উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব ৮

0
683

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ০৮
__________________

ক্যানিয়লের যখন ঘুম ভাঙে তখন তার শরীর ছিল ঘর্মাক্ত। দরদর করে ঘাম ঝরছিল তার শরীর থেকে। কাঁপছিল শরীর। স্বপ্ন দেখেছে সে। স্বপ্নটা মারাত্মক না হলেও এটা তার কাছে অতি মারাত্মক। সে দেখেছে একজনের চলে যাওয়া, দেখেছে একটা ছোটো ছেলের একাকী কষ্টে থাকার দৃশ্য। এই স্বপ্নটা এখনও পীড়া দেয় তাকে ভাবতে অবাক লাগে! শ্বাসভারী হয়ে বুক দ্রুত ওঠানামা করছিল। ধীরে ধীরে নিজেকে ধাতস্থ করলো ক্যানিয়ল। ধূসর রঙের গেঞ্জির উপর কালো হুডিটা পরে নিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। চোখ দুটো লাল দেখাচ্ছে। চেহারাটা ফ্যাকাশে, চুল উশখুশ। দেখে ক্যানিয়লের নিজেরই বিরক্ত বোধ হলো। ঢুকে গেল ওয়াশরুমে।
ওয়াশরুম থেকে যখন বের হলো তখন তার ফোনটা বাজছে। মোবাইলের কাছে এসে দেখলো ‘Little brother’ লেখা নাম্বার থেকে কল এসেছে। রিসিভ করে বললো,
“কী খবর?”

“কোথায় আছো তুমি?”

“মাই সেকেন্ড হোম, আই মিন এন্ডারসন হাউজে আছি। কোনো প্রয়োজন?”

“এখনই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দাও।”

“কেন?”

“মাদার বেলা এসেছে…”

ক্যানিয়লের ভ্রু অপ্রতিভ কুঁচকে উঠলো। কল কাটার পর সে এক মুহূর্ত সময় ব্যয় না করে একটা কালো পুরু কোট চাপিয়ে বের হলো এন্ডারসন হাউজ থেকে। গাড়িটা বাড়ির সামনে পার্ক করা। রিমোট চেপে লক খুলে দ্রুত গাড়িতে ঢুকলো। তার মেইন বাড়ি এখান থেকে পনেরো মিনিটের পথ। যেতে যেতে তার মাথায় যে প্রশ্ন জাগ্রত হলো, তা হলো- মিস বেলা লিমাস এখানে কেন এসেছে?
মিস বেলা লিমাসের সাথে ক্যানিয়লের শেষ দেখা হয়েছিল আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে। ক্যানিয়লের সব মনে আছে। সেদিন মিস বেলার সাথে সে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ আচরণ করেছিল। মিস বেলা ইউরোপ চলে যাবে বিধায় দেখা করতে এসেছিল। সেদিন ক্যানিয়ল বলেছিল, আর জীবনে কোনোদিন যেন মিস বেলা তার মুখোমুখি এসে না দাঁড়ায়। বেলা লিমাসের মুখ দেখতেও তার ঘৃণা হয়। এই ঘৃণার থেকে চির জীবনের জন্য যেন মুক্তি পায় সে। হ্যাঁ, এসব বলেছিল! কিন্তু বেলা লিমাস ইউরোপ থেকে ফিরে তার সাথে দেখা করতে এসেছে। কেন এসেছে? সে আসলেই ঘৃণা বোধ করে মিস বেলা লিমাসের প্রতি।
বাড়ির সামনের রোডে গাড়ি থামালো ক্যানিয়ল। মিস বেলা লিমাসকে দেখতে পেয়েছে। রাস্তার পার্শ্বে একাকী দাঁড়িয়ে আছে। ক্যানিয়লকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে বেলা লিমাসের মুখে হাসি ফুঁটলো। ক্যানিয়লের দিকে কয়েক পা এগিয়ে এসে ওর গালে হাতের পরশ বুলিয়ে বললো,
“কেমন আছো ক্যানিয়ল?”

