কুড়িয়ে পাওয়া ধন পর্ব ৫

0
555

#কুড়িয়ে_পাওয়া_ধন
#পার্ট_৫
জাওয়াদ জামী

” এই মেয়ে, তোমার নাম কি? লেখাপড়া কিছু জানো? কিসে পড়? ” বাসর ঘরেই স্বামীর মুখে কান্তা হতভম্ব হয়ে গেছে।
ও মনে মনে ভাবছে, যাকে বিয়ে করেছে তার সম্পর্কে মানুষটা কিছুই জানেনা!

” জ্বি, আমার নাম মেহনাজ কান্তা। আমি এইবার এইচএসসি পরীক্ষা দিব। ” দুরুদুরু বুকে জবাব দেয় কান্তা।

” সাইন্স, আর্টস না কমার্স? ” গুরুগম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে আরমান।

” জ্বি, আর্টস। ” শুকনো গলায় বলে কান্তা।

” তোমার কি ‘ জ্বি ‘ বলার মুদ্রাদোষ আছে! আমি দুইটা প্রশ্ন করলাম, দুইটাতেই ‘ জ্বি ‘ বললে? শোন মেয়ে, আমার মিনমিনে স্বভাবের মানুষকে পছন্দ নয়, তা আগেই বলে দিলাম। এসএসসি তে রেজাল্ট কি ছিল? ”

সদ্য বিবাহিত স্বামীকে এভাবে দ্রুত প্রসঙ্গ পরিবর্তন করতে দেখে অবাক হয় কান্তা। এই মানুষ কার ভেতর কি প্রশ্ন করছে!
হালকা ঢোক গিলে মুখ খোলে কান্তা।

” ৪. ৯২ ছিল। এসএসসি তে সাইন্স ছিল। ”

” ওহ্। পরীক্ষার আর পাঁচমাস বাকি আছে বোধহয়? শোন মেয়ে, আমি আত্ননির্ভরশীলতায় বিশ্বাসী। আমি চাইনা আমার কাছের মানুষ কারও কাছে হাত পাতুক, নত হোক। সে অনুযায়ী তোমাকেও আত্ননির্ভরশীল হতে হবে। তবেই আমার মন জয় করতে পারবে। আর এজন্য তোমাকে এইচএসসি তে ভালো রেজাল্ট করে, পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে হবে। তবেই আমার ভালোবাসা পাবে। পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে আমার কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়ার আশা করোনা। তবে মনে রেখ, তোমার সকল প্রয়োজনে আমাকে তোমার পাশে পাবে। অনেক রাত হয়েছে, এখন ঘুমিয়ে পর। ” আরমান কথাগুলো বলেই কান্তার পাশে পেতে রাখা বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পরে।

আরমানের কথা শুনে কান্তার মাথা ঘুরাচ্ছে। এই মানুষ বলে কি! পড়াশোনার সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক কি! যারা লেখাপড়া জানেনা, তাদেরকে কি স্বামীরা ভালোবাসেনা! আজব মানুষ একটা! এর সাথে সংসার জীবন খুব একটা সহজ হবেনা এটা বেশ বুঝতে পারছে কান্তা।

” তুমি কি সারারাত এভাবে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছ? তবে শুধু শুধু এভাবে বসে না থেকে বারান্দায় যেয়ে বই নিয়ে বস। সেখানে একটা টেবিল আর চেয়ার রাখা আছে। এতে তোমারই উপকার হবে। বাই দ্য ওয়ে, বই সাথে করে এনেছ তো? ” আরমান শোয়া অবস্থায়ই বলে উঠে।

আরমানের একের পর এক কথার ঝাটকা নিতে পারেনা কান্তা। ঝট করে বালিশে মাথা ঠেকায়।

” মনে ছিলনা। ” জবাব দেয় কান্তা।

” কি মনে ছিলনা! ” কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে আরমান।

” বই আনার কথা। ”

” তা থাকবে কেন! তোমরা হলে ফাঁকিবাজ সমাজের মাথা। ফাঁকি দেয়াই যাদের এ্যাম্বিশন। দুই কলম লেখাপড়া শিখে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যাও। সারাদিন হাঁড়ি ঠেলবে, মাঝেমধ্যে পটের বিবি সেজে বসে থাকবে, স্বামীর সাথে ত্যা’ড়া’মো, শ্বাশুড়ির সাথে ঝ’গ’ড়া এসব করেই দিন পাড় করবে। এগুলো ছাড়া আর কি জানো। এত কিছুর মাঝে নিজের যে স্বাবলম্বী হওয়ার দরকারে তা ভুলে যাও। আমি কালকেই তোমার বইয়ের ব্যবস্থা করব। পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি করলে খবর আছে। ”

