এক_চিলতে_রোদ Part_5
#Writer_Nondini_Nila
চোখ বন্ধ করে এক দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। তখনই ইমা আপু আমাকে ডেকে উঠলো,
আপুর ডাক শুনে চকিতে তাকালাম।
আপু ডেকে উঠলো আবার উঁচু গলায়,, এই ঊষা তুই ওইখানেই দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আয় এখানে আয়।
আমি চোখের পানি আড়াল করে মুছে তাকালাম।আপুর ডাকটা জুড়েই হয়েছে তা সবার দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেলাম। ভাইয়ার সব বন্ধুরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে ঘাড় বাঁকিয়ে। আমি সবার এমন তাকানো দেখে লজ্জায় মাথা নীচু করে ফেললাম। আড়চোখে তাকিয়ে দেখিয়ে ইহান ভাইও আমার দিকে তাকিয়ে আছে ব্রু কুঁচকে।
আপু আমায় হাত বাড়িয়ে ডাকছে আমি সবার দিকে একবার লজ্জা মিশ্রিত ভাবে তাকিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে আপুর পাশে এসে দাঁড়ালাম। আপু আমাকে টেনে বসিয়ে দিল নিজের পাশে
তখন একটা মেয়ে ইমা আপুর উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
আপু মুচকি হেসে বলল, আমি তার চাচাতো বোন কথাটা শুনে আমার চোখটা ছল ছল করে উঠলো।আপু তাও নিজে আমাকে বোন বলে পরিচয় দিলে কেউ তোমাকে বোন বলে পরিচয় দেয় না।
আপু বসেছে ভাইয়ের পাশেই তারপর আমি তো আমি সবার দিকে তাকিয়ে। ভাইয়ের দিকে তাকালাম দেখি ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি হকচকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।
ভাইয়ের একটা বন্ধু বলে উঠলো,, ইহান ভাইয়া কি গান বলতে বলল। ভাই নাকি অনেক সুন্দর গান গাইতে পারে। বিদেশে থাকতে নাকি তাদের গান রেকর্ড করে অনেকবার পাঠিয়েছে। তো এখন নাকি গান গেয়ে শোনাতে হবে কিন্তু এখন ভাই রাজি হচ্ছে না। সবাই অনেক বলার পর জরা জড়িতে ভাইয়া রাজি হয়ে গেল।
ভাই একটা হিন্দি গান গাইলো।আমি আগে কখনো ভাইয়ের গান শুনি নি আজকে ফাস্ট শুনলাম। কি অপূর্ব কন্ঠ ভাইয়ার। মুগ্ধ হয়ে ভাইয়ের গান শুনছিলাম। গালে হাত দিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম পুরোটা সময় খুব সুন্দর করে গান গায় ভাইয়া। এতক্ষণের খারাপ লাগাটা নিমিষেই দূর হয়ে গেল। ভাইয়ার কন্ঠে গান শুনে। কিন্তু হিন্দি গানের আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। বাংলা হলে ভালো হতো। সেটা তো আর বলতে পারিনা কিন্তু হিন্দি গান ও শুনতে ভালো লেগেছে।
গান গাওয়া শেষ করে ভাইয়া আমার দিকে তাকাল আমি গাল হাতে দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম সেটা দেখে ভাইয়া ঠোঁট বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুললো।ইমাপুর ফোন বাজতেই ফোন নিয়ে আমাদের মাঝখান থেকে উঠে গেল।
