একটা সাধারণ গল্প,পর্ব:৪

0
321

একটা_সাধারণ_গল্প
#পর্ব_চার
#সঞ্চারী_চ্যাটার্জী

-তুই কোথায় যাচ্ছিস?
-পর্ণা কোথায় গেল?বাসের দিকেই মনে হল।
-তো! তোর কি?
-না কিছুই না। ওমন উদভ্রান্তের মতো দৌড়ালো তো তাই বলছি।
-যাক,ও ওর লাভারের পিছনে যাচ্ছে।
-যাই না মহিম একবার দেখে আসি। কিছুতো একটা হয়েছে।
-আমার কথা শোন,তুই যাস না।

আবারো চটে বসে পড়লো শুভদ। পাতের লুচি -তরকারিটা বিস্বাদ ঠেকল।

মহিমের খাবার শেষ হতে চলল তখনও একটা লুচি শেষ করেনি শুভদ ।

দূরে পর্ণা-নিলয়ের খাবারে সাজানো পাতা রাখা আছে।আশেপাশে সকলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অনেকে খাওয়া শেষ করে জায়গাটা পরিভ্রমণে বেড়িয়ে পড়েছে।
মিনিট 15 পর পূর্বের অবস্থানে ফিরে এলো পর্ণা, সঙ্গে নিলয়ও..
সাথে সাথেই ওকে প্রশ্ন করল মাম্পি।
-পর্ণা কোন সমস্যা হয়েছে? হঠাৎ খাবার ফেলে চলে গেলি।

-না কিছু হয়নি।
জোর করে চোয়াল খুলল পর্ণশ্রী।

ব‍্যপারটা লক্ষ্য করলো শুভদ।
-তোরা খাবি না?
প্রশ্ন করলো মাম্পি।

-হ‍্যাঁ রে আমি খাব। নিলয় লুচি খেতে ভালোবাসে না। দেখি ও খায়..
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাতা থেকে একটু লুচি ছিড়ে মুখে পুরল পর্ণা।
চটে বেজার মুখে বসে আছে নিলয়। ওর অভিব্যক্তিতে বিরক্ত প্রকাশ পাচ্ছে।
ওদের হাবভাব দেখে বিরক্ত হল মাম্পি।
-তুই খা। আমি রুমার কাছ থেকে আসছি।
বলেই অন‍্য সহপাঠীদের কাছে গেল মাম্পি।

-ঐ নিলয়টা খেল না কেন বলত?
-হ‍্যাঁ তুই ঐ নিয়ে পড়ে থাক। আমি অন‍্যদের সঙ্গে ঘুরতে চল্লাম। দেবদাস হতে চাইলে বাড়িতে গিয়ে হোস,আর যদি এখানে হতে থাকে চাস তো বসে থাক আমি চল্লাম।
যেটা হওয়ার নয় তার পিছনেই পড়ে আছিস।এত করে বোঝালাম তবুও তুই বুঝছিস না।

-রাগিস না ভাই, আচ্ছা, আচ্ছা চল।
মহিমের দাবড়ানি শুনে উঠে দাঁড়ালো শুভদ।
-চল একটু সুখটান দিই। পিছন দিকেই যাব চেনা কেউ থাকবে না।

-চল!
পিছন ঘুরে তাকিয়ে দেখে পর্ণা-নিলয় ত্রিসীমানায় নেই।
মুহূর্তের মধ্যে কোথায় গেল ওরা!
অজানা আশঙ্কায় কেঁপে উঠলো ওর হৃদয়।
মনের অবস্থা কিছুতেই মহিমের সামনে ব্যক্ত করতে পারল না।
-সামনের দিকে চল না..
-না ঐদিকে অনেক ভীড়..
শুভদের হাত ধরে উল্টোদিকে টেনে নিয়ে গেল মহিম।
মন চাইলেও মহিমের সঙ্গেই যেতে হল শুভদকে।স্রোতের বিপরীতে যেন জোর করে নৌকাকে চলানো হচ্ছে।

সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করল মহিম। লম্বা টান দিল ওতে। তারপর নিজের জলন্ত সিগারেটটা ধরলো শুভদের দিকে।
শুভদও মুখে নিয়ে লম্বা টান দিলো।
জ্বলছে সিগারেট,জ্বলছে ও..
-আবে পুরোটা শেষ করে ফেললি?
-পুজোতে তো কেশেকেটে একেকার করলি। ঘরে খাওয়া অভ‍্যেস করেছিস নাকি?
শুভদকে দেখে বলতে শুরু করল ওদের বন্ধুরা।
শুধুমাত্র মহিম মৌন রইলো।
-চল এবার লেকের ধারে যায়।
প্রত‍্যুত্তরে বলল শুভদ।

-শুভ বোটিং করবি না?
-না রে জলে আমার ভয় লাগে,তোরা যাস।আমি দাঁড়িয়ে থাকবো..
-কিচ্ছু ভয় নেই,আমরা থাকব তো..
মহিম আশ্বস্ত করলো।

আবারো পায়ে পায়ে পিকনিক স্থলে এলো ওরা।
শুভদের দুই চোখ পর্ণাকেই খুঁজছে।

জেদাজেদি করলেও লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকল শুভদ। বাকি চারজন তখন জলে ভাসছে।

জায়গাটায় থিকথিকে ভীড়।বহু লোকের সমাগম ঘটেছে সেখানে। মাম্পিকে আরো মেয়েদের সাথে বসে থাকতে দেখেছে।
পর্ণা হয়তো নিলয়ের সাথে একান্তে সময় কাটাচ্ছে।
জলের দিকেই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল শুভদ।
নরম রোদ পড়ে জলরাশি চিকচিক করছে।

-কেন বারবার এক কথা বলছিস। আমি কি করে জানবো এই টিফিন দেবে।
-আমি তো এখানে আসেই চাইনি।তোর জেদাজেদিতে আসতে হল।
-তুই না এলে যে আমার ফাঁকা ফাঁকা লাগত।
এখানে তোকে এনেছি দুটো একান্তে কথা বলব বলে।
অন্য দিন তোর সময় থাকেনা।
-বল ব্ল‍্যাকমেল করে এনেছিস। তুই যদি মায়ের কাছে কাঁদুনি না গাইতিস তো আমাকে আসত হত না।
-নিলয় তুই তো আগে এমন ছিলিস না, আজকাল এত অ‍্যভয়েট করিস কেন?

-পর্ণা তোর সেই এক কথা। বিরক্ত লাগে আমার..
অন্য কথা থাকলে বল।
-আজ এটাই আমার মেন কথা। তোকে বলতেই হবে..তোর ফোন আজকাল বেশিরভাগ বিজি থাকে,হোয়াসট অ‍্যপের মেসেজ সিন করে রিপ্লাই দিস না।
ব‍্যপারটা কি?
-চল!
বেঞ্চ থেকে উঠে বসলো নিলয়।
-কোথায়?
-ঐ যেখানে পিকনিক হচ্ছে।
-কেনরে এতক্ষণ তো তোর এখানে বিরক্ত লাগছিল। ঐজন্য একটু তোকে লেকের ধারে নিয়ে এলাম। এই দিকটা শুনশান বলেই..
-পর্ণা আমার কিছুই ভালো লাগছে না। আমি বাড়ি যেতে পারলে বাঁচি।
-ও তাই!
সুমি কে নিলয়?
নিলয়ের মুখাবয়ব লেকের ধারে ফোটা সাদা চন্দ্রমল্লিকার বর্ণ ধারণ করল।
-কোন সুমি?
-ঐ যেই সুমিকে তোর সাথে কলেজে প্রায় দেখা যায় মানে ইদানিং বেশিই দেখা যাচ্ছে।
-কে বললো এসব কথা। ও আমার জাস্ট ফ্রেন্ড হয়।
উচ্চস্বরে বললো নিলয়।

-নিলয় আমি তোকে ভালোবাসি,আজ থেকে না সেই ছোট থেকেই। কোনো অবাঞ্ছিত আগাছাকে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে সহ‍্য করতে পারব না।
চিৎকার করল পর্ণশ্রী।

বেশ কিছুটা তফাতে ওদের কথোপকথন কানে আসছিল শুভদের। পর্ণার বলা শেষ কথাটা ওর হৃদয়ে আন্দোলিত হলো আরো একবার।