ক্যানিয়ল বিরক্ত কণ্ঠে বললো,
“স্টপ ইট…” বলে বেলা লিমাসের হাতটা সরিয়ে দিয়ে প্রায় চ্যাঁচানো গলায় বললো,
“কেন এসেছো তুমি এখানে? বলেছিলাম না আমার সাথে আর কখনও দেখা করার চেষ্টা করবে না? দেখা করার জন্য একেবারে এই বাড়িতে এসে কীভাবে উপস্থিত হয়েছো? লজ্জা করছে না তোমার? আমার তো লজ্জা করছে! প্লিজ, তুমি চলে গেলেই খুশি হবো।”

বেলা লিমাসের চোখে অশ্রু টলমল করছে। কণ্ঠে কষ্টের ফোয়ারা নিয়ে বললো,
“এরকম করে বলো না ক্যানিয়ল। ইউরোপ থেকে ফিরেই তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি, আর তুমি…”

“না, কোনো প্রয়োজন তো নেই আমাকে এরকম ভাবে দেখতে আসার। নিষেধই তো করে দিয়েছি আমাকে দেখতে আসবে না। যখন তোমার আমাকে দেখার প্রয়োজন ছিল তখন দেখোনি। এখন আর আমাকে দেখার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি নিজেকে নিজে দেখতে পারি এখন।”

মিস বেলার মুখে আর কথা ফোঁটে না। শুধু চোখ ফেঁটে এক ফোঁটা স্বচ্ছ নয়ন জল গড়িয়ে পড়লো।
ক্যানিয়লের হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে। হৃদয় মুমূর্ষু। এই মুমূর্ষু অবস্থায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চাচ্ছে। বললো,
“ড্যাড নিশ্চয়ই দেখেনি তোমায়। সে দেখার আগেই চলে যাও। আমি চাই না ড্যাড তোমার মুখ দর্শন করুক।”

মিস বেলা ঈষৎ মাথা দোলালো। হাতের গোলাপি ফিতায় বাঁধা কালো বক্সটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
“টেইক ইট।”

“অন্যের কাছ থেকে কিছু নিই না। বিশেষ করে যাকে ঘৃণা করি তার কাছ থেকে তো কিছু নেবোই না। আমার যা খুশি তা আমি নিজেই কিনতে পারি।”

ক্যানিয়ল উপহার গ্রহণ না করে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। গাড়ি স্টার্ট করে বাড়ির ভিতর ঢুকলো। পুরোনো ক্ষততে আগুনের উত্তাপ লেগেছে। ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় জ্বলছে।
গ্যারেজে গাড়ি পার্ক করে নামলো ক্যানিয়ল।
সামুরা গ্যারেজে এসে দাঁড়িয়েছে। ভাইকে জিজ্ঞেস করলো,
“দেখা হয়েছে?”

“হলো।”

“ইউনিভার্সিটি যাবে না মনে হচ্ছে?”

“না।”

সামুরাকে আর প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়ে ক্যানিয়ল চলে গেল।
সামুরা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ির রিমোট চাপলো।

______________

রাতে শীত বাড়ে। আজ তো আবার তুষারপাত হয়েছিল। গায়ে মোটা উষ্ণ কাপড় না জড়ালে শীত থেকে বাঁচা দায়। তুষারপাত মারাত্মক ছিল না, হালকা ছিল। রাস্তা থেকে তুষারপাত অপসারণ করা হয়েছে। রাতের রাস্তায় হাঁটছে ইরতিজা। পাশে জুহি। জুহি বকবক করে চলছে। নিজের ফ্রেন্ড সার্কেল সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে। আজ ইরতিজা ভার্সিটি গিয়েছিল। এরপর থেকে নিয়মিত যাবে। সেই আন্দ্রেজ নামের ছেলেটাকে আজ দেখেছে। ছেলেটার জন্য মায়া অনুভব হয় তার। কী ভীষণ ভালো ছেলেটা! মিশুক। জুহির প্রত্যেকটা ফ্রেন্ডকেই মিশুক দেখেছে সে। শুধু একজনকে কেমন একটু লাগলো। মেয়েটার নাম, অ্যানডি। মেয়েটা বোধহয় পছন্দ করেনি তাকে। তাতে কিছু যায় আসে না ইরতিজার। একটা মানুষকে যে সবার ভালো লাগতে হবে এর কোনো মানে নেই।
আশেপাশের জাগতিক সব কিছুর মাঝে ইরতিজার মনে বার বার জোনাস উঁকি দিয়ে উঠছে। ছেলেটা তাকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। সেদিন ফোন করে ওসব বলার পর কী যেন হয়েছে ইরতিজার। বার বার তার মন স্মরণ করে চলছে জোনাসকে। অথচ কথা ছিল কী? কথা ছিল সে মনে করবে না জোনাসকে। ওদিকে সাজিদও ফিরে আসবে খুব শীঘ্রই। সাজিদের প্রশ্নের উত্তর সে খুঁজে পায়নি। মনে হচ্ছে সাজিদ ফিরে আসলে সে খুশি, অখুশি কিছুই হবে না।
ইরতিজার খুব কাছ থেকেই একটা সাইকেল পাশ কাটিয়ে গেল। ইরতিজা এবং জুহি চোখের পলকে ঘটে যেতে দেখলো একটা দুর্ঘটনা। ইরতিজার পাশ থেকে যে সাইকেলটা গিয়েছিল সেটা একটু সামনে যেতেই পড়ে গিয়েছে। ইরতিজা, জুহি জায়গাতেই দাঁড়িয়ে গেল। সাইকেল চালক সাইকেল থেকে একটু দূরে ছিটকে পড়েছে। একটু আর্তনাদ করতে শোনা গেল। উঠতে উঠতে একটু সময় লাগলো তার। ব্যথা পায়নি তেমন। শক্ত শরীরে খুব সহজে ব্যথা লাগেও না। সে উঠে দাঁড়িয়ে যখন সম্মুখে তাকালো ইরতিজা চমকে উঠলো। সেই সেরা পাজি ছেলেটা না?
ক্যানিয়ল ওদের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“পিছন থেকে কে ধাক্কা দিয়েছে আমাকে?”
ক্যানিয়ল ইরতিজার দিকে তাকিয়ে বললো,
“পাকিস্টানি গার্ল, তুমি করেছো এটা? না কি তুমি?”
শেষ প্রশ্নটা জুহির দিকে ছুঁড়লো।

