কঠিন প্রেমের গল্প পর্ব 4

0
989

কঠিন প্রেমের গল্প (চতুর্থ পর্ব)
ফারাহ তুবা

কয়েকদিন ধরে আমি নীতুর দিকে তাকাতে পারছি না। তাকালেই মনে হয় সে আমার আর হাফসার ব্যাপারটা বুঝে ফেলবে। হাফসা আমার সাথে ফেসবুকে নেই। তবুও আমি তাকে খুঁজে বের করে ব্লক করে দিলাম। যদিও হাফসার ফেসবুকে তেমন কিছুই নেই। প্রোফাইল পিকচারে বড় একটা গাছের ছবি। প্রোফাইলে দুইটা ছবি দেখা যাচ্ছে। দুইটা ছবিই জীবনের দুঃখ নিয়ে কোটেশন। হয়তো সে এখন খুবই দুঃখে আছে।

হাফসা খুব হাসিখুশি মেয়ে ছিলো। অবিবাহিত উচ্ছ্বল একটি মেয়ে। অফিসের সবাই ওকে বেশ পছন্দ করতো। তেমন কাজের ছিলো না। তবে ও সম্ভবত বেশ ভালো কারো রেফারেন্সে এসেছিলো। কারণ চাকরি যাওয়ার ভয় ওর ছিলো না কখনোই। সব অবিবাহিত ছেলেরাই ওর সাথে কথা বলার সুযোগ খুজতো। কিন্তু কেন জানি হাফসা ঘুরে ফিরে আমাকে নানা ঈঙ্গিত দিতো। এরপর কি থেকে যে কি হলো একসময় আমাদের বেশ গাঢ় সম্পর্ক হয়ে গেলো। বৃষ্টির দিনে ওকে বাড়িতে রাখতে যেতাম, ফিল্ড ভিজিটে একসাথে যেতাম আর অফিসে কাজের বাহানায় ঘন্টার পর ঘন্টা গল্পের কথা তো বাদই দিলাম। প্রায়ই হাফসা বাসায় আসতো। নীতুকে আর বাচ্চাকে গাদা গাদা উপহার দিতো। সবার অলক্ষ্যে বেশ ভালো সময় কেটেছে আমাদের।

এতদিন পর সেই সম্পর্কটা অবৈধ লাগছে। কেন লাগছে জানি না। সেইসময় পাপ পূণ্যের হিসাব থেকে অনেক দূরে ছিলাম আমি। এখন নীতুর দিকে তাকালেই মনটা খারাপ লাগছে। মনের এই লুকোচুরির মধ্যেই আমার হঠাৎ একদিন জ্বর চলে আসলো। আমার বেশ ভালোই লাগলো ব্যাপারটাতে। এখন নীতুর কাছে আসা সহজ হবে। নীতু আমার সেবা যত্ন করবে আর আমি ধীরে ধীরে ওর প্রশংসা করে কাছে চলে যাবো।

আজব ব্যাপার যে নীতু আমার তেমন সেবা যত্ন করছে না। খাবার, ঔষধ এসব দিচ্ছে কিন্তু এর বেশি কিছু না। একদিন রাতে জ্বরের ঘোরে মনে হলো তলিয়ে যাচ্ছি। আমি নীতুকে ডাক দিলাম। ও মনে হলো খুব বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো। ওকে কোন রকমে বললাম যে অবস্থা খারাপ আমার। ও বিরক্তের সাথে আমার এক বন্ধুর বউকে ফোন দিলো। সে ডাক্তার। ঔষধ শুনে দারোয়ানকে দিয়ে আনিয়ে আমার পাশে রেখে খেতে বললো। বলে রান্নাঘরে গিয়ে কি জানি খুটখাট করতে লাগলো। এরপর আর কোন আওয়াজ পেলাম না। জ্বর সারতে ভোর হয়ে গেলো। ভোরে বিছানা থেকে উঠে নীতুকে খুঁজতে লাগলাম। সে দেখি আমার মা-বাবার রুমে মেঝেতে বিছানা করে ঘুমাচ্ছে। আমি আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলাম। নীতুর বদলে মা উঠে বসলেন। বিরক্ত হয়ে বললেন,

“ডাকছিস ক্যান গাধা?”

“নীতু এখানে কেন?”

“তুই অসুস্থ হলে নীতু ছেলেদের ঘরে শুতো আগে। কিন্তু ওরা এখন বিরক্ত হয়।”

“নিজের মায়ের উপর বিরক্ত হয়?”

“আরে গাধা! তোর উপর বিরক্ত হয়। অসুখ হলেই তুই যে আলাদা ঘুমাতে চাস এটাতে বিরক্ত হয়। তাই নীতু এখন ওরা যেন টের না পায় এভাবে আমাদের ঘরে ঘুমায়।”

আমার বেশ ভালো লাগলো বিষয়টা। নীতু যে ছেলেদের চোখে আমাকে সম্মানিত রাখতে চায় এটা খুবই আনন্দের বিষয়। ছোট একটা বিষয় কিন্তু আমার মনটা খুবই ফুরফুরে করে দিলো। আমি আস্তে করে নীতুর পাশে শুয়ে পড়লাম। অনেকদিন পর আনন্দে চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি পড়লো। আমার এত সুন্দর ভরপুর পরিবার আছে ভাবতেই ভালো লাগছে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here