কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ পর্ব ৪

0
1119

#কৃষ্ণপক্ষের চাদঁ
#পর্বঃ৪
#JannatTaslima (Writer)

আমার জীবনের উল্লেখযোগ্য এক চরিত্রের নাম ‘সানজু’।সানজু আমার বাল্যবন্ধু।আর আমার সকল বিষাদগ্রস্ত সময়ের এক চিলতে হাঁসির কারণ।চন্দ্র ভাইয়া তখন আমায় সানজু নামের জনক বলার কারণ হলো,সানজু শৈশবকাল থেকে কারও বিষয় কোনো বর্ণনা দিতে গেলে, তার পুরো নাম বলতো।এই যেমন চাঁদনি সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে বলতো,’তাসফিয়া মাহমুদ চাঁদনি’ আইসক্রিম পচ্ছন্দ করে। আমি বরাবরই তার এমন উক্তি গুলোতে বিরক্ত হতাম।তাই একপর্যায়ে আমি ‘সানজিদা হক’ কে কেটেকুটে ‘সানজু’ বানিয়ে দেই।যা পরবর্তীতে এতোই বিখ্যাত হয়ে উঠে যে,সানজুকে এখন সানজিদা নামে কেউ চিনে না।সেই মকতব থেকে কলেজ পর্যন্ত সানজুর সাথে একসাথে পড়ালেখা করেছি। ভেবেছিলাম সানজুর সঙ্গের যাত্রা বুঝি শেষ হলো।অথচ এখানে এসেও সেই সানজুরই বিচরণ।
— আঁধার বাবা তোমাকে ডাকছে ডাইনিং এ আসো। ( বলেই চাঁদনি রুম থেকে প্রস্থান করলো)
আমি ছোট্ট করে ‘হুম’ বলে চেয়ে রইলাম। সকালের কথা মনে পড়ে গেল। চন্দ্রের প্রশ্নে আমি বিভ্রান্তি তে পরে যাই।উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলাম না।তবুও বলতে তো হবে, তাই কিছু বলতে আগ্রহী হলেই কলিং বেল বেজে উঠে। সবার আগ্রহ তখন সেদিকেই।চাঁদনি দরজা খুলে বড় গলায় ই বলে উঠে, ” ভাইয়া বাবা এসেছে “। চন্দ্র ও চাঁদনির বাবা ‘ আসিফ মাহমুদ ‘। আন্কেলের সাথে একবার আমার দেখা হয়েছিল সানজুদের বাড়িতে।শুধু চন্দ্রকেই আমি আগে দেখিনি।ওনি সব শুনে আমার সাথে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করে যান।সাথে এ সমেত বলে গেলেন, আমি দুপুরে না খেয়ে যেন কোথাও না যাই।আন্কেল তো এই সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ যে,আমি উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যের পথিক। আন্কেল হয়তো জানতেন চাঁদনিরা আসবে তাই বাইরে থেকে ওদের জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছেন।সবাই ভ্রমণে ক্লান্ত ছিলাম বিধায় নাস্তা সেরে বিনা বাক্যে নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম।
— আঁধার তুমি এখনো দাঁড়িয়ে যে তাড়াতাড়ি আসো।ইতস্তত হওয়ার কিছু নেই। বাবা,ভাইয়া, আর আমি ছাড়া আমাদের বাসায় আর কেউ নেই।
— হ্যা আসছি চলো,তুমি রান্না করলে কখন।তুমি আর আমি তো একসাথে ঘুমিয়ে ছিলাম।
— আরে আমি কিছু করি নি।মান্না খালা এসে করে দিয়ে গেছে। আমি আর ভাইয়া তো শুধু টেবিলে খাবার পরিবেশন করলাম।
আমরা দুজনই কথা বলতে বলতে ডাইনিং এসে পড়লাম।আচমকাই আন্কেলের কথা কর্ণগোচর হতেই আমি শিউরে ওঠলাম।
— চন্দ্র তুমি নানু বাড়ি কল দিয়েছিলে আসার পর?
— হ্যা বাবা পৌছা মাত্রই দিয়েছি।
আমি ভয়ে তটস্থ, চন্দ্র ওর নানু বাড়ি বলে দেয় নি তো আমি ওদের সাথে আছি।চাচা ভাইয়ারা তো প্রথমে সানজুদের বাড়িতে খোজ নেবে।ওনারা যদি বলে দেন।

