কাজললতা পর্ব ৭

0
661

#কাজললতা
পর্ব:৭
লেখিকা: ইভা আক্তার

🍁🍁🍁🍁
চিঠিটিতে লেখা আছে,

“প্রিয় কাজললতা,
কেমন আছো প্রেয়সী? হাজারো ব্যস্ততার মাঝে আবারো তোমাকে চিঠি লিখতে বসলাম। নিশ্চয়ই আমার চিঠির জন্যই অপেক্ষা করছিলে? তুমি যেমন আমার চিঠির জন্য দিনরাত অপেক্ষা করো আমিও তেমনি তোমার ওই কাজল কালো মায়াবী মুখখানি দেখার জন্য ছটফট করি। কবে পাবো তোমার ওই মায়াবতী মুখখানি দেখতে? সেই চিন্তায় যে আমি রাতে ঘুমাতে পারি না।
আজকের চিঠিটা প্রেমপত্র নয় বরং অভিযোগ পত্র। কিসের অভিযোগ পত্র তাই ভাবছো না?
আচ্ছা? তুমি এতো নিষ্ঠুর কেনো? তুমি কি বুঝো না তোমাকে অন্য কোনো পুরুষের সাথে হেসেখেলে কথা বলতে দেখলে আমার বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভূতি হয়।
আচ্ছা? তুমি এতো অবুঝ কেনো? তুমি কি বুঝো না তুমি এই প্রেমিক পুরুষ ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষের দিকে তাকালেও তার সারা শরীর জ্বলে যায়।
তাই তো তোমার এই বদমেজাজি প্রেমিক পুরুষটা তোমার থেকে প্রত্যেকটা ছেলেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। চিন্তা করো না। সে কাউকে খুন করে না। শুধুমাত্র তাদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়।
কি করবো বলো? আজ যে তোমার জন্য আমার মনে অনেক অভিযোগ জমা রয়েছে। এই অভিযোগগুলোকে কিভাবে পানি করতে পারবে জানো? তোমার ওই কাজল দেওয়া কাজললতা সেজে। আবার সাজো না, কাজললতা।আবারো তৈরি হয়ে নাও নীল পরি হয়।
এতোটুকুই যে ইচ্ছে আমার মনে।
ভালো থেকো কাজললতা। তোমার এই প্রেমিক পুরুষ আবারো তোমায় দেখার অপেক্ষায় থাকবে।
ইতি
কাজললতার প্রেমিক পুরুষ।

চিঠিটা পড়ে যেমন খারাপ লাগা অনুভূতি হলো। তেমনি আনন্দ অনুভবও হলো। ইসস কি করলাম আমি। কেনোই বা ওই ফাহিমের সাথে কথা বলতে গেলাম ধুর।
তার মানে আজ পর্যন্ত যেসব ছেলে আমাকে প্রপোজ করেছে তারপর থেকে তাদের দেখা না পাওয়া বা ইগনোর করার পিছনে সেই শ্যামপুরুষের হাত রয়েছে। ভাবতেই মনটা খুশি হয়ে গেলো। পরক্ষণেই মনে পড়লো শ্যামপুরুষটি যে আমায় কাজললতা সাজে দেখতে চায়। কিন্তু আমি নীল শাড়ি পরে সাজলেও সে কিভাবে দেখতে পাবে আমায়? জানি না। থাক যেহেতু সে বলেছে দেখতে পাবে তাই সেজেই ফেলি।
শ্যামপুরুষের ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিয়ে পরম ভালাবাসায় নীল সাজে সজ্জিত হলাম। এই নীল শাড়িটা যখনই পড়ি তখনই এক ধরণের ভালো লাগা অনুভব হয় যা আগে কখনো অন্য কোনো শাড়িতে হয় নি। কাজল দিতে যাবো তখনই টের পেলাম ড্রইং রুমে আম্মু যেনো কার সাথে কথা বলছে। এতো মানুষের কন্ঠস্বর পাওয়া মাত্রই দৌড়ে ড্রইং রুমে যেতেই সকলে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। ড্রইং রুমে আছে ইলমা,বড় কাকি(ইলমা আর ইফতি ভাইয়ের মা দিলারা বেগম), ছোটো চাচ্চু আর ছোটো কাকি (নাজমা বেবি)। আমার ছোটো চাচ্চু ছোটো কাকিকে যেমন ভালোবাসে তেমন আবার ভয়ও পায়। একারণেই ইফতি ভাইয়া ছোটো কাকিকে নিয়ে ছোটো চাচ্চুকে ভয় দেখায়। কিন্তু আমার ছোটো কাকি খুবই ভালো একজন মানুষ। খুবই মিশুক । ছোটো চাচ্চু ৪ বছর আগে ল শেষ করেছে। তাই তার বয়সও বেশি না। সবসময় ইফতি ভাইয়ার পিছে পড়ে থাকবে আবার ইফতি ভাইয়াও ছোটো চাচ্চুর পিছে আঠার মতো লেগে থাকবে। ছোটো কাকির আবার নিজের শো রুম আছে। যাই হোক,,
