কাজললতা পর্ব ৮

0
620

#কাজললতা
পর্ব: ৮
লেখিকা : ইভা আক্তার

🍁🍁🍁🍁🍁
তপ্ত গরমে কলেজ ক্যাম্পাসের চারপাশে সকলের গা থেকে তরতর করে ঘাম পড়ছে। বৈশাখ মাসের শেষের সময়। রৌদ্রের তাপে সকলের মুখ বিষন্ন। কলেজ ক্যাম্পাসে বসে আছি আমি, ইলমা,প্রভা,অনন্ত আর জিসান। আমার আর প্রভার হাতে থাকা আইসক্রিম তরতর করে সূর্যের প্রখন্ড তাপে গলে যাচ্ছে। বাকি সবাই কোল্ড ড্রিন্কংস খাচ্ছে। আমাদের সামনে দিয়েই তুহিন একবার লাইব্রেরি থেকে বস্তা বস্তা কাগজ আর খাতা নিয়ে টিচার্স রুমে যাচ্ছে। আরেকবার লাইব্রেরিতে ঢুকছে। তার এই দৌড়ানোর পানেই আমরা চেয়ে রয়েছি। কলেজ ক্যাম্পাসের উপরের দেয়ালে বড় একটা ব্যানারে তুহিনের এস.এস.সি তে বৃত্তি পাওয়া উপলক্ষে ছবি টাঙানো রয়েছে। তার ঠিক পাশেই বড় আরেকটা ব্যানারে রয়েছে ইফতি ভাইয়ার এইচএসসি তে স্কলারশিপ পাওয়ার ছবি। ইফতি ভাইয়া স্কলারশিপ পাওয়ায় চাইলে বিদেশে গিয়েও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারতো। কেননা ইফতি ভাইয়ার মেধার কোনো বিকল্প নেই। তাও কেনো যে আমাদের কলেজেরই মেডিকেল শাখায় ভর্তি হলো আল্লাহ মাবুদ জানে।
– কিরে? আজ তুহিন এমন দৌড়াদৌড়ি করছে কেনো?শালা নিজেই আমাদের ক্যাম্পাসে আসার কথা বলে এখন ব্যস্ত হওয়ার ভান করছে। নির্ঘাত টাকা খরচের ভয়ে ( জিসান)
– আরে ধুর আজেবাজে বকিস না তো। আজকে স্যার ওকে অনেক দায়িত্ব দিয়েছে। জানিসই তো সব স্যার মেডামদের ভরসার আরেক নাম তুহিন। ( ইলমা)
– শুধু তুহিনের কথা কেন বলছিস? তোর ভাই কি কম? স্যার মেডামরা তো সারাক্ষণ ইফতি ভাইয়ার কথায় হ্যা তে হ্যা আর না তে না মিলায় (জিসান)
-থাম তোরা। এখানে আবার ওই রাক্ষসটাকে কেন টানছিস? (আমি)
সবাই আমার কথায় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।
– তোর কবে থেকে এতো সাহস হলো রে ইভা? এমনিতেতো ইফতি ভাইয়াকে দেখলে তোর হাঁটু কাঁপা শুরু হয়ে যায়। ( অনন্ত)
আমি কিছু না বলে চুপ করে বসে রইলাম। সত্যিই তো ইফতি ভাইকে দেখে আমার হাঁটু কাপা শুরু হয়ে যায়। আমাদের আড্ডার মাঝেই তুহিন তার ঘামক্ত বিতৃষ্ণা চেহারা নিয়ে জিসানের পাশে গিয়ে বসলো। জিসান তার হাতে থাকা কোল্ড ড্রিংকসের বোতলটা তুহিনের দিকে এগিয়ে দিতেই সে এক নিশ্বাসে প্রায় অর্ধেকটা খেয়ে বললো,,,
– ইফতি ভাইয়াকে নিয়ে কি বলছিলি তোরা? (তুহিন)
