উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব ৯

0
653

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ০৯
__________________

“আমি কি ভূত? না কি অদ্ভুত কোনো প্রাণী? এরকম ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”

সাজিদের কথায় সম্বিৎ ফিরলো ইরতিজার। বললো,
“আপনি এখানে কীভাবে?”

“যেভাবে থাকা যায়।”

ইরতিজা কয়েক কদম এগিয়ে এলো। সাজিদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে ইরতিজার মুখোমুখি হলো।
ইরতিজা বললো,
“আপনার সাথে তো গতরাতে কথা হয়েছিল আমার। বলেছিলেন আপনি নিউ ইয়র্ক আছেন। তিন দিনের আগে ফিরবেন না। কিন্তু এখন যখন আপনি এখানে, তাহলে তো কাল সিয়াটল থেকে আমাকে কল করেছিলেন। মিথ্যা কেন বললেন আপনি?”

“বলে ভালো করিনি? সারপ্রাইজড হওনি?”

“না, হইনি। মিথ্যা কথা আমি পছন্দ করি না।”

ইরতিজা নিজের কাছেই নিজে ভীষণ লজ্জিত হলো। এ কথা তার মুখে ঠিক মানায় না। সে নিজেও তো বউ খুঁজে দেওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে সাজিদকে মিথ্যা বলে। ইরতিজার চেহারা তিতকুটে রূপ নিলো। সাজিদ আরও তেতো ভাব ঢেলে দিয়ে বললো,
“হাতের আংটি খুলে রেখেছো?”

এটা তো প্রশ্ন নয়, সাক্ষাৎ বিষ হয়ে কানে ঢুকলো ইরতিজার। অন্তর পর্যন্ত বিষাক্ত হয়ে উঠলো বিষের প্রকোপে।
“হ্যাঁ খুলে রেখেছি। খুলে রাখতেই পারি। এটা একান্ত আমার ইচ্ছা। এটা নিয়ে আবার প্রশ্ন করার কী আছে?”
ইরতিজা বিষয়টা এড়াতে বললো,
“আপনাকে কিছু খেতে দিয়েছে?”

“আপনাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করবো।”

“ভালো…”
বলে রুমের দিকে অগ্রসর হলো ইরতিজা। এরপর দ্রুত শাওয়ার সেরে নিলো। রুমে ঢুকে দেখলো সাজিদ ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

“কী করছেন?” প্রশ্ন করলো ইরতিজা।

সাজিদ ঘুরে তাকালো। এগিয়ে এলো ইরতিজার কাছে। ইরতিজার খুলে রাখা আংটি ওর আঙুলে পরিয়ে দিয়ে বললো,
“সব সময় পরে থাকবেন। আর কখনও যেন এই আঙুলটা আংটি ছাড়া না দেখি।”

ইরতিজা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। লোকটা কি তাকে হুকুম করছে? তাকে হুকুম করার অধিকার কোথায় পায়? ইরতিজা এ সম্মন্ধে কিছু বলতে চাইলেই সাজিদ তার আগে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
ইরতিজা ব্রেকফাস্ট করার মুড হারালো। ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হলো রুম থেকে। লোকটা তাকে হুকুম করার সাহস করে কীভাবে? হুকুম মানতে কি সে বাধ্য? আংটি আবারও খুলে রেখেছে। দেখবে কী হয় তাতে!

“তুমি বাইরে বের হচ্ছো, ব্রেকফাস্ট করবে না?”
হঠাৎই আব্বুর প্রশ্ন কানে এলো।

ইরতিজা পিছন ফিরে দেখলো আব্বু তার থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে। ইরতিজা বললো,
“ক্যান্টিনে করে নেবো।”

“সাজিদ এসেছে, তোমার অবশ্যই আমাদের সাথে বসে ব্রেকফাস্ট করে যাওয়া উচিত।”

ইরতিজা কিছু বলার আগেই শারমিন আহমেদ এসে বললেন,
“এক পা’ও নড়বে না কোথাও। ব্রেকফাস্ট করে তারপরই বাসা থেকে বের হবে। নয়তো আজ পুরো দিনে বাসার কোনো খাবার তুমি পাবে না।”
কাঠ কাঠ কথাগুলো বলে চলে গেলেন শারমিন। ইরতিজাকে কিছু বলার সুযোগ দিলেন না। ইরতিজা বাবার দিকে তাকালো। বাবা বললেন,
“এসো।”

বাধ্য হয়ে ব্রেকফাস্টটা সেরে নিতে হলো ইরতিজার। বাসা থেকে বের হলো সাজিদের সাথে। সাজিদ বললো,
“এসো, তোমাকে ড্রপ করে দিই।”

“থ্যাঙ্ক ইউ। কিন্তু আমি আপনার সাথে যাব না।”

“কেন?”

