একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ২+৩

0
1148

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০২+৩
-‘ ভাবি! ভাবি! ও ভাবি শুনো নাহ ভাবি!’

হেমন্ত এক নাগারে প্রাহিকে ভাবি ভাবি বলে ডেকেই যাচ্ছে।শেষ মেষ বিরক্ত হয়ে প্রাহি বললো,

-‘ কাউয়া কোথাকার আর একবার ভাবি ডাকবি তো তোর জিহ্বা ছিড়ে ফেলবো।’

-‘ ভাবি! ভাবি!’

-‘ হেমন্ত আমাকে বিরক্ত করিস না।আমি ল্যাবে কাজ করছি দেখছিস তুই।’

হেমন্ত প্রাহিকে জ্বালাতন করে খুব মজা পাচ্ছে।দীর্ঘ একঘন্টা যাবত সে এমন করছে।কারন ভার্সিটিতে আসার পর থেকে প্রাহি একবারও হেমন্ত’র সাথে কথা বলেনি।সেইজন্যেই হেমন্ত প্রাহিকে বিরক্ত করছে যাতে বিরক্ত হয়েও প্রাহি ওর সাথে কথা বলে।আর সেটাই হলো।এদিকে হেমন্ত’র বলা বার বার ‘ ভাবি!’ ডাকটা একেবারে কলিজায় গিয়ে লাগছে প্রাহির।কি যে সুখ সুখ অনুভূতি হচ্ছে বলে বুঝাতে পারবে না প্রাহি।তবে সেই খুশিটা মনেরটা মনেই চেপে রেখেছে।হেমন্তকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না ওর মনের কথা।তাই মুখটা যথাসম্ভব গম্ভীর করে রেখেছে।প্রাহির ভাবনায় ছেদ ঘটে হেমন্ত’র ওর হাত ধরাতে।ছেলেটা ওকে টেনে হিছরে নিয়ে যাচ্ছে।প্রাহি রাগে কিরমির করে বলে উঠে,

-‘ তুই এমন করছিস কেন?প্লিজ থাম! কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমাকে।থাম হেমন্ত।উফফ!’

কে শুনে কার কথা হেমন্ত প্রাহিকে টানতে টানতে ওর বাইকের কাছে এনে দাড় করালো।প্রাহি হেমন্ত’র কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্যে ছোটাছুটি করছে।হেমন্ত’র তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।ও শান্ত ভঙিতে ইশিকে ফোন দিয়ে বললো ক্যাম্পাসে পার্কিং প্লটে যেন চলে আসে ও।প্রায় ১০ মিনিট পর ইশি এসে পৌছাতেই হেমন্ত বাইকে উঠে বসলো।তারপর ইশি উঠে বসলো।প্রাহি এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।হেমন্ত এইবার দাঁত খিচিয়ে বললো,

-‘ দেখ প্রাহি! ভালোই ভালোই বলছি বাইকে উঠে বস।নাহলে কিন্তু তোকে ঘারে তুলে নিয়ে এক আছাড় মারবো।’

প্রাহি তাকালো।হেমন্তকে ভেংচি কেটে বাইকে উঠে বসলো।নাহলে দেখা যাবে হেমন্ত সত্যি সত্যি ওকে তুলে আছাড় মেরে দিয়েছে।আর প্রাহি এতো তাড়াতাড়ি কোমড় ভেঙ্গে বসে থাকতে চায়না।বিয়ের পর কোমড় ভাঙ্গলে সমস্যা নেই।তখন তো তারই সুবিধা হবে সারাদিন সে তার প্রেমিক পুরুষের কোলে চড়ে টইটই করে ঘুরে বেড়াবে।আহা! ভাবতেই সুখ সুখ ফিলিংস আসছে প্রাহির।

-‘ কিরে ভ্যাটকাইতেছোস কেন?’

প্রাহি থতমত খেয়ে গেলো ইশির কথায়।জোড়পূর্বক হেসে বললো,

-‘ কই না তো!’