কান্তা ওর পাশে শুয়ে থাকা মানুষটার কথা শুনে যারপরনাই অবাক। এই মানুষটা মুখ খুললেই যেন আ’গু’নে’র গো’লা বের হয়! সহজ ভাষায় কথা বোধহয় তার ডিকশনারিতে নেই! ঠ্যা’টা লোক।

কান্তা আর কথা বাড়ানোর সাহস পায়না। চোখমুখ কুঁচকে শুয়ে থাকে। এবং একসময় ঘুমিয়েও পরে। ওর পাশে শুয়ে থাকা মানুষটা ঘুমাল কি না তা একটাবারও লক্ষ্য করেনা।

খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলে নিজেকে আরমানের খুব কাছে আবিষ্কার করল কান্তা। তড়িঘড়ি করে সরে আসে নিজের বালিশে৷ এই ঠোঁ’ট’কা’টা লোক যদি কান্তাকে এভাবে দেখত, তবে কতইনা কথা শোনাত!
অতি সন্তর্পনে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে ঢোকে কান্তা। অযু করে এসে নামাযে দাঁড়ায়।
নামাজ শেষে জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে দেয়। ভোরের ঘোলাটে আলো জানালার কাঁচ ভেদ করে ভেতরে আসতে বাঁধা পাচ্ছে। কান্তা একটু হেসে জানালার কাঁচ সাইডে টেনে দেয়। মুহূর্তেই আলোয় উদ্ভাসিত হয় ওর নতুন ঠিকানা।
জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি দিয়ে চারপাশটা দেখে, বিছানার পাশে এসে দাঁড়ায়। সাথে সাথে চোখ যায় শুয়ে থাকা মানুষটার দিকে। ফর্সা মানুষটার মাথায় কুচকুচে কালো চুল, বাঁকা ঘন ভ্রুযুগল কুঁচকে ঘুমিয়ে আছে। কালচে খয়েরী ঠোঁট। মানুষটা কি সিগারেট খায়! ঠোঁট দেখেই প্রথমে কান্তার মনে প্রশ্ন জাগে।
কান্তা ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল ভোর সাড়ে পাঁচটা বাজছে। এই ভোরে এ বাড়ির কেউ কি ঘুম থেকে উঠেছে? তাছাড়া এখানকার কাউকেই ও চিনেনা। গতকাল রাত দশটার পর এ বাড়িতে এসেছে ও।কিন্তু ওকে বরন করার জন্য কেউই ছিলনা ড্রয়িংরুমে। যে মেয়ে দুইজন বিয়েতে গিয়েছিল আসার পথে কান্তা জেনেছে, তাদের একজন ওর ননদ অন্যজন ননদের বান্ধবী।
কান্তার ননদ শ্রীজাই ওকে বরন করেছে। মেয়েটা গাড়ি থেকে নেমে যখন দেখেছে এ বাড়িতে কেউই জেগে নেই, বাধ্য হয়ে শ্রীজাই গাড়ি থেকে কান্তাকে নামিয়ে এই রুম পর্যন্ত এনেছে।

নানান চিন্তার মাঝেও কান্তা এদিকওদিক তাকায়। দেখে নেয় রুমের কোথায় কি আছে। রুমটা খুব বড় নয়। আসবাবও খুব বেশি নেই৷
একটা খাট, ড্রেসিংটেবিল, একটা আলমিরা রাখা আছে। এতেই রুমটা ভরে গেছে। কান্তা ভাবছে এত বড় বাড়ির ছেলে কিন্তু তার রুম এত ছোট কেন? গ্রামের বাড়িতে আমার ঘরটাও এটার থেকে বড় ছিল।
এরপর কান্তার চোখ যায় বারান্দার দিকে। সে এক পা দু পা করে বারান্দার দিকে যায়৷
বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই কান্তার মন ভালো হয়ে যায়। রুমের তুলনায় বারান্দা বেশ বড়। উত্তর-দক্ষিণ লম্বা বারান্দার উত্তরপাশে একটা টেবিল আর চেয়ার রাখা। পাশেই দেয়াল ঘেঁষে রাখা বুক শেলফ। বুক শেলফটা অনেক বড়। নানান লেখকের নানান বইয়ে ভর্তি। উত্তরপাশটার গ্রীলে থাই গ্লাস লাগানো৷ কান্তা বুঝতে পারল বৃষ্টির পানি ঠেকাতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। কান্তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সিদ্ধান্ত নেয় একে একে সকল বই পড়বে ও।
এরপর কান্তা দক্ষিণপাশে নজর দেয়। সেখানে কয়েকটা ফুলের টব রাখা। সাদা লিলিয়াম সুগন্ধে তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। এছাড়াও বেলি, গন্ধরাজ, বেগুনি রংয়ের গোলাপ, হলুদ জবা তাদের সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে।
গত কয়েকদিনের চিন্তা, দুঃখ, কান্না এক নিমেষেই উবে যায় কান্তার মন থেকে। হুট করেই মনটা ভালো লাগায় ছেয়ে যায়। ওর ভাবতেই ভালো লাগছে, আজ থেকে এই বারান্দা, এই ফুল গাছগুলো আর এই বইগুলোর ওপর ওর পূর্ণ অধিকার আছে।

