ভাইয়া বাদ দাও না পুরোনো কথা।”

“তা রোজা তোমাদের আরেকজন কোথায়? সে তো সকাল বেলায়ই চলে এসেছে।”

“তার একটা ইম্পোর্টেন্ট ক্লাস আছে তাই শেষ হলেই এসে পরবে।”

আরুহি উঠে এলো ক্যান্টিন থেকে নিঃশব্দে। পেছনে রোজাও এলো আবরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। ওর যে কিছুই করার এখন মনে হচ্ছে ও সুহাসিনীর একটু ভালো করার জন্য অনেকটাই খারাপ করে ফেলেছে।

____________________

আরুহি হাঁটতে হাঁটতে আওরাতে লাগলো,,

“হুট করে চেনা মুখ গুলোও অচেনা লাগে। কারো চোখে চোখ রাখতেও ইচ্ছে করে না। কারো চোখের গভীর মায়াও দেখতে ইচ্ছে করে না। মুখ ফুটে কিছু বলতেও ইচ্ছে করে না। নতুন রুপে তাদের সাথে পরিচয় হতেও ইচ্ছে করে না। সময়ের ব্যবধানে সবকিছুর সাথে ইচ্ছে গুলোও মরে যায়। এই জন্যই বোধহয় বলে কারো থেকে এতটা দূরে যেও না যে তোমাকে ছাড়াই বাঁচতে শিখে যায়। আমি বাঁচতে শিখে গেছি। এভাবেই একদিন এই নিরব অভিমানী সবার মায়া ত্যাগ করবে কেউ কি রাখবে মনে। ”

রোজা হুট করে আরুহির ঘাড়ে হাত রাখলো। আরুহি রোজার দিকে তাকালো। মুচকি হেসে বলল,,

“যখন একটা মেয়ে তার ইমোশন কন্ট্রোল করতে পারে তখন সে সব পারে রোজা। সে ভালো থাকতে পারে। তার দুঃখ থাকেনা।”

তখন রোজা বলল,,

“সেসব বাদ দে হাওয়ার মিঠাই খাবি উইথ মালাই!”

” তোর মালাই তুই খা আর মালাই কি? আইসক্রিম বল। কোন পাগলরে দেখছিস হাওয়ার মিঠাই এর সাথে আইসক্রিম মিশিয়ে খায়।এই নিশিভুত আসতেছে না কেন? কতোক্ষণ লাগে একটা ক্লাস করতে। এখন মনে চাইতেছে ওরে গিয়া উঠাইয়া নিয়ে আসি । আমাদের স্কুল হইলে নিয়ে আসতাম।”

“তা অবশ্য ঠিক তুই তো ছিলি স্কুলের লেডি হিটলার।”

বন্ধু তো এমনি যে দুঃখের সাগরে থেকে হুট করেই সুখের সাগরে টেনে নিয়ে আসবে। বন্ধু মানেই তো খুনশুটিময় সম্পর্ক। বন্ধুরাই তো সুখ দুঃখের সাথী। যে এক মিনিটের মধ্যেই মুখের হাসি বয়ে আনে। বোকা বোকা কথা বলে হলেও বন্ধুর মন খারাপ দূর করে দেয়। প্রত্যেকটা কথা খুব মনোযোগী শ্রোতা হয়ে শোনে। হুট করেই কেউ পেছন থেকে এসে আরুহিকে জরিয়ে ধরলো আর বলল,,

“সরি রে লেট হলো আসলে ইম্পোর্টেন্ট ক্লাস ছিল।”

“আপনে কে আফা আমারে এইভাবে গরমের মধ্যে জরায় ধরছেন কেন?”

“রাগ করেছিস!”

“আপনি কে যে আপনার সাথে রাগ করবো?

মেয়েটা আরুহির সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম! আমি নিশি আফরিন! মিস আরুহি আর রোজার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমায় ভালোবেসে তারা নিশিভূত বলে ডাকে। এহন চিনছেন নাকি আরো কিছু কইতে হইবো।”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। না থাক আর কিছু বলতে হবে না।”

আফরিন আরুহিকে জরিয়ে ধরলো। আর বলল,,

“সেদিন নাকি তুই ভাইয়ার সাথে একি প্লেন এ এসেছিস।”