আমি আর ভাইয়ার মাঝে এখন আপুর জায়গা ফাঁকা। আমি চুপ করে বসে আছি আর সবার দিকে তাকাচ্ছি।সবাই কতো শত কথা বলছে ভাইয়ার গানের প্রশংসা করছে।ভাইয়ার সবার সাথে কথা বলছে অনেক। আপু কথা বলতে বলতে আবার এলো আর উল্টো কাজ করলো আমাকে তার জায়গায় ঠেলে আমার জায়গায় বসে পরলো ফোনে কথা বলছে এখন ও।
আপুর ধাক্কায় আমি ইহান ভাইয়ার ডান হাতের বাহুর সাথে ধাক্কা খেলাম সাথে আমার বাম হাত গিয়ে পরলো ভাইয়ার কুলের উপর।
ইহান ছোটবেলার একটা কথা বলে হাসছিল সেটা হলো ওর ফ্রেন্ড নাহিদ ছোটবেলায় একটা মেয়ের উপর ক্রাশ খেয়ে ছিল।আর দুর্ভাগ্যবশত সেই মেয়েটা এসে ইহান কে প্রপোজ করেছিল। সেই কথা বলছে আর সবাই হাসছে আর নাহিদ মুখ গোমড়া করে বসে আছে। তখনই কারো সাথে ধাক্কা খায় আর কারো হাতে কোলের উপর পড়ে। আবছা অন্ধকার আলো ছাদে নিচের দিকে তাকিয়ে একটা হাত আবিষ্কার করে এইটা যে মেয়েদের হাত নরম তুলতুলে হাত। হাতটা অসম্ভব রকমের কাঁপছে ইহান নিজের হাত নিচে থেকে উঠিয়ে হাত দিয়ে স্পর্শ করে পাশে তাকায় ব্রু কুঁচকে। ওর পাশে তো ইমা ছিলো এটা কি ইমার হাত। পাশে তাকিয়ে ঝটকা খায়। তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে দেয়। ঊষা বসে ওর পাশে।
আমি হাত ছাড়া পেয়ে তারাতাড়ি হাত গুটিয়ে একটু সরে বসি। ইহান ভাই আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। আমি মৃদু সরে আসতে করে ভাইয়াকে বলি,,,
সরি ভাইয়া আসলে ইমাপু এমনভাবে ধাক্কা দিছিলো আমি তাল সামলাতে পারিনি।
ভাই আমার দিকে তাকিয়ে ছিল ইটস ওকে বলে আমার গল্পে মেতে উঠল। আর আধা ঘন্টার মত গল্প চললো সাড়ে এগারোটায় দিকে সবাই গল্পটা মাস্তি শেষ করে নিচে নেমে গেল। সবাই চলে গেছে আমি যাইনি কারণ চাচী বলেছে। সব আমার ঠিক করে নিয়ে যেতে হবে।ইমা আপু 5 মিনিটের জন্য আমার পাশে এসে বসেছিল আবার ফোন নিয়ে নিচে নেমে গেছে। ইহান ভাইয়া বন্ধুদের সাথে চলে গেছে।
ইহান নিচে এসে বন্ধুদের থেকে বিদায় নেয়। তারপর নিজের রুমে এসে ঠাস করে শুয়ে পড়ে।ক্লান্ত লাগছে ওর চোখ বন্ধ করতেই। চোখের সামনে ঊনার মুখটা ভেসে ওঠে তাড়াতাড়ি চোখ খুলে উঠে বসে।
ঊষার মুখ ভেসে উঠল কেন তাও আবার মলিন মুখ।
হঠাৎ করে মনে হলো উষার তো পায়ে ব্যথা ও তৈ আমাদের সাথে ছাদে বসে ছিল। নেমে এসেছে কি? নিচে দেখলাম না তো।ইহানের অবচেতন মন কেন যেন ঊষার জন্য চিন্তা করতে লাগল ও বিছানা থেকে নেমে টাউজার আর গেঞ্জি পড়ে রুমে থেকে বেরিয়ে এলো। তারপর সোজা ছাদে চলে গেল । দেখতে পেলে ঠিকি ঊষা নিচে বিছানো চাদর ভাঁজ করছে আর খুরিয়ে হাটসে।
ইহান এবার ফোন আনিনি ফোনটা বিছানায় রেখে এসেছে তাই লাইট ধরতে পারল না। অন্ধকারে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
আর মৃদু স্বরে বলল ঊষা।
আচমকা কারো কন্ঠ শুনে চমকে পেছনে তাকালাম অন্ধকারেই বুঝতে পারলাম ইহান ভাই। বুকে হাত দিয়ে উপরে নিচে থুথু দিয়ে ভাঁজ করে হাতে নিলাম চাদর।
ভাইয়া আপনি এখানে?
তুই একা কেন ইমা কোথায়?