-‘ তাহলে আমাকে টাইট করে ধরতে বলছি শুনতে পাচ্ছিস না কেন? রাস্তায় উলটে পরে মরার ইচ্ছা জেগেছে নাকি।’

প্রাহি নাক মুখ কুচকে বলে,

-‘ বেশি কথা বলিস তুই।সামনের দিকে তাকা তো।ফাউল প্যাচাল করিস না!’

প্রাহি ইশিকে শক্ত করে ধরে বসলো।এদিকে ইশি ব্যাক্কল হয়ে বসে।সে কখন ফাউল কথা বললো?আজব!
——————-
ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছে প্রাহি,ইশি।চুপচাপ করে বসে আছে।মনে হচ্ছে ওদের মতো ভদ্র আর কেউ নেই।প্রাহি মনে মনে হেমন্তকে ইচ্ছেমতো গালাগাল করছে।ছেলেটা এতো খারাপ।শেষমেষ টেনেহিছড়ে শিকদার বাড়িতে নিয়ে আসলো।আর এসেই ওদের এখানে বসিয়ে দিয়ে ও লাপাত্তা।ও কি বুঝে না প্রাহির এখানে আসলে অসস্তি হয়। এই বাড়ির বড় ছেলেকে ভালোবাসার আগে এই অসস্তিটা ছিলো না।কিন্তু ভালোবাসা বুঝার পর থেকে এই বাড়িতে আসার নাম নিলেও প্রাহির কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগে।প্রাহির ইচ্ছা সে একেবারে বউ হয়ে এই বাড়িতে আসবে।তার আগে এখানে আসার কোন মানেই হয়না। প্রাহিকে অন্যমনস্ক দেখে ইশি ওকে হালকা ধাক্কা দিলো।বললো,

-‘ কিরে? কি ভাবছিস এতো?’

প্রাহি কিছু বলবে তার আগেই ওদের সামনে এসে দাঁড়ায় রায়হানা বেগম। প্রাহি আর ইশি উনাকে দেখেই সালাম জানান।বিনিময়ে উনিও সালামের জবাব দিয়ে বলেন,

-‘ কি হলো আম্মুরা?খাচ্ছো না কেন?সেই কখন নাস্তা পাঠালাম এখনো কিছুই তো দেখছি খেলে না।’

প্রাহির হৃদয় জুড়িয়ে যায়।কি সুন্দর অমায়িক ব্যবহার।আসলে এই বাড়ির প্রতিটা মানুষেরই ব্যাবহার চমৎকার সুন্দর।প্রাহির অবাক লাগে। ও নাকি এই বাড়ির বউ হবে।কতোটা ভাগ্যবতী সে।এখন শুধু ওই বড়লোক খারুসটা রাজি হলেই হয়।
মনে মনে কথাটা গুলো বলেই মিষ্টি হেসে রায়হানা বেগমকে বললো,

-‘ তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম।তুমি নিজে এসে খাইয়ে দেও।কতোদিন পর এলাম। হেনা আন্টি কোথায় তাকে যে দেখছি না?’

-‘ এইতো আমি আম্মুরা!’

রান্নাঘর হতে হাত মুছতে মুছতে বের হয়ে কথাটা বলে উঠেন হেনা বেগম।ইশি আর প্রাহি উনাকেও সালাম দিয়ে ভালোমন্দ জিজ্ঞাসা করে নিলেন।

ইশি বললো,

-‘ আন্টি আসো এখানে এসে বসো তো একটু।’

হেনা বেগম বসতেই রায়হানা বেগম বললেন,

-‘ দেখেছিস হেনা।সেই কখন নাস্তা পাঠালাম।তারা কিছুই খেলো না।ওদের নাকি আমাদের হাতে খাওয়ার শখ জেগেছে।’

বিনিময়ে হেনা বেগম হালকা হাসলেন।বলেন,

-‘ এতো বেশ ভালো কথা।আপা তুমি প্রাহিকে খাইয়ে দেও আমি ইশি খাইয়ে দিচ্ছি।’