প্রত্যুত্তরে মৌন থাকল নিলয়।
-চুপ করে আছিস কেন আমার কথার উত্তর দে।
নিলয়ের জামার কলার ধরল পর্ণা।

-অসভ্যের মত আচরণ করিস না ছাড় আমাকে..
-না, ছাড়বো না আমার কথার জবাব দে আগে..
-পর্ণা!
হুঙ্কার ছাড়লো নিলয়।

-ছাড়বো না তোকে..
বলে স্থান-কাল-পাত্র উপেক্ষা করে নিলয়কে জড়িয়ে ধরলো পর্ণা।
গায়ের জোরে ছাড়াতে উদ‍্যত হল নিলয়। সফলও হল তাতে..
সামনের দিকে হাটা দিল ও।
রাগে হাতে কামড় বসালো পর্ণা।
-তোর এত সাহস!
নিজ ডান হাতের পাতা বসিয়ে দিল পর্ণার হাতে।

এতক্ষণ নীরব দর্শক ছিল শুভদ। নিলয়ের আচরণে মাথায় রক্ত চড়লো ওর।
ছুট্টে গেল ওদের মাঝে..
-তুমি আর একবার হাত তুলে দেখো, হাত ভেঙে দেব।
হচচকিয়ে যায় দুজনেই..
-শুভদ তুই!
ক্রন্দনরত পর্ণা অবাক হয়।

-কে ও?!
আপমানিত ও ক্রোধ মিশ্রিত গলায় প্রশ্ন করে নিলয়।
-ও রথীন স‍্যারের কাছেই পড়ে..
-যতক্ষণ তর্কাতর্কি চলছিল ততক্ষণ ব‍্যপারটা তোমাদের মধ‍্যে ছিল। কিন্তু যেই তুমি ওর গায়ে হাত তুললে ব‍্যপারটা আর গোপন রইলো না।
-তবুও তোর সাহস হয় কি করে?
এই পর্ণা তোর সাথে ওর কিছু কি চলছে? ও এলই বা কি করে? ওর সাহস হয় কি করে আমাকে থ্রেট দেওয়ার? কোথায় থাকে ও,পরে দেখে নেব?

একসঙ্গে এত প্রশ্নে চুপসে যায় পর্ণা। কোনটার আগে উত্তর দেবে।
-শুভদ তুই যা..
-না যাব না। ও তোর গায়ে হাত দিয়েছে।
-ও তলে তলে এত প্রেম! আমাকে লোক দেখানো এনেছিস তাই না? ছি: তোর মুখ দেখতে ঘৃণা করে আমার..
হনহনিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হয় নিলয়।
-কেন এমনি করলি শুভদ! ও যে আরো রেগে গেল..
-কিন্তু ও কেন তোকে..
-মেরেছে তো! প্রয়োজনে আরো মারুক। তবুও আমি ওর সাথে থাকতে চাই।
শুভদ আমি নিলয়কে ছোট থেকে ভালোবাসি।তাই এই টুকু সহ‍্য করাই যায়।
আর সাইকেল নিয়ে পিছনে ফলো করলেই কাউকে ভালোবাসা যায় না।
কোনটা ভালোলাগা,কোনটা ভালোবাসা তফাৎটা বোঝার চেষ্টা করিস। তবে আজ তুই আমার প্রচন্ড ক্ষতি করে দিলি রে..
বলেই নিলয়ের পথ অনুসরণ করলো পর্ণা।

ঠাঁই ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো শুভদ। মনের মধ‍্যে অনুতাপের পাল্লা ভারী হচ্ছে। ইস! কেন ওদের মধ‍্যে ইন্টারফায়ার করতে গেল কি জানি!

আনন্দ ঘন পরিবেশে পিকনিক উৎযাপন হল। হৈ হুল্লোড় হল,জমিয়ে হল খাওয়া-দাওয়া।
শুধুমাত্র তিনজনের মনে সেই আনন্দের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ।
শুধুমাত্র তিনজনেই লোক দেখাতে দাঁতে কাটলো খাবার।
ফেরার সময় পর্ণার পাশে বসেও নিরুত্তর রইলো নিলয়। ওর অভিমুখে অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে পর্ণা।
পিছনের সিটে শুভদ তখন গা এলিয়ে দিয়েছে। ক্লান্তিতে নয়,গ্লানিতে..

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here