এক_চিলতে_রোদ Part_55

0
2050

এক_চিলতে_রোদ Part_55
#Writer_Nondini_Nila

যখন জ্ঞান ফিরলো নিজেকে হসপিটালের বেডে পেলাম। চোখ খুলে চোখের সামনে একজন সাদা পোশাক পরিহিত নার্স কে দেখতে পেলাম। তিনি আমার পাশে দাঁড়িয়ে কি যেন করছিলো আমাকে তাকাতে দেখেই কাকে যেন ডাকতে গেলো ছুটে। তখন রিফাত ভাইয়া ও লতা এসে উপস্থিত হলো। ভাইয়া আমাকে দেখে বললো,

‘ ঊষা কেমন আছো এখন?’

আমি কথা বললাম আস্তে করে।

‘ ভালো।’

মাথায় ব্যাথা করছে। হাতে কিছু লাগানো আমি হাত নাড়াতে পারলাম না।
লতা আমার দিকে খুশি হয়ে তাকিয়ে আছে। রিফাত ভাইয়া আমার সাথে কথা বলে রেস্ট নিতে বলে চলে গেলো।আমি লতাকে ডেকে আমার কাছে থাকতে বললাম।

দেয়াল ঘড়ি টানানো আছে। আমি সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম বারোটা তিন বাজে। তারমানে আমি দের ঘন্টা অজ্ঞান ছিলাম। ভাইয়া কোথায় আমাকে হসপিটালে কে নিয়ে এসেছে।
আশেপাশে ভাইয়াকে না দেখেই আমি লতাকে ডেকে জিজ্ঞেস করার জন্য।

রিফাত ভাই এগিয়ে এসে বললো, ‘ বেশি কথা বলো না ঊষা।’

আমি ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম।
রিফাত ভাই চলে গেলো লতা আমার পাশে বসে ফ্যাচফ্যাচ করে বললো,,

‘ আল্লাহ কতো কাঁদছি তোর জন্য আমি। আল্লাহ তোরে ঠিক করে দিছে কতো চিন্তা করছি জানিস। শয়তানি ফারিয়াকে তো আমার খুন করতে ইচ্ছে করছে।’

আমি বললাম, ‘ ইহান ভাই ক‌ই?’

লতা বললো, ‘ ভাইজান তো বাসায়?’

‘ তুই কি একাই এইখানে আছিস?’

‘ হুম।’

‘আমাকে হসপিটালে আনলো কে?’

‘ ইহান ভাইজান আনছে।’

‘ ওহ।’

আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ভাইয়া আমাকে একা হসপিটালে রেখে চলে গেছে। আপনা আপনি চোখে জল চলে এলো।
আমার চোখে পানি দেখে লতা বললো,

‘ কাঁদছিস কেন? ভাইজান নাই বলে!’

আমি কিছু বললাম না। লতা নিজে থেকেই বললো,

‘ ভাইজান তো এখানেই ছিলো। কিন্তু বড় ম্যাডামের ওই অবস্থায় তাকে যেতেই হলো।’

আমি চমকে উঠলাম,’ ওই অবস্থা মানে? কি হয়েছে চাচির ?’

লতা মুখটা খুব দুঃখী ভাব করে কিছু বলতে যাবে তখন নার্স চলে এলো আর লতাকে জোর করে বের করে দিলো। আমার হাতে একটা ইনজেকশন পুশ করে দিলো আমি ঘুমিয়ে পরলাম। জানা হলো না চাচির বিষয়টা‌।

ইহান ঝড়ের বেগে বাসায় এসেছে। ইলিনা বেগম বিছানায় বসে আছে পা ধরে। পা দুটো লাল টকটকে হয়ে ফুলে গেছে পাশে বসে আছে ইমা। ইমা মাকে দেখছে। ফারিয়া নাই ইহান মাকে একনজর দেখে ফারিয়ার কাছে গিয়ে এক চর দিয়ে দিলো। তারপর মার কাছে এসে বললো,

‘ তোমাকে হসপিটালে নিতে হবে চলো।’

‘কিভাবে যাব আমি তো নরতেই পারছি না।’

আমি নিয়ে যাচ্ছি বলে মাকে উঠাতে যায় কিন্তু ইলিনা বেগম চেঁচিয়ে উঠে।

‘ ধরিস না আমাকে। দূরে থাক পা খুব ব্যাথা করে আমার।’

‘না ধরলে নিয়ে যাব কি করে?’

