এক বেরঙ চিলেকোঠায় পর্ব ৪

0
441

#এক_বেরঙ_চিলেকোঠায়
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্ব-৪

-আপনার এই স্পর্শকে আমি আরো অনেক কঠোর পদ্ধতিতে ফিরিয়ে দিতে পারি মিস্টার আরাব!

দাতে দাত চেপে কথাটা বললো দোয়া।বাইরে থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে,রাগে কাপছে ও।চোখ লাল হয়ে ছলছল করছে।কিন্তু তবুও ওর কথায় প্রতিক্রিয়ার খুব একটা পরিবর্তন হলো না আরাবের।ও বুঝে গেছে দোয়া কেমন মেয়ে।আত্মসম্মান যে ওর সবকিছু তা বোঝার জন্য খুব একটা সময় লাগেনি ওর।সবটা জেনেবুঝেই এভাবে দোয়ার হাত ধরেছে ও।ডোন্টকেয়ার ভাবে আস্তেধীরে দোয়ার মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের আঙুল আলতোভাবে খুলে তাতে একটা কাগজ গুজে দিয়ে বললো,

-চড় মারতেই পারেন।আই ওন্ট মাইন্ড।ভুল করেছি,শাস্তি বেয়ার করতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

হাত ছাড়া পেলো দোয়ার।আবার নিচের ঠোট কামড়ে ধরে দুহাত পেছনে দিয়ে আরো আরাম করে বসলো বিছানায়।ওর দৃষ্টি দোয়ার হাতের কাগজটার দিকে।কাগজটার মচমচ শব্দ যেনো চিৎকার করে বলছে,লাগা!এই ছেলে তোর হাত ধরেছে!এতোবড় সাহস ওর!চড় লাগা!দে একটা চড়!আমাকে এভাবে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে কি শান্তি পাবি তুই বইন?ছেড়ে দে না!ওই লোককে চড় লাগিয়ে আত্মতৃপ্ত হ?দোয়া সবে কাগজটা ছুড়ে মারবে বলে হাত উঠিয়েছে,আরাব চেচিয়ে বললো,

-মিস দোয়া!ঘর নোংরা করবেন না প্লিজ।এটা আমার নিজের ঘর না।আমি আশ্রিত এখানে।তাই ফেলার হলে ওটা বাইরে ফেলে আসুন।এ ঘরটা নোংরা করিয়েন না প্লিজ।

দোয়া থামলো।চোখ দিয়ে টুপটাপ দু ফোটা জল পরলো ওর।এতোক্ষন দোয়ার রাগটা মাথা পেতে নেবে বলে প্রস্তুত ছিলো আরাব।কিন্তু ওর চোখের জলের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না ও।একটা শুকনো ঢোক গিলে কাটাছেড়ার ব্যথা নিয়েই ওর সামনে উঠে দাড়ালো।অস্থিরভাবে বললো,

-আ’ম সরি মিস দোয়া।আপনাকে কাগজটা দেওয়ার অন্য কোনো উপায় মাথায় আসে নি আমার।ওটা…ওটা তো ডক্টরের ভিজিটিং কার্ড ছিলো।দিয়ানের জন্য।

বিস্ময়ে তাকালো দোয়া।দিয়ানের জন্য মানে?তবে কি অরুনাভ মুখার্জী তাকে দিয়ানের বিষয়ে বলেছে?এসব ভাবনার মধ্যেই ওর বুঝ আসলো,হাতে মচমচ করতে থাকা সাধারন লেখার কাগজটা কখনোই ভিজিটিং কার্ড হতে পারে না।চোয়াল শক্ত করে বেরিয়ে আসছিলো ও।আরাব পেছন থেকে চেচিয়ে বললো,

-ওটা সার্জন ড.সজল মুফতাহিরের চেম্বারের ঠিকানা।উনি দেশের বেস্ট হার্ট সার্জনগুলোর একজন।আমার বোনের বর হন উনি।কার্ড নেই এখন,তবে আমি সাইন করে দিয়েছি।এতেই সহজেই আপনি ওনার সাথে দেখা করতে পারবেন।