“আমি জুহির সাথে যাব…আপু…”
নওরিনকে বাসা থেকে বের হতে দেখে ডাকলো ইরতিজা।

সাজিদ বললো,
“বোনকে কেন ডাকছো? আমার সাথে একা যেতে কি তোমার অস্বস্তি হবে? না কি ভয় পাচ্ছ?”

“আপনি কি ভয়ের মানুষ যে আপনাকে ভয় পাবো? উল্টো আপনার আমাকে ভয় পাওয়া উচিত।”

“কেন?”

“কারণ আমি মানুষটাই ভয় পাওয়ার মতো। ভীষণ ডেঞ্জারাস!”
বাঁকা হেসে চাচার ঘরে যাওয়ার জন্য ঘুরলো ইরতিজা। সাজিদ পিছন থেকে বলে উঠলো,
“আপনি মানুষটা বেহায়া ইরতিজা! আংটিটা আপনি খুলে রেখেছেন!”

ইরতিজা দাঁড়িয়ে গেল। নওরিন সাজিদের কথা শুনতে পেয়ে মুখ টিপে হাসলো।
এমন একটা অপমানের জন্য প্রস্তুত ছিল না ইরতিজা। রাগ-কষ্টে এখান থেকে ছুটে পালাতে ইচ্ছা করলো তার। বোনের সামনে এরকম অপমান কী করে করতে পারলো? একা থাকলে অনেক কিছু বলতো সাজিদকে। কিন্তু নওরিন থাকায় দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিলো। চুপচাপ এগিয়ে গেল ঘরের দিকে।

__________________

ঘাসের উপর নরম রোদের আলতো ছোঁয়া। রোদের উজ্জ্বলতা মেখে আছে ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস। ইরতিজা একা একা লনে বসে আশপাশে চোখ বুলাচ্ছে। জুহি তার দলবল নিয়ে কোথায় একটা চলে গেছে। ইরতিজাকে ডেকেছিল। সে যায়নি, যেতে ঠিক ভালো লাগেনি। তার চেয়ে এখানে বসে বসে ক্যাম্পাস দেখছে এটাই ভালো। ক্রাচে ভর দিয়ে কারো এগিয়ে আসার শব্দ ভেসে আসছিল কানে। ইরতিজার একবার চেয়ে দেখতেও ইচ্ছা হয়নি। জানে এটা আন্দ্রেজ। ইরতিজা তাকালো যখন আন্দ্রেজ তাকে ডাকলো,
“টিজা!”

তাকালো ইরতিজা। ‘টিজা’ তার আমেরিকা ভার্সন নাম হয়ে গিয়েছে। ইরতিজা উচ্চারণ করতে হিমশিম খায় বলে ছোটো করে সবাই ‘টিজা’ সম্বোধন করে। ভালো লাগে ‘টিজা’ সম্বোধনটা। তবে একজনের মুখে শুনতে একটু বেশি ভালো লাগে। আশ্চর্য রকম ভাবে যাকে ঘৃণা করে তার মুখেই শুনতে বেশি ভালো লাগে!
আন্দ্রেজ হাস্য মুখে মিষ্টি রঙের একটা ফুল বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“টেইক ইট টিজা।”

ইরতিজাও হাসি মুখে ফুল নিয়ে বললো,
“থ্যাঙ্ক ইউ।”

“এটা আমাদের ক্যাম্পাসেরই ফুল। অসংখ্য ফুল আছে এখানে। বসন্ত এলেই দেখতে পাবে। চেরি ব্লসমের গাছগুলো তো দেখেছো, তাই না?”