প্রাহি আর ইশি বেজায় খুশি হলো।রায়হানা আর হেনা মিলে ওদের দুজনকে খাইয়ে দিলো।ইশি হেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর চোখজোড়া ছলছল করছে।আজ কতোদিন পর এতোটা মমতা নিয়ে কেউ ওকে খাইয়ে দিলো।ওর মা থাকলেও বুঝি ওকে এইভাবে খাইয়ে দিতো? মার কথা খুব করে মনে পড়লো ইশির।না চাইতেও টুপ করে একফোটা জল গড়িয়ে পড়লো ওর চোখ থেকে।সাথে সাথে হেনা বেগম ব্যাকুল কন্ঠে বলেন,

-‘ সে কি ইশি কাঁদছো কেন?নুডুল্সগুলোতে কি বেশি ঝাল দিয়ে ফেলেছি আমি?’

সাথে সাথে ইশি না বোধক মাথা নাড়ায়।তারপর হুট করে হেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠে।হেনা বেগম পরম স্নেহে ইশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,

-‘ কি হয়েছে আম্মু?’

ইশি ক্রোদন স্বরেই বলে,

-‘ জানো আন্টি।মা মারা যাওয়ার পর কেউ আমাকে এতো স্নেহ করে কোনদিন খাইয়ে দেয়নি।তাই মার কথা খুব মনে পড়ে গেলো।’

প্রাহি,রায়হানা বেগম, হেনা বেগম সবার খারাপ লাগলো অনেক ইশির কথা শুনে।আসলে ইশির মা ইশির যখন চার বছর বয়স তখন মারা যান।ইশির একটা বড় ভাইও আছে।ইশির মা মারা যাওয়ার মাস কয়েক পরেই তার বাবা আরেকটা বিয়ে করেন।বেশ ভালোই যাচ্ছিলো।কিন্তু আস্তে আস্তে ইশির সৎমায়ের আসল রূপটা বেড়িয়ে আসে।ইশির ভাই থাকতো হোস্টেলে সেখান থেকেই পড়ালেখা করতো।ইশি শুধু একা ছিলো বাড়িতে।ওর বাবা ব্যাবসার কাজে বেশির ভাগ বিভিন্ন জেলায় জেলায় যেতেন।সেই সুবাদে তিনিও বেশি বাড়িতে আসতেন না।আর সেটারই সুযোগ নিয়ে ইশির সৎমা ওর উপর নানান ভাবে টর্চার করতো।ওকে দিয়ে সব কাজ করাতো।ছোট্ট ইশিকে ভয় দেখাতো ওর বাবার কাছে যেন বিচার না দেয় সেই জন্যে।একদিন ধৈর্য’র বাধ ভেঙ্গে ইশি একদিন ওর বাবার কাছে বিচার দেয়।কিন্তু ওর সৎমা ওর বাবাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিভিন্ন মিথ্যে কথা বলে ওর বাবাকে পটিয়ে ফেলে।পরে ওর বাবা সেটাই বিশ্বাস করে নিয়ে ইশিকে ইচ্ছামতো মারধর করে।ইশি পরে ফোন দেয় ওর মামাকে ওর মামারা সব শুনে ইশিকে তাদের কাছে নিয়ে যান।ইশির বাবাও এতে আপত্তি করে না।মামারা আর নানু ইশিকে অনেক ভালোবাসে।কিন্তু ওর দুই মামি কেউ ওকে দেখতে পারে না।নানু মারা যাওয়ার পর যেন মামিদের কটু কথা আরো বেড়ে যায়।ওর মামারা বাড়িতে থাকলে কেউ কিছু বলে না।কিন্তু তারা না থাকলেই দুই মামির আসল রূপ বেড়িয়ে আসে।সেই থেকেই ইশির দিনকাল এমনই যাচ্ছে।এরশাদ সাহেব আর রাবেয়া বেগম ইশিকে উনাদের কাছে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন।কিন্তু ইশি রাজি না।শুধু কেন অন্যের ঘারে বোঝা হয়ে থাকবে ইশি।এর থেকে ও যেমন আছে সেইভাবেই দিনকাল চলুক না।

