গল্প: আগামী (৪র্থ পর্ব)
লেখা: মাহফুজা রহমান অমি।
ছুটির দিনে বাচ্চাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে এসেছি নদীর ধারে। বিকেল হলে এখানে নানান মানুষের আনাগোনা শুরু হয়৷ যানজট আর কোলাহলপূর্ণ শহরে একটু বিশুদ্ধ শ্বাস নিতে মানুষ নদীর পাড়ে জমা হয়।
বাদামের খোসা ফেলে বাচ্চাদের হাতে বাদাম তুলে দিচ্ছি আর ওরা মজা করে খাচ্ছে। এমন সময় হঠাৎ চোখ পড়ে কিছুদূরে বসে থাকা সাফিনের দিকে। সাফিনের পাশে এক ভদ্রমহিলা বসে আছেন৷ এখান থেকে তার চেহারা অতটা স্পষ্ট বোঝা না গেলেও, অনুমান করলাম যে তিনিই হয়তো সাফিনের বর্তমান স্ত্রী।
বাচ্চাদের নিয়ে এই মুহুর্তে স্থান পরিবর্তন করাটা খুব জরুরি মনে হলো। আমি ওদেরকে নিয়ে সাফিনের বিপরীত দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। যাতে আমাদের দূরত্ব বেড়ে গেলে সাফিনের মুখটা বাচ্চাদের চোখে না পড়ে।
‘মা, ওখানেই তো বসতে পারতাম!’
মেয়েটার কথার জবাবে বললাম, ‘ওখানের থেকে এইদিকটা বেশি ভালো মনে হলো।’
আমরা বসে আবার বাদাম খেতে শুরু করলাম। আশেপাশে অনেক বাচ্চারা রয়েছে। তারা ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে। সঙ্গে থাকা বাবা মায়েরা তাদের উপর কড়া নজর রাখছেন।
সাইকেল নিয়ে আসা ছোট্ট মেয়েটা তার বাবার সাহায্যে সাইকেল চালানো শিখছে। সেদিকে চোখ পড়তেই বাচ্চারা আবদারের সুরে বললো, ‘মা, আমাদেরকেও একটা সাইকেল কিনে দিবে?’
আমি মাথা নেড়ে বললাম, ‘আরেকটু বড় হও। অবশ্যই কিনে দিবো।’.
‘ওই মেয়েটা তো আমাদের থেকে ছোট। তাহলে আমাদের কেন আরও বড় হতে হবে?’
মেয়েটার বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন শুনে বললাম, ‘তোমাদের মা আগে সাইকেল চালানোটা সম্পর্কে একটু শিখুক। তারপর তোমাদেরকে অবশ্যই কিনে দিবে। মা না শিখলে বাচ্চাদের কীভাবে শিখাবে বলো?’
ওরা চুপ করে রইলো। তারপর বললো, ‘আচ্ছা।’
‘এবার তাহলে চলো, বাসায় ফেরা যাক।’
বাচ্চারা সম্মতি দিলে উঠে পড়লাম। এমন সময় সাইকেল চালানো শিখতে আসা মেয়েটা সাইকেল নিয়ে পড়ে গেলে বাচ্চারা দৌড়ে গেলো ওকে সাহায্য করার জন্য। আমিও এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে।
মেয়েটার বাবা এসে মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে চুমো খেলেন। তারপর আমার বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে হেসে প্রশ্ন করলেন, ‘কী নাম তোমাদের?’
উত্তর দিলো ছেলেটা, ‘আমার নাম মিরাণ আর ওর নাম মেহরিমা।’
‘বাহ্! খুব সুন্দর নাম।’
‘ধন্যবাদ।’
ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন। আমি তার কোলে থাকা মেয়েটিকে প্রশ্ন করলাম, ‘মামুনি, বেশি ব্যথা পেয়েছো?’
মেয়েটা মাথা নেড়ে বললো, ‘অল্প একটু।’
‘তোমার নাম কী মামুনি?’
‘আমার নাম এশা।’
‘তোমার মতোই মিষ্টি তোমার নামটা।’
ভদ্রলোক মেহরিমা আর মিরাণের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমাদের অনেক ধন্যবাদ।’
বাচ্চারা চুপ করে রইলো। ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওরা কী টুইন?’