ইরতিজা হতভম্ব। নিজে নিজে সাইকেল নিয়ে পড়ে বলছে তাকে ধাক্কা দিয়েছে কে! জুহি পাশ থেকে বললো,
“তুমি ভুল করছো। তোমাকে কেউ ধাক্কা দেয়নি। তুমি এমনিতেই পড়ে গিয়েছো!”

ক্যানিয়ল অতি বিরক্তির সহিত জুহির দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমাকে ভুল ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করো না। তুমি কি ভেবেছো, তোমাকে আমি চিনি না? ইউ আর আ প্লে গার্ল!”

বিস্ময়ে জুহির মুখ হা হয়ে গেল,
“আমাকে বলছো?”

“ইয়াহ, ইউ আর আ প্লে গার্ল!”
ক্যানিয়ল এ বিষয়ে কথা বাড়তে না দিয়ে বললো,
“আমি স্পষ্ট পিঠে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করেছি। ওই হাত যে তোমাদের কোনো একজনের হাত এটা স্পষ্ট। বলো, কে দিয়েছো ধাক্কা? হেই পাকিস্টানি গার্ল, তুমি করেছো এটা? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই এটা তুমিই করেছো। শ্বাস রোধ করে মারতে না পেরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে মারতে চাও? আমার ধারণা তো বিন্দুমাত্র মিথ্যা নয়। তুমি আসলেই একজন আততায়ী! কী সাংঘাতিক, ধাক্কা দিয়ে মারতে চাও!”

ইরতিজার মেজাজ চটে গেল,
“দেখো আমরা কেউই তোমাকে ধাক্কা দিইনি। নিজে নিজে সাইকেল নিয়ে পড়েছো। আর আমি পাকিস্তানি নই, আমি বাংলাদেশি। বাংলাদেশ থেকে এসেছি আমি।”
ইরতিজা লক্ষ করেছে ছেলেটা তাকে ‘পাকিস্তানি গার্ল’ বলে। শারীরিক রূপ দেখে, না কি পোশাক দেখে এমন ভাবছে বুঝতে পারছে না। কী দেখে যে কী ভাবছে সেই ভালো জানে!

ক্যানিয়ল চোখ সরু করে অদ্ভুত ভঙ্গিতে দেখলো ইরতিজাকে। বললো,
“তুমি পাকিস্টানি নও?”

“না।”

“মিথ্যা বলছো। তুমি অবশ্যই পাকিস্টানি।”

“আমি বলছি আমি পাকিস্তানি নই, তারপরও তুমি বলবে আমি পাকিস্তানি?”

“আমি শিওর তুমি পাকিস্টানি। থাক, এ টপিক বাদ দিই। ধাক্কা কে দিয়েছো সেটা বলো? তুমিই দিয়েছো, তাই না?”

ইরতিজা রেগে গিয়ে কটমট করে তাকালো।
ক্যানিয়ল বললো,
“এরকম করে তাকিয়ো না। ডাক্তারদের আমি অপছন্দ করি, নয়তো তোমার চোখ ডাক্তারের মাধ্যমে তু’লে ফেলতাম!”

জুহি গর্জে উঠে বললো,
“তুমি কার সামনে কাকে কী বলছো ক্যানি? ও আমার কাজিন। আমার কাজিনকে এমন করে বললে আমি মোটেও সহ্য করবো না।”

“ও-হো, তোমার কাজিন? বংশ গতই তাহলে তোমরা বাজে!”

