কাজললতা পর্ব ১৯

0
511

#কাজললতা
#লেখিকা_ইভা_আক্তার
#পর্ব_১৯

————————————————————————-
একসময় এই জায়গায় এসেছিলাম আমার সেই চিঠি দেওয়া আসল প্রেমিক পুরুষকে দেখতে। আর আজ এসেছি তার সাথে সব সত্য কথা খোলাখুলিভাবে বলতে। আজ শুভকে জবাব দিতে হবে কেনো ইফতি ভাইয়ার রূপ নিয়ে আমাকর সাথে ধোঁকাবাজি করেছে। আজ সব প্রশ্নের জবাব শুভকে দিতে হবে। একারণেই শুভকে ফোন করে দেখা করতে বলেছি।
– ইভা।
নিজের নামে কারো ডাক শুনতেই পেছনে ফিরে শুভকে দেখতে পেলাম। শুভকে দেখতেই মুখের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।
– হটাৎ এই সময়ে এখানে ডাকলে যে।
– তোমার সাথে আজ কিছু দরকারি কথা আছে একারণেই।
– দরকারি কথা? এমন কি দরকারি কথা যে কলেজে না গিয়ে দেখা করতে বললে?
– শুভ আমি তোমার কাছ থেকে সব সত্যিটা জানতে চাই। কেনো তুমি আমার সাথে প্রতারণা করেছো সেটা জানতে চাই। কেনো তুমি আমার নকল চিঠি দেওয়া প্রেমিক সেজে আমাকে নিজের ভালোবাসার কথা বলেছো সেটাও জানতে চাই।
কথাগুলো হয়তো শুভ কখনোই আশা করে নি। আমার কথায় শুভর মুখ একদম শুকিয়ে গিয়েছিলো।
– ইভা আমার কথা শুনো।
– শুনছি তো বলো। আজ সব কথাই শুনবো। শুনতে হবে। জানতে হবে কেনো তুমি এতো বড় চাল চেলে আমাকে আর ইফতি ভাইয়াকে আলাদা করতে চেয়েছো।
– ইফতি ভাইয়া ইফতি ভাইয়া কি পেয়েছো ওই ইফতি ভাইয়ার মধ্যে? কি আছে ওর মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই? আমি কি তোমাকে কম ভালোবেসেছি?
– আমি তোমার কাছে শুধুমাত্র সত্যিটা জানতে এসেছি। এছাড়া আমি তোমাকে কেনো কৈফত দিতে আসি নি।
– হ্যা আমি মিথ্যে বলেছি। তোমাকে যে চিরকুট দিতো সে আমি না বরং সে ইফতি। ও আমাকে চিরকুট গুলো পৌঁছে দিতে বলতো আর আমি দিতাম।
– তাহলে কেনো মিথ্যে বলেছো আমায়? কেনো বলেছো ওই চিরকুটগুলো তুমি আমাকে দিয়েছো।
শুভ খানিকটা আমার কাছে এসে বললো,
– কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসে ফেলেছিলাম ইভা। ইফতির মুখে আজীবন তোমার যতটা প্রশংসা শুনেছিলাম তোমাকে সামনাসামনি দেখে তার থেকেও বেশি আকৃষ্ট হয়েছি আমি। ইভা ইফতির থেকে আমি কোনো অংশে কম না। হয়তো বা ইফতি আমার থেকে বেশি সুন্দর কিন্তু ইফতির থেকেও আমার বাবার অনেক টাকা আছে।
– সেটআপ। আমাকে টাকার লোভ দেখাচ্ছো তুমি? তুমি আমাকে ভালোবাসলেও মিথ্যে কথা বলে নিজের প্রেমে আমাকেও ফাঁসিয়েছো। আর তাও কিভাবে ভাবলে তোমার মতো একজন প্রতারককে আমি ভালোবাসবো? ইম্পসিবল। অন্যের ভালোবাসা কেড়ে নিয়ে কখনোই কোনো মানুষ সুখী হতে পারে না শুভ। আমি তোমাকে ঘৃণা করি শুভ। অনেক বেশি ঘৃণা করি।
কথাগুলো বলে চলে যেতেই শুভ আমার হাত ধরে ফেলে।
– ইভা এতো বড় ভুল কখনোই করো না। আমি ব্যতীত তুমি যদি অন্য কারো দিকে নজরও দেও তাহলে তাকে আমি শেষ করে দেব। সে যতেই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ইফতি হোক না কেনো।