আমি মাথা নেড়ে বললাম, ‘হুম।’
‘খুব মিষ্টি দু’টো বাচ্চা আপনার।’
আমি হাসিমুখে বললাম, ‘ধন্যবাদ।’
আমরা কথা বলতে বলতে হেঁটে চলছি। কথায় কথায় জানতে পারলাম, ভদ্রলোক এ এলাকায় নতুন৷ তার স্ত্রী বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মারা গিয়েছেন। মিষ্টি দেখতে মেয়েটা মা হারা, শুনে খুব খারাপ লাগলো।
ভদ্রলোক বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। আমি বাচ্চাদের হাত ধরে হাঁটছি৷ হঠাৎ মিরাণ চেঁচিয়ে বলে উঠলো, ‘মা, ওই যে সাফিন আঙ্কেল।’
থতমত হয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি সাফিন আর তার স্ত্রী এদিকেই আসছে। আমি চুপচাপ বাচ্চাদের হাত ধরে হাঁটতে লাগলাম। ওরা সাফিনকে দেখে বেশ উৎসুক হয়ে আছে।
সাফিনের সামনাসামনি পৌঁছাতেই সাফিন থমকে দাঁড়ায়। বাচ্চাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে নিজের স্ত্রীকে পরিচয় করিয়ে দিলো। বাচ্চাদের সঙ্গে পরিচয় শেষে সাফিন তার স্ত্রীকে আমার সঙ্গে পরিচয় করাতে বললো, ‘আর উনি হলেন বাচ্চাদের মা, জুলিয়া।’
জুলিয়া নামটা শোনা মাত্রই সাফিনের স্ত্রী চমকে উঠলেন৷ তার চমকে যাওয়া মুখটা দেখে নিশ্চিত হলাম তিনি বিগত কয়েকদিনের ঘটনা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না৷
চমকে যাওয়া মুখটাকে স্বাভাবিক করতেই তিনি বললেন, ‘জুলিয়া আপা, আমি লতা।’
জোর করা হাসিমুখ দেখিয়ে বললাম, ‘পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো।’
বাচ্চারা সাফিনের সঙ্গে কথপোকথন চালিয়ে যাচ্ছে। আমি তাদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছি৷ সাফিনের স্ত্রী লতা এসে আমার পাশে দাঁড়ায়।
বিস্ময় ভরা চোখে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনিই তাহলে সেই জুলিয়া!’
আমি তার মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে বললাম, ‘জ্বী। আমিই আপনার স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রী।’
‘আপনার কথা অনেক শুনেছি, সাফিনদের বাড়িতে এসে।’
‘কেন এ বাড়িতে আসার আগে শুনেননি?’
‘জামতাম সাফিন বিবাহিত। তবে আপনার সম্পর্কে এতকিছু জানিনি৷’
‘আমার মনে হয়, আপনি জানার চেষ্টাও করেননি।’
আমার কথায় অপমানবোধ অনুভব করে লতা বললেন, ‘সাফিন বলেনি, তাই আর জানতেও চাইনি৷ প্রয়োজনীয় হলে নিশ্চয়ই বলতো।’
খানিক চুপ থাকার পরে বললাম, ‘তা ঠিক বলেছেন। তখন আমি সাফিনের কাছে অপ্রয়োজনীয়’ই ছিলাম।’
ভেতরে ভেতরে আমাকে লতা হিংসে করছে, সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ভেতরের খবর লুকাতে সবাই পারদর্শী হয় না। কেউ কেউ চাইলেও ভেতরের আমিকে লুকাতে পারে না৷
চোখেমুখে হিংসা নিয়ে লতা বললেন, ‘তখন আর এখনের মধ্যে কী কোনো পার্থক্য আছে?’
