কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ পর্ব ৩

0
1337

#কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ
#পর্ব:০৩
#জান্নাত তাছলিমা

চোখ খুলে নিজেকে একটি পাকা দালানে আবিষ্কার করলাম। সামনে একটি হাসিমাখা মুখ।আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে পরিচিত বলে জানান দিচ্ছে। মুখ খানা ঠোঁটে অমায়িক হাসি ঝুলিয়ে এবার আমার নিকট নিজেকে পরিচিত নিশ্চিত করলো।
–আমাকে চিন্তে পেরেছো আঁধার। আমি চাঁদনি, তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড সানজুর ফুফাতো বোন।তোমার মনে নেই আমি সানজুর সাথে তোমাদের স্কুলেও দু একবার গিয়েছি। কলেজের বিদায় অনুষ্ঠানেও গিয়েছিলাম।
— আর আমাদের বাড়িতেও।
— এইতো তোমার সব মনে পড়ে গেছে।
— ভুললাম কখন যে মনে পড়বে।আমি এখানে এলাম কী করে! আমিতো রাস্তায়,,,
–তুমি হঠাৎ রাস্তায় মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার পর,আমি আর ভাইয়া দৌড়ে তোমার পাশে যাই।তোমার মুখে পানি দেওয়ার জন্য তোমার মুখের নেকাব খুলতেই তোমাকে আমি চিনে ফেলি। ব্যাস রাস্তায় অযথা লোক জড়ো না করে তোমাকে বাসায় নিয়ে আসি।
— তুমি বাস স্ট্যান্ডে কেন গিয়েছিলে?
— আসলে আমি আর ভাইয়া নানু বাড়ি থেকে ফিরছিলাম।এখন তো তোমাদের কলেজ নেই তাই তোমার সাথে দেখা করার জন্য আমি আর সানজু তোমাদের বাড়ি যাওয়ার প্লেন করছিলাম।কিন্তু ভাইয়ার অফিস আর আমার অ্যাডমিশনের জন্য তাড়াতাড়ি চলে আসতে হলো।তা তুমি হঠাৎ ঢাকায় তা ও আবার একা;
আমি কিছু বলতে উদ্যত হলেই একটা গম্ভীর স্বর কানে ভেসে উঠলো,
— চাঁদনি ওনার কী জ্ঞান ফিরেছে?
সমাচার জানতে চাওয়া ব্যক্তিটিকে দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। আরে ইনিতো আমার সেই অসহ্য,অভদ্র আর বিরক্তিকর সহযাত্রী। চোখ জোড়া কাঠের ফ্রেমে বন্দী করে, বলিষ্ঠ হাত দিয়ে মুঠোফোনটা আঁকড়ে ধরে, ফরমাল গেট আপ ছেড়ে, বাসায় পরিহিত নরমাল পোশাকে দরজায় দাড়িয়ে আছেন।চাঁদনি হয়তো আমার সুবিধার্তে ওরনা খুলে দিয়েছে। তাই এলোমেলো চুল নিয়ে বসেছিলাম আমি। ওনাকে দেখে হুস বাড়িতে এলো মাথায় ওড়না জড়িয়ে দিলাম।চাঁদনি তাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
— হ্যা ভাইয়া কিছুক্ষণ আগেই ফিরেছে। তুমি ওকে চিনতে পেরেছো তো ও সানজুর বেস্ট ফ্রেন্ড আঁধার। ওনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন,
— ‘আধারিকা রহমান ‘সানজু নামের জনক; রাইট। চাঁদনি মুচকি হেসে বলল,
— হ্যা ভাইয়া ও ই আধারিকা, সানজুর আধারিকা রহমান। বলেই শব্দ করে হেসে দিলো।আমিও বিরবির করে বললাম, ‘তাসফীন মাহমুদ চন্দ্র’ আমার আর চিনতে অসুবিধা হলো না ওনি চাঁদনির
বড় ভাই চন্দ্র। সানজুর বহুল আলোচিত সেই ফুফাতো ভাই। যার পুরো নাম জানার ভাগ্য হয়েছে আমার সানজুর কল্যানে।কারণ সানজু যখনই কারো নামে উদ্দীপক টানবে,তখন তার পুরো নাম সহ চৌদ্দ গোষ্ঠীর নাম বলতে পারলে ক্ষান্ত হয় সে।তার মন্তব্য এতে বক্তব্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়।আমি হেসে বলতাম, বাচাল দের আবার বক্তব্যের সৌন্দর্য। এতে তার মুখের মানচিত্র এক অন্যরকম আকৃতি ধারণ করতো যা আমার ভিষণ পচ্ছন্দের ছিলো। ওনি এবার বললেন,
— সানজুর মুখে আপনার অনেক গল্প শুনেছি, তার প্রত্যক্ষ দর্শী হলাম আজ।সানজুর বর্ণনার চেয়ে অতিরিক্তই কিছুই জানলাম আপনার সম্পর্কে ।
— আমিও সানজুর মুখে আপনার অনেক প্রশংসা শুনেছি, তা যে নিতান্ত আকাশ চুম্বী তারই প্রমাণ হলো আজ। আমাদের সংলাপ শুনে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ছিল চাঁদনী। সে বলে উঠলো,
— আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জানান দিচ্ছে তোমরা দুজন পূর্ব পরিচিত। সানজুর সুবাদে তো পরিচয় হবার কথা না।তাইলে কেমনে কী?
— ওনিই সেই পাশের সিটের ভদ্র মহিলা।
— ওহ তার মানে আঁধার ই তোমার পাশের সিটে ছিলো।
— হ্যা আমরা পাশাপাশি সিটে বসেছিলাম।তুমি ও তো বাসে ছিলে তোমাকে তো দেখলাম না।
— আমি তোমাদের পেছনের দুই সাড়ি পরে ছিলাম।আমার সিট তো তোমার পাশেই ছিল।সমস্যা হলো আমি ভাইয়া দুজনই বাসে জানালার পাশের সিট ছাড়া বসতে পারি না।বাবা সাথে থাকলে তো আমি আর বাবা পাশাপাশি বসি।ভাইয়া অন্যত্র। কিন্তু আজ বাবা সাথে নেই। তাই দুজনেই দুই সাড়িতে। ভাইয়ার কারণেই তো ঐ মহিলাটার পাশে বসতে হলো।আগে জানলে তো তোমার পাশে বসতাম।দুজন মিলে পুরো রাস্তা গল্প করতাম।
— তাহলে বসলে না কেন তুমি বসলে তো আমারও ভালো লাগতো।এরকম অসহ্য, অভদ্র, বিরক্তিকর লোকের পাশে বসতে হতো না।