রুমের বাইরে চলে গেছে দোয়া।কিন্তু কথাগুলো ঠিকই শুনেছে‌ ও।আরাবের সাইন আছে শুনেই বারান্দায় দাড়িয়ে গেলো ও।আস্তেধীরে কাগজটা খুললো।ছলছল চোখের সামনে দৃশ্যমান হলো লেখাগুলো,ড.সজল মুফতাহির,কার্ডিওলজিস্ট,**হসপিটাল।পাশেই ইংরেজীতে আরাবের সাইন।তাহসানুল আরাব।সাইনটা চেনা ওর।কি করে ভুলবে এই সাইন?এই স্বাক্ষরই তো সেদিন…কান্না বাড়লো দোয়ার।আরাব ভেবেছিলো দোয়া চলে গেছে।মন খারাপ করে তবুও রুমের বাইরে বেরোলো ও।কিন্তু বারান্দায় দাড়িয়ে দোয়াকে কাগজটা পড়তে দেখে হাসি ফুটলো ওর চেহারায়।খুড়িয়ে এগিয়ে গিয়ে বললো,

-আমি জানি,আপনি ঠিক দিয়ানের অপারেশনের টাকা জোগার করে নেবেন।আমার আর্থিক সাহায্যের ধার আপনি ধারবেন না।তাই সে বিষয়ে বলে আপনার আত্মসম্মানকে আঘাত করতে চাইনি।আমার জীবন বাচিয়েছেন।আমার থেকে অন্তত এটুকো এক্সেপ্ট করুন।সবটা দিয়ানের জন্য মিস দোয়া।

দোয়া চোখের জল মুছলো।এই কাগজ ফেলবে না ও।এই সাইন হাতছাড়া করবে না ও।একটা শুকনো ঢোক গিলে,নাক টেনে বললো,

-খাবারটা খেয়ে নেবেন।

পা বাড়ালো দোয়া।কাগজটা নিয়েছে ও,রাগও করেনি,এটুকোতেই খুশি হয়ে গেলো আরাব।সজল ভাইয়ার কাছে গেলে,টাকা পয়সার দিকটা ঠিক একভাবে না একভাবে সামলে নিতে পারবে ও।তাই এভাবেই দোয়াকে রাজি করালো।খুশিমনে তাড়াহুড়ো করে,খোড়াতে খোড়াতেই ঘর থেকে খাবার প্লেটটা নিয়ে আবারো দরজায় এসে দাড়ালো ও।দোয়া ততক্ষনে সিড়ি দিয়ে উঠে গেছে।ও মাছের ঝোলে একলোকমা ভাত মাখিয়ে তা মুখে পুরে দিলো।উচু আওয়াজে বললো,

-ইটস্ ডেলিশিয়াস!সত্যিই আপনার হাতের রান্না দারুন মিস দোয়া।

দোয়া পেছন ফিরলো।শান্ত দৃষ্টি রেখে বললো,

-থ্যাংকস্।

-থ্যাংকস্ টু ইউ।

আরাব হেসে মাথা দরজায় ঠেকালো।ওর খুশিটা যেনো এই মুহুর্তে চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলেছে।চেহারাতেও সে আনন্দ স্পষ্টতর হচ্ছে।চোখ নামিয়ে চলে‌ গেলো দোয়া।ও জানে,আরাবের এ আনন্দের কারন অনিচ্ছাকৃতভাবে ওই।যা ও একদমই চায়নি।চায় না!

খাওয়া শেষ করে ‌প্লেট দিতে খোড়াতে খোড়াতে দোতলায় আসলো আরাব।অরুনাভ মুখার্জী তখনো নামেননি তিনতলা থেকে।ভাবলো প্লেটগুলো দিয়ে ওনাকেও ডেকে আনবে।দোতালায় উঠে দেখলো বারান্দা আর সিড়ির মাঝে আরেকটা গেইট দেওয়া।এটা খুব একটা পুরাতন নয়।বছরখানেক আগে আলাদাভাবে বানানো হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।ওতে তালা ঝুলছে।পাশেই এক সাইনবোর্ডে অতিসুন্দর লেখা,”পুরুষের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ”।কথাটা দেখেই হেসে দিলো আরাব।মনটাও ভালো হয়ে গেছে ওর।ও জানে দোতলায় দোয়ার পরিবার আর দুটো মেয়ে ভাড়াটিয়া।ওদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে অভির্ভুত না হয়ে পারলো না।ঝুলন্ত তালা নাড়িয়ে ঠুকঠুক শব্দ করলো দুবার।