ড্রইং রুমে তাদের সবাইকে দেখে আমার মাথা হ্যাং হয়ে গেছে। তাদের হা হয়ে থাকার কারণটা হচ্ছে হঠাৎ করেই আমার এতো সাজ।
-তুই হঠাৎ এতো সাজলি কেনো হ্যা? তোকে কি আজকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে নাকি? (ছোটো চাচ্চু)
ছোটো চাচ্চুর কথা শুনে সবাই আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। উফফ এই ছোটো চাচ্চুও হচ্ছে ইফতি ভাইয়ের চামচা। ইফতি ভাইয়ার মতো গাঁ জ্বালানো কথা বলে।
– আরে আরে কি বলছো কি তুমি? আর তোমরা এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো হ্যা? তোমরা মনে হয় জানো না আমি মাঝেমধ্যেই শাড়ি টাড়ি পড়ে সাজি। এখানে হা হয়ে থাকার তো কোনো কারণ নেই (আমি)
আমার কথায় যেনো সবার মুখটা একটু হলেও ঠিক হয়েছে। ইলমা আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে। বুঝতে পেরেছি এর মনে হাজারো সন্দেও লুকিয়ে আছে। আমি ইলমাকে পাত্তা না দিয়ে রুমে গেলাম। আমার রুমে যাওয়া দেখে সবাই ভিষণ অবাক হলো। কারণ যখনই বাসায় ছোটো চাচ্চু বা ইলমা আসে তখনই আমি সব কাজ কর্ম বাদ দিয়ে তাদের সাথে আড্ডা মারতে বসতাম। কিন্তু আজকে আমার আচরণে তারা অবাক না হয়ে পারে নি।
রুমে এসে আমি সোজা বারান্দায় গেলাম। মনটা ভিষণ খারাপ লাগছে।কেনো সাজতে গেলাম ধুর। সেজে কি হয়েছে? শ্যামপুরুষটাতো আর আমায় দেখতে পাবে না। আমার রুমের বারান্দা দিয়ে বাসার সামনের রাস্তা খুব পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। বাসার সামনের দিকে নজর পরতেই দেখলাম একটা ছেলে পিছন দিকে ঘুরে ফোন কানে দিয়ে কার সাথে যেনো কথা বলছে। পরনে হালকা সবুজ রঙের শার্টের হাতা গোটানো। আর ব্লু রঙের জিন্স। পেছনের দিকে ঘোরায় চেহারাটা দেখা যাচ্ছে না। আচ্ছা? এটা আবার আমার শ্যামপুরুষ নয় তো? চিঠিওয়ালা লোকটি যেমনটি বলেছিলো ঠিক তেমনটিই ছেলেটির গায়ের পোশাক। আর কিছু না ভেবেই বারান্দা থেকে বেরিয়ে ড্রইং রুমের সকলের সামনে দিয়ে দৌড়ে গেলাম। সবাই আমার দৌড়ানোর পানে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। নিচে গিয়ে দেখলাম ছেলেটা এখনো পিছন দিকে ঘুরেই ফোনে কথা বলছে। লাজ-লজ্জা ভুলে দৌড়ে তাকে পিছন দিক দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। ছেলেটি ফোন হাতে নিয়েই আমার দিলে ঘুরে তাকালো। তার দিকে তাকাতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। হায় আল্লাহ এটা কি করলাম আমি? কাকে জড়িয়ে ধরলাম?