একটা সাধারণ গল্প,পর্ব:১০

0
1509

#একটা_সাধারণ_গল্প
#পর্ব_দশ
#সঞ্চারী_চ্যাটার্জী

পড়ার সময়কালটা মুখ ফুলিয়ে রাখল শুভদ। পর্ণাও কিছুটা আন্দাজ করল ব‍্যাপারটা।
পড়া শেষে সাইকেল নিয়ে আগেই বেরিয়ে গেল শুভদ। তাড়াতাড়ি করে পর্ণা ওর পিছন ধরল।
-কিরে শতাব্দীর বেগে যাচ্ছিস কেন?
-এমনি!
-কি হয়েছে বলবি?
-বললাম তো কিছু না।
-তুই কি ঋষির ব‍্যবহারে মুখ গোমড়া করে রেখেছিস?
-যদি রেখেও থাকি,ভুল কি করেছি?কি অসভ্য ভাবে তোকে টাচ করল?
-আরে ও বরাবরই এরকম,সব কথাতে ফাজলামি লেগেই থাকে । ছাড় ওর কথা..
-আমার ভালো লাগে না এটা তোকে বলে রাখলাম।
অন‍্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে হাসল পর্ণা। শুভদের ওর প্রতি পসেসিভনেসটা উপভোগ করে। নিজেকে খুব ভাগ‍্যবতী মনে করে ও।
ভবিষ্যতেও ওদের সম্পর্কে তেমন বাধা চোখে পড়ে না ওর। প্রথমে হয়তো ওর বাবা অমত করবে পরে মেয়ের মুখে মেনে নেবে। অবশ্য তার আগে ওদের দুজনকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

-তোর আবার কি হল?
রাগত স্বরে বললো শুভদ।
-কিছু না। এই শুভদ আইসক্রিম খাওয়াবি?
-এখন! স্কুলে যাব না?
-না যাবি না। স্কুলে ক্লাস নাইন-ইলেভানের মেয়েদের দেখতে যাবি তো? আমি থাকতে ঐসব হবেনা।
হেসে ফেলে শুভদও।
-এখন দোকানে তোর সাথে আইসক্রিম খাব?
-হু খাবি। মেয়ে হয়ে যখন আমার কোন প্রবলেম নেই,তখন তোর কিসের প্রবলেম!!
-না না কোনই সমস্যা না।চল..

***

স্কুল থেকে শুভদকে ফোন করল পর্ণা। তখন টিফিন আওয়ার্স চলছে। ফোন নিয়ে স্কুলে আসে ওরা। যদিও যন্ত্রটা নির্জীব হয়ে ব্যাগে পড়ে থাকে।
কাল রাত থেকে সমান‍্য একটা কথায় কথা কাটাকাটি হয়েছে পর্ণা-শুভদের মধ্যে। শুভ রাত্রি না জানিয়ে শুয়ে পড়ে দুজনে।সকালে শুভদ ফোন করলেও রিসিভ করেনি পর্ণা, উত্তর দেয়নি মেসেজেরও।
দুজনেই স্কুলে এসেছে। বিরহ আর সহ‍্য হচ্ছেনা পর্ণার,রাগকে সরিয়ে টিফিনের সময়ে ফোন করল শুভদকে।
বহু ঘণ্টা পর পর্ণাকে ফোন করতে দেখে নিজের দর বাড়াল শুভদ।ইচ্ছাকৃত ধরলনা ও..
বার তিন ফোন করার পর ধৈর্য হারাল পর্ণা। সঙ্গে সঙ্গে ডায়াল করল মহিমের নম্বর।
অবাক হল মহিম।
একবার শুভদের অভিমুখে তাকিয়ে কানে নিল ফোনটা।
-শুভদ কোথায়??
-কেন কি হয়েছে?
-সেসব পরে বলছি আগে বল শুভদ কোথায়?
-নিচে গেছে?
-কতক্ষণ!
-পর্ণা তুই এমন পুলিশের মত জেরা করছিস কেন?
-যেটা জিজ্ঞাসা করলাম তার উত্তর দে,আর তুই নিচে যাসনি?
-ও অনেকক্ষণ গেছে..
-শয়তান ছেলে ঐ কারণে আমার ফোন ধরছে না..