সামনের ঘরটা থেকে শুধু মাথা বের করে একজন উকি দিলো।বেশ বুঝতে পারছে,বাকি মেয়েদুটোর একজন ওটা।হাত নেড়ে”হাই”বুঝালো আরাব।মেয়েটা দুবার দ্রুত পলক ফেলে হচকিয়ে যাওয়া চেহারা করে ঘরের ভেতরে মুখ ঢুকিয়ে নিলো আবারো।মন ভেঙে গেলো আরাবের।প্লেটগুলো নিয়ে নিচতলার দিকে হাটা লাগাচ্ছিলো ও।পেছন থেকেই সালমা‌ বেগম বলে উঠলেন,

-আরে,আরাব?তুমি দোতলায়?

আরাব পেছন ফিরলো খুশিমনে।অতঃপর কাদোকাদো চেহারা বানিয়ে ইশারায় একবার ওর হাতের প্লেট,আরেকবার গেইটের তালাটা দেখালো সালমা বেগমকে।ওর ওমন মুখ দেখে হেসে দিলেন সালমা বেগম।আচলের গোছায় রাখা চাবিটা দিয়ে গেইট খুলতে খুলতে বললেন,

-এই অবস্থায় সিড়ি বেয়ে উঠতে গেলে কেনো?এসো এসো,ভেতরে এসো।

-কিন্তু এই নোটিশ?

-ওই সাইনবোর্ডের কথা বাদ দাওতো!ওর কোনো কাজ নেই এ চিলেকোঠায়।নিচতলার মেসের ছেলেগুলো তো বলতেই পারবে না এই সিড়িটা কোনদিক দিয়ে উঠে এসেছে।আর উপরতলার ছেলেদুটোও চোখ বন্ধ করে অফিস,আর অফিস থেকে তিনতলায় পৌছে যায়।মুখার্জীদা আর দিয়ান ছাড়া কোনোদিনও কোনো ছেলেমানুষ আসেনি দোতলায়।

গেইট খুলে সরে দাড়ালেন সালমা বেগম।আরাব হাসিমুখে প্লেটদুটো এগিয়ে দিয়ে বললো,

-আমি রেকর্ডব্রেকার হবো না আন্টি।এই প্লেটগুলো দিতে এসেছিলাম জাস্ট।

-তাতে কি?এসোনা?দিয়ান ঘরেই আছে।

-না আন্টি।থাক।আমি বরং কাকাবাবুকে ডেকে আনি তিনতলা থেকে।

-মুখার্জীদা তিনতলা থেকে নামার সময় প্রতিবারই দোতালায় থামে,তন্নি,তৃষা,দোয়া,দিয়ান কারো না কারো নাম ধরে ঠিক ডাকবে।তুমি এসো তো!

-কিন্তু….

-কোনো কিন্তু না।তুমি এসো তো!

সালমা বেগম মানতে নারাজ।এতো কষ্টে সিড়ি উঠেছে,ওকে আসতেই হবে ভেতরে।আরাব হার মানলো।পা বারালো দোয়াদের ঘরের দিকে।পাশের পর্দা দেওয়া দরজাটা পাস করতে করতে সালমা বেগম বললেন,

-এটা,তন্নি তৃষার ঘর।ওরাও ভাড়াটিয়া।দোয়া ওদের ছোটবোনের চোখেই দেখে।

আরাব তাকালো না সেদিকে।সামনের দরজায় সাদা পর্দা উরছে।আর অসম্ভব গতিতে হৃদস্পন্দন বেড়ে চলেছে ওর।দোয়ার অস্তিত্বকে যেনো অনুভব করতে পারছে ও।কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা না।পরিচয়ের তো দুদিনও পুরো হয়নি ওদের।তবে এই মিশ্র অনুভুতিগুলোকে সামলাতে এতো বেসামাল কেনো হয়ে পরছে ও?কেনো?