শুভর কথায় আমি প্রচন্ড ভয় পেলাম। এদিকে ওর হাত দিয়ে আমার হাত চেপে ধরায় ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলাম।
– আহ শুভ লাগছে ছাড়ে বলছি।
আমার কথা যেনে শুভর কান পর্যন্ত পৌছালো না। হুট করে কেউ একজন এসে শুভর হাত ধরে ঝাড়ি মেরে আমার হাত ধরলো। সামনে তাকিয়ে দেখি লেকটা ইফতি ভাইয়া। ইফতি ভাইয়া শুভকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,
– পাবলিক প্লেসে কোনো রকমের সিনক্রেট করতে চাই না। নাহলে আজ ইভার হাত ধরায় তোর ওই হাত কেটে টুকরো টুকরো করে দিতাম।
– ইফতি তুই ভুল করছিস। অনেক বড় ভুল করছিস। একারণে কিন্তু তোর পচতাতে হবে বলে দিলাম। এখোনে সময় আছে ইভাকে ছেড়ে দূরে চলে যা।
ইফতি ভাইয়া তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,
– এই আশা তুই মৃত্যুর সময় করলেও লাভ হবে না। আমার কাজললতাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তার মৃত্যু নিশ্চিত তার সামনে এসে দাঁড়াবে।
ইফতি ভাইয়া শুভর কিছুটা কাছে গিয়ে বললো,
– লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়ে রাখলাম। ইভার আশেপাশেও যদি তোকে দেখি তাহলে ভেবে নিবি সেদিনই তোর শেষ দিন। ওকেই মাই বেস্ট ফ্রেন্ড শুভ?
কথাগুলো বলেই ইফতি ভাইয়া আমার হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে যাচ্ছিল আর তখনই পেছন থেকে শুভ চিৎকার করে বললো,
– ইফতি তুই অনেক বড় ভুল করছিস। এর মাশুল তোকে দিতে হবে বলে দিলাম। ইভা শুধুই আমার। আর ওকে যেকোনো মূল্যে আমি আমার করে নেব।
——————————————————————————-
সময়টা মে মাসের মাঝামাঝি। চারিদিকে রমজান মাসের একটা আলাদা গন্ধ। ফজর থেকে মাগরিবের সময়টা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় মানুষ অনাহারে থাকার পর আসরের সময়টায় মানুষের মধ্যে এক অসহায় চেহারা নিবদ্ধ থাকে। আমারে একই অবস্থা ছিলো। বিছানায় শুয়ে ঝিমচ্ছিলাম তখনই কলিং বেলের শব্দ কানে আসলো। খুব কষ্টে দূর্বল শরীর নিয়ে বিছানা থেকে উঠে দরজা খুলে থমকে গেলাম। সামনে দাড়িয়ে রয়েছে একজন সুদর্শন পাঞ্জাবী পড়া যুবক যার চেহারায় রোজা রাখার জন্য দূর্বলতা ফুটে উঠলেও সুদর্শনতা যেনো বিন্দুমাত্র কমে নি। কিভাবে পাড়ে এই ছেলেরা মেকাপ না করেও এতো সুদর্শন থাকতে? আমার থমকে যাওয়ার মূল কারণ ছিলো আমার বাজে চেহারা আর উষ্কখুষ্ক চুল। এরকম বাজে অবস্থা নিয়ে আজ পর্যন্ত কখনোই ইফতি ভাইয়ার সামনে পড়ি নি। আল্লাহ জানে ইফতি ভাইয়া আমাকে নিয়ে কিনা কি ভাবছে। আরও অবাক হলাম যখন দেখলাম ইফতি ভাইয়া তার মামার বাসায় ইফতারের দাওয়াতে না গিয়ে আমাদের বাসায় আসলো। মাথায় দেওয়া ওড়নাটা মুখের কাছে এনে মুখ ঢেকে বললাম,
– ভেতরে এসে ইফতি ভাইয়া।
ইফতি ভাইয়া আমার কথায় ভেতরে আসতেই দরজা লাগিয়ে দিলাম। রান্নাঘর থেকে আম্মু এসে বললো,
– আরে ইফতি তুই এখানে? তোদের না তোর মামার বাসায় ইফতারে যাওয়ার কথা ছিলো?