হেনা বেগম ইশির চোখের পানি মুছে দিলো।কপালে চুমু খেয়ে বলেন,

-‘ পাগল মেয়ে এতে কাঁদতে হয়।যখনই মার কথা মনে পরবে চট করে এখানে এসে পরবে।আমি তো বলি রোজই এসো আমি নিজ হাতে তোমাকে খাইয়ে দিবো।’

রায়হানা বেগম বলে উঠেন,

-‘ আমিও আছি এতে ভাগিদার।আমিও খাইয়ে দিবো।’

ইশি মৃদ্যু হাসলো।প্রাহি মুগ্ধ হয়ে দেখছে ওদের।ঠিক কতোটা উদার মনের হলে কেউ কাউকে এতোটা আপন করে নিতে পারে।প্রাহি মনে মনে শপথ করলো এই বাড়ির বউ হয়ে আসলে এই বাড়ির প্রতিটা মানুষকে অনেক ভালোবাসবে। অনেক অনেক।প্রাহি ঠোঁটের কোনে মৃদ্যু হাসি ফুটে উঠলো।

-‘ যা কান্না করার কয়েকদিন করে নে ইশি।বড় ভাইকে বিয়ে করার জন্যে রাজি করিয়ে।প্রাহিকে তার বউ বানাতে পারলেই।তার কয়েকদিন পর তোকেও আমার কাছে নিয়ে আসবো।আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিবো।এই বাড়ির ছোট বউ করে আনবো তোকে।আর একটু সবুর কর ইশি।আর একটু।’

কথাগুলো মনে মনে বলেই ইশির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো হেমন্ত।এই মেয়েটার চোখের পানি তার একদম সহ্য হয়না।একদম না।মেয়েটাকে যে সে অনেক ভালোবাসে।কিন্তু অবুঝ মেয়েটা তার ভালোবাসা বুঝেই না।তবে হেমন্ত আর অপেক্ষা করবে না।ইশিকে ওর বউ করে আনবে শীঘ্রই।অপেক্ষা শুধু একজনের বিয়ে করার জন্যে রাজি হওয়ার।ব্যস তাহলেই হবে।

#চলবে_______
#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৩
ব্যস্ত নগরী দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল শহরের একটা ষাট তলা ভবনের চল্লিশ তলা ফ্লোরটি পুরোটা একটা অফিস। অফিসের একটা রুমে মিটিং এ ব্যস্ত কয়েকজন লোক।তাদের মাঝে সবার মধ্যাকর্ষন হলো অর্থ।পুরো নাম অর্থ শিকদার।দ্যা ওউনার ওফ শিকদার এম্পায়ার।যে খুব দক্ষতার সাথে মিটিং করতে ব্যস্ত।প্রায় আধাঘন্টা পর মিটিং শেষ হতেই।মিটিং রুম থেকে একে একে বের হয়ে গেলো সকলে।রয়ে গেলো শুধু অর্থ।অর্থ এক কাপ কফি বানিয়ে নিলো।তারপর কফি হাতে সে বিশাল কাচের দেয়ালটার সামনে দাঁড়িয়ে সিউলের রাতের শহর উপভোগ করতে লাগলো।আকাশে আজ সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে।চাঁদের পাশে মিটিমিটি জ্বলছে তারাগুলো।থেকে থেকে কোথা যেন কারা আকাশে আতশবাজি ফুটাচ্ছে।চমৎকার সুন্দর দেখাচ্ছে। সুদর্শন,সুঠাম দেহি,চমৎকার গড়নের গম্ভীর মুখশ্রী, ব্রাউন রঙের চোখের অধিকারি এই ব্যাক্তিকে যেকোন মেয়ে তাদের জীবনসঙ্গী বানাতে একপায়ে প্রস্তুত।তবে আদৌ কি এই পুরুষটি তার মনের মতো জীবনসঙ্গী পাবে?বয়স তো কম হলো না।ত্রিশ পার হয়ে একত্রিশে পরলো।এই একত্রিশ বছর জীবনে আজও কাউকে নিজের মনের মতো পেলো না।ফ্যামিলি থেকে দেশে গিয়ে বিয়ে করার চাপ দিচ্ছে ক্রমাগত তাকে।কিন্তু অর্থ তাদের কিভাব বুঝাবে?অর্থ যেমন ভালোবাসার মানুষটি চাইছে তা তো সে পাচ্ছে না।তাহলে কিভাবে কাউকে সে নিজের জীবনে জড়াবে।আর অর্থ জানেও তার মতো এমন রষকষহীন গাম্ভীর্য পূর্ণ ব্যাক্তিকে কেউ ভালোবাসতে পারবে না।সবাই তো শুধু ওর বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে ওর কাছে আসে।মন থেকে ভালোবেসে কাছে আসে না কেউই।তাই অর্থও চায়না কাউকে নিজের জীবনে জড়াতে।সে একাই বেশ ভালো আছে। কফি শেষ হতেই ভাবনাও শেষ হয়।সব কিছু গুছিয়ে অফিস থেকে যেতে হবে।এই বিল্ডিংয়েরই ৫২ তলা ফ্লোরে ওর ফ্লাট।সেখানেই ও থাকে। কাজের মাঝে হঠাৎ একটা মেয়ের কন্ঠে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে অর্থ।