আমাকে ছোট করার জন্যই কথাটা লতা বলেছেন। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললাম, ‘আমি তো ভেবেছিলাম, আমিই বোধহয় ব্যর্থ স্ত্রী ছিলাম তাই স্বামীর মনের খবর রাখতে সক্ষম হইনি। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে, আপনিও ব্যর্থ স্ত্রী।’
কথাটা গায়ে লাগলো লতার৷ প্রথম দেখাতেই আমাদের এমন কড়া আলাপ জমে উঠবে ভাবিনি কখনো। লতার চোখেমুখে জ্বলছে আগুন। সে আগুনে সাফিন পানি না ঢাললে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে দু’জনেই।
বাচ্চাদের নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম। সাফিনের প্রতি বাচ্চাদের এত আগ্রহ আমাকে মাঝেমধ্যে বিরক্ত করে৷ তাই বলে বাচ্চাদের প্রতি চড়াও হতে পারি না। আমি ওদেরকে ভালোবাসি। ওরা কষ্ট পাক, মন খারাপ করুক, আমাকে ভুল ভাবুক এ আমি চাই না৷ আবার এত ছোট বয়সে আমি ওদের মাথায় আমার বিষাক্ত অতীতের সকল স্মৃতি চাপিয়েও দিতে পারব না৷ ওরা বড় হলে একদিন ওরা সবটা জানতে পারবে। তখন নিশ্চয়ই ওরা আমাকে বুঝতে পারবে আরও ভালো করে।
সকালে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। স্কুলের গেটের সামনে পৌঁছাতেই দেখি গতকালের ভদ্রলোক তার মিষ্টি দেখতে মেয়ে এশাকে সাথে নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করছেন। রিকশা থেকে নেমে ‘এশা’ বলে ডাক দিতেই ভদ্রলোক আর তার আদুরে মেয়েটা পেছন ঘুরে তাকায়৷
‘আপনি এখানে?’
ভদ্রলোকের করা প্রশ্নের জবাবে বললাম, ‘আমারও তো একই প্রশ্ন, আপনারা এখানে?’
ভদ্রলোক হেসে উঠে বললেন, ‘মেয়েকে ভর্তি করাতে এসেছিলাম। আর আপনি?’
‘তাহলে আমি আপনার মেয়ের হবু শিক্ষিকা।’
‘আচ্ছা। আপনি তাহলে এখানকার শিক্ষিকা।’
‘জ্বী, হ্যাঁ।’
‘খুব উপকার হলো গতকালই পরিচয়টা হয়ে৷ দুশ্চিন্তায় ছিলাম মেয়েটা এখানে মানিয়ে নিতে পারবে কী না! যেহেতু আপনাকে ও চেনে, তো এখন মনে হচ্ছে খুব বেশি সমস্যা হবে না।’
হেসে বললাম, ‘দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। চলুন ভেতরে যাই।’
এশাকে ভর্তির বিষয়ে সহযোগিতা করার সময় জানতে পারি ভদ্রলোকের নাম এহসান। মেয়েকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এহসান সাহেব চলে গেলেন। আজ এশার প্রথম ক্লাস এখানে। আমাকে পেয়ে এশা সাহস পাচ্ছে, এটা দেখে বেশ ভালো লাগছে।
ছুটি শেষে বের হয়ে দেখি এহসান সাহেব মেয়ের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। এশাকে আমার সঙ্গে বের হতে দেখে নিশ্চিন্ত হলেন তিনি৷ এশা মামুনির থেকে বিদায় নিয়ে চললাম বাসার দিকে। এতক্ষণে হয়তো মায়ের সঙ্গে মিরাণ মেহরিমাও বাসায় চলে গিয়েছে।
রিকশা থেকে বাসার সামনে নামতেই দেখি সাফিন দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখামাত্র আমার শীতল মেজাজটা উত্তপ্ত হতে শুরু করলো।
কাছে গিয়ে চাপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম, ‘এখানে কেন আপনি? কী করছেন এখানে?’
সাফিন নরম গলায় বললো, ‘তোমার সঙ্গে আমার কথা ছিলো জুলিয়া।’
‘আপনার এই যখন তখন কথা বলার প্রয়োজনীয়তাকে বন্ধ করুন। আপনার সঙ্গে কথা বলার মতো কোনো সম্পর্ক আমার নেই এই কথাটা কেন মাথায় থাকে না আপনার?’