ইরতিজা মাথা দোলালো।

“বসন্ত পর্যন্ত ওয়েট করো চেরি দেখার জন্য।”

আন্দ্রেজ আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে চলে গেল। যতক্ষণ না চোখের আড়াল হলো ইরতিজা ঠাঁয় তাকিয়ে রইল। ছেলেটাকে এরকম হাঁটতে দেখলেই কষ্টের আলপিন ফুঁটে ওঠে হৃদয়ে। অন্যমনস্ক হয়ে গেল ইরতিজা। তাকিয়েই রইল। চোখের পলক পড়লো না। হঠাৎ ঘাড়ের পিছন থেকে একটা কণ্ঠ ফিসফিস করে বলে উঠলো,
“আমাকে ফলো করতে করতে এখান অবধি এসে গিয়েছো?”

ধ্যান ভাঙলেই চমকে উঠে পিছনে তাকালো ইরতিজা। একটা পরিচিত মুখ দেখতে পেল। কমলা রঙা চোখ দুটো চরম বিরক্ত নিয়ে তাকে দেখছে। ইরতিজা উঠে গেল বসা থেকে। ব্যাগটা পিঠে নিলো। ক্যানিয়লকে এখানে দেখে ভীষণ অবাক সে। এই সেরা পাজি এখানে কেন?

ক্যানিয়ল ভ্রু সংকুচিত করে ইরতিজার মুখে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
“প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি একজন আততায়ী। কিন্তু এখন তো দেখছি তোমার মতলব ভিন্ন…”

“মানে?” গভীর বিস্ময় খচিত শব্দটা মুখ ছুটে বেরিয়ে এলো ইরতিজার।

ক্যানিয়ল সংকুচিত ভ্রু নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ইরতিজাকে দেখলো ক্ষণকাল। তারপর ভ্রু জোড়া প্রসারিত করে বললো,
“আমার মতো সুদর্শন ছেলে দেখলেই কি প্রেমে পড়ে যেতে হবে তোমার?”

ইরতিজার বিস্ময় আকাশ ছুঁয়ে গেল,
“কী?”

ক্যানিয়ল অন্তঃ মাঝে অহংবোধ এনে বললো,
“লিসন, আমি একজন বড়ো লোক মানুষ! সোনার চামচ মুখে নিয়ে আমার জন্ম। যার-তার প্রেমে পড়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সো আমার প্রেমে পড়ে কোনো লাভ নেই তোমার। একেবারে কোনো লাভই নেই।”

ক্ষিপ্রতার একটা ঢেউ ক্রমশ হেলেদুলে উঠছে ইরতিজার মাঝে। সেই ঢেউ সমুদ্র উপকূলে আঘাত হানলেই ইরতিজা বললো,
“আমি কি বলেছি আমি তোমার প্রেমে পড়েছি? ভাবো কী তুমি নিজেকে? কোন কারণে আমি তোমার প্রেমে পড়বো? আজব! মুখ সামলিয়ে কথা বলবে!”

ক্যানিয়ল ব্যাঙ্গাত্মক হেসে বললো,
“অপরাধী কখনও স্বীকার করতে চায় না সে অপরাধ করেছে। আর তুমি তো প্রথম দেখাতেই মিথ্যাবাদী পরিচয় দিয়েছো।”

ইরতিজা মুখ খুলতে নিলেই ক্যানিয়ল হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“আমার এনগেজড হয়ে গেছে। আমার উডবি ওয়াইফ দারুণ সুন্দর। তুমি তার সৌন্দর্যের কাছে অতি তুচ্ছ। আমার প্রেমে পড়া তোমার ঠিক মানায় না। দ্রুত তোমার মন থেকে আমার জন্য প্রেম অপসারণ করো।”

বলে ইরতিজার পাশ কাটিয়ে চলে গেল ক্যানিয়ল।
ইরতিজা পিছন থেকে বড়ো গলায় বললো,
“আমারও এনগেজড হয়েছে। আমার উডবি হাসব্যান্ডও অনেক সুদর্শন। নিজের সুদর্শন এবং ভালো উডবি হাসব্যান্ড থাকতে তোমার মতো পাজি ছেলের প্রেমে কেন পড়বো আমি? আমাকে কি পাগল ভাবো?”