ওই তো আরেক আসছে ইফতি ভাইয়ের চামচা। তুহিন হলো ইফতি ভাইয়ার বড় ভক্ত। ইফতি ভাইয়া যা করতে বলে, তুহিন তা এক মিনিটেই করে ফেলে। এর জন্যই ইফতি ভাইয়া সবসময় তুহিনকে নিয়ে আমায় খোঁটা দেয়।
– তুই জেনে কি করবি? ( ধমক দিয়ে বললাম)
– আরে ইয়ার রেগে যাচ্ছিস কেনো? আমি তো আর তোকে কিছু বলি নি। বাই দা ওয়ে ইফতি ভাইয়ের কি খবর। অনেক দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে না যে? ( তুহিন)
– তোমার সম্মানজনক ইফতি ভাই তার চক্ষু ডাক্তারি চালিয়ে যাচ্ছে। যেদিন ইফতি ভাইয়া চোখের ডাক্তার হবে সেদিন প্রতিটা ঘরে ঘরে একটা করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দেখতে পাবি। কথাটা মিলিয়ে নিস (আমি)
– একদম বাজে কথা বলবি না তুই। তুই তো ইফতি ভাইয়ার নামেরও যোগ্য না। আবার তাকে নিয়ে কটুক্তি করছিস। আগে তার মতো হয়ে দেখা তারপর আসিস কথা বলতে হা ( তুহিন)
তুহিনের খোঁচা মেরে কথা বলাতে আমার শরীরের রক্ত গরম হয়ে গেলো। রাগের মাথায় কিছু বলার আগেই জিসান চেচিয়ে উঠলো,,
– আরে ওই দেখ আমাদের ইফতি ভাই। (জিসান)
জিসানের চিৎকারে আমরা সবাই কলেজের গেটের দিকে তাকালাম। ইফতি ভাই বাইক থেকে নেমে কলেজের ভিতরে ঢুকছে। গায়ে তার এ্য্যশ রঙের শার্ট, অফ ওয়াইট রঙের জিন্স,ওয়াইট কালার শূর সাথে সাদা রঙের মেডিকেলের এপ্রোন। ইফতি ভাইয়ার পিছনে আরো প্রায় চার পাঁচটার মতো বাইক ছিলো যেগুলোতেও মেডিকেলের ছাত্ররা। তাদের গায়েও ছিলো সাদা রঙের এপ্রোন। প্রত্যেকেই ছিলো যেমন সুদর্শন তেমনি স্মার্ট। তবে তাদের সুদর্শন চেহারার মধ্যেও কলেজ থেকে শুরু করে মেডিকেলের প্রত্যেকটা মেয়ের চোখ ছিলো ইফতি ভাইয়ের উপর। ইফতি ভাইয়ার স্মার্টনেস আর গম্ভীরতাই মূলত মেয়েদের ক্রাশ খাওয়ার আরও একটা কারণ। সকল মেয়েদের এড়িয়ে তারা কলেজের ভিতরে গেলো টিচারর্স রুমে। তারা হয়তো জানে না যে হাজার হাজার রমনী নিজেদের প্রত্যেকটা ইম্পোরটেন্ট কাজ ফেলে শুধুমাত্র তাদেরকে দেখার জন্য ছুটে এসেছিলো কলেজ গেটের সামনে। এ আর নতুন কি? মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন কাজে তারা আমাদের কলেজে আসে আর শত শত মেয়েদের আশায় পানি ঢেলে নিজের গন্তব্যে চলে যায়। যেদিন থেকে এই কলেজে এডমিশন নিয়েছি সেদিন থেকেই এইসব মেয়েরা আমার পিছেই পড়ে থাকে। এই ছেলের নাম কি? কোন ইয়ারে পড়ে? প্লিজ নম্বরটা দাও? ফেসবুক আইডি থাকলে দাও?