ঘরে ঢুকলো আরাব।দোয়া খোপা বাধতে বাধতে পাশের ঘর থেকে অন্যদরজা দিয়ে ওই ঘরেই ঢুকছিলো।আরাবকে দেখে আটকে গেলো ও।ঘাড়ের পিছনে থেমে থাকা হাত,ললাটজুড়ে ছাড়া পাওয়া কিছু চুলের মাতলামি,টানাটানা চাওনি,থুতনির বা পাশটায় মুক্তোর মতো ঝিলিক দিয়ে চোখ ঝলসে দেওয়া পানিবিন্দু।ভেতরটায় এবার তান্ডব শুরু হয়ে গেছে আরাবের।চোখ সরিয়ে
অন্যদিকে ফিরলো ও।ফু দিয়ে দুবার জোরে শ্বাস ফেলে আবারো হাসিমুখে তাকালো দোয়ার দিকে।দোয়া চুল থেকে হাত নামিয়ে হাতের পিঠে মুখের পানিটুকো মুছলো।কড়াকন্ঠ বজায় রেখে বললো,

-আপনি এখানে কেনো?সাইনবোর্ড দেখেননি?

আরাব আরো বড়সড় হাসি দিলো।মায়ের দিকে তাকালো দোয়া।সালমা বেগম বললেন,

-আহ্ দোয়া!তুইও না!সবসময়…

কথা শেষ না করে আতিথীয়তা দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পরলেন উনি।দেখাবেনই না কেনো?ছেলেটা বড়ঘরের ছেলে হয়েও বেশ ভালোভাবেই ওদের ছোটছোট আতিথ্য হাসিমুখে গ্রহন করছে যে!সালমা বেগম আরাবের হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে বিছানা দেখিয়ে বললেন,

-বসো বাবা।এখানে বসো।

আরাব বসলো।পাশের ঘর থেকে দিয়ান বেরিয়ে আসলো।আরাবের সাথে বেশ ভাব হয়ে গেছে ওরও।এগিয়ে এসে বললো,

-তুমি এসেছো আরাব ভাইয়া?আমি সবেই মাকে বলতে চাচ্ছিলাম,তোমাকে আমাদের ঘর দেখাতে নিয়ে আসতে।

ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বললো না দোয়া।জানালার ধারে গিয়ে উল্টোপাশ হয়ে বসলো।সুতোর গোছা নিয়ে তা সুইয়ে পরাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।দোয়ার কাধের উপর বড়সড় খোপাটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আরাব।ওই খোপায় সাদা ফুলের গাজরা পরিয়ে দিলে বেশ মানাবে।পরেছে কোনোদিন ও গাজরা?আচ্ছা,ওর চুলগুলো ছাড়া পেলে কেমন দেখাবে এখন?ওর পরনে তো আকাশী রঙের জামা।পিঠজুড়ে কালো চুলগুলো ছড়িয়ে দিলে নীল আকাশের কালোমেঘের মতো দেখাবে না?

-কিছু খাবে আরাব?

ধ্যান ভাঙলো ওর।নিজেকে সামলে বললো,

-না না!সবেই তো খেলাম আন্টি।ব্যস্ত হবেন না প্লিজ!

দিয়ানকে কাছে বসার জন্য ইশারা করলো ও।তারপর পুরো ঘরটায় চোখ বুলালো।বাড়ির সবগুলো দেয়ালই রঙচটা।ঘরে আসবাব বলতে একটা বেশ বড় চৌকি,আলনা,পড়ার টেবিল,তাতে অবশ্য বই ছাড়াও অনেককিছু রাখা।কালি লেগে থাকা হাড়িপাতিল গুলো মেঝেতেই একটার উপর আরেকটা।দেয়ালে দুটো পুরোনো ক্যালেন্ডার,মেঝের এককোনে ছোটখাট একটা ট্রাংক,তার পাশ দিয়ে বালতি,ছোট দুটো ড্রাম,আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা কিছু সবজি।আর ঠিক পশ্চিমদিকে মেঝে থেকে প্রায় ছাদ অবদিই লম্বা জানালা।যেমনটা অরুনাভ মুখার্জীর ঘরেও আছে।তবে এই জানালার রডগুলোর নিচদিক মরিচায় কালো হয়ে যায়নি।আরাব কল্পনা করলো,দোয়া ওর অবসর ওই রড ধরে,জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বসে থেকেই কাটিয়ে দেয়।ঘরের ছাদের কাছাকাছি দিকটা কিছু পুরোনো ওড়না মুড়িয়ে সজ্জাদানের চেষ্টা করেছিলো কেউ।এসবের মধ্যে অদ্ভুত এক সৌন্দর্য খুজে পেলো আরাব।বলা বাহুল্য,প্রান জুরিয়ে গেলো ওর।সালমা বেগম দোয়ার দিকে এগিয়ে বললেন,