– হুম ছিলো তো মেঝো কাকি। শুক্রবারে মেডিকেলটা অফ ছিলো যার কারণে একটা দিন ছুটি পেয়েছিলাম। আর এই রোজা রেখে ওতোদূর জার্নি করার মতো পরিস্থিতি আমার নেই তাই ভাবলাম তোমাদের বাসা কাছে আছে যেহেতু তাই সেখানেই যাই। আর বাকি সকলে মামার বাসায় গেছে দাওয়াতে।
– যাক তাহলে ভালোই করেছিস। সবসময় তো পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত। এই মেঝো কাকির কথা কি আর মনে থাকবে নাকি? ডাক্তার হলে তো যতটুকু মনে আছে ততটুকুও মনে থাকবে না।
ইফতি ভাইয়া আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– উফফ কি যে বলো না তুমি। এই ইফতি যতদিন বেঁচে আছে ততদিন তোমাদেরকে ভুলবে না। আর তোমাকে কিভাবে ভুলি বলো তো? তুমি তো খুব আমার আরেক মা ।
ইফতি ভাইয়ার কথায় আমি থমকে গেলাম। আমার মতো আম্মুরও একই অবস্থা।
– আরেক মা মানে?
– মানে কাকিরাতো মায়ের মতোনই হয়। এখন তোমাকে কি বলা যায় তাই আরেক মা বলেই ডাকলাম।
ইফতি ভাইয়ার কথায় আম্মু হেসে দিলো। আর এদিকে আমি ভ্রু কুচকে ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে চুপি চুপি সেখান থেকে মাথায় ঘোমটা দিয়ে রুমে চলে গেলাম। চেহারার যা অবস্থা ইফতি ভাইয়া দেখে নিশ্চিত ভেবেছে কোনো হাজার বছর আগের মিসকিন দীর্ঘদিন যাবৎ না খেয়ে আছে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখটা ভালো করে ধুয়ে রুমে আসতেই দেখলাম ইফতি ভাইয়া বিছানায় বসে মোবাইল স্ক্রল করছে। আমাকে দেখে বললো,
– কি খবর তোর? পড়ালেখার কেমন চলছে?
ইফতি ভাইয়ার এই একটা সবচেয়ে বিরক্তিকর কথা। সবসময় পড়ালেখা আর পড়ালেখা নিয়ে জিজ্ঞেস করাটা যেনো ইফতি বাইয়ার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
– যেমন চলার তেমনি চলছে।
আমার কথায় ইফতি ভাইয়া ভ্রু কুচকে বললো,
– মানে কি হ্যা? ফেল করার প্ল্যান করছিস নাকি?
– আমি কিন্তু তা বলি নি।
– তুই না বললেও আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি। দেখ তোর এইসব নাটক আমি দেখতে চাই না। আমার একটাই কথা, যে কোনো মূল্যেই হোক তোকে মেডিকেলে চান্স পেতে হবে। তোকে একজন স্পেশালিষ্ট হার্টের ডক্টর হতে হবে।
– হার্টের ডক্টর? কেনো?
– কারণ যাতে করে তুই আমার হার্ট চেকআপ করে বুঝতে পারিস যে এই মুহুর্তে আমার হার্ট কি চাইছে।
– চোখের ডাক্তার হয়েও যে কিনা মানুষের চোখের ভাষা বুঝতে পারে না তাহলে হার্টের ডাক্তার হয়ে মানুষের হার্ট পরীক্ষা করে লাভ কি আমার?
ইফতি ভাইয়া বিছানায় শুয়ে বললো,
– কে বলেছে আমি তোর চোখের ভাষা বুঝতে পারি না? আমি সবই বুঝতে পারি। যেমন এই মুহুর্তে তুই আমার বুকের উপর মাথা রেখে শুতে চাইছিস তাই না?