এদের থেকে বাঁচার জন্য আমার কি না কি করতে হয় সেটা আমিই জানি। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে ইলমা ইফতি ভাইয়ের বোন হওয়া সত্বেও তাকে কেউ ইফতি ভাইয়ের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস না করে আমায় কেনো করো সেই রহস্য আজও জানতে পারলাম না। কিছু কিছু মেয়ে তো ইফতি ভাইয়ের সাথে কথা বলার জন্য আমার পারমিশন চায়।ইফতি ভাইয়ারা টিচার্স রুমে যেতেই সকল মেয়েরা আমায় এসে ঘিরে ধরলো। আমি জানি এখন এক এক করে সকল মেয়ে আমাকে রিকোয়েস্ট করবে যেনো ইফতি ভাইয়ার সাথে একবার হলেও কথা বলিয়ে দেই। কিন্তু এই মেয়েগুলো এটা কেনো বুঝে না যে আমি যদি একবার ইফতি ভাইয়ার কাছে গিয়ে মেয়েদের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করি তাহলে আমার গলা কাটা লাশ চিত্রা নদীর কিনারায় পাওয়া যাবে। পরিস্থিটা বুঝতে পেরেই আমি তাদের থেকে দৌড়ে দূরে সরে গেলাম। আমার দেখা দেখি প্রভা, ইলমা, তুহিন,অনন্ত আর জিসানও আমার সাথে চলে এলো। এখনও কিছু কিছু মেয়ে আমার সাথে কথা বলার জন্য পিছন দিক দিয়ে ডাকছে। নিজেকে কেমন জানি নায়িকা অপু বিশ্বাস মনে হচ্ছে। কিন্তু সবাইকে পাত্তা না দিয়ে ক্যাম্পাসের সবচেয়ে কোণার বট গাছের নিচে এসে আমি আর বাকি সবাই বসলাম।
– ইসসস। আফসোস! ইফতি ভাইদের মতো যদি আমার সাথেও মেয়েরা কথা বলার জন্য অস্থির হয়ে যেতো (আফসোসের সূরে জিসান বললো)
– তুই শালা লুচ্চা আজীবন লুচ্চাই থাকবি। আল্লাহ তোরে যদি একটু হেদায়েত দেয় ( প্রভা)
– তোর এতো হিংসে হয় কেন রে? দেখিস না ইফতি ভাইদের সাথে কথা বলার জন্য মেয়েরা কেমন ছটফট করে। আমি চাই আমার সাথেও যেনো মেয়েরা কথা বলার জন্য এমনই পেঙ্গুইনের মতো ছটফট করে (জিসান)
– আগে তুই ইফতি ভাইয়ের মতো হয়ে দেখা। নিজে তো সারাদিন মেয়েদের পিছনে ল্যাং লাগিয়ে ঘুরে বেড়াস। আর পড়ালেখার কথা তো নাই বলি। লুচ্চাদের যদি কোনো অ্যাওয়ার্ড হয় তাহলে নির্ঘাত তুই নোবেল পাবি। (প্রভা)
– দেখ তুই আমায় এভাবে অপমান করতে পারিস না। তোর তো লজ্জা থাকা উচিত নিজের বন্ধু সিঙ্গেল হয়ে রাস্তায় এতিমের মতো পড়ে আছে তাও একটা মেয়ে এনে দিতে পারিস না। থু থু তুই তো একটা ডাইনি মহিলা ( জিসান)
– কিহ আমি ডাইনি? আজ তোর একদিন কি আমার একদিন। তুই শালা আজীবন সিঙ্গেলেই মরবি ( প্রভা)
– আরে থাম তোরা। কি শুরু করেছিস? সামনে তাকিয়ে দেখ মেডিকেলের টপার হ্যান্ডসামরা এদিকেই আসছে (তুহিন)
তুহিনের কথা শুনে আমরা সকলেই সামনের দিকে তাকালাম। ইফতি ভাইয়ারা এদিকেই আসছে। ইফতি ভাইয়া আমাদের সামনে এসেই তুহিনের কাঁধে হাত রেখে বললো,,
– কি খবর হ্যান্ডসাম? পড়ালেখা কতদূর? (ইফতি ভাই)
– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া। (তুহিন)
– বাহ বেশ ভালোই তো। এভাবেই এগিয়ে যাও কেমন? আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলবে আমি অবশ্যই সাহায্য করবো (ইফতি ভাইয়া)
– জি অবশ্যই ভাইয়া। (তুহিন)
ইফতি ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,,
– হুম। পাড়লে ওকেও একটু তোমার মতো বানাও। সারাটাদিন তো কার্টুন দেখে দেখে দিন পার করে দেয়। আর পড়ালেখা তো লাটে উঠেছে। কবে জানি দেখা যাবে পড়ালেখা ছেড়ে ইট ভাঙার কাজে লেগে গেছে আমাদের মেধাবি ছাত্রী ইভা (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথায় সবাই খিলখিল করে হাসতে লাগলো। আর এদিক দিয়ে রাগে আমার চোখ থেকে ধোয়া বেড়চ্ছে। ইলমাকে উদ্দেশ্য করে ইফতি ভাইয়া বললো,,
