গুছিয়ে রাখা আবেগ পর্ব ১১

0
469

#গুছিয়ে_রাখা_আবেগ
#পর্ব_১১
#আজরিনা_জ্যামি

এভাবেই প্রায় দুই মাস চলে গেল। আবরার বোধহয় সুভাসিনীকে ভুলেই গেল। কিন্তু সত্যিই কি ভুলে গেল নাকি মাঝে মাঝে ফুলের গাছ দেখলেই মনে পরতো কেউ বোধহয় কানে ফিসফিস করে বলছে,,

” জানেন কি? ফুলের মধ্যে কিছু মানুষের আত্মা থাকে তাই ফুলকে যত্ন করতে শিখুন নষ্ট করতে না।”

এভাবেই চলছে ওদের সময়। আফরিন, আরুহি আর রোজা কথা বলছিল হুট করে আরুহি বলল,,

“এই নিশি ভুত তোর ভাই কি আর কখনো ফুল নষ্ট করেছে?”

“না তো! তবে ফুল দেখলেই কেমন ভাবে যেন চেয়ে থাকে। কি যেন ভাবে আবার গিয়ে ফুল ছুঁয়ে দেয়। আবার কি যেন ভাবে আবার ওখান থেকে চলে যায়।”

‘তারমানে চিরকুট টা তার মনে ভালোই দাগ কেটেছে।”

“তুই হুট করে সেই চিরকুটের কথা বলছিস কেন?”

“কারন আমি তার জন্য আরেকটা চিরকুট লিখেছি তাই!”

“মানে?”

“তোর ভাইয়ের রাগের জন্য তোর ভাই একজন শর্ট টেম্পার মানুষ তাই রাগলেই কিছু না কিছুর ক্ষতি করে বসে।”

“আমার ভাই আবার কার ক্ষতি করেছে?”

“তোর ভাই রেগে এর আগে ফুল নষ্ট করেছিল কাল তো আস্ত মানুষটাকেই থাপ্পড় মারলো। কেনরে ভাই সুন্দর মতো বুঝিয়েও তো বলা যেত তাকে তা না করে থাপ্পড় দিয়ে বসলো সবার সামনে।”

“বুঝলাম না কাহিনী?”

“কাল তোর ভাই বোধহয় মার্কেটে গিয়েছিল সেখানে একটা লোক একজন পথশিশুকে কোন কারনে ধাক্কা মারে সেটা দেখে তোর ভাই রেগে তার গায়ে থাপ্পড় মেরেছে। তুই জানিস লোকটা তোর ভাইয়ের থেকে এক বছরের বড় হলেও হবে । কাজ টা কি ঠিক করেছে তুই বল।”

“ধাক্কা মেরেছে বলে সবার সামনে থাপ্পড় মেরেছে এই জন্যই তো বলি ভাইয়ার আর রাগকে আমি ভয় পাই। তবে কাজটা বোধহয় ভালো হয় নি।

” সবার সামনে লোকটাকে থাপ্পড় মারা একদম উচিত হয় নি । বোঝাতে পারতো যেন এরপর থেকে কারো সাথে এরকম ব্যবহার না করে আর বাচ্চাটার কাছে মাফ চাওয়ালেই তো পারতো। তা না।”

“তো এবার কি ভাবছিস!”

“আবার চিরকুট লিখবো। এবার ও ব্যাগে রাখার দায়িত্ব তোর।”

“কি দরকার এসব করার!”

“দরকার আছে লোকটার রাগকে কন্ট্রোল করতে হবে। নাহলে এর থেকে আরো বড় কিছু ঘটাবে একদিন।”

“আমি পারবো না ভাই যদি ধরা পরে যাই ভাইয়া আমাকে ছাড়বে না।”

“আর তুই যদি কিছু না করিস তাহলে আমি আর রোজা তোকে ছাড়বো না।”

তখন রোজা বলল,,

“আমি আবার কেন?”