শেষ বাক্যটি আস্তে করেই বললাম। কথাটা চাঁদনির কান পর্যন্ত না পৌছালেও আমার তৎকালীন সহযাত্রী ঠিকই বুঝে গেলেন,বাক্যটা আমি তার উদ্দেশ্যে ব্যয় করেছি। ওনি এবার বলে উঠলেন,
— আমি ভেবেছিলাম সানজুর বেস্ট ফ্রেন্ড সানজুর মতোই বাঁচাল হবে।কিন্তু ইনিতো দেখি কাউকে লুকিয়ে কিছু বলতে গেলেও ক্যালকুলেটার নিয়ে বসেন।
— একটা মজার ব্যপার দেখ ভাইয়া।তুই কিন্তু মহিলার পাশে বসবি না বলে আমার সাথে সিট এক্সচেঞ্জ করলি।হলো টা কী তোকে তো ঔ মহিলার পাশেই বসতো হলো।আবার জানালার পাশের সিটেও বসতে পারলি না।
— বসবো কী করে? কারো অনুপস্থিতিতে যদি কেউ তার জায়গা দখল করে।তাহলে আমি কী করবো।(আমার দিকে তাকিয়ে)তা আপনি কী কোনো আত্মীয়ের বাড়ি এসেছিলেন।
— আসলে আমি,,,,
(এখন আমি কী বলবো)

#চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here