– তুই দাঁত কেলিয়ে কেন হাসছিস? তোকেও কথাটা বলে রাখছি। এখনই পড়াশোনায় লেগে পড়। নাহলে কিন্তু আব্বুকে বলে তোর জন্য রিকশাওয়ালা পাত্র খুজতে শুরু করবো (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথায় নিমিষেই ইলমার হাসি গায়েব হয়ে গেলো। আমার মতো ওরও মনে হয় নাক মুখ দিয়ে ধোয়া বেড়চ্ছে।
অনেকক্ষণ ধরেই দেখছি ইফতি ভাইয়ার এক বন্ধু আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। শ্যামলা বর্ণ, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। যখনই আমি তার দিকে তাকাই তখনই সে চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়।
– আচ্ছা ঠিক আছে। এবার তাহলে আমাদের যেতে হবে। সবাই ভালো থেকো আল্লাহ হাফেজ। (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাই সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। খেয়াল করলাম ওই শ্যামবর্নের ছেলেটি যাওয়ার আগে খানিকবার আমার দিকে তাকিয়েছিলো। আমি সেদিকটায় নজর না দিয়ে রাগে ফোঁসতে ফোঁসতে বললাম,,,
– ভালো হয়েছে চলে গেছে। বাড়িতে জ্বালিয়ে শান্তি না পেয়ে কলেজে এসেও জ্বালিয়ে মারে (আমি)
– একদম ঠিক বলেছিস। দেখ কিভাবে তার বন্ধুদের সামনে আমাদের অপমান করে গেলো। আজকে বাসায় যেয়ে নেই আচ্ছামতো শিক্ষা দিবো (ইলমা)
– হয়েছে থাম তোরা। এসব টপিক বাদ। চল ক্লাসে চল ( তুহিন)
– চল (প্রভা)
ক্যাম্পাস থেকে আমরা সবাই ক্লাসে চলে গেলাম।
🍁🍁🍁🍁🍁
কলেজ থেকে ফিরে গোসল করেই বিছানায় শুয়ে ছিলাম। তখনই বালিশের পাশে রাখা বইটায় হাত পড়লো। কাল রাতে বইটা আম্মুর রুম থেকে নিয়ে অল্প একটু পড়েছিলাম। আমার আম্মু একজন উপন্যাস প্রেমিকা। আম্মুর রুমের বুক সেলফে সারি সারি উপন্যাস পাওয়া যাবে। এই উপন্যাসটা আম্মুকে অনেকবার পড়তে দেখেছিলাম। তাই আমিও ভাবলাম উপন্যাসটা পড়েই দেখি কি এমন আছে যে আম্মু বারবার উপন্যাস টা পড়তে থাকে। সামনের ২ পৃষ্ঠা বেশ ভালোই লাগলো। যখন এক প্রেমিকা তার প্রেমিকের দেখা পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ অপেক্ষা করে। উপন্যাসটা মূলত নব্বই দশকের। যে সময়টায় চিঠির ব্যাপক প্রচলন ছিলো। উপন্যাসটার মধ্যে যেনো আমার আর আমার প্রেমিক পুরুষের মিল খুঁজে পেলাম। এজন্যই উপন্যাসটার প্রতি আমার এতো আগ্রহ। গভীর মনোযোগ দিয়ে উপন্যাসটা পড়ছিলাম তখনই হঠাৎ করে কে যেনো ছোঁ মেরে বইটা টান মেরে নিয়ে গেলো। উপরে তাকিয়ে দেখি রাক্ষস ইফতি ভাই। তাকে দেখেই আমার কপালে বিরক্তির ভাজ পড়ে গেলো। ইফতি ভাইয়ার সামনে আরও ছিলো ইলমা , বড় ফুপির মেয়ে নওশিন আপু আর ছেলে নাহিল ভাইয়া। আর ছোটো ফুপির মেয়ে তানিয়া। নওশিন আপু এবার অনার্স শেষ করেছে। নাহিল ভাইয়া অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে আর তানিয়া সবে মাত্র ক্লাস টু।
– কি এমন বই পড়ছিস যেটায় তোর এতোই মনোযোগ যে আমরা রুমে এলাম তাও টের পেলি না? (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়া কথাটা বলেই বইটা একবার সামনে দেখে ভেতরের লেখাগুলো দেখছিলো।
– এসব কি প্রেমের উপন্যাস পড়ছিস তুই? প্রেম করার সখ জেগেছে নাকি তোর? মেঝো চাচ্চুকে বলে একদম ধরে বিয়ে দিয়ে দেবো। অকাল পক্ক কথাকার। ( ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়া কথাটা বলেই একটা হাসি দিয়ে চেয়ার টেনে বসলো। ইফতি ভাইয়ের হাসিতে যেনে আমার গা জ্বলে যাচ্ছিলো।
