কাঁটা মুকুট,পর্ব:২

0
520

#কাঁটা_মুকুট ||২য় পর্ব||
#Ipshita_Shikdar
আমি সবার সাথে আনন্দ ও আড্ডায় মেতেছিলাম, ঠিক তখনই সবার সামনে ঠাশ করে এক চড় পড়ল আমার গালে। আমি স্তব্ধ সেখানেই।
“তুই সবার সামনে মদ গিলছিস, ছেলেদের সাথে রঙ্গতামাশা করছিস, অর্ক না করায় তাকেও শুনিয়েছিস! ছিঃ! তোকে দেখেই লজ্জা হচ্ছে আমার।”

আমার চোখজোড়া লজ্জায়, রাগে অশ্রুতে টইটম্বুর হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে, যথাসম্ভব চেষ্টা করছি বাধ দেওয়ার। কেঁদে দিলাম তো হেরে গেলাম। আর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ঘৃণ্য মানুষটির সামনে মোটেও হারতে চাই না।

চোখ তুলে সামনের মানুষটির দিকে তাকিয়ে বললাম,
“সেম টু ইউ মি. মাহিন। আপনাকে দেখলে আমারও প্রচুর ঘৃণা লাগে। রঙ্গতামাশা না আপনার বউয়ের লাগে টাকা কামাতে। আমি বুঝিই না এত নির্লজ্জ একটা মানুষ কী করে হয়! এতকিছুর পরও, নিজের বোনকে স্বার্থরক্ষায় খুন করার পরও কী করে আবার মুখ উঠিয়ে সবার সামনে আসতে পারে?”

বলেই ঘৃণায় একদলা থুঃথুঃ ফেললাম মেঝেতে। মাহিনের লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে, তবে তার উত্তর দেওয়ার জোঁ নেই। লজ্জা আড়াল করতেই কপট রাগ দেখিয়ে আবার হাত তুলতে নেয় কিন্তু মন তা গায়ে লাগার আগেই ধরে ফেলে।

“ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিটস্ মি. মাহিন। নাইলে ঘেটি ধরতে আমার সময় লাগব না। তাছাড়া আপনে হয়তো ভুইলা গেছেন আপনার সাইড ব্যবসার ফান্ডিং আমার। যেই কম্পানিতে চাকরি করেন সেটার মেইন ক্লাইন্টও আমিই।”

এবার তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম অর্কের দিকে। চাপা রোগ সহিত হেসে হাতের বোতলটা সামনে এগিয়ে বললাম,

“এটা যে নন-এলকাহোলিক এনার্জি ড্রিংক আপনি খুব ভালোভাবেই জ্ঞাত সেই বিষয়ে, তবুও কেন সবাইকে বাড়িয়ে-চড়িয়ে এসব বললেন… আপনার আমার সাথে কীসের শত্রুতা আমি জানি না। তবে কাজটা মোটেও ঠিক করেননি, ইউ আর গন্না পে ফর দিস।”

ঐ মুহূর্তেই ছাদ থেকে প্রস্থান করলাম। মাহিনও লজ্জায় মাথা নুয়ে ছাদ থেকে বেরিয়ে আসে। কয়েক মুহূর্ত আগেও যেই ছাদটা কোলাহলময় ছিল, তা এখন সম্পূর্ণ নীরব।

নিবিড় এগিয়ে যায় অর্কের দিকে। সে বেশ সমীহা করে এবং ভয় পায় অর্ককে। তবে আজ প্রিয়জনের কষ্টে সব ভুলেই তিরিক্ষ মেজাজে বলে,

“কাজটা তুমি ঠিক করো নাই ভাইয়া। মেয়েটা এই মানুষটার জন্য জীবনে এমনিতেও কম কষ্ট পায় নাই, তার চরিত্রে দাগ পড়েছে এই মানুষটার জন্য। সেই মানুষটাকে দিয়ে তুমি তাকে সবার সামনে অপমান…! ছিঃ!”

অর্ক এতক্ষণ ফ্যালফ্যাল নজরে সবটা দেখছিল। সে নিছকই মজার ছলে কাজটা করেছিল, ভেবেছিল মাহিন হয়তো মৃদু বকার মাঝে মনকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। যা তার বড় ভাই করত।

এভাবে যে মারধর বা এত বড় একটা দৃষ্টিকটু ঘটনার রচণা হবে তার বিন্দুমাত্র ধারণাও ছিল না। সে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল নিবিড়ের দিকে। খেয়াল করল দূরে মনের মা ময়না দাঁড়িয়ে। তার চোখ-মুখ অতীবা শক্ত, যেন খুব কষ্টে নিজেকে আটকে রেখেছেন।

“সরি আন্টি, বিশ্বাস করুন আমি ভাবতে পারিনি এমন কিছু হবে। আমি তো ফান করতে… আ’ম সো সরি।”

“না, আব্বাজান, তোমার দোস না। আমার নসিবই খারাপ নাইলে কী আর এমন পোলা পেটে আইতো! তুমি থাকো, আমি আইতাছি মাইয়াডারে দেইক্ষা।”