আপু তো অনেক আগেই চলে গেছে।
অন্ধকারে না ভয় পাস তাহলে একা কেমনে রইলি।
ভাইয়ার কথা আমি মৃদু হেসে বললাম,
একা ভয় পাই কিন্তু আমার দেখায় থাকতে হবে। আমার তার সঙ্গী নাই। ভয় কে জয় করছি দেখেনা আগেরবারের মতো ভয় পাচ্ছি না। সব জায়গায় তো আমাকে একাই থাকতে হবে যার বাবা-মা একা করে তাকে ফেলে পরপারে চলে গেছে তার জীবন তো একাই কাটাতে হবে।
ঊষার কথা শুনে ইহান থমকে গেল। অন্ধকারের ঊষার দিকে তাকিয়ে আছে এটুকুই বয়সে মেয়েটার কতোই না কষ্ট হচ্ছে। ঊষা কেমন করে যেন কথাটা বলল যা ইহানের বুকে গিয়ে লাগলো কথাগুলো। ওর চোখের সামনে ঊষা নিচু হয়ে ফ্লাক্স হাতে নিয়ে খুরাতে খুরাতে সামনে দিকে যেতে লাগলো
ইহান একদৃষ্টিতে ঊষার যাওয়া দেখছে।ওর সামনেই ঊষা সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল ও সেই দিকে ছাদের মাঝামাঝিতে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইল।ইহান ঊষার থেকে চোখ সরিয়ে ছাদের কর্নারে রেলিং এ হাত রেখে অন্ধকারের দিকে তাকালো।
আমি সবকিছু নিচে রেখে নিজের রুমে চলে এলাম দরজা চাপিয়ে বিছানায় এসে বসলাম গ্লাস পানি ভড়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে। পায়ে দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম রক্ত বের হচ্ছে আবার অনেকক্ষণ হাটা হয়েছে যে। হাতের আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙুল চেপে ধরে রইলাম। যাদের রক্ত বের হতে না পারে সিঁড়ি দিয়ে আসার সময় আবার উস্টা খেয়ে ছিলাম।
বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে হাত দিয়ে আঙুল চেপে ধরে। হুট করে মনে হল কেউ আমার হাতটা আঙ্গুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। তাড়াতাড়ি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আমার সামনে ইহান ভাইয়া বসে আছে। ভাইয়া আমার হাত সরিয়ে দিয়ে নিজের ডান হাত আমার পায়ের দিকে এগিয়ে আনলো। তা দেখে তাড়াতাড়ি আমি পা সরিয়ে নিলাম। আর বিশ্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,
কি করছেন কে ভাই আপনি এখানে কেন?
ভাইয়া কিছু না বলে আমার পা টেনে নিয়েছে হাতের উপর নিল। আঙুল এর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,,, ইস কি অবস্থা হয়েছে পায়ের এ অবস্থা নিয়ে এত হাঁটাহাঁটি করলি।
আমি সেসব কিছু না বলে বললাম ভাইয়া পা ছারুন আপনি আমার পা ধরেছেন কেন ?
এবার ভাইয়া রেগে আমার দিকে তাকালো চোখ গরম করে বলল,,,
চুপ একটা কথা শুনতে চায় না আমাকে আমার কাজ করতে দে।
ভাইয়ার ধমক শুনে আমি কথা অফ করে দিলাম।ভাইয়া আমাকে চুপ করতে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল গুড।
আমি ভীতু চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।
ভাইয়া একটা মলম নিজের পকেট থেকে বের করে আমার পা নিজের হাঁটুর উপর রেখে খুব যত্ন সহকারে মলম লাগিয়ে দিল। আমি হাঁ করে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
ইহান ঊষার পায়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছিলো। ঊষা পা দেখেও থমকে যায় কত সুন্দর পা। মলম লাগানো শেষ করে ঊষার দিকে তাকানোর সময় হুট করে ঊষার পায়ের উপরের দিকে চোখ যায় অনেকটা ওপরে উঠে গেছে ছেলোয়ার।
ঊসার ফর্শা পা দেখা যাচ্ছে। ঊষার মুখের থেকেও ওর পা বেশি সুন্দর।
আমি ভাইয়ার তাকানো দেখে সোজা নিজে পা টেনে নেয়।
ভাইয়া সেটা দেখে তাড়াতাড়ি উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
#চলবে
(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!ইহান আর ঊষা কে কেমন লাগছে গল্পটা কেমন লাগছে অবশ্যই যথার্থ মন্তব্য দিবেন।আপনাদের ভালো ভালো কমেন্ট দেখে যেন আমি আরো ভালো করে লেখার অনুপ্রেরণা পায়। ভুল হলে অবশ্যই ধরিয়ে দেবেনভালো না লাগলে অবশ্যই বলেন আপনাদের ভালো লাগানোর জন্যই তো লেখা তো আপনারা এসব বললে আমি কিছুই মনে করব না। উল্টো নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করব ধন্যবাদ সবাই আমার ভালোবাসা নিবেন।