অদূরে শুভদ দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে।
-তোদের কি ঝামেলা হয়েছে?
-না ঠিক ঝামেলা না। আমিই ওকে একটু রাগিয়ে দিয়েছি। খুব খচে গেছে না?
-হ‍্যাঁ কাল রথীন স‍্যারে ব‍্যাচে শোধ তুলবে বোধহয়।

ঢং ঢং পড়া ঘন্টা জানাল টিফিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
-চল ক্লাসে যাই।
-তুই যা ভাই। আমি এখন একটু দাঁড়াবো,ঐ মেয়েটা জল আনতে গেছে।এখনো সে আসেনি। তোর না হয় একটা হিল্লে হয়ে গেছে,আমাকে তো আমার দিকটা বুঝতে হবে।
-শালা দু মাস ধরে দেখেই যা। এবার অন‍্য কেউ ট্রফি নিয়ে চলে যাবে।
স্মিত হেসে চলে গেল শুভদ।

নির্ধারিত সময়ে ছুটির ঘন্টা পড়ল। হেলে দুলে বেরল শুভদ। মহিম অবশ্য স‍্যার বেরনো মাত্র ছুটে স্কুলের মেন দরজায় চলে গেছে।
স্কুলে নতুন আসা ক্লাস নাইনের মেয়েটাকে বেশ ভালো লেগেছে ওর।
ভীড় ফাঁকা হল। আবার সাইকেল নিতে স্ট‍্যান্ডে এল মহিম।
-মহিম তুই কবে বলবি?
-আরে ভাই চাপ নিস না ঠিক সময়ে বলব।
-না তুই আজ বলবি কি বল?
-বাদ দে না শুভ, চল বাড়ি চল অন‍্যদিন দেখব।
-আমি বলছি দেখ না..আরে ভয় পাচ্ছিস কেন আমরা ক্লাস টুয়েলভ।আমাদের উপরে কিছু বলতে পারে কি!?
বলতে বলতে স্কুলের গেট থেকে বেরোলো শুভদ।
দুদিকে সবুজ ফিতে দিয়ে চুল বাঁধা নবম শ্রেণীর মেয়েটা তখন ঝালমুড়ি কিনছে।

-ঐ শোনো একবার!
শুভদের ডাকে দুটো মেয়ে ওর দিকে তাকল।
বোঝার চেষ্টা করল কাকে ডাকা হচ্ছে।
-হ‍্যাঁ তোমাকে বলছি।
তর্জনী দ্বারা নির্দেশ করল শুভদ।
-হ‍্যাঁ বলো!
-তোমার নাম কি?
-সুমনা।
সাবলীল ভাবেই উত্তর দিল মেয়েটা।
-বাহ ভালো..তো আগে কোন স্কুলে পড়তে?
প্রশ্নটা করার আগে থমকে গেল ও।
সম্মুখে যে ওর যম দাঁড়িয়ে। এখন এইভাবে তার দর্শন পাবে কল্পনাও করেনি কখনো।
-ক‍্যারি অন শুভদ। দেখলি আজ কেমন হাতেনাতে প্রমাণ পেলাম। কাল ঝামেলার পর ভাবলাম আমি ভুল ছিলাম,এতটা রিয়াক্ট করা আমার উচিত হয়নি। কিন্তু আজ চোখের সামনে যা দেখলাম তাতে বিশ্বাস না করে উপায় নেই।