কতক্ষণ এভাবে কেটে গেছে তা বলতে পারেনা কান্তা। ওর হুঁশ আসে দরজায় টোকার শব্দে। কেউ ওকে ডাকছে৷

কান্তা বিছানায় তাকিয়ে দেখল আরমান গভীর ঘুমে। তাই বাধ্য হয়ে ওকেই দরজা খুলতে হয়।
দরজা খোলামাত্রই দেখল শ্রীজা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।

” ভাবিইই, গুড মর্নিং। কেমন কাটল প্রথম রাত? ঘুম হয়েছে ঠিকঠাক? ” চোখ টিপে দাঁত কেলিয়ে জানতে চায় শ্রীজা।

শ্রীজার এমন উদ্ভব প্রশ্নে লজ্জা পায় কান্তা। কোন জবাব না দিয়ে চুপ থাকে।

” বাব্বাহ্, ভাবি দেখছি লজ্জা পেয়েছে! এত লজ্জা কিসের তা বুঝিনা বাপু। দুনিয়া সুদ্ধ সবাই জানছে কাল তোমাদের বাসর রাত ছিল। এ রাতে ঘুম হওয়ার নয়, তা সবারই জানা। এতে লজ্জার কি আছে! ”

” তুমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছ কেন! ভেতরে এস আপু। ”

” তুমি আমাকে আপু বলছ কেন! বয়সে নাহয় আমি তোমার থেকে ইট্টু বড়। তাই বলে আপু ডাকবে! এদিকে আমার কতদিনের শখ ভাইয়ার বউকে ভাবি ডেকে ডেকে মুখে ফেনা তুলব। কিন্তু ভাবিই আজ আমাকে আপু ডাকছে! তোর কপাল খারাপ শ্রীজা। ” কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে শ্রীজা।

শ্রীজার এমন আচরণে কান্তা হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায়না।

” আচ্ছা, আর আপু বলবনা। তবুও তুমি কষ্ট পেওনা। আসলে ছোটবেলা থেকেই আমার একটা বোনের খুব শখ ছিল। তাই আমার বয়সী কাউকে দেখলেই আপু ডাকতে ইচ্ছে করে। ” কান্তা মলিন হেসে বলে।

” আমার মিষ্টি ভাবিটার মন খারাপ করে দিলাম বুঝি? শোন তোমার যা ইচ্ছে তুমি তাই ডেক। আমি কিছু মনে করবনা। এবার নিচে চল। তোমার শ্বাশুড়ি, দাদি শ্বাশুড়ি সবাই নিচে অপেক্ষা করছে। ”
শ্রীজা একপ্রকার টেনে কান্তাকে নিচে নিয়ে যায়।

ড্রয়িংরুমে একটা সিঙ্গেল সোফায় বসে কফির কাপে চুমক দিচ্ছে বয়স্কা এক মহিলা। তার চেহারায় আভিজাত্যের ছোঁয়া। বৃদ্ধা দু’হাতে কয়েক গাছি সোনার চুরি মৃদৃ লয়ে ঝংকার তুলেছে। গলার দড়ি পাকানো মোটা চেইন বুকের নিচ পর্যন্ত নেমে এসেছে। কানে বড় পাশা মুখের সৌন্দর্য দ্বিগুণ করেছে।
কান্তা বৃদ্ধাকে দেখেই বুঝতে পারে ইনিই ওর দাদি শ্বাশুড়ি।
শ্রীজা কান্তাকে দাদিমার সামনে আনে।