“দরকার আছে তোকে তুই চুপ থাক। তুই এখন আমার দলে।

তখন আফরিন বলল,,

“রোজা আমার দলে বুঝেছিল তোর আজাইরা কাজে ও থাকবে কেন?

“আরে তোর এটা আজাইরা কাজ মনে হলো এতে তোর ভাইয়ের ভালোই তো হচ্ছে। ওনার রাগটাকে কন্ট্রোল করতে হবে বুঝলি এরপর এরকম দেখে কোন বড় কাউকে পেদানি দিল আর তোর ভাই জেলে ঢুকলো তুই কি চাস এরকম হোক।”

“না আমি চাই না।”

“তাহলে আমি যা বলি তাই করবি।”

“ঠিক আছে।”

“গুড গার্ল। এই নে!

আফরিন চিরকুট টা নিল আর বলল,,

“কি লেখা আছে এতে?”

“তোরে কেন বলমু তোর জন্য লিখছি নাকি।”

“যা কওয়া লাগবো না।”

তখন রোজা বলল,,

“ঐ তো আরহাম ভাইয়া এসে পরেছে । তোরা এবার থাম।”

আরহাম এসেছে আরুহিকে নিতে আরহাম তখন অনার্স ফোর্থ ইয়ারে এ পরতো সাথে বাবার ব্যবসাও দেখতো। আরহাম রোজ নিয়ম করে বোনকে স্কুলে আনা নেওয়া করতো। আরহাম এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“তিন বান্ধবী কি নিয়ে কথা হচ্ছে শুনি।”

তখন রোজা বলল,,

“আরে তেমন কিছু না আরহাম ভাইয়া।এমনিই কাজ নেই তো তুমিও আসছিলে না সেই জন্য আরুহিও এখানে ছিল তাই আমরা গল্প করছিলাম।”

“তা মিস আফরিন কে কি আজ কেউ নিতে আসে নি নাকি তার ভাইয়ার সাথে যাবে।”

তখন আফরিন বলল,,

“ভাইয়ার সাথে যাবো ভাইয়ার আর দশ মিনিট পর ক্লাস শেষ হবে।”

‘ওহ আচ্ছা তাহলে রোজা আজ তোমাকে ড্রপ করে দিই।”

“আরে ভাইয়া দরকার নেই আমি এটুকু পথ হেঁটেই যেতে পারবো বিশ মিনিটের রাস্তা।”

“প্রতিদিন তো হেঁটেই যাও আজ নাহয় আমাদের সাথে গেলে।”

“এই রোজা চল না।”

আরুহির কথায় রোজা আর মানা করলো না। আরহাম তিনটা কোন আইসক্রিম নিয়ে এলো। আরুহি আর রোজা কে দিয়ে আফরিন এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,

” এই গরমে একা একা শুধু দাঁড়িয়ে থাকবেন কেন? নিন আইসক্রিম খান। আইসক্রিম শেষ হতে হতে আপনার ভাইয়া এসে পরবে।”

আফরিন কোন কথা ছাড়াই আইসক্রিম নিয়ে বলল,

“ধন্যবাদ দেব না আপনি আমার বান্ধবীর ভাই তাই এসব আইসক্রিম, ফুচকা খাওয়ানো আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ছোট বাচ্চাদের খাওয়ানো আপনাদের বড়দের কাজ বলতে গেলে মৌলিক দায়িত্ব।”

“আপনি ছোট বাচ্চা শুনে হাসি পেলেও হাসলাম না।”

“আপনার কাছে আমি ছোট নাকি আপনার কাছে আমি হলাম ত্রিশ বছরের বুড়ি তাই তো আপনার মতো এত বড় একজন মানুষ আমায় আপনি করে ডাকে।”