মানুষ কি করে এতোটা বিব্রতকর কথা বলতে পারে তা হয়তো ইফতি ভাইয়াকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। ইফতি ভাইয়ার কথায় আমার মুখ হা হয়ে গেলো। ইফতি ভাইয়া এক লাফে বিছানা থেকে উঠে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
– এতে হা করার কি আছে? তোর ইচ্ছে হলে তুই আমার বুকে শুতেই পারিস। কারণ এই ইফতি পুরোটাই তার কাজললতার।
শেষের কথাটা ইফতি ভাইয়া আমার কানে ফিসফিস করে বললো যার ফলে আমার হৃদস্পন্দন একশগুণ বেড়ে গেলো। কথাগুলো বলে ইফতি ভাইয়া চলে যেতেই আবারো ফিরে এসে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– আজকে তোকে পুরোই খালি খালি লাগছে।
কথাটা বলেই ইফতি ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আর আমি দেয়ালের সাথে চিপকে থ মেরে দাঁড়িয়ে ইফতি ভাইয়ার কথার মানে খুঁজে বেড়াচ্ছি।
————————————————————————————–
ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজ পড়ে বিছানায় শুয়ে ঝিমচ্ছিলাম। ইফতি ভাইয়া আর বাবা গেছে মসজিদে নামাজ পড়তে। ড্রেসিং টেবিলে রাখা কাজলটা চোখে পড়তেই আমার চোখ কপলাে উঠে গেলো। আজ চোখে কাজল না দেওয়ায় কথাটা যে ইফতি ভাইয়া বলেছিলো এখন তা স্পষ্ট বুঝতে পারছি। বিছানা ছেড়ে উঠে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাজলটা হাতে নিতেই হুট করে ইফতি ভাইয়া এসে কাজলটা টান মেরে আমাকে তার সামনে ঘুরালো। কাজলের মুখটা খুলেই ইফতি ভাইয়া আমাকে কাজল দিয়ে দিতে লাগলো। ইফতি ভাইয়া একটু একটু করে মুচকি হাসছে আর আমি মুগ্ধ নয়নে তার দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে রয়েছি। এক চোখে কাজল দিয়ে ইফতি ভাইয়া আমার দিকে তাকাতেই আমি চোখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলাম।
– চোখ কেনো সরিয়ে নিলি? তুই চাইলে আমার দিকে সারাটাদিন তাকিয়ে আমাকে দেখতে পারিস। তাছাড়া তোর তো আবার অভ্যাস আছে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার।
– কবে আবার আমি তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলাম?
ইফতি ভাইয়া একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,
– আমার কিন্তু সব কথা স্পষ্টভাবে মনে আছে। যেদিন রাতে তোর বাসায় এসে তোকে নীল শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখেছিলাম সেদিন রাতেই তো তুই আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলি।
– কখন?
– যখন আমি রুমে বসে ডায়রি লেখছিলাম আর তুই বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছিলি।
ইফতি ভাইয়ার কথায় আমার চোখ কপলাে উঠে গেলো। তারমানে সেদিন ইফতি ভাইয়া আমাকে দেখেছিলো যে আমি তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলাম।
– তারমানে তুমি আমাকে দেখতে পেয়েছিলে?
– তোর পাশের রুমে যেই রুমে আমি সেদিন রাতটা থেকেছিলাম সেখানে একটা বড় আয়না আছে যেটায় সোজাসোজি তোর বারান্দা বরাবর দেখা যাচ্ছিল। বুঝতে পেরেছিস?
ইফতি ভাইয়ার কথায় আমি লজ্জায় একধরনের বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলাম।
– যাই বলিস না কেনো? সেদিন তোকে নীল শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখে আমার রাতে বাড়ি থেকে ছুটে আসাটা সার্থক হয়েছিলো।
– কি? মানে তুমি সেদিন মিথ্যা বলেছিলে যে তুমি বন্ধুর বাড়ি থেকে এসেছো?
ইফতি ভাইয়া আমার দিকে এক পলকে তাকিয়ে বললো,
– হুম। সেদিন আমি বন্ধুর বাড়ি নয় বরং নিজের বাড়ি থেকে শুধুমাত্র তোকে নীল শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখতে চেয়েছিলাম। দেখতে চেয়েছিলাম আমার স্বপ্নের নীল কাজললতাকে।
ইফতি ভাইয়ার কথাগুলো যেনো আমাকে বাকরুদ্ধ করে দিলো। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ইফতি ভাইয়া চমার দুচোখে কাজল দেওয়া শেষ করে বললো,
– আজকে তাহলে মেঝো চাচ্চুর বাসায় আসাটা সার্থক হলো।
– মানে?