” দাদিমা, এই যে তোমার নাতবৌ। এবার নাতবৌয়ের মুখ দেখ। কি এনেছ নাতবৌয়ের মুখ দেখবার জন্য? ”

” শ্রীজা, এসব কি? তুমি হুটহাট করে একে এখানে আনলে কেন? তুমি কি এখনও সেই ছোটটিই আছ? আর এর মুখ এত আয়োজন করে দেখার কি আছে! এই মেয়ে কোন দেশের রাজকুমারী যে তার মুখ দেখার জন্য আমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে!
আর এই যে মেয়ে, সকাল সকাল এভাবে ড্রয়িংরুমে এসেছ কেন?রাতের বাসি পোশাক ছেড়েছ? এই তুমি কি গোসল দিয়েছ? ” একনাগাড়ে কয়েকটা প্রশ্ন করে বৃদ্ধা।
তার কথার তেজে কান্তা চরম বিস্মিত। কি উত্তর দিবে সে! একটু ভরকে যায় কান্তা। একেতো ও নতুন, তার উপর দাদিমার এমন ধাঁচের কথা শুনে ওর ভেতরে ভয় জমা হয়।

” এখনও রাতের পোশাক ছাড়িনি আর গোসলও করিনি। ” ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয় কান্তা।

” কিহ্, তুমি এই অবস্থায় এখানে এসেছ? গাঁইয়া মেয়ে, তুমি কি ম্যানার্স জানোনা? তোমার সাহস হয় কি করে এই অবস্থায় নিচে আসার? ”

” আম্মা, ওকে ছেড়ে দিন। ছোট মানুষ তাই হয়তো জানেনা। এই মেয়ে শোন, এখন থেকে নিচে আসলে হিসেব করে আসবে। এ বাড়িতে কে, কি পছন্দ করে সেগুলো জানার চেষ্টা করবে।
কারও অপছন্দের কাজ কখনোই করবেনা এখন যাও গোসল সেরে এসে রান্নাঘরে ঢুকবে। ”
আকলিমা খানম কৌশলে শ্বাশুড়ি আর কান্তাকে নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদের ব্যবহারে কান্তার কান্না পাচ্ছে। দুঃখের নদীতে ভাসতে ভাসতে বুঝি এবার দুঃখের সাগরে এসে পরল। তবে কি দুঃখই ওর চিরসাথী!

শ্রীজা অবাক হয়ে গেছে ওর দাদিমার আচরণে। ভদ্রমহিলা এমন কেন?

গোসল সেরে রান্নাঘরে এসেছে কান্তা। তখনও আরমান ঘুমিয়েই আছে।
কান্তার শ্বাশুড়ি ওকে কয়েকপদ খাবার রান্না করতে বলেছে।

” কি ব্যাপার, তুমি রান্নাঘরে কি করছ? তোমাকে রান্না করতে কে বলেছে?
বলছিলাম যে, এই বাড়িতে রান্না করার জন্য খালা আছে। তবুও কেন আমার বউ রান্নাঘরে এসেছে? খালা কি আজ আসেনি? ” হঠাৎই আরমান কোথায় থেকে এসে খেঁ’কি’য়ে উঠে। সরাসরি প্রশ্ন করে আকলিমা খানমকে।
কান্তা সবেমাত্র সর্ষে ইলিশ চুলায় দিয়েছে।

” এটা নিয়ম। নতুন বউ প্রথমদিন রান্না করবে। আমি…”

” কোন হাদিসে আছে এই নিয়ম? হোয়াটএবার, আমার বউ এসব করবেনা। আমি মাস শেষে যথেষ্ট টাকা আপনার কাছে দিই। আশা করি সে টাকাতেই কাজের খালা এবং আমাদের দুজনের খাবার খরচ হয়ে যাবে। তবুও সামনের মাস থেকে আরও কিছু টাকা বাড়িয়ে দিব। মন দিয়ে শুনে রাখুন, আমার বউ রান্নাঘরে নিজের ইচ্ছেতে আসবে। অন্য কারও ইচ্ছায় নয়। আর কেউ ওর ওপর কোন হুকুমজারি করতে পারবেনা। ওর যদি কিছু করতে ইচ্ছা তবেই করবে। ” আর কিছু না বলে আরমান টানতে টানতে কান্তাকে উপরে নিয়ে আসে।

কান্তা বিছানায় বসে ভাবছে, এই পরিবারে কোন সমস্যা আছে নিশ্চিত। আর এই লোকটাই বা এমন কেন! নিজের মায়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে?

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here