ইমা মাকে দেখতে দেখতে বললো, ‘ ওই মেয়েকে তুমি ছেলের ব‌উ করতে চেয়েছিলে। সেই তোমার কি করলো দেখো।পর কে আপন করতে গেলে যা হয়।’

ইমা ধমকাতে ধমকাতে বলছে আর পা দেখছে। ইলিনা বেগমের পায়ের ব্যাথা কথা বলতে পারছে না তিনি বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।ইমা মাকে একটা ট্যাবলেট খাইয়ে দিলো তারপর তাকে হসপিটালে নেওয়ার কথা বললো। চাচা আর ভাইয়া ধরে চাচি কে নিয়ে হসপিটালে এলো।

আমাকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলো। যখন চোখ খুললাম তখন সকাল হয়ে গেছে। আর আমার হাত ধরে বসে আছে ইহান ভাইয়া। চোখ খুলে তার চিন্তিত মুখটা দেখলাম।আমার বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো। ভাইয়াকে কি রকম লাগছে।

আমি তাকাতেই ভাইয়ার মুখটা ঝলমলে লাগতে শুরু করলো। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ ঊষা’

আমি তাকিয়ে আছি ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আমাকে তো তুই ভয় পাইয়ে দিছিলি। আমার কথা কেন শুনলি না কেন চোখ বন্ধ করেছিলি বল।’

আমি এই অবস্থায় ও হেসে ফেললাম, ‘ আপনি এখনো এজন্য আমাকে বকছেন।’

‘ হুম বকছি। তুই আমাকে এতো কষ্ট কেন দিস বল।’

‘আমি কি দিতে চাই নাকি। হয়ে যায় তো।’

‘ কেন হবে?’

‘ চাচির কি হয়েছে?’

ভাইয়া মলিন মুখ করে বললো, ‘ আম্মুর পা বোধহয় ভেঙে গেছে।’

‘ কিহহহহ? এটা কিভাবে হলো?’

আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম। সাথে চেঁচিয়ে উঠলাম।
ভাইয়া আমার হাত ধরে আমাকে রিল্যাক্স করে বললো,

‘ উত্তেজিত হচ্ছিস কেন? আমাকে বলতে দে।’

ভাইয়ার কথা শুনেও আমার উত্তেজনা কমছে না। মাথা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে তারপর এসব কি করে হলো ভাবছি।কিভাবে চাচির পা ভাঙলো?

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

‘ বলেন।’

‘আম্মুকে পায়ে আঘাত করা হয়েছে।’

‘কি বলছেন কে করেছে এই কাজ?আপনি কি চাচির উপর রেগে এসব?’

‘ স্টপ দিছ ঊষা‌। যত‌ই রাগ হোক আমি এসব কখনো না।’

‘তাহলে?’

‘ফারিয়া করেছে।’

আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ফারিয়া এসব কিন্তু কেন?রাগে ভাইয়া কাঁপছে।

আমি কাঁপা গলায় বললাম, ‘ চাচির কি অবস্থা?’

‘পা ভেঙে গেছে।’

বুকটা ধক করে উঠল আমার। চাচির জন্য।
ভাইয়া আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু খেলো। তোর জন্য খাবার নিয়ে আসি দাঁড়া।

আমি বললাম, ‘ চাচি কি এই হসপিটালে?’

‘ হুম ইমা আপু দেখছে তাকে। ‘

‘ ভাইয়া আর আপু এখানকার?’

‘ হুম।’

‘ চাচির পা ভালো হবে তো।’

‘ সিওর নয় বয়স্ক মানুষ তো। আম্মু তোকে এত কষ্ট দেয়। তাও তুই আম্মুর জন্য এত চিন্তা করছিস কেন?’

‘কি সব বলছেন? যত‌ই কষ্ট দিক অত্যাচার করুক না কেন তাকে আমি মা ভাবি। ছোট থেকে চাচির কাছে মানুষ হয়েছি। ভালোবাসুক আর নাই ভাসুক না কেন? তাকে আমি সারা জীবন মায়ের জায়গায় রাখবো।’

ভাইয়া আমার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললো, ‘তুই এত নরম বলে সবাই তোকে ইচ্ছে মত কষ্ট দিতে পারে।’

আর কথা না বলেই আমাকে রেখে চলে গেলো একটু পর হাতে খাবার নিয়ে এলো। খাবার বলতে সুপ নিয়ে এলো। আমি কখনো এই সুপ খাইনি তাই এর টেস্ট জানিনা। খাবার দেখে ভাইয়ার হাতে খেতে লাগলাম। আমার খুব খিদে পেয়েছে আর আমি একদম খিদে সহ্য করতে পারিনা।

এক চামচ মুখে দিতেই বুঝলাম এটা খেতে খুব বাজে। আমি মুখ কালো করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘ এটা তো খেতে খুব বাজে।এটা আমি খাবো না‌।’

‘ এটাই খেতে হবে। ডাক্তার এটাই খেতে বলেছে।’

‘ অন্য কিছু দিন। ভাত আর আলু ভর্তা হলেও হবে‌’

‘ না এটাই খেতে হবে।’

আমি মুখ কালো করে খেতে লাগলাম। ভাইয়া হা না করলে জোর করে ঠেলে দিচ্ছে। আমি লতার কথা জিজ্ঞেস করলাম।

‘ ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।’

‘ ওহ।’

খাওয়া হতেই আপু এলো ইমা‌।

‘ এখন কেমন আছিস?’