তার করুণ গলা, অনুতপ্ত চেহারা সত্যিই ময়নার মন গলিয়েছে না কি শুধুই তার মা-বাবার প্রতি থাকা বিশুদ্ধ শ্রদ্ধাবোধ থেকেই আশ্বাস দিলেন বুঝতে পারল না অর্ক। তবে একটা বিষয়ে চমকিত হলো সে। তা হলো- আপন ভাইবোন মন ও মাহিন, তাদের মাঝে এমন ঘৃণার সম্পর্ক কী করে? সে এর উত্তর কার কাছে পাবে তার জানা, শুধু সব জানতে যতক্ষণ।

এদিকে মন বেডরুমের দরজা লক করে রাগে রীতিমতো রাগে ফোঁপাচ্ছে। ঘরের সব উলোটপালোট করে, ভাঙচুর করে রাগ দমানো অদম্য চেষ্টায় ব্যতিব্যস্ত সে। কাঁচের জিনিস ভাঙতে যেয়ে হাত-পায়ের এদিক-ওদিক কেটে যাচ্ছে তাই অবস্থা। । অবশেষে বিধ্বস্ত ঘরে অগোছালো নারী বসে পড়ে, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।

“আমি কলঙ্কিনী, আপু মৃত, সবই ঐ লোকটার জন্য! আমাদের জীবন ধ্বংসের কারণ ঐ লোকটা। আমি সব কষ্ট সুধে-আসলে উশুল করব!
এই মন শিকদার প্রতিটা কষ্টের, প্রতিটা অশ্রুর, প্রতিটি অন্যায়ের হিসাব রাখে। গণিতে আমার ভুল হবে না। আর মি. অর্ক আজাদ বললাম না ইউ হ্যাভ টু পে। আমি কিন্তু যেমনে তেমনে নিব সব সুধে-আসলে নিব। কাল তোমার এমন অবস্থা করব যে…”

বলেই উন্মাদের মতোন শব্দ করে হেসে উঠে সে। তার চেহারায় অন্যরকম এই পৈশাচিকতা ফুটে উঠেছে।

পরদিন অর্ক ঘুম থেকে উঠে আয়নায় চোখ পড়তেই দেখে তার সখের দাড়ি মাঝখান দিয়ে ট্রিম করা। তার অতি প্রিয় মাথা ভর্তি বড় বড় কোঁকড়া চুলগুলোকেওও অনেক অগোছালো ভাবে ছোট ছোট করা হয়েছে। দেখেই তেঁতে উঠে অর্ক। হুট করেই তার দরজা খুলে একঝাঁক ছেলেমেয়ে প্রবেশ করে তার অবস্থা দেখে শব্দ করে হেসে দেয়।

আরও রেগে যায় সে কিন্তু তার মা বারবার বলেছে এখানে রাগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই বহু কষ্ট নিজেকে দমিয়ে রাখে সে। তবে প্রতিশোধ নেয়নি এমন না। রাইসা থেকে জেনেছিল বসার ঘরের শেলফে রাখা জড়ি মাখানো কাচের চুড়িগুলো মনের খুব প্রিয়, সেটাকে খুব সুন্দর করে ভেঙে মন রুমে রেখে আসে সে।

এরপর থেকে মন আরও বেশি অপছন্দ করে তাকে। হয়তো অপছন্দের তালিকায় তার নামটা বহু উর্ধ্বেই। যদিও শোধ মন এই কাজেরও নিয়েছে। এরপর তাদের সম্পর্কটা পুরোটাই ছিল শোধ-প্রতিশোধের, যার সমাপ্তি হয়নি, হবেও না হয়তো।

বর্তমানে,
কারো ধপাস করে কুমড়ার মতোন বিছানায় পড়ায় অতীতের স্মৃতিচারণ থেকে বেরিয়ে আসে মন। পাশে তাকিয়ে দেখে আনিসা। মেয়েটার স্বভাব বেশ ভয় পায়িয়ে দেওয়ার মতোন। বুকে চিড়ে স্বস্তির শ্বাস বেড়িয়ে আসে। আনমনেই ভাবে,

“না, এই মানুষটাকে কোনোদিনও মনে জায়গা দিতে পারব না। যার জন্য এতটা অপমানিত হয়েছি আমি সেদিন, অবশ্য আজও তো কম অপমানিত হলাম না? নিজের নজরেই নিচু হয়ে গিয়েছি আজ, আমি যে কি না নিজেকে ওয়াদা করেছিলাম সবকিছুর উর্ধ্বে নিজের ইচ্ছেকে মূল্যায়ন করব, সে আজ কারো হুমকিতে বিক্রি হয়ে বিয়ে করে ফেললাম। মি. আজাদ খুব সখ না আমাকে বিয়ে করার? ঠিক আছে, স্বাগতম আমার কাঁটাময় জীবনে! প্রতি মুহূর্ত রক্তাক্ত হওয়ার জন্য তৈরি থাকুন।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here