এ কথা শুনে আরহাম আরুহি আর রোজা হেসে ফেললো। আরহাম বলল,,

“আপনাকে আপনি বলার কারন আছে বুঝেছেন, আপনি হলেন মুরুব্বি টাইপ মানুষ। যিনি নাকি আমার সামনে কথাই বলে না। রোজা কতো সুন্দর করে আমাকে ভাইয়া ডাকে আমার খোঁজ খবর নেয়। কিন্তু আপনি আজ পর্যন্ত আমায় ডাকই দিলেন না। আর কথা তো দূর। মানুষ পরিচিত হলে না তুমি বলে কিন্তু আপনি তো অপরিচিত দের মতো আচরণ করেন তাই আমিও করি বুঝতে পেরেছেন। অনেক কথা হলো এখন আসি আমার আবার অফিসে যেতে হবে একটু।”

আরুহি আর রোজা আফরিনের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। আরহাম ও বসলো দেখলো আফরিন ওর দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে তা দেখে ও বলল,,

“এত না ভেবে আইসক্রিম খান আইসক্রিম তো গলে যাচ্ছে। আল্লাহ হাফেজ নিজের খেয়াল রাখবেন আসি।”

ওরা চলে গেল কিন্তু আফরিন আইসক্রিম এর দিকে তাকিয়ে দেখলো সত্যি আইসক্রিম গলে যাচ্ছে। ও বিরস মুখে আইসক্রিম এ কামড় দিল । আর ভাবলো,,

“সত্যিই আরহাম কে সে কখনো ডাকে নি । রোজা কতবার আরহাম ভাইয়া বলে সম্মোধন করেছে কিন্তু আফরান কোনদিন করেনি ওর আরহাম কে ভাইয়া বলতে ইচ্ছে করে না। ও তো মাঝে মাঝে মুগ্ধ চোখে আরহামের দিকে তাকিয়ে থাকে। লোকটার কাজে বরাবরই ও মুগ্ধ হয়। বোনের প্রতি দায়িত্ববোধ অগাধ ভালোবাসা। আরুহি কে সবসময় লাকি বলে ও যে আরহামের মতো একজন ভাই পেয়েছে। এসব ভাবনার মাঝেই ওর আইসক্রিম শেষ হলো আর আবারার ও চলে এলো ওরা দুজনে বাড়ি ফিরে এলো। আফরিন ফাঁক বুঝে আবরারের ব্যাগে চিরকুট টা রেখে এলো। আবরার রাতে খেয়ে দেয়ে ব্যাগে কলম খুঁজলো কিছু একটা লিখবে দেখে কলমের সাথে একটা ছোট চিরকুট আসলো ও কৌতুহল বশত চিরকুট টা খুললো তাতে লেখা,,

“যে জিনিস টা অন্যকে বুঝিয়ে বলে সমাধান করা যায় সেখানে হাত তোলা টা অনুচিত। একটা কথা আছে জানেন কি? “রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।” রাগের মাথায় কিছু করলে সেটা বেশিরভাগ খারাপই হয়।

কাল রাগের মাথায় লোকটাকে থাপ্পড় মারা উচিৎ হয় নি আপনার। তাকে বুঝিয়ে বললেই সে হয়তো বুঝতে পারতো। এরপর থেকে খারাপ কিছু দেখলে আগে বুঝিয়ে বলবেন তারপর যদি না মানে তাহলে আপনার ভাষায় বোঝাবেন। রাগটা কে কন্ট্রোল করতে শিখুন নাহলে রাগের জন্য অনেক অপত্যাশিত কিছু সহ্য করতে হতে পারে যা আপনি চান না।”

~ ইতি সুভাসিনী

লেখাটা পড়ে আবরার যেন অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেল। কে এই সুভাসিনী ? সে তো কাল স্কুলেও এটা করে নি করেছে তো মার্কেটে তাহলে সে কিভাবে জানলো। সুভাসিনী কে হতে পারে এমনিতেও আগের চিরকুট টা সবসময় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তারওপর আবার এটা। ও চিরকুট হাতে নিয়ে বলল,,

“কে তুমি মেয়ে যার নাম সুভাসিনী হলেও আমার কাছে বিভীষিকার ন্যয়। যার চিরকুট গুলো আমার মনে ভয় সৃষ্টি করে। ”
_______________