ভাগ্য প্রসন্ন হলো, চন্দ্র ভাইয়া বাস থেকে নেমেই তার নানু বাড়িতে জানিয়েছেন। এর পরই আমার সাথে দেখা।বাসায় ফেরার পর তাদের সাথে তার আর কোনো কথা হয় নি।খাবার টেবিলে বসে আলোচনা ক্রমে আরো জানতে পারলাম আজকে সারাদিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে।লোডশেডিং ও বাসযাত্রার কারণ বাবদ চন্দ্র, চাঁদনি ও আন্কেলসহ কারো ফোনেই পর্যাপ্ত পরিমাণ আধান বজায় নাই।ফলে রাত পর্যন্ত কারো সাথে যোগাযোগ হওয়ার আর কোনো অবকাশ নাই।কিন্তু এভাবে কতক্ষণ চলবে,বড়জোড় একদিন, এরপর তো সকলে জেনেই যাবে।লোকমুখে শুনা কথা সর্বদাই বাড়াবাড়ি হয়।আমার বিষয় হয়তো তাই হবে। যার ফলপ্রসূত এই উপকার কারী মুখ গুলাই তাদের কৃতকর্মকে নিন্দা জানাবে। বহু চিন্তার সমন্বয় শেষ করে মধ্যভোজ সেরে উঠলাম। চাদঁনি আন্কেল বার বার আমার স্বল্প ভোজ নিয়ে বেশ গুরুত্বারোপ করলেন।আর আমার ঐ অসহ্য, অভদ্র সহযাত্রী চন্দ্র খোঁচা মেরেই বললেন, ” যারা নাকি গুনে গুনে কথা বলে।তারা নাকি খাওয়ার সময়ও ক্যালকুলেটার নিয়ে বসে।”

—————————–
আমি বার বার হাত মুচরাচ্ছি।তিন জোড়া উৎসুক চোখ আমার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অথচ আমার চক্ষু জোড়াতো আমার
পায়ের বুড়ো আঙ্গুলদ্বয়ে নিমজ্জিত।
— কী ব্যাপার আধারিকা মা কিছু বললে না যে তুমি কোথায় যাবে? বলো সমস্যা নাই।চন্দ্র তোমাকে পৌঁছে দেবে।
— জ্বি না আন্কেল তার প্রয়োজন নাই। আমি একা একা যেতেই পারবো।
— সে তো যেতে পারবে কিন্তু তুমি ঢাকায় কোথায় এসেছো সেটাইতো বললে না।
— ইয়ে মানে আন্কেল আমি আপনাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি।আর না, এখন আমাকে যেতে দিন।
— কী বলছো আঁধার এসব? তুমি আমাদের কষ্ট দিতে যাবে কেন!বরংচ আমরাই তো তোমাকে বাসায় নিয়ে এসেছি।কিন্তু এখনতো মনে হচ্ছে আমরা তোমাকে এখানে আনাতে তুমি খুশি হও নি।( বেশ অভিমানী স্বরে কথাটা বলল চাঁদনি। চন্দ্র আমার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আন্কেলের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে, আমার মন্তব্যে তিনি সন্তুষ্ট না।এখন আমি কী করবো?যারা আমার এতো উপকার করলো তাদের সাথে আমি এমন অকৃতজ্ঞতা করবো।মন সায় দিলো না।সত্য কখনো চাপা থাকে না।তাই নিজেই নিজের সব সত্য স্বীকার করবো বলে মনস্থির করলাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here