– এই যে আমার উদ্দেশ্য ছিলো তোদের বাসায় এসে যেকোনো মূল্যেই হোক না কেনো তোর চোখে কাজল নিজ হাতে কাজল দিয়ে দেব। কতদিন হয়ে গেছে তোকে নিজ হাতে কাজল দিয়ে দেই না। ইচ্ছেটা তাহলে আজ পূর্ণ হয়ে গেলো।
ইফতি ভাইয়ার কথা যতই শুনছি ততই অবাক হচ্ছি। ছেলেটা আমাকে কাজল দিয়ে দেবার জন্য তার মামার বাসায় না গিয়ে আমার বাসায় চলে এসেছে। সত্যি পাগল একটা। ইফতি ভাইয়া আমার কানের কাছে থাকা চুলগুলে ফু দিয়ে বললো,

“তোমার কাজল চোখে যে গভীর
ছায়া কেঁপে ওঠে ওই,
তোমার অধরে ওগো সেই
হাসির মধু-মায়াটুকু কই…?”

ইফতি ভাইয়ার কবিতার অর্থ বুঝতে পেরে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললাম। আমার দেখাদেখি ইফতি ভাইয়াও মনোমুগ্ধকর একটা হাসি দিলো।
———————————————————————————
প্রিয় মানুষ থাকলে মানুষের জীবনের সময়টা খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় বুঝি?জানি না। তবে ইফতি ভাইয়া আমার জীবনে প্রেম নামক নেশা নিয়ে আসার পর থেকে যেনো আমার দিনগুলো দ্রুতগতিতে চলছে।
শুধুমাত্র ইফতি ভাইয়াকে এক পলক দেখার জন্য কলেজের টাইমের আগেই কলেজ থকে বেরিয়ে বড় চাচ্চুর বাড়ি চলে যাই ইলমার সাথে একসাথে কলেজে যাওয়ার বাহানায়। কিন্তু ইফতি ভাইয়াকে বাড়িতে না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে ইলমাকে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। প্রিয় মানুষকে দেখার আনন্দ যেনো কভু শেষ হয় না তেমনি আমারও হলো না। বাড়ি থেকে বের হতেই ইফতি ভাইয়াকে দেখলাম বাইক থেকে নেমে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। এ্যাস কালারের শার্টের উপর মেডিকেল ড্রেস আর ব্লু জিন্সে যেনো ইফতি ভাইয়াকে একদম রাজকুমারের মতো লাগছিলো।
– কিরে ব্যস্ত বানু আজ এখানে যে?
পৃথিবীর সকল আজব আজব নাম ইফতি ভাইয়ার মুখেরই শোনা যায় যেমনটা আমাকে সম্বোধন করে ডাকলো।
– ব্যাস্ত বানু কি ভাইয়া? (ইলমা)
– মানে আমাদের ইভা শেষ কবে এই বাড়িতো পা রেখেছিলো তা কি তোর মনে আছে?আমার তো মনে হয় মেডিকেলে আমি না বরং আমাদের ইভা পড়ে।
ইফতি ভাইয়ার কথা শুনে রাগে ইলমার দিকে তাকাতেই ইলমা প্রসঙ্গ চেন্জ করে বললো,
– আচ্ছা আচ্ছা এবার ভাইয়া আমাদের কলেজে নামিয়ে দেও সবসময় তো আমরা একাই যাই। (ইলমা)
– তোদের পা আছে? (ইফতি ভাইয়া)
-কি?(আমি)
– বলছি যে তোদের পা আর তোর কি কান সাথে আছে? (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথার মানে আমরা দুজন খুব ভালোমতো বুঝতেই রেগে সেখান থেকে চলে যেতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর পিছনে তাকিয়ে দেখি ইফতি ভাইয়া গাড়ি নিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।
– হয়েছে রাগি বানুরা তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে আয়।
কলেজের টাইম চলে যাচ্ছিল বলে আমি আর ইলমা গাড়িতে উঠে বসলাম। লুকিং গ্লাসপ তাকিয়ে দেখি ইফতি ভাইয়া কিছুক্ষণ পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে যার ফলে আমি পড়লাম আরেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। কলেজের সামনে নামতেই ইলমা বিদায় জানিয়ে দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো। আমিও ইফতি ভাইয়াকে বিদায় জানিয়ে চলে যেতেই নিলেই ইফতি ভাইয়া আমার হাত টেনে কানে ফিসফিস করে বললো,
– কাজললতা কি তার হবু বরকে এতোই বোকা ভাবে যে সে তার দুইজোড়া আঁখি কাজলে ভরিয়ে তার হবু বরকে দেখানোর জন্য আসবে আর তার হবু বরের চোখে তা পরবে না এতোটাই কি বোকা তার হবু বর?