এতো মানুষ থাকতে ই-ইফতি ভাই। আমি চোখ বড় বড় করে এখনো ইফতি ভাইয়ার দিকেই তাকিয়ে রইলাম। ইফতি ভাইয়া রাগী চোখে আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে দোয়া-দরুদ পড়ছিলাম। এখনি হয়তো ইফতি ভাইয়া ঠাস করে দুই গালে দুইটা চর লাগিয়ে দিবে। ইফতি ভাইয়ার সারা শব্দ না পেয়ে সাহস করে উপরে তাকিয়ে দেখলাম ইফতি ভাই আমার পিছে তাকিয়ে আছে। পিছনে তাকিয়ে দেখি ছোটো চাচ্চু আমাদের সামনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। ছোটো চাচ্চুর হাতে মোবাইল। তার মানে আমাদের ছবি তুলেছে ছোটো চাচ্চু? ইয়া মাবুদ এটা আমি কোনখান থেকে ফেঁসে গেলাম। একটা বাঁশ যেতে না যেতেই দেখি আরেকটা বাঁশ সামনে হাজির। ইফতি ভাইয়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি আমতা আমতা করে ছোটো চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। হয়তো আমার মতো তিনিও ছোট চাচ্চুকে এখানে আশা করে নি।
🍁🍁🍁🍁🍁
ছোটো চাচ্চু, আমি আর ইফতি ভাই এখন আমার রুমে বসা। বাসায় আসার পরই ছোটো চাচ্চু আমাকে আর ইফতি ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আমার রুমে বসালো। ইলমাও আসতে চেয়েছিলো কিন্তু ছোটো চাচ্চুর নিষেধে আসতে পারি না। আমি জানি এখন ছোটো চাচ্চু ইফতি ভাইয়াকে ব্ল্যাকমেইল করবে কিন্তু মাঝখান দিয়ে আমি ফেঁসে গেছি।একটা কাশি দিয়ে ছোটো চাচ্চু বলতে শুরু করলো,
– তো? কবে থেকে চলছে তোদের এইসব? (ছোটো চাচ্চু)
ছোটো চাচ্চুর কথায় আমার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। ইফতি ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তারও একই অবস্থা।
– এসব মানে? কিসবের কথা বলছো তুমি? ( ইফতি ভাইয়া)
– হয়েছে আর নাটক করতে হবে না। ইভার দৌড়ানো দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম কিছু তো একটা গড়বড় আছে। এজন্য সাথে সাথেই আমি নিচে চলে গেলাম ভেবেছিলাম হয়তো ইভার কোনো সমস্যা হয়েছে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম প্রেমিকা তার প্রেমিকের জন্য ছুটে গিয়েছে। (ছোটো চাচ্চু)
ছোটো চাচ্চুর শেষের কথায় আমি যেমন লজ্জা পেলাম তেমনি ভয় পেলাম। ইফতি ভাইয়ের দিকে তাকাতেই ইফতি ভাই ছোটো চাচ্চুর দিক থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো । ইফতি ভাইয়ার রাগী চোখ দেখেই আমি ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেলাম।
– দেখো ছোটো চাচ্চু। সবসময় যা দেখা হয় তা কিন্তু সঠিক হয় না। তুমি যা দেখে,,,,(ইফতি ভাইকে পুরোটা বলতে না দিয়ে)
– হয়েছে হয়েছে থাম তোরা। এখন আমার কাছে সব ক্লিয়ার হয়ে গেছে। ইভার এই সাজার কারণ হচ্ছে ইফতি। যখন ইভা দেখলো ইফতি আমাদের সাথে আসে নি তখনই ইভা মন খারাপ করে রুমে চলে গেলো। তারপর যখনই দেখলো ইফতি এসেছে দৌড়ে গেলো ইফতির কাছে। তাই তো ইভা? (ছোটো চাচ্চু)
এই রে। এবার আমি কি বলবো? কিভাবে বলবো যে আমি ওই রাক্ষসটার জন্য না বরং আমার শ্যামপুরুষের জন্য সেজেছি। উফফ ইভা তুই তো সব দিক দিয়ে ফেঁসে গেছিস। ইফতি ভাই তো তোকে গিলে ফেলবে।
– কি হলো কিছু বল? (ছোটো চাচ্চু)
– আসলে চাচ্চু,,, ( আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে ইফতি ভাইয়া মোবাইল বের করে কি যেনো একটা দেখিয়ে বললো)
