এক_চিলতে_রোদ Part_14

0
2142

এক_চিলতে_রোদ Part_14
#Writer_Nondini_Nila

বাসায় আসার পর থেকে দিয়া আপু মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বসে আছে। ওই সময়ের কথাটার জন্য তিনি একটু সন্তুষ্ট না‌। আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছি।
তারপর এগিয়ে গিয়ে বললাম,,
আপু আপনার কি মন খারাপ?
উনি আমার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে তাকালো কারন কথা বলার সময় আমি ছিলাম।
দেখলে না ইহান আমাকে কিভাবে বড় আপু বলল। তার পর আমার মন খারাপ থাকবে না তো কি ভালো থাকবে। তুমিই বলো আমাকে দেখে কি ওর থেকে বড় লাগে।
আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি কি বলবো ভাবছি? মনে মনে বলছি দেখতেই তাই লাগুক আপনি তো বড়। তাই বড়‌ই লাগে কিন্তু মুখে অন্য কথা বললাম,
না না আপু আপনাকে একদম বাচ্চা লাগে মনে হয় আপনি আমার ছোট হবেন।
আমার কথা শুনে আপু হাঁ করে তাকালো অবুঝ মুখ করে বলল,
এতো ছোট লাগে?
চরম অবাক হয়ে বলল।
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। আপু হাঁ করে তাকায় র‌ইলো আমি কোন মতে হাসে চেপে লাফিয়ে বেরিয়ে এলাম। তখন ঠাস করে ইহান ভাইয়ার সাথে ধাক্কা লেগে পরে যেতে নিলাম কিন্তু ভাগ্য ভালো এবার ও ভাইয়া আমাকে ধরছে। আমার ডান হাত ধরে টেনে সোজা করে ধমক সুরে বলল,
এতো লাফালাফি করিস কেন এখন‌ই তো যেতি পরে।
ভাইয়ার কড়া গলায় কথা শুনে চুপ করে মাথা নিচু করে আছি।
আচ্ছা মন খারাপ করতে হবে না। আমার একটা কাজ কর‌।
আমি মাথা উঁচু করে বললাম কি?
আমার জন্য কফি করতে পারবি?
আমি কিছু একটা ভেবে আচ্ছা বলতেই ভাইয়া কফি নিয়ে আসতে বলে চলে গেল।
আমি বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিলাম তারপর নিচে এসে রান্না ঘরে চলে গেলাম। একটা কাজের লোক আছে নাম ঝুমা খুব ভালো। তার সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছে তার থেকে রান্না ঘরের সব চিনে নিয়েছি। তাই কফা করতে টাইম লাগলো না‌। ইমা আপু রিফাত ভাইয়ার রুমে গেছে। সবাই যার যার আছে রাতে আর কোথায় বা থাকবে।
ভাইয়ার রুমে এসে দেখি বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে আছে। হাতে ফোন। আমি না করতেই উঁচু গলায় ভেতরে আসতে বললো।
আপনার চা ভাইয়া।
ভাইয়া আমার হাত থেকে কফি নিয়ে উঠে বসলো।
আমি চলে আসতে গেলে পেছনে ডাকলো,
ঊষা……
ভাইয়ার ডাক শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পরলাম।
তারপর পেছন ঘুরে বলল,
জি আর কিছু লাগবে?
ভাইয়ার আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল না যা তুই।
আমি আচ্ছা বলেই ছুটে চলে এলাম। বাইরে এসে হাঁপাতে লাগলাম ভাইয়ার কাছাকাছি থাকলে আমার এমন কেন লাগে যেন দম বন্ধ হয়ে মারা যাব। হার্টবিট এতো জোরে জোরে লাফায় যেন বেরিয়ে আসবে।
হাত পা কাঁপে কেন এমন হয় কেন?
আমি লজ্জায় লাল নীল হতে হতে আসছি তখন কেউ বলল,
হাই ঊষা কোথায় গিয়েছিলে?
মাথা উঁচু করে দেখি আমার সামনে রিহান ভাই দাঁড়িয়ে।
আমি হকচকিয়ে গেলাম। উনার হাবভাব আমার ভালো লাগে নে কেন করে তাকায় থাকে।
আমি জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,,
ভাইয়াকে কফি দিতে গেছিলাম।
উনি এগিয়ে এসে মুখ গোমড়া করে বলল,
তুই কেন বাসায় ঝুমা নাই।
আমি বললাম, আছে কিন্তু আমিই দিয়েছি সমস্যা নাই।
উনি বললেন, সমস্যা আছে তুমি কেন এসব করবে
কাজের লোক থাকতে আর ইহান বা কেমন তোমাকে কেন এসব করতে বলেছে।
আমি উনার ব্যস্ত হ‌ওয়া কন্ঠ শুনে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। উনি এমন করছে কেন আমার মা খুশি তাই করুম উনার কি?
বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি।
আমার অবাক হওয়া দেখে থেমে বলল,,
আসলে তুমি কাজ করবে কেন তাই বলেছে ডোন্ট মাইন্ড।
আমি আস্তে বললাম,
কতো কাজ করি এটা তো তার কাছে কিছুই না।
উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,কি বললে?
আমি কিছু না বলে কেটে পরলাম।