-‘ ওহ বেবি আই মিস্ড ইউ সো ব্যাডলি। নট আ ড্যে ওয়েন্ট বায় দ্যাট আই ডিডন্ট থিং এব্যাউট ইউ।’

ইলফা ন্যাকা কন্ঠে কথাগুলো বলে অর্থর কাছে আসতে নিলেই অর্থ।ঠান্ডা অথচ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে,

-‘ হুয়াই? কুডন্ট ইউর লাভার্স মেক ইউ হ্যাপি ইন বেড?দ্যাট্স হুয়াই আই রিমেমভার ইউ?দ্যেন লিসেন টু মি, ডু ওয়ান থিংক গো টু আ ব্রোথেল হেয়ার টু সেটিস্ফাই দ্যা ডিজায়ার্স ওফ দ্যা বডি।ইট উইল ডু টু থিংক্স এট দ্যা সেম টাইম উইল সেটিস্ফাই দ্যা ডিজায়ার্স ওফ দ্যা বডি এন্ড উইল ওলসো গেট এক্সট্রা মানি।’

শান্ত কন্ঠের অর্থর এরকম অপমানজনক কথায় মুখটা চুপসে একটুখানি হয়ে যায় ইলফার।অর্থ রাগি চোখে এক পলক ইলফার দিকে তাকিয়ে গটগট পায়ে চলে গেলো অফিস থেকে।যাওয়ার আগে ওর গার্ড্সদের বলে গেলো।ইলফাকে যেন ওর অফিস থেকে বের করে দিতে।
—————–

রুমে এসে রাগে ওর গায়ের কোটটা সোফায় ছুড়ে মারলো অর্থ।এই মেয়েটাকে একদম সহ্য হয়না অর্থ’র।এতো অপমান করে এইটাকে অর্থ তাও বারবার চলে আসে মুখ উঠিয়ে।এদিকে অর্থ’র দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে ওর বেস্টফ্রেন্ড আরাফ।আরাফ ফোনে গেম্স খেলায় ব্যস্ত ছিলো।অর্থকে এমন রাগে জোয়ালামুখী হয়ে আসতে দেখে ভ্রু-কুচকে এতোক্ষন বুঝার চেষ্টা করছিলো হয়েছেটা কি?এইবার না পেরে প্রশ্ন করেই ফেললো আরাফ,

-‘ কিরে কি হয়েছে?এমন রাগে ফোসফোস করছিস কেন?’