‘আমার বাচ্চারা তোমার কাছে। সুতরাং কথা বলার প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আছে।’
চটে গিয়ে বললাম, ‘আমার বাচ্চা, এই কথাটা বলতে আপনার লজ্জা করা উচিৎ।’
‘জুলিয়া তুমি না চাইলেই কিন্তু আমাদের কোনো না কোনোভাবে দেখা হয়ে যাচ্ছে। আর বাচ্চারা আমাকে যথেষ্ট পছন্দ করে। তুমি কী আজীবন ওদের কাছ থেকে আমাকে দূরে রাখতে পারবে?’
‘আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
‘তবুও ওরা একদিন অবশ্যই ওদের বাবার সম্পর্কে জানতে পারবে।’
বিদ্রুপের স্বরে বললাম, ‘সেদিন অবশ্যই ওরা ওদের বাবাকে ভীষণ ঘৃণা করবে।’
সাফিন নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি কোনো কথা না বলে বাসার ভেতরে চলে গেলাম।
এশার কাছে আমি দিনে দিনে প্রিয় শিক্ষিকা হয়ে উঠতে শুরু করি। এহসান সাহেবের সঙ্গে এখন থেকে রোজ দেখা হয়। শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে তিনি আমার ফোন নাম্বারটা সংগ্রহ করলেন। মেয়ের বিষয়ে জরুরি প্রয়োজনে তিনি কল করেন।
স্কুল শেষে বের হতে আজ একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে৷ ব্যাগটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে দেখি এশা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
জিজ্ঞেস করলাম, ‘বাবা আসেনি এখনো?’
মন খারাপ করে বললো, ‘না।’
আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম, ‘মন খারাপ করো না। এখনই চলে আসবে বাবা।’
এরমধ্যে তাকিয়ে দেখি গাড়ি নিয়ে হাজির এহসান সাহেব৷
‘আমি দুঃখিত। আজ অফিস থেকে বের হতে দেরি হয়ে গেছে। অনেকক্ষণ বোধহয় আপনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো!’
‘না, আজ আমিও দেরি করেই বের হয়েছি।’
আশেপাশে একটা রিকশারও ছবি চোখে পড়ছে না। বাসায় আজ নায়লার আসার কথা। বোনটার সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা হবে। তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার ইচ্ছে থাকলেও উপায় হিসেবে রিকশার দেখা মিলছে না৷
এহসান সাহেব পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বললেন, ‘আপনি কিছু মনে না করলে আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিতে পারি। যেহেতু রাস্তায় কোনো রিকশা দেখছি না৷ একা কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন!’
এশাও বায়না ধরলো তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য। উঠে পড়লাম গাড়িতে। এশা আর এহসান সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বাসার সামনে পৌঁছে গেলাম। গাড়ি থেকে নেমে দেখি নায়লাও মুহিতের গাড়ি থেকে নামছে। ভদ্রতা সরূপ এশাকে নিয়ে এহসান সাহেবকে বাসায় আসার দাওয়াত দিলে, পরে আসবেন বলে তিনি জানান।
নায়লাকে নামিয়ে দিয়ে মুহিত চলে গেলো। আমি আর নায়লা কথা বলতে বলতে বাসার দিকে হেঁটে চলছি।
‘ভদ্রলোকটা কে রে আপা?’
‘ছাত্রীর বাবা। তাছাড়া পূর্বপরিচিত ছিলো। রিকশা পাচ্ছিলাম না বলে সহযোগিতা করলো।’
‘দেখতে তো সুদর্শন। মানুষটা কীরকম?’
‘একজন বাবা হিসেবে তিনি চমৎকার একজন মানুষ। বাকিটা জানি না।’
‘কী করেন তিনি?’
‘সরকারি কর্মকর্তা। এই শহরে নতুন।’
নায়লা হেসে বললো, ‘আমি বেসরকারি কর্মকর্তাকে বিয়ে করে ভালোই করেছি আপা। কোনো বদলির দুশ্চিন্তা নেই। যখন মন চায় তোদের সঙ্গে দেখা করতে চলে আসতে পারি।’
আমি হাসলাম।
বাসায় ঢুকতেই ফোনকল বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি এহসান সাহেবের কল।
আগের পর্বের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/3124615504433847/