-কিরে?সুইসুতো নিয়ে বসলি যে?টিউশনিতে যাবি না?

আগেরদিন রোতিদের বাসার টিউশনিটা হারানোর বিষয়ে মাকে কিছু বলেনি দোয়া।বললে উপার্জন নিয়ে আরো চিন্তায় পরে যেতো সে।নিজের মতো ব্যস্ত থেকেই বললো,

-কাল অনুষ্ঠান ছিলো তো,তাই রোতির আম্মু আজকে ছুটি দিয়েছে।তবে বাকিদুটো আছে।যাবো একটু পর।

বিকেলের এটুকো সময়ে তিন তিনটে টিউশনি দোয়ার।একটাতে ছুটি বলে,সুইসুতো হাতে তুলে নিয়েছে।হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয়ে আসছিলো আরাবের।হয়তো কষ্টে।নিজেকে সংযত রাখাটা সত্যিই সম্ভব হচ্ছে না ওর।ইচ্ছে তো করছে,সবটা উজার করে দিয়ে এই বেরঙ চিলেকোঠার হৃদয়গুলোকে রাঙিয়ে দিতে।কিন্তু ওর সে রঙ স্বীকার করবে না কেউ।দোয়া তো নয়ই!প্রশ্নটা আরো এক জায়গায়,ও তো ভাবতে চেয়েছিলো শুধু দিয়ানকে নিয়ে।প্রানঋনের দায় কিছুটা কমাতে।তবে দোয়াকে নিয়ে হাজারটা ভাবনা কেনো ঘিরে ধরছে ওকে?ক্ষনিকের সাক্ষাতে এতোগুলো অনুভুতির সমারোহ কি করে হয়?ওর ভেতরের অস্থিরতা যে বারংবার জানান দিচ্ছে ওকে,এ চিলেকোঠায় সর্বস্ব হারিয়েছে ও,কোনো এক অন্য জগতের রঙে!তবে কি ও স্বীকার করতে বাধ্য নয়,এই মায়াবী চেহারা,গভীর চাওনি,আর কঠোর শব্দতীরের ভীড়েই কোনো এক অদৃশ্য বাধন জড়িয়ে নিয়েছে ওকে।হয়তো যে বাধন হয় ভালোলাগার।ভালোবাসার!

মনের সাথে যুক্তিখন্ডনে পেরে না উঠে দাড়িয়ে গেলো আরাব।অস্থির লাছে ওর।তাকাতে পারছে না আর দোয়ার দিকে।একবার মনে হলো,এ ঘরে আসাই ওর উচিত হয়নি।এ বৃথা আফসোস তো আর কমাতে পারবে না ওর এ অস্থিরতা।তাই চলে যাওয়াই উত্তম মনে করলো ও।জিভ দিয়ে ঠোটটা ভিজিয়ে বলে উঠলো,

-আ্…আমি আসছি।

কথা কোনোমতে শেষ করে বেরিয়ে এলো ও।ঘরের তিনজনই তাকিয়ে রইলো ওর চলে যাওয়ার দিকে।দিয়ান আর সালমা বেগম বেরিয়েও আসলেন ওর পিছনে।আরাব থামে নি।সুচ ফুটে হাতে রক্ত ঝরতে শুরু করেছে দোয়ার।কোনোরুপ আর্তনাত না করে একধ্যানে তাকিয়ে রইলো শুধু ওই ক্ষতর দিকে।

#চলবে…

[ভুলত্রুটি মার্জনীয় ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here