অর্থ রাগি চোখে আরাফের দিকে তাকালো।শক্ত কন্ঠে বললো,

-‘ দ্যাট স্টুপিড গার্ল।আই জাস্ট হেট হার।এতো অপমান করি তাও বার বার চলে আসে।কবে জানি আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ওকে গলা টিপে মেরে ফেলি।শুধু মাত্র তোর কাজিন দেখে কিছু বলিনা।ও যদি আমার বোন হতো এতোক্ষনে থাপড়ে সোজা করে ফেলতাম।’

আরাফ করুন চোখে তাকালো।বন্ধুর এতোটা রেগে যাওয়ার কারন এইবার বুঝতে পারলো ও।ও নিজেও বেশ বিরক্ত ইলফার উপর।মেয়েটাকে যে ধমকে ধামকে অথবা থাপড় মেরে কিছু বলবে তারও কোন উপায় নেই।কিছু থেকে কিছু হলেই এই মেয়ে ন্যাকা কান্না কেঁদেকেটে ওর বাবার কাছে বিচার দেয়।বাবা মরা মেয়েকে আরাফের বাবা অনেক স্নেহ করেন তাই শুধু ইলফার কথা শুনেই আরাফকে ওর বাবাকে রাগারাগি করে।দীর্ঘশ্বাস ফেললো আরাফ। বললো,

-‘ রাগিস না অর্থ।ও একটু এমনি।শাষন তো কর‍তেই চাই।কিন্তু বাবার জন্যে পারি না।আমার সমস্যাটা একটু বুঝ।তুই একটু শান্ত হো।’

-‘ গো টু হেল উইথ ইউর প্রোবলেম।’

রাগে কিরমির করতে করতে ওয়াশরুমে চলে গেলো অর্থ।আরাফ ভাবে এই মানুষটার যে কেন এতো রাগ?কে যে অর্থকে সামলাতে পারবে।এমন কি কেউ নেই?যে ভালোবাসা দিয়ে অর্থকে আগলে রাখবে? ফোনের রিংটোনে ধ্যানভঙ্গ হয় আরাফের।দেখে অর্থ’র ফোন বাজছে।আরাফ চেঁচিয়ে বলে উঠে,

-‘ অর্থ তোর ফোন এসেছে।’

অর্থ’র জবাব শোনা যায়,

-‘ আসছি।’

মিনিট দুয়েক পরেই বের হয়ে আসে অর্থ।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ওর মা রায়হানা বেগম কল করেছেন বাংলাদেশ থেকে।অর্থ চোখ বুজে নিজেকে ঠান্ডা করে ওর মাকে কল ব্যাক করে,

-‘ হ্যালো মা আসসালামু আলাইকুম! ‘

রায়হানা বেগম কাঁদো কন্ঠে বলে,

-‘ আলাইকুমুস সালাম! কেমন আছিস বাবা?’

-‘ ভালো তুমি কেমন আছো?’

-‘ তোকে ছাড়া কিভাবে ভালো থাকি বাবা?জলদি চলে আয় না আমার কাছে।আর কতো পরের দেশে পরে থাকবি?মা’র কথা কি মনে পরে না একটুও?’

বলতে বলতে রায়হানা বেগম কেঁদে দিলেন।অর্থ বিরক্ত হলো বেশ।ওর এইসব কান্নাকাটি একদম ভালো লাগে না।তারপরেও গলার স্বর যথাসম্ভব নরম করে বলে,

-‘ মা স্টোপ ক্রায়িং।এভাবে কাঁদলে হবে?ওকে ফাইন আমি আর দু’দিন পরেই আসছি।নাও হ্যাপি?’