– আমাদের কথা বাদ দাও ছোটো চাচ্চু। এটা কি? ( ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়া কথাটা বলেই বাঁকা হাসি দিলো। ছোটো চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে ভয়ে বারবার ঢোক গিলছে।
– আহারে ভাতিজা আমার। এটা তুমি কি করলা? কবে তুললা এইটা? ( ছোটো চাচ্চু)
– কেন গো ছোটো চাচ্চু। পছন্দ হয় নি? ডিএসএলআর দিয়ে তুললে বুঝি আরও সুন্দর লাগতো? ছোটো কাকিকে কি বলবো?তুমি যে আমাদের কলেজে গিয়ে মেয়েদের সাথে ধাক্কা খাও? (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথা এবার আমার কাছে পুরো পরিষ্কার হয়ে গেলো।

একবার ছোটো চাচ্চু ইফতি ভাইয়ার সাথে আমাদের কলেজে গিয়েছিলো কলেজ দেখতে। হটাৎ একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে ছোটো চাচ্চু নিচে পড়ে গেলো। মেয়েটা আর ছোটো চাচ্চু দুজনে এক নজরে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ছিলো তখনই ছবিটা ইফতি ভাইয়া তুলে।
– আরে ভাতিজা কেন তুই আমার পিছে পইড়া আছোছ। নাজমা বেবি দেখলে তো আমার চোদ্দো গুষ্টিতে আগুন লাগাইয়া দিবো ( ছোটো চাচ্চু)
– হুমম তা তো আমরা ভালো করেই জানি। ( ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়া একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ছোটো চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে রইলো। ছোটো চাচ্চু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
– বুঝতে পেরেছি। বল এখন আমায় কি করতে হবে? (ছোটো চাচ্চু)
– বেশি কিছু না। যেই ছবিটা তুলেছো সেটা মোবাইল থেকে একদম ডিলেট করে দিবে। তাহলে তোমার এই ছবির কথাও আমি ভুলে যাবো। নইলে তো তুমি জানোই এই ইফতি কি জিনিস। ( ইফতি ভাইয়া)
– আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে হয়েছে। আর ভয় দেখাস না ভাতিজা। এই যে দেখ দেখ তোর সামনেই ছবিটা ডিলেট করে দিলাম। (ছোটো চাচ্চু তার ফোন বের করে ছবিটা ডিলিট করে দিয়ে বললো)এখন তো ভাতিজা ওইটা ডিলেট কর। (ছোটো চাচ্চু)
– হুম করবো করবো। এতো অস্থির হচ্ছো কেনো?এই ছবিটার কথা না হয় ভুলে যাবো। তবে ডিলেট করবো না। কে জানো কবে এই ছবিটা আবার কাজে লাগে। ( ইফতি ভাইয়া)
– এই ভাতিজা এইটা একদম চিটিংবাজি। তাড়াতাড়ি ছবিটা ডিলেট কর নইলে কিন্তু,,(ছোটো চাচ্চু)
– নইলে কি হ্যা? ছবিটা গিয়ে দেখাবো নাকি তোমার আদরের বউ নাজমা বেবিকে?(ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথায় ছোটো চাচা তড়িঘড়ি করে দাড়িয়ে বললো,,
– এই না না। এই দেখ আমি যাচ্ছি। আর জীবনেও তোদের নিয়ে কোনো কথা বলবো না। (ছোটো চাচ্চু)
এই বলে ছোটো চাচ্চু চলে যাচ্ছিল।রুমের দরজার সামনে গিয়েই আবার বললো,,
– ভাতিজা ছবিটা কাউরে দেখাবা না তো? (ছোটো চাচ্চু)
– তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হবা নাকি এখনই গিয়ে নাজমা বেবিরে ছবিটা দেখাবো?(ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথা শুনেই ছোটো চাচা তাড়াতাড়ি দরজা লাগিয়ে চলে গেলো। এতোক্ষণ নীরব দর্শকের মতো তাদের কথা শুনছিলাম। ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম ইফতি ভাইয়া রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেনো আজ ওই চোখ দিয়েই আমায় গিলে ফেলবে।