বাড়ির পথ ধরল পর্ণার সাইকেল।
নিমেষেই সমস্ত হাওয়া বেরিয়ে গেল শুভদের।
ছুট্টে গিয়ে পর্ণার সাইকেলের ক‍্যারিয়ার ধরল।
কাল রাতেই কথায় কথায় বলেছিল ক্লাস নাইনের একটা মেয়েকে ওর বেশ ভালো লাগে। উদ্দেশ্য ছিল পর্ণাকে রাগানো। সেটা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে ভাবেনি ও।
-এই পর্ণা শোন যাস না..
-আমার সাইকেল ছাড়..
-পর্ণা ওই মেয়েটা মহিমের লাভার, মানে মহিম ওকে পছন্দ করে তাই আমি কথা বলতে গিয়েছিলাম।
-আমার কাছে বা* ছাল কথা বলতে আসিস না। তোর কথা না নিজের চোখ কোনটা কে বেশি বিশ্বাস করব বল?
-অনেক সময় নিজের চোখ ধোকা দেয় পাগলি।বিশ্বাস না হলে মহিমকে ডাক,ওকে জিজ্ঞাসা কর।
-শুভদ আমার কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করার নেই, আর মহিম তো তোর বন্ধু। ও তোর দিকেই ঝোল টেনে কথা বলবে। মুখে কি বড় বড় ভালোবাসার কথা! তোর কাছে আমার মূল্য কতটা আজ দেখলাম।
-পর্ণা জেদ করিস না। আমার কথা শোন..
রাস্তার মধ‍্যে নিজের মুক্তিতে আবদ্ধ করল পর্ণার ডান হাত।
-শুভদ আমাকে ছাড়। আমি এক মুহূর্ত থাকতে চাই না।
ওদের থেকে কয়েক হাত দূরে স্কুলের গেটে অবস্থান করছে মহিম। ওদের কীর্তি দেখছে। ওই মেয়েগুলো খাওয়া থামিয়ে কি হলো সেটা বোঝার চেষ্টা করছে। বাকি কিছুজন ছেলেমেয়ে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
পর্ণা গায়ের জোরে শুভদের মুষ্ঠি থেকে নিজের ডান হাত ছাড়াবার চেষ্টা করল। পর্ণাকে মানাতে মরিয়া হয়ে উঠল শুভদ। পর্ণা সাইকেলটাকে স্ট্যান্ড করে ওকে টেনে নিয়ে গেল গাছের পিছনে।
নিজের দুই হাত দিয়ে আবদ্ধ করল পর্ণার দুহাত।
পর্ণার চোখে চোখ রেখে বলল,
-পর্ণা প্লিজ একটু শান্ত হ। সোনটা আমার শোন আমার কথা।
শুভদের কথায় কাজ হল। নিজের ছটফটানি কমল পর্ণার,শান্ত ভাবেই শুভদের চোখে চোখ রাখল ।
-পর্ণা আমি তোকে ভালবাসি, শুধুই তোকে ভালোবাসি। কাল রাতে তোকে রাগাবার জন্য ওই কথা বলছিলাম। তখন ইচ্ছে করেই ফোন ধরিনি। দেখছিলাম তুই কি করিস। সত্যিই অনেকদিন ধরেই মহিম এ মেয়েটাকে পছন্দ করছে প্রত্যেকদিন শুধু দেখেই আছে কিছু বলতে পারছেন না। তাই আজ ভাবলাম ওর হয়ে আমিই ওকে মহিমের প্রোপজালটা দিই। আমি মিথ্যে বলছি না পর্ণা, তোর দিব্যি বলছি ।
-আমার দিব্যি!
ভ্রু কুঁচকালো পর্ণা।
-আচ্ছা, তোর বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে মায়ের দিব্যি বলছি।
-থাক আর দিব‍্যি খেতে হবে না আমি বুঝেছি। তুই ভাব কতটা দুশ্চিন্তায় পড়ে আমি স্কুল ছুটির পর এখানে এসেছি। ভাবলাম ততুই বোধহয় নতুন কাউকে পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিলি।
অভিমানের সুর পর্ণার কন্ঠে।
-কথা দিলাম জীবন থাকতে কখনো এমনটা হবে
না রে।
স্মিত হাসলো পর্ণা, তাতেই বেরিয়ে পড়ল ও দুটো গজদন্ত। মোহিত হয়ে দেখছিল শুভদ। ইচ্ছে করছিল ওই দুই রাঙা ঠোঁটে ঠোঁট বসাতে।স্থান-কাল বিবেচনা করে সেই ইচ্ছে থেকে বিরত থাকলে ও।
-কত দেরি করলি বলতো! কাকিমা চিন্তা করবে। ঘরে এবার কি বলবি?
-ওই প্ল্যান আমার করা আছে। ঘরের ঢোকার কিছুটা আগেই সেফটিপিন দিয়ে চাকা পামচার করে দেবো তারপর ঠেলে ঠেলে ঘরে ঢুকবো ।
-পাগলী একটা..আমার সাইকেলটা নিয়ে আসি। তারপর বাড়ি ছেড়ে দেবো।
-হু জলদি যা..
যেতে যেতেই পিছন ঘুরে তাকল শুভদ। পর্ণা একইভাবে তাকিয়ে ওর দিকে।
অন্তর একটা স্বস্তির নিশ্বাস নির্গত হল শুভদের।
। যতই মারামারি কাটাকাটি হোক ঐ কন‍্যা ওকে ছেড়ে যাবেনা..কিছুতেই যাবে না।
চলবে:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here