“তোর ভাই আস্ত একটা বেয়াদব বুঝলি। আমি দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম এটার নিশি ভুত এর ভাই নিশানভুত। কিন্তু তোর ভাই এমন ভাব ধরলো যেন আমাকে চেনেই না। এমন কি সকালেও এমন ভাব ধরলো যেন আমার নাম জানতে ওনার অনেক কষ্ট হয়েছে। আবার আমাকে বলে জিজ্ঞেস করলেন না তো আপনার নাম কিভাবে জানলাম। সব ঢং বুঝলি।”

“আরে ঢং না ভাইয়া সত্যিই সেদিন তোকে চিনতে পারে নি। এমন কি চেনেও না কাল আরহাম ভাইয়া রাতে ফোন দিয়েছিল তার মাধ্যমে জেনেছে তোর নাম আরুহি। রোজার সাথে দেখে মনে পরেছে তুই আরুহি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলি। তোদের এখানে আসার আগে ভাইয়ার সাথে দেখা হলো তাই বললো তোর বান্ধবী সেদিন আমার সাথেই এসেছে।”

“তোর ভাই আমাকে ভুলে গেলেও সুভাসিনী কে ঠিকই চিনেছে বেয়াদব লোক একটা। আচ্ছা বাদ দে এখন বল তোর বিয়ের কথা কতদূর!”

“জানিনা বিয়েটা বোধহয় হয়েই যাবে রে আমি কিছুই করতে পারবো না।”

“তার আগে বল তুই বিয়েটা করতে চাস কি চাস না।”

“আরুহি তুই সব জানিস তবুও!”

“আমি শুনতে চাই আবার!”

“আমি এই বিয়ে করতে চাই না আগে পড়াশোনা শেষ হোক তারপর দেখা যাবে। ”

__________________

“ভালো মা তুমি কিন্তু আমার কথা শুনছো না।”

“নিশান আমার এই তেতো ওষুধ খেতে একদম ভালো লাগে না।”

“ভালো না লাগলেও খেতে হবে তোমাকে তো সুস্থ হতে হবে।

“আমার কিছু হয় নি একটু জ্বর হয়েছে শুধু এইটুকুতে কিছু হবে না নিশান।”

“যদি বেশি জ্বর হয় তাই আমি রিস্ক নিতে পারবো না।”

“জ্বর বেশি হলে কি হবে শুনি মরে তো আর যাবো না।”

“সবসময় উল্টো পাল্টা কথা বলো কেন? তুমি অনেকদিন বাঁচবে দেখো।”

“এই বেঁচে থাকাকে কি আর বেঁচে থাকা বলে।”

“ওহ হো ভালো মা এবার কিন্তু তুমি বেশি বলছো।”

“আচ্ছা দে ওষুধ আমি জানি তুই না খায়িয়ে আমাকে ছাড়বি না।”

“গুড গার্ল!

“আফরিন ফিরেছে?”

“না ওর অনেক পুরোনো বেস্ট বান্ধবী এসেছে তাই আজ সারাদিন নাকি তার সাথে থাকবে।”

“যে পাঁচ বছর আগে লন্ডনে চলে গিয়েছিল কি যেন নাম ও হ্যা আরুহি।

কথাটা বলতে বলতে আবরারের ভালো মায়ের মাথাটা ঘুরে উঠলো। উনি তাড়াতাড়ি মাথায় হাত দিল। তা দেখে আবরার ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল,,

“কি হয়েছে ভালো মা।”

তখন উনি বললেন,,

“কিছুই না যাস্ট এমনি তুই চিন্তা করিস না।”

“তোমার আর কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো?

“অসুবিধা হবে কেন রে শুধু একটু জ্বর ছিল? এখন যা আমি একটু ঘুমাবো।

“হুম আচ্ছা আজ আসি আমাকে আবার একটু অফিসে যেতে হবে। আল্লাহ হাফেজ!’

“আল্লাহ হাফেজ!”

আবরার ওখান থেকে চলে গেল। মহিলাটা ওদের সাথে ওদের বাড়িতেই থাকে। আবরারের বাবা নিজের বোন করে তাকে খান বাড়িতে নিয়ে এসেছিল তারপর থেকেই আবরাররা ওনাকে ভালো মা বলে। সে ওদের নিজের ছেলেমেয়ের মতো ভালোবাসে। উনার জ্বর এসেছে তাই ওষুধ খাচ্ছিল না। কারো কথাই শুনছিল না তাই আবরার ওনাকে জোর করে খায়িয়ে দিল।

___________________

“বস আরহাম মাহমুদ খানের বোন আরুহি মাহমুদ খান এর আজও খবর পাই নি। ।”