এভাবেই কয়েকদিন কেটে গেল। অবশ্য আবরার অনেক চেষ্টা করেছে সুভাসিনীকে বের করার জন্য কিন্তু ফলাফল শূন্য তবে ও বেশ কয়েকদিন খেয়াল করেছে আগের মতো হুটহাট রাগাটা হচ্ছে না। সব পরিবেশেই আগে ঠান্ডা মাথায় পর্যবেক্ষণ করে তারপর সিদ্ধান্তে পৌছোচ্ছে। আরুহির সাথে বার কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু ঘুনাক্ষরেও টের পায় নি যে সুভাসিনীই সে।

হুট করে আবরার একদিন আফরিন আর আরুহিকে ডেকে পাঠালো এভাবে ডেকে পাঠানোর জন্য আফরিন তো ভয়ে শেষ না জানি ধরে ফেলেছে বোধহয়। আফরিন গিয়ে বলল,,

“কি হয়েছে ভাইয়া আমাদের দুজনকে ডেকেছো কেন?”

“কেন দরকার ছাড়া কি তোদের ডাকতে পারি না নাকি!”

তখন আরুহি বলল,,

“তা পারেন কিন্তু আপনি হুট করে আমাদের ডেকেছেন কেন?”

“কেন আপনার সমস্যা আছে নাকি আপনার সমস্যা থাকলে আপনি চলে যান।”

“ভাবখানা দেখো আমি বোধহয় ওনার ডাকের জন্য মরে যাচ্ছি। ঢং আফরিন আমি গেলাম তুই থাক।”

“আরে ভাইয়া তুমি আরুহির সাথে ওভাবে কথা বলছো কেন? কি বলবে বলো।”

“আসলে তোদের একটা হেল্প লাগবে।”

“আমাদের হেল্প লাগবে বলেই ডেকেছে আর ভাব দেখো মনে হচ্ছে আমরা এগিয়ে এগিয়ে ওনার কাছে এসেছি।”

আরুহির কথায় আবরারের রাগ লাগলো কিন্তু ও কিছু বললো না। শুধু বলল,,

“রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।”

এ কথা শুনে আরুহি ফট করে আবরার এর দিকে তাকালো। এটা তো ও চিরকুট এ লিখেছিল। কথাটা আরুহির কাছে খুব ভালো লাগলো শুনতে। ওর সাথে আবরারের দেখা হলেও কখনো ভালো করে নজর দেওয়া হয় নি। ফর্সা গায়ের রং দেখতেও সুদর্শন যুবক আর কলেজের সাদা শার্ট টাও দারুন লাগছে। হুট করেই আবরারকে আরুহির ভালো লাগছে। ওর হুস আসতেই ও বলল,,

“এখানে কে রেগে গেল আর কে হেরে গেল।”

“আসলে আমার আপনার কথা শুনে রাগ হচ্ছিল তাই রেগে উল্টো পাল্টা কিছু বললে আপনারা চলে যেতেন আমার কাজের কাজ কিছুই হতো না উল্টো লস হতো। তাই নিজেকেই বোঝাচ্ছিলাম ঐ কথাটা দিয়ে।”

“ওহ আচ্ছা তা এখন বলুন কি জন্য ডেকেছেন?”

“আসলে আমার বন্ধু ইমান ওর প্রথম টিউশনির টাকা দিয়ে ওর বোনকে কিছু উপহার দিতে চায়। ওর বোনের ফুল গাছ অনেক পছন্দের তাই ও একটা ড্রেস আর কিছু ফুল গাছ দিতে চায়। ড্রেস আমরা ছেলেরা মিলে কিনতে পারলেও ফুল গাছ সম্পর্কে ধারনা নেই তাই আপনি যদি সাহায্য করতেন। নিশুর থেকে শুনেছি আপনি নাকি ফ্লাওয়ার লাভার আপনার বাগান আছে অনেক সুন্দর। ফুল গাছ সম্পর্কে ধারনাও অনেক। আসলে আমাদের মেয়ে বন্ধু নেই তাই আপনি যদি কয়েকটি ফুল গাছ কিনে দিতেন।”

“ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার আমাদের আগে বললেই হতো হুদাই কথাগুলো খরচ করালেন। আবার মুডটারও বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছিলেন। ফুলের ব্যাপার তাই কিছু বললাম না।”

ওরা ফুল কেনার ওখানে গেল। আরুহি বেছে বেছে প্রায় বিশটা ফুল গাছ জরো করলো। তা দেখে আবরার ইমান আর নিবিড় তো অবাক। ইমান বলল,,

“আপু আসলে আমার আপুর বারান্দা টা ছোট। ওখানে কিছু ফুলের টব ও আছে এতগুলো গুলো টব ওখানে রাখার জায়গা হবে না । তাছাড়া আমার হাতে টাকাও নেই যে এতগুলো ফুল গাছ কিনবো।”

“আসলে ফুল গাছ দেখলেই মনে হয় সবগুলো কিনে নিই। সরি আপনি তো আমাকে আগে বলে দেন নি কয়টা নেবেন এখানের সবগুলোই ভালো বেছে নিয়েছি এখান থেকে নিয়ে নিন যতগুলো নিবেন।”

“আমি দশটা নিব!”

তখন আবরার বলল,,

“বাকি দশটা আমি নিব।”

তখন আফরিন বলল,

“তুমি ফুল গাছ নিয়ে কি করবে। ফুল গাছের যত্ন ও তো করতে পারবে না।”

“আমিও আমার বোনের জন্য নিব।”

“কি!!!! আমার জন্য ইয়েইইইইই ভাইয়া আমি খুব খুশি হয়েছি।”

“হুম কিন্তু পাঁচ টা!”

“বাকি পাঁচ টা কি করবে?”

“বাকি পাঁচ টা মিস আরুহি কে উপহার দেব। উনি এত কষ্ট করে গাছ বেছে দিলেন কিছু গিফট তো উনি পায়।তাছাড়া উনার ফুল গাছও অনেক পছন্দের।”

এ কথা শুনে আরুহি অবাক হয়ে আবরার এর দিকে তাকিয়ে বলল,,,

“না না আমার এখন ফুল গাছের দরকার নেই। যখন দরকার হবে তখন ভাইয়াকে বললে ভাইয়াই কিনে দেবে।”

তখন আবরার মুচকি হেসে বলল,,

“কেউ উপহার দিলে নিতে হয় মিস নাহলে তার অপমান হয়। এখন বেশি কথা না বলে চলুন।”

এ কথা শুনে আরুহি চুপ মেরে গেলো। সবাই যে যার মতো ফুল গাছ নিয়ে গেল। আরহাম আরুহির জন্য স্কুলের সামনে অপেক্ষা করছে আরুহির সাথে ফুল গাছ দেখে জিজ্ঞেস করতেই আরুহি সব বলে দিলো। আরহাম মুচকি হেসে ফুলের টব গুলো গাড়িতে তুললো আর আরুহি কে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিল।

রাতে আবরার দেখলো তার ব্যাগের সবথেকে ওপরের চেনের ভেতরে একটা নীল রঙের চিরকুট তা দেখে ভাবলো সুভাসিনীই হয়তো দিয়েছে ও চটপট চিরকুট খুলে পরতে লাগলো,,

“আপনাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা খারাপ নন। সত্যি বলতে আপনাকে এত ভালো করে কখনো দেখা হয়নি। জানেন কি? আপনার মুখের হাসি অনেক সুন্দর মাশাআল্লাহ।”

এটা পরে আবরারের আপনা আপনি মুখে হাসি ফুটে উঠল। আর বলল,,

“জানেন কি! এই কথাটায় কি আছে কে জানে। তুমি কি জানো সুভাসিনী তোমার চিরকুটের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দ ভালোলাগা কাজ করে।”