ক্যানিয়ল বাঁকা চোখে পিছন ফিরে তাকালো। ইরতিজার আঙুল শূন্য দেখে হেসে বললো,
“মেয়েরা গল্প বানাতে দারুণ পারদর্শী! তুমি বোধহয় একটু বেশিই পারদর্শী পাকিস্টানি গার্ল।”

“আমি পাকিস্তানি নই।”

“তুমি পাকিস্টানি।”

“আমি বলছি তো, ‘না’।” বিরক্তি ঝরে পড়লো ইরতিজার গলায়।

ক্যানিয়ল ইরতিজার মাথা লক্ষ করে বললো,
“আজকে হিজাব পরোনি কেন?”
বলেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো। দুই হাত প্রয়োগ করে এলোমেলো করে দিলো ইরতিজার চুল। এত দ্রুত এটা ঘটলো যে ইরতিজা কিছু বলারও সুযোগ পেল না। যখন বললো তখন তার পরিপাটি চুল অগোছালো।

“এটা কী করেছো তুমি?”
ঘটনাটায় এতটাই খারাপ লাগা অনুভব করলো যে, বিন্দু বিন্দু পানি কণিকা ভিড় জমালো ইরতিজার চোখের কোলে।

ক্যানিয়ল তা লক্ষ করে বললো,
“বলেছিলাম না তুমি একটা ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে? জাস্ট সহ্যযোগ্য নও তুমি। বিরক্তিকর!”

ক্যানিয়ল যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে দিলো। ইরতিজা ব্যস্ত হয়ে পড়লো চুল ঠিক করতে। দুই হাত দিয়ে কোনো রকম গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। হঠাৎ একটা কথা মনে উদয়মান হলো তার। ডাকলো ক্যানিয়লকে,
“শোনো।”

ক্যানিয়ল দাঁড়িয়ে পিছন ফিরলো।

ছেলেটা তার সাথে যা করেছে তাতে প্রশ্নটা একেবারেই করা উচিত নয়। কিন্তু কৌতূহল হচ্ছে। জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি মুসলিম?”

ক্যানিয়ল ওষ্ঠাধরে ফিচেল হাসি ফুঁটিয়ে বললো,
“কেন? মুসলিম হলে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরবে?”

ক্যানিয়লের প্রত্যুত্তরে মুখ ভোঁতা হয়ে এলো ইরতিজার। রাগে কিড়মিড় করে বললো,
“বেয়াদব!”

ক্যানিয়লের ওষ্ঠ হতে হাসি মুছে মুখ কঠিন হলো। বললো,
“কী বললে? আবারও উর্ডু?”

ইরতিজা এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে চলে এলো ওখান থেকে। জুহি আর ওর বন্ধুরা ঢুকছে ক্যাম্পাসে। ইরতিজা ওদের দেখে এগিয়ে এলো। বেথ নামের একটা মেয়ে বললো,
“তোমার চুলের এই অবস্থা কেন টিজা?”

“আসলে…” থেমে এলো ইরতিজার কণ্ঠ। কোনো উত্তর নেই তার কাছে। ক্যানিয়ল তার চুলের এই অবস্থা ঘটিয়েছে এটা কি বলা যায়? শুনলে সবাই হাসাহাসি করবে!

ইরতিজা অন্য কথা বলে প্রসঙ্গ পাল্টালো। কথাবার্তা চলতে লাগলো। তবে এই আসরে জুহি যে থেকেও অনুপস্থিত এটা অনেকেরই খেয়াল হলো না। সব সময়ের বকবক করতে থাকা মেয়েটা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কারো কথার দিকে ভ্রুক্ষেপও নেই তার। সে তাকিয়ে আছে দূরে আন্দ্রেজের দিকে। একটা চাপা রাগ অন্তঃকরণের সর্বত্র গ্রাস করে ফেলছে তার। ওই শ্বেতাঙ্গ সুন্দরী মার্টার দিকে এরকম মুগ্ধতা নিয়ে কেন তাকিয়ে আছে আন্দ্রেজ? পছন্দ করে বলে কি নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকতে হবে? জুহি চুপচাপ নিজের দলের কাছ থেকে দূরে সরে এলো। এসে আন্দ্রেজের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
“এটা তুমি ঠিক করছো না আন্দ্রেজ। এটা ইভটিজিং!”

আন্দ্রেজ বিস্ময়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,
“হোয়াট?”

“একটা মেয়ের দিকে নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে থাকাও ইভটিজিংয়ের ভিতরই পড়ে।”

“তাহলে তো বলতে হয় এদিক দিয়ে তুমি ভীষণ এগিয়ে।”

“মানে? কী বোঝালে এই কথা দ্বারা? আমি কি মেয়েতে আগ্রহী যে আমি এদিক দিয়ে এগিয়ে থাকবো?”