– আজ তোর জন্য মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশে যেতো। মাথার বুদ্ধি – শুদ্ধি কি সব লোপ পেয়েছে নাকি যে রাস্তার মাঝে একটা ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছিলি? আর তোর সাহস তো কম না আমায় জড়িয়ে ধরেছিলি? (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথায় আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। আমি খাট থেকে উঠে টেবিলের উপর রাখা পানি পান করলাম। পানি পান করেই পিছনে ঘুরতে দেখি ইফতি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। ইফতি ভাইয়া রাগী চোখে এক নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ভয়ে এক পা দুপা করে পিছে যাচ্ছিলাম। আর ইফতি ভাইয়া এক পা দু পা করে আমার সামনে আসছিলো । এক সময় আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলো। এই বুঝি ইফতি ভাইয়া আমার গলা টিপ ধরবে। আমি চোখ বন্ধ করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,,
– স-সরি ইফতি ভাইয়া। আমি আ-আসলে ভুল করে তোমাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। এবারের মতো মাফ করে দাও প্লিজ। (আমি)
ইফতি ভাইয়া কিছু না বলে আমার মুখ তার এক হাতে নিয়ে উঁচু করলো।
– চোখ খোল (ইফতি ভাইয়া)
আমি ভয়ে এখনো চোখ বুজে আছি।
– আমি বলছি চোখ খোল (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার ধমকে তাড়াতাড়ি করে চোখ খুললাম। চোখ খুলেই দেখলাম ইফতি ভাইয়া ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখা কাজল হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমি কিছু বলতে যাবো তখনই ইফতি ভাই বললো,,
– হুশশশ। কোনো কথা না। (ইফতি ভাইয়া)
কথাটা বলেই ইফতি ভাইয়া তার হাতে থাকা কাজল পরম যত্নে আমার চোখে দিয়ে দিতে লাগলো। অন্যের হাতের কাজল আমি দিতে পারি না। দিলেই চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করে। কিন্তু ইফতি ভাইয়া এতো সাবধানে আমার চোখে কাজল দিচ্ছিলো যে মনেই হচ্ছিলো না আমি কাজল দিচ্ছি। কাজল দেওয়া শেষে ড্রেসিং টেবিলে কাজলটা রেখে ইফতি ভাইয়ার পকেট থেকে রুমালটা বের করে আমার চোখের আশেপাশে লাগা কাজল মুছে দিয়ে বললো,,

“ও রমণী
তোমার কাজল কালো চোখজোড়া লাগে ভালো,
দীঘলকেশীর মায়ায় জড়িয়ে আঁধারেও দেখি আলো।
খুঁজতে চাই তোমার মনের পথ,
ভালোবেসে সন্ন্যাসী হতে আমি একদম সৎ।
তোমার জন্য হতে পারি আমি বেহুলা,
সকল বাঁধা পেরিয়ে মোরা দু’জনে হবো উতলা।
এই প্রেয়সীর প্রেম কি করবে গ্রহণ,
বাজাবো আমি বাঁশি হয়ে তোমার মোহন।
কিসের সমাজ যেথায় নাই প্রেম,
মিথ্যে প্রেমের নাম সবাই খেলে চলেছে গেইম।
তোমার মনে দাও গো আমায় ঠাঁই,
তোমার মতো সুন্দর রাঁধে বলো কোথা পাই।”

চলবে,,,,,,🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here