‘ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?’

‘ আমি ভালো আছি। ওই মেয়ের হাতে কিভাবে মার খেলি নিজে কিছু বলতে পারলি না।’

আমি কিছু বললাম না। আপু আমার সাথে কথা বলে ইহান ভাইকে বললো,

‘ ওই মেয়ের এতো বড় সাহস কি করে হলো।আমার পরিবারের সবার গায়ে হাত তোলে?’

‘ আমি ওর বাবা মাকে ডেকেছি কাল তারা আসবে। কিন্তু তার আগেই এতো সব। ও মেন্টালি সিক। আগেও আমার জন্য নিজের ক্ষতি করেছে। এবার এখানে এসেছে সবাই না জানিয়ে। আমাকে বলেছে মিথ্যা আমি ফোন করে সব জানতে পারলাম। তারা তাদের মেয়ের যা করার করবে।’

‘ এতোটা ডেস্পারেট মানুষ জীবনে দেখি নাই। একজন খুনি একদিন দুজনের ক্ষতি করে বসলো। এদের থেকে সাবধান। ওকে আমার পুলিশের দিতে ইচ্ছে করছে।’

বলতে বলতে ইমা আপু চলে গেলো।

ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার গালে হাত দিয়ে নরম কন্ঠে বলল,

‘ আই এম সরি ঊষা‌। আমি থাকতেও তোর খেয়াল রাখতে পারলাম না‌।’

আমি ভাইয়া হাতের উপর হাত দিয়ে বললাম, ‘ আপনি কেন সরি বলছেন এখানে আপনার কি দোষ।’

‘ তোর কিছু হলে আমি মরে যেতাম।’

আমি ভাইয়া মুখের উপর হাত দিয়ে বললাম, ‘ মরার কথা বলবেন না একদম। আমার তো কিছুই হয়নি।’

ভাইয়া আমার কপালে চুমু খেলো।

।।।।

ঊষাকে যখন জ্ঞান চলে যায়। ইহান তো পাগল পায় হয়ে যায়।‌ ঊষাকে কোলে তুলে ড্রাইভার নিয়ে হসপিটালে চলে যায়। ঊষার চাচা সে ভয় পেয়ে যায়। সাথে সাথে ইমাকে কল করে সব জানিয়ে নিজেও হসপিটালে চলে আসে। খবর পেয়েই ইমা আর রিফাত হসপিটালে চলে আসে। রিফাত ঊষার ট্রিটমেন্ট করতে লাগে। ইমা কিছুক্ষণ থেকে নিজের বাসায় আসে। এসে মায়ের সাথে ঝগড়া করতে লাগে আর ফারিয়ার কাছে গিয়ে ওকে বকতে লাগে। যে ওদের বাসায় থেকে এত বড় সাহস তার
কি করে হলো করে ওদের বাড়ির মেয়েকে মারে।
ফারিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বকা হজম করে কিন্তু চোখ লাল হয়ে যায়। কখনো ফারিয়া কারো কাছে মার খায়নি। কেউ ওর সাথে উঁচু গলায় কথা বলেনি‌ আর আজকে ওকে সবাই বকে যাচ্ছে। বিষয়টা একদমই হজম হচ্ছে না ওর।ইমা চলে যেতেও রাগে গজগজ করতে করতে ইলিনা বেগমের সামনে আসে। লতা সেটা দেখতে পেয়ে পেছনে পেছনে যায়। ফারিয়া ইলিনা বেগমের কাছে এসে তার সাথে তর্ক করতে লাগে। ইরিনা বেগম বলে,

‘তুমি ঊষার গায়ে হাত দিলে কোন সাহসে আমি যা করার করতাম তুমি ওই ভাবে আঘাত করবে কেন?’

এই কথা শুনে ফারিয়ার মাথায় রক্ত উঠে যায়। আর ফারিয়ার রাগে ইলিনা বেগম কে বসা থেকে টেনে ফ্লোরে ফেলে দেয়। ব্যা মুচাড়ে আছড়ে পড়ে তার পা ভেঙে গেছে। তার সর্বশক্তি দিয়ে চিতকার করে ওঠে। রাগের মাথায় কাজটা করলেও ফারিয়া বুঝতে পারো কাজটা সে ঠিক করেনি। ফারিয়া বর্তমানে নিজের রুমে মাথার চুল খামচে ধরে বসে আছে। রাগ উঠলে ওর কোন দিকে খেয়াল থাকে না।
#চলবে

(রি-চেক করা হয় নি আজকে তাই ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here