ইফতি ভাইয়ার কথায় তার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকানোর পর ইফতি ভাইয়া আবারো বলতে লাগলো,
-তার এই প্রেমিক পুরুষ প্রতিটা মুহুর্তে তার কাজল দেওয়া চোখ দেখে মুগ্ধ হয়ে যায় সেটা কি কাজললতা জানে?
আমি বেশ খানিকটা লজ্জা নিয়ে সেখান থেকে চলে যেতেই ইফতি ভাইয়া আবারো ডেকে বললো,
– ইভা শুনে যা।
– হু
– ফাহিম কি তোকে এখন আর বিরক্ত করে?
– না কিন্তু তুমি ফাহিমকে কি করে চিনলে?
আমার কথায় ইফতি ভাইয়া বাকা হাসি দিয়ে বললো,
-আশা করি শুধুমাত্র ফাহিম না বরং কলেজের কোনো ছেলেই তোর দিকে তাকানোর সাহস পাবে না।
ইফতি ভাইয়া কথাটা বলেই গাড়িতে ঢুকে স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। আর আমি নিঃস্তব্ধ হয়ে সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। এতোদিন যে ছেলেগুলো আমাকে বিরক্ত করার পর আর তাদের দেখা গেলো না তাহলে তার পিছে ইফতি ভাইয়া ছিলো?
—————————————————————————————–
কলেজ থেকে এসে ফ্রেশ হয়েই নিজের ক্লান্ত শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে দিলাম। চারিদিকে গ্রীষ্মের মৌসুম। আর এক মাস পরই শুরু হবে বর্ষাকাল। বর্ষাকাল আমর ওতোটা পছন্দের না হলেও খানিকটা পছন্দ কেননা বর্ষায় মৌসুমে প্রায়ই বৃষ্টিতে ভেজা যায়। দুচোখের পাতায় ঘুমের ছিটেফোঁটা না থাকায় মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে সোজা ইফতির ভাইয়ার আইডিতে গেলাম। ইফতি ভাইয়ার অসাধারণ প্রত্যেকটা ছবি দেখে আমি প্রতি মুহুর্তে ক্রাশ খেয়ে যাচ্ছিলাম। বিভিন্ন স্টাইলের ছবি যেনো আমাকে ইফতি ভাইয়ার প্রেমে আবারো ফেলছিলো। ইফতি ভাইয়ার মেসেন্জারে মেসেজ করতেই দেখলাম লাস্ট ইফতি ভাইয়া ২ মাস আগে লাইনে এসেছিলো। এটা আর নতুন কি? তবে ইফতি ভাইয়াকে কিছুদিন ধরে ওয়াটসআপে লাইনে দেখা যায় আর লাইনে আসার সাথে সাথেই প্রথমে আমাকে মেসেজ দেয়। ইফতি ভাইয়ার প্রফাইলে ঘুরছিলাম তখনই কারো ফ্রেনৃড রিকোয়েস্ট পাঠানোর নোটিফিকেশনে তার প্রফাইলে গিয়ে দেখি প্রফাইলের নাম ছিলো ” Suhashini Chowdhury “। প্রফাইলে থাকা নামটা দেখেই আমি চমকে গেলাম। এটা আবার সেই ডাইনি মেয়েটা না তো? ব্যাপারটা পরিষ্কার করার জন্য তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে প্রফাইল পিক দেখেই শিওর হলাম যে এটা সেই সুহাসিনী আপু যে আমাকে মিথ্যে বলে ইফতি ভাইয়ার থেকে দূরে সরিয়ে নিতে চেয়েছিল। প্রচন্ড রাগে প্রফাইল থেকে বের হতে গিয়েও গেলাম না। নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে সুহাসিনী আপুর প্রফাইলের খানিকটা নিচে যেতেই আমার চোখ অশ্রুতে টলমল করে উঠলো। এটা কি দেখলাম আমি? নিজের চোখকে যেনো বিশ্বাস করতে পারলাম না। কেনো আমার সাথেই সবসময় এমনটা হয়? কি ক্ষতি করেছি আমি? কেনো সবাই আমার সাথে প্রতারণা করে?

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,💚

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here