পরদিন আমার গেলাম রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। রাতারগুল চৌরঙ্গী ঘাট থেকে সোয়াম্প ফরেস্ট ঘুরে দেখতে লাগে ৭৫০ টাকা নৌকা ভাড়া। উত্তরে গোয়াইন নদী দক্ষিণে বিশাল হাওর। মাঝখানে জলার বন রাতারগুল যা বাংলাদেশের অ্যামাজন নামে পরিচিত।
আমি মুগ্ধ হয়ে এই প্রকৃতি দেখছি কি অপূর্ব সুন্দর এই স্থান। চারদিকে ঘন নির্জনতা। আর ঝি ঝি পোকার ডাক ইশ ।চোখ ধাঁধানো সুন্দর আমার চোখে মুখে অসম্ভব মুগ্ধতা বিরাজ করছে। মনে হচ্ছে প্রকৃতি যেন তার মায়াবী রুপের সবটাই এখানেই ঠেলে দিয়েছে এখানে। আমার পাশে ইহান ভাইয়ার দাঁড়িয়ে ছিলো আমি উজ্জ্বল মুখ করে তাকিয়ে বলল,
কতো সুন্দর নিস্তব্ধতা।
দুটো নৌকা নেওয়া হলো একটায় আমি ইমা আপু ইলা আপু আর রিফাত ভাই।
আরেকটায় দিয়া ইহান ভাই রিহান ভাই ও রাজিব।
এটা দেখেই ইমা আপু নেমে পরলো আর ইহান কে আমাদের টায় দিয়ে নিজে রিফাত ভাইয়াকে নিয়ে চলে গেল ওইটায়।
আমি জানি কেন করেছে ওই দিয়ার আশেপাশে ভাইকে রাখতে চায়না আপু তাই।দিয়া মুখটা ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে র‌ইলো‌।
রিহান ও চলে এলো আমি অস্থি নিয়ে আছি কিন্তু ভাইয়ার জন্য স্বস্তি বোধ করলাম ভাইয়া আমার পাশে দাঁড়ালো।
এটা দেখে রিহান কটমট করে তাকালো।
নৌকা চলতে থাকে সবাই মুগ্ধ চোখে দেখছে সব কিছু কি অপূর্ব এই রুপ।
একটা দুইটা কথা বলছে ইলা আপু ছবি তুলছে। ইমা আপু রাও আর দিয়া মলিন করে তাকায় আছে আমাদের নৌকায়।
গাড়ি ঘাটে এসে থামলো একটা। আমি ইহান ভাইয়ের দিকে তাকালাম।ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
একটু হাঁটতে হবে চল।
কোথায় যাচ্ছি।
গেলেই দেখতি পাবি।
সবাই হাঁটতে লাগলাম মাটির উপর দিয়ে। কিন্তু ইলা আপু করলো ঝামেলা হাঁটাহাঁটি পছন্দ না আপুর তাই বিরবির করছে।
হাঁটতেছি সবাই মিলে হঠাৎ আমার মনে হলো কিছু আমার পায়ে কাপড়ে ধরছে।আমি মাথা নিচু করে পায়ের দিকে তাকাতেই এক চিৎকার করে উঠলাম নিজের সবশক্তি দিয়ে।
কি যেন আমার পা কামড়ে ধরে আছে ভয়ে আমি ঘেমে গেলাম মূহুর্তে। আমার হাত পা কাঁপছে সবাই আমার চিৎকার শুনে আমার দিকে তাকালো।
দিয়া আপু চিৎকার করে বলল,
ও মাগো জোঁক।
আমি তার ভয় পাওয়া দেখে আরো ভয়ে মিইয়ে গেলাম কেঁদে উঠলাম।ইহান ভাইয়া আগে ছিলো দৌড়ে এসে আমার কাছে দাড়ালো আর বললো,
কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?
আমি দুই হাতে ভাইয়ার বাহু খামচে ধরে ঠোঁট কামড়ে ধরে কাঁদছি। ইমা আপু বলল ওকে জোকে ধরেছে পায়ে।
কথাটা শুনে ভাইয়া আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে নিচে বসে পরলো আর আমাকে কান্না করতে মানা করলো।
আমি শুনছি না। ভাইয়ার টেনে জোঁক পা থেকে নিয়ে ফেলে দিলো পা দিয়ে গলগল করে রক্ত পরছে নিজের পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে পায়ে বেঁধে দিলো।
ইমা আপু এসে বলল,
কাদিস না এটা সামান্য ব্যাপার এখানে এসব থাকেই।
আমি কাঁদছি না ফুপাচ্ছি এখনো ভাইয়ার বাম হাত শক্ত করে ধরে আছি।
ইলা আপু মুখ বেঁকিয়ে বলল,
ঢং না করে চল তো তোর জন্য এখানেই থাকতে হবে দেখছি।
সবাই হাঁটতে লাগলো আমি ভাইয়ার হাত ছেড়ে দিলাম যদি ভাইয়া বিরক্ত ড়য় তাই। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাইয়া আমার হাত শক্ত করে ধরে হাঁটতে লাগলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here