রায়হানা বেগম ছেলের মুখে ‘ দু দিন পর আসবে!’ শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে গেলেন।উচ্ছাসিত কন্ঠে বলেন,

-‘ সত্যি বাবা?সত্যি তুই আসবি?আমি এখনি সবাইকে বলে আসি হ্যা?ইসস আমার কতো আনন্দ লাগছে।’

রায়হানা বেগম ফোন রেখেই ছুটে গেলেন সবাইকে জানাতে তার ছেলে আসবে দেশে।এদিকে অর্থ’র ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠে।মা’কে এতো খুশি দেখে ওর নিজেরও ভালো লাগছে।ওর মা এই বয়সে এসেও কেমন বাচ্চামো করেন।ছোট ছোট বিষয়েই বাচ্চাদের মতো খুশি হয়ে যান।এইযে দেখো এখনই খুশির চোটে কলটাও কাটতে ভুলে গিয়েছে।অর্থ নিজেই ফোনটা কাটতে নিলে ফোনের স্ক্রিনে কিছু একটা দেখে থমকে যায়।রায়হানা বেগম ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে কথা বলছিলেন। উনি যেখানে বসেছিলেন ঠিক তার পিছনেই দোতলার সিড়ি।সেখানেই দেখা যাচ্ছে দুটো মেয়ে দাঁড়িয়ে তার মধ্যে একজন মেয়ে হেমন্তকে মারছে আর একজন ওদের থামানোর চেষ্টা করছে।মেয়েটার চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।কোমড় সমান চুলগুলো এলোমেলো হয়ে চেহারাটা প্রায় ঢেকে দিয়েছে।তাও কেন যেন অর্থ’র সেটা দেখতে ভালো লাগছে।বুকের কোথায় যেন একটা কিছু প্রচন্ড হাঁসফাস করতে লাগলো শুধু একটি পলক মেয়েটাকে দেখার জন্যে।

-‘ কিরে?কি দেখছিস ওমন করে?বাহিরে যাবি নাহ?আজ তো একটা পার্টি আছে।’

আরাফের কথায় ছিটকে চোখ সরিয়ে নিলো ফোনের স্ক্রিনের দিকে।এতোক্ষন সে কি করছিলো? একটা অচেনা মেয়েকে দেখার জন্যে ওর এতো ব্যাকুলতা কিসের?কেন এতো অস্থির লাগছিলো?নাহ এইসব উল্টাপাল্টা ভাবা যাবে না।রাগে মাথাটা থপ করে উঠে।সাথে সাথে কলটা কেটে দেয় অর্থ।আরাফকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-‘ আমি রেডি হয়ে আসছি।তুই গাড়ি বের কর।’

বলেই নিজের রুমে চলে গেলো অর্থ।মনে মনে ভাবলো আজ দিনটাই কেমন যেম এলোমেলো গেলো ওর।

—————-

রায়হানা বেগমের মুখে অর্থ দুদিন পর আসবে শুনে।খুশিতে বাকহারা হয়ে গিয়েছে প্রাহি।আনন্দে ওর চোখে অস্রুরা এসে ভীর জমিয়েছে।চোখ জোড়া জলে টইটুম্বুর! তা দেখে ইশি বলে,

-‘ কিরে কাঁদছিস কেন?’

প্রাহি যথাসম্ভব নিজেকে সামলে নিলো। বললো,

-‘ ওই হেমন্ত মারার সময় চোখে কিছু একটা গিয়েছে বোধহয়।বাদ দে।তবে আর কতোক্ষন থাকবো বাড়িতে যাবি না।হেমন্তকে বলে আসি চল বাড়ি যাবো।’

ইশিও সম্মতি জানালো।অবশেষে হেমন্তকে বলে ওরা যার যার বাড়ি চলে গেলো।আসলে এখন প্রাহি নিজের বাড়িতে গিয়ে দরজা আটকে কান্না করবে।ওর আনন্দটা আজ হিসেব ছাড়া।ঠিক কতোটা খুশি ও আজ তা ওর চোখের অস্রুদানা গুলোই বলে দিচ্ছে।অবশেষে! অবশেষে ওর ভালোবাসার মানুষটি আসতে চলেছে।এইবার আসলে আর তাকে যেতে দিবে না প্রাহি।একেবারে নিজের বাহুডোরে আটকে রাখবে।ভাবতে ভাবতে অস্রুচোখেও হেসে ফেললো প্রাহি।

#চলবে_______

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here