“পাঁচ বছর ধরে ওর খবর শোনার জন্যই তো অপেক্ষা করছি তোরা কি করছিস বলতো সিম্পল একটা মেয়ের খবর দিতে পারছিস না।”

“আমরা তো চেষ্টা করছি বস। আরহাম মাহমুদ খান কে পাওয়া যায় কিন্তু আশেপাশে ওর বোন কে কোথাও পাওয়া যায় না। এমন কি লন্ডনে থাকে নাকি অন্য যায়গায় থাকে সেটাও বোঝা যায় না। ওরা অনেক প্ল্যান করেই থাকছে বোধহয়। কিন্তু বস ওরা তো আপনার থেকে অনেক ছোট তাহলে তাদের সাথে আপনার কিসের শত্রুতা।”

“ওদের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই। যাস্ট ওদের কে আমার ভালো লাগে তাই।”

“এটা কি রকম হেঁয়ালি বস।”

“তোকে এতকিছু জানতে হবে না। তুই এখন যা।”

লোকটা চলে গেল। তখন রুমে থাকা লোকটা বলল,,

“ওদের সাথে যে কিসের শত্রুতা তা এখন যে বলা যাবে না। আমি যেমন ওদের খুঁজছি তেমন ওরাও আমাকে খুঁজছে। এই খেলার শেষে কি হবে কেউ জানে না। কার অস্তিত্ব শেষ হবে সেটা কেউ বলতে পারবে না।”

__________________

দেখতে দেখতে কেটে গেল কয়েক দিন। সেদিনের পর থেকে আরুহি রোজ নিয়ম করে ক্লাসে গেছে। আবরার কে এড়িয়ে চলেছে আফরিন রোজার সাথেও সময় কাটিয়েছে। কিন্তু কোথাও একটা শুন্যতা ঘিরে রেখেছে। ও আরহাম কে অনেক মিস করেছে। ওকে ছাড়া কখনো যে থাকে নি। তবে এ কয়েকদিনে ও গাড়ি নিয়ে ভার্সিটি যায় নি কিন্তু আজ কি মনে করে গাড়ি নিয়ে গেল। অবশ্য ড্রাইভটাও নিজেই করলো। ভার্সিটির গেট দিয়ে লেটেস্ট মডেলের গাড়ি ঢুকতে দেখে কমবেশি সকলেই গাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইল। আরুহি গাড়ি থেকে নেমে সোজা আবরার এর কাছে গেল। সকলে তো অবাক হবার অবস্থা দেখে রোজা আর আফরিন হাসলো কিন্তু আবরারের কাছে কেন যাচ্ছে সেটা কেউ বুঝতে পারল না। ও গিয়ে বলল,,

“আসসালামু আলাইকুম মিস্টার নিশান আবরার!”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম! তা হুট করে আমার কাছে কোন দরকার আছে কি না মানে আপনি তো সবাইকে এড়িয়ে চলেন তাই আর কি?

“তা ঠিক হ্যা দরকারেই এসেছি। একটু এদিকে আসেন আপনার সাথে কথা আছে।

আবরার সবার থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো।

“কি দরকার বলুন?”

আরুহি নিজের ফোনটাকে বের করে আবরারের সামনে ধরে বলল,,

“আচ্ছা এই লোক টাকে দেখুন তো চেনেন কিনা?”

“এই লোকটাকে তো মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি! ওহ হ্যা মনে পড়েছে উনি তো আমাদের কম্পানির একজন কর্মকর্তা।”

“উনি কাল আমাদের কম্পানিতে এসেছিল আপনাদের কম্পানির কিছু ইম্পোর্টেন্ট ডকুমেন্ট নিয়ে। যেগুলো আপনাদের কম্পানি শেষ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সেগুলো আমাদের কাছে সেল করতে চেয়েছিল। উনি চায় আপনাদের কম্পানি শেষ করে ফেলতে। এমন কি আমরা যেন এগুলো কাজে লাগাই এবং তাকে আমাদের কম্পানির একজন করে নিই। বিষয়টা কি বলুন তো?”

“আমাদের কম্পানির ক্ষতি করে ওনার কি লাভ।”

“সেটা তো বলতে পারবো না। তবে আমার মনে হলো আপনাকে জানানো উচিৎ।”

“ধন্যবাদ মিস আপনি ছাড়া যদি অন্য কেউ হতো তাহলে হয়তো আমাদের কম্পানির অনেক বড় লস হয়ে যেত।”

“যা করেছি সব আমার বান্ধবীর পরিবারের জন্য আপনার জন্য নয় বুঝতে পারলেন।”

“হুম হুম সব তো আপনার বান্ধবীর জন্যই!”