আজকের চিরকুট টা আরুহি নিজেই রেখেছে সবার অগোচরে এটা অবশ্য আফরিন ও জানে না। হাঁটতে হাঁটতে ব্যাগের চেনা খুলে রেখে দিয়েছে। বাড়ি এসে আরুহির আজ অন্যরকম ফিলিংস হচ্ছে। এতদিন চিরকুট নিয়ে ওর কোন কৌতুহল বা ভয় ছিল না কিন্তু আজকের চিরকুট নিয়ে ও বেশ চিন্তায় আছে। পরে আবরারের কেমন অনুভূতি হবে। আচ্ছা ও কি আবরার কে পছন্দ করতে শুরু করেছে নাকি পছন্দ করে । এটা আবেগের বয়স এই বয়সে যা দেখা হয় সবই ভালো লাগে। এই জন্যই হয়তো বলে এই আবেগের বয়স যে কোন ঝামেলা ছাড়াই ভালো মতো পার করলো সে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অধ্যায় ভালো মতো পার করলো। ও কি আবেগে গা ভাসাচ্ছে কিসের এতো সেরকম তো কিছুই হয় নি। ও নিজেকে বুঝিয়ে সুজিয়ে খেতে চলে গেল।

এভাবেই ছয় মাস আরুহি বিভিন্ন জিনিস নিয়ে আবরার কে চিরকুট লিখতে লাগে একেক সময় আরুহি রাখে আবার একেক সময় আফরিন কে দিয়ে রাখায়। কখনো ব্যাগে, কখনো বইয়ের ভাঁজে, কখনো খামে কারো হাত দিয়ে কখনো বেঞ্চের ওপর। আফরিন বুঝতে পারে তার বান্ধবী তার ভাইকে পছন্দ করতে শুরু করেছে যেভাবে আফরিন আরহাম কে পছন্দ করে। আবরার ও নিয়ম করে সুভাসিনীর চিরকুটের অপেক্ষায় থাকে। একদিন আবরার আফরিন কে ওর ব্যাগ দিয়ে ক্রিকেট খেলতে গেল তখন আরুহির ইচ্ছে হলো একটা চিরকুট লিখে ওর ব্যাগে রাখতে আফরিন আর রোজার ছিল সাথে আরুহি নিজেই ব্যাগের চিরকুট রাখতে গিয়ে দেখতে পেল,,,

‘কে তুমি সুভাসিনী তার চিরকুট এর অপেক্ষায় রোজ এই আমি অপেক্ষায় থাকি। তুমি তো চিরকুট লিখেই শেষ আমি যে চিরকুটের উত্তর দিব সেটার জন্যও তো কাউকে পাই না। তোমাকেও আমি চিরকুট লিখতে চাই তোমার চিরকুটের জবাব দিতে চাই। তুমি তো শুধু আমার খারাপটা কেই দেখো আমি না বললে বুঝবে কি করে আমি কতটুকু ভালো আর কতটুকু খারাপ।”

এটা দেখে আরুহি মুচকি হাসে আর লিখে ,,,

“আপনার উত্তর আমার চাই না বুঝলেন মিস্টার আমি সবসময় আপনার আশেপাশেই থাকি। আমি আপনাকে ভালো করেই জানি আপনি কি রকম।”

এটা দেখে আফরিন আর রোজা মুচকি হাসে কিন্তু কিছু বলে না। রাতে আবরার ব্যাগ চেক করে চিরকুট টা দেখতে পায় চিরকুট টা দেখে ওর একটু মন খারাপ হয়। কিন্তু কিছুই করার নেই। এভাবেই আরো কয়েকটি দিন কেটে যায়। হুট করেই একটা মেয়ের সাথে আবরার কে দেখে আরুহির খুব মন খারাপ হয়। আরুহী দুঃখ নিয়ে সাদা রঙের চিরকুট লিখে,,

“আপনার খোঁজ নেওয়ার নতুন মানুষ হয়েছে দেখছি। তাহলে বোধহয় আমার ছুটির সময় হয়ে এসেছে।”

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। কাল গল্প না দেওয়ার জন্য দুঃখিত। কিছু ব্যস্ততা আর অসুস্থতার মাঝে কেটেছে কালকের দিন। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here