– বাই দ্যা ওয়ে তোর বিয়ের কথা না হয় পড়ে ভাবা যাবে। আগে আমরা নওশিন আপুর বিয়ের কথা বলি। আগামী শুক্রবার নওশিন আপুর বিয়ে। (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথায় আমি লাফিয়ে উঠলাম।
– কি বলছো ইফতি ভাইয়া? আগামী শুক্রবারই নওশিন আপুর বিয়ে? নওশিন আপু তোমার না মাষ্টারসে ভর্তির পর বিয়ের কথা বলা হয়েছিলো? ( আমি)
– আসলে তোর ভাইয়া তিন মাস পর কানাডা চলে যাবে। তাই সবাই ভাবছে যে বিয়ে করে একেবারে যেনো আমাকে সাথে করে নিয়েই কানাডা চলে যায়। ওখানে গিয়ে বাকি পড়ালেখাটা শেষ করবো। ( নওশিন আপু)
আমি নওশিন আপুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,
-তোমাকে অনেক মিস করবো আপুনি ( আমি)
– হুম আমিও আমার লক্ষী বোনদেরকে অনেক মিস করবো। হয়েছে আজ আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কাল তোদেরও বিয়ে হয়ে যাবে বুঝেছিস। (নওশিন আপু)
– উহু। না আপু। আমি বিয়ে করবো না। তোমাদের ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না ( আমি)
– হুম হুম। ইভা বিয়ে না করলে আমিও করবো না। আমিও তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না ( ইলমা)
– তোর সাথে ইভার কি সম্পর্ক হ্যা? বিয়ে তো তোকেও করতে হবে আর ইভাকেও। ( নওশিন আপু )
– হুম এখন থামো তোমরা। সবাই এবার আমার কথা শুনো। দাদুভাই চাইছে বিয়েটা যেনো তাদের ওখানেই হয়। যতই হোক বংশের বড় মেয়ে বলে কথা। এজন্য আগামীকাল রাতে আমরা সবাই মিলে রওনা দিবো চট্টগ্রামে। ওকে? (ইফতি ভাইয়া)
আমরা একসাথে “ওকে” বললাম। এরপর আরো কিছুক্ষণ আমরা নওশিন আপুর বিয়ে নিয়ে প্ল্যান করলাম। কিছুক্ষণ পর আম্মুর ডাক পড়লো নুডলস খেতে ডাকছে। আম্মুর ডাকে সবাই উঠে গেলেও ইফতি ভাই বললো,,
– নওশিন আপু তোমরা যাও আমার ইভার সাথে ইম্পোর্টেন্ট কথা আছে। (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথা মেনে সকলে রুম থেকে প্রত্যাখ্যান করলো। আর এদিক দিয়ে আমার হৃৎস্পন্দন ক্রমশ বেড়েই চলছে। কই আমি তো আজ কোনো অপরাধ করি নি। তাহলে এখন আবার কিসের শাস্তি দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে ইফতি ভাই। আমি চুপি চুপি খাট থেকে উঠে যেতেই হুট করে ইফতি ভাইয়া আমার হাত ধরে টান মেরে তার কোলে বসালো। ইফতি ভাইয়ার এতো কাছে এসে আমার হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে গেলো। ইফতি ভাইয়ার কোল থেকে উঠতে গিয়েও পারলাম না কারণ ইফতি ভাইয়ার গত ২ বছরের জিম করা বডির কাছে আমি অতি তুচ্ছ এক মাছি। হঠাৎই ইফতি ভাই আমার সামনে থাকা চুলগুলো পিছনে গুজে দেয়ে বললো,,
– তুই বিয়ে করবি না? লাইক সিরিয়াসলি? এক তো প্রেমের উপন্যাস পড়ে রোমান্টিক হওয়ার চেষ্টা করছিস আবার মুখে বলছিস বিয়ে করতে চাস না? তুই বিয়ে না করলে আমাকে তো আজীবন সিঙ্গেলে মরতে হবে (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার এতো নরম কন্ঠে যেনো আমার বুকের ভিতরটা শিহরণ দিয়ে উঠলো। ইফতি ভাইয়ার কথার মানেটা আন্দাজ করতেও পেরেও যেনো ইফতি ভাইয়ার এতো কাছাকাছি এসে সব মাথা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
– মা-মা-মানে? (আমি)
ইফতি ভাইয়া আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলতে লাগলো,

“ওহে প্রেয়সী,
তুমি আমার রঙিন সপ্ন
শিল্পির রঙে ছবি..
তুমি আমার চাঁদের আলো….
সকাল বেলার রবি;
তুমি আমার নদীর মাঝে
একটি মাএ কূল;
তুমি আমার ভালবাসার
শিউলী বকূল ফুল। ”

চলবে,,,,,,,,💖

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here