“সর্বদা যে ছেলেদের পটানোর চেষ্টায় থাকো সেটা ইউনিভার্সিটির অনেক অংশই জানে।”

আন্দ্রেজ জানে এখন এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে জুহির সাথে তার তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে যাবে। তাই এটা কাটাতে সে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো। চলে আসতে আসতে শুনলো জুহির ক্ষুব্ধ কণ্ঠ,
“তোমাকে আমি আজ এই মুহূর্তে আমার ফ্রেন্ড সার্কেল থেকে বয়কট করলাম আন্দ্রেজ। আর কখনও আমার সামনে পড়বে না তুমি। আই হেইট ইউ!”

_________________

চিরকুটটার কথা একদম মনে ছিল না ইরতিজার। আজ ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার সময় ক্যানিয়ল তাকে হঠাৎ আলতো কণ্ঠে পিছন থেকে ডাকে,
“হেই পাকিস্টানি গার্ল!”

পিছন ফিরলেই হাতে একটা চিরকুট গুঁজে দেয় সে। ইরতিজা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে কিছু না বলে শুধু হেসে চলে যায় ক্যানিয়ল। চিরকুট যে দিয়েছে এটা কেউ খেয়াল করেনি। ইরতিজা চাইছিল ওই সময়ই চিরকুটটা খুলে দেখবে, কিন্তু আবার কী ভেবেই পিছিয়ে যায়। কী না কী লিখেছে চিরকুটে এ ভেবে আর দেখারই ইচ্ছা হয়নি। ইরতিজা বুঝতে পারছে না ওই পাজি ছেলেটার সাথে তার এত কেন দেখা হচ্ছে? দুদিন রাস্তায় দেখা হয়েছিল, আর আজ ভার্সিটিতে দেখলো। আজবভাবে কেন ছেলেটার এই ভার্সিটিতেই পড়তে হবে? জুহির কাছ থেকে জেনেছে, ক্যানিয়ল তাদের দুই ব্যাচ সিনিয়র।

আকাশের গায়ে ছড়িয়ে আছে অজস্র নক্ষত্র। নেইবরহুডদের বাড়িতে আলো জ্বলছে। সামনা-সামনি একটা বাড়ির সামনে পাতাহীন গাছ আছে। এই গাছটার পাতা ঝরে গেছে শীতের কারণে। গাছটার গায়ে জ্বলছে এখন রঙিন লণ্ঠন। অনেকগুলো লণ্ঠন টাঙানো হয়েছে ডালের সাথে। বাড়িটার মানুষজন বেশ শৌখিনপূর্ণ বলতে হয়। ইরতিজা চোখ সরিয়ে আনলো জানালা থেকে। চিরকুটটা খুলে দেখা উচিত। ব্যাগের ভিতর আছে। কী লিখেছে পাজি ছেলেটা কে জানে! অপমানজনক কিছু লিখে থাকলে এর শোধ কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দেবে। সে মোটেও অত সহজ মেয়ে নয়। চিরকুট বের করে ভাঁজ খুললো ইরতিজা। ইংলিশ অক্ষরে সুন্দর লেখাটা ফুঁটে আছে,
‘ইয়াহ, আই অ্যাম মুসলিম।
মাই নেম ইজ মুহাম্মদ উমরান ইবনে ইসহাক! ইউ ক্যান কল মি ক্যানিয়ল।’

এর একটু নিচে ছোটো অক্ষরে লেখা,
‘আচ্ছা, তোমার নাম কী?
ছিঁচকাঁদুনে মেয়ে না কি?’

এর নিচেই আবার লেখা,
‘আমার প্রেমে পড়েছো ভালো কথা, তাড়াতাড়ি ভুলে যাও। আমাকে মনে রাখার যোগ্য নও তুমি। আমি ভীষণ স্পেশাল! তুমি এতটাই তুচ্ছ যে, তুমি আমার প্রেমে পড়েছো ভাবতে আমার লজ্জা হচ্ছে! সবাই যদি জেনে যায় তুমি আমার প্রেমে পড়েছো, তাহলে লোক সমাজে মুখ দেখানোর পরিস্থিতি থাকবে না আমার।’

(চলবে)
___________

(নাও, তোমাদের মুহাম্মদ উমরান ইবনে ইসহাকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here