“হুম আচ্ছা আমি গেলাম আমার মনে হয় কেউ আপনাদের কোন ক্ষতি করতে চায় হয়তো উনার হাত ধরে। আমার মনে হয় কেউ ওনাকে জোর করছিল কারন উনি তখন আমার সাথে কথা বলছিল তখন ওনার শরীর দিয়ে ঘাম পারছিল এমন কি উনি অনেক টেনশনে ছিলেন।তাই তার সাথে কথা বললেও ঠান্ডা মাথায় বলবেন যাতে তার পেছনে কে আছে সেটা সে টের না পায়।”

“ধন্যবাদ মিস বলার জন্য নাহলে হয়তো মাথা গরম করে অন্য কিছু করে ফেলতাম। মিস্টার আরহাম কবে আসবে জানিয়েছে কিছু?

“জানিনা আমাকে কিছু বলে নি আসা নিয়ে!”

” মিস আরুহি,,,,,,

“হুম!”

“সুভাসিনী কি এখন আর চিরকুট লিখে না।”

এ কথা শুনে আরুহি যেন ওখানেই জমে গেল। কোন রকম একটা ঢুক গিলে বলল,,

“না লিখে না কারন যে মানুষটাকে ঘিরে আর যার জন্য সে চিরকুট লিখতো সে তার নেই হয়তো কোন দিন ছিলোই না। তবে সে লাস্ট তিনটা বড় বড় করে চিরকুট লিখেছিল সেখানে কি লেখা ছিল জানেন তার একটার মধ্যে লেখা ছিল,,

“আপনি আমার না হওয়া এমন একজন প্রিয়জন যার প্রতিক্ষায় রোজ নিয়মিত বসে থাকি। আপনি হয়তো বা জানেন না এই আমি আপনার জন্য কতোটা আকুল আকাঙ্ক্ষা রাখি। আপনি কি জানেন এই আমি সবার অগোচরে আপনাকে নিয়ে কতো স্বপ্ন আঁকি। ওগো আমার না হওয়া প্রিয়জন আমি কি আপনার মনের মাঝে থাকি। নাকি আপনার মনের কোন এক ছোট্ট কোনায় কোন দূর্বাফুলের মতো অবহেলায় কোথাও পড়ে থাকি। অথচ আপনারই বিচরন আমার অঙ্গ জুড়ে। যদিও বা আপনি আমার থেকে অনেক দূরে। তাতে কি আমি তো বসে থাকি হয়ে আপনার ভাবনায় আনমনা হয়ে।”

আরো দুটো আছে শুনবেন?

আবরার কি বলবে ও যেন ভুলেই গেল। ওর ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। না ও হেরে গেছে সুভাসিনীর কাছে। যাকে ও আবেগ ভেবে উরিয়ে দিয়েছে আসলে সেটাই ছিল তার ভালোবাসা। আবরার নিজেকে সামলিয়ে বলল,,

“সর্বশেষ চিরকুট টা কি ছিল সেটা বললেই হবে আরেকটা বলতে হবে না।

“সর্বশেষ চিরকুট ছিল,,

“আপনার নামের আবেগগুলো খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখলাম মনের মাঝে কিন্তু আবেগ গুলো যাতে বাইরে বেরিয়ে না আসে তাই তালাও মেরে দিলাম মনে মনে। চাবিটাও নিজ দায়িত্বে হাড়িয়ে ফেললাম। যেই চাবির হদিস কেউ পাবে না কোনদিন। জানেন এটার কারন কি? এটার কারন হলো আমার মস্তিষ্ক!
যখন আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে নোনা জলে ভিজে থাকা চোখ নিয়ে বলি আপনি কেন আমার হলেন না।
তখন মস্তিষ্ক থেকে জবাব আসে “সে কখনো তোমার ছিলই না।। গুছিয়ে রাখা আবেগ নিয়ে এই সুভাসিনী আর কখনো দাঁড়াবে না আপনার সামনে। কারন আজকেই এই সুভাসিনীর ইতি ঘটলো আলবিদা।

আরুহি ওখানে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। তাড়াতাড়ি সেখান থেকে প্রস্থান করলো। কিন্তু পেছনে তাকালে হয়তো দেখতে পেত কোন এক সুদর্শন পুরুষ অশ্রু চোখে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। জানিনা কতটা গুছিয়ে লিখতে পারছি। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here