জুহি কিছু বলার জন্য মুখ খোলা দিলেই ক্যানিয়ল থামিয়ে দিয়ে বললো,
“তোমার কাজিনকে বলে দাও, আমি মানুষটা…”
ক্যানিয়ল থামলো। অদ্ভুত ভাবে হেসে বললো,
“তুমি তো জানো আমি কেমন! সেটাই ওকে বলবে। নিজের গ্যাংয়ের কথায় যদি ও বার বার এমন করে তাহলে হাত-পা একটাও আস্ত রাখবো না।”

ক্যানিয়ল অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো। যেতে যেতে সাইকেলের কাছে গিয়ে সজোরে একটা লাথি মারলো সাইকেলের গায়ে। তারপর হাঁটতে হাঁটতে এক সময় চোখের অদৃশ্য হয়ে গেল।

ইরতিজা অনিমেষ তাকিয়ে ছিল। জুহির কথায় ধ্যান ভাঙলো,
“তুমি যে পাজি ছেলেটার কথা বলেছিলে সেটা কি এই ক্যানিয়ল?”

“হ্যাঁ, এই ছেলেটা।”

জুহি কিছু বললো না, কেমন অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল। ইরতিজা বললো,
“তুমি চেনো এই ছেলেটাকে? কীভাবে চেনো?”

“রেডমন্ডে থাকি, ওকে চেনা এমন কী ব্যাপার?”

“হ্যাঁ, সেটা ঠিক।”

জুহি একটু কাছে এগিয়ে এসে বললো,
“ইউ নো টিজা? ক্যানিয়ল কিন্তু মুসলিম।”

বিস্ময় স্ফূর্ত হলো ইরতিজার চোখে। মুখ ফসকেও বিস্ময়ের ধ্বনি বেরিয়ে এলো,
“মুসলিম?”

জুহি হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লো।

“কিন্তু ওর নাম তো ক্যানিয়ল।”

“তো? ক্যানিয়ল নাম হতে পারে না?”

“আমি তো ভেবেছিলাম ও ক্রিশ্চিয়ান। নাম শুনেও তো কেমন ক্রিশ্চিয়ান ক্রিশ্চিয়ান মনে হয়। একটা মুসলিম ছেলের নাম ক্যানিয়ল হতে যাবে কেন? তুমি কি মজা করছো আমার সাথে?”

“ও আসলেই মুসলিম। শুনেছিলাম ওর দাদা পনেরো বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। ক্যানিয়ল নামটা দিয়ে কি আর ধর্ম যাচাই করা যায়? হতেই পারে এ নাম। আর ক্যানিয়ল তো ওর নিক নেম। ওর আসল নাম তো অন্য কিছু।”

ইরতিজা বিস্মিত, অবাঞ্ছিত। সে ভাবতেই পারেনি ওই পাজি ছেলেটা মুসলিম হতে পারে। এটা ভাবনায় আসারও কথা নয়। জিজ্ঞেস করলো,
“আসল নাম কী তাহলে?”

“আসল নাম…আসল নাম হচ্ছে…ওই…ওই…” বলতে গিয়ে থতমত খেতে লাগলো জুহি। আসল নাম কী ক্যানিয়লের? মনে পড়ছে না। ইরতিজার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,
“আসল নাম তো মনে পড়ছে না।”

নামটা জানতে না পেরে ইরতিজার খারাপ লাগলো। রাস্তায় পড়ে থাকা সাইকেলের দিকে তাকিয়ে বললো,
“সাইকেলটার কী করবে? এভাবে ফেলে রেখে গেল কেন সাইকেলটা?”

জুহি সাইকেলটার দিকে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল। ইরতিজাকে বললো,
“এসো এটাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে রাখি।”

বাড়ি ফিরে দেখলো মা রান্না করছে। সাহায্য করার জন্য ইরতিজা রান্নাঘরে ঢুকলো। কী করবে জিজ্ঞেস করলে মা প্রথমে কিছু বললো না। তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করার পর বললো,
“পেঁয়াজ কাটো।”

ইরতিজা চপিং বোর্ডের উপর পেঁয়াজ রেখে কাটতে লাগলো। একটুর ভিতরই চোখে জল থলথল করে উঠলো। তবুও কাজ থামলো না। পেঁয়াজ কাটাকালীন শারমিন আহমেদ ইরতিজার হাত লক্ষ করলেন। হাতে আংটি না দেখে বললেন,
“তোমার হাতের আংটি কোথায় ইরতিজা?”

ইরতিজা ঘাবড়ে গেল। উত্তর তৈরি করা কিন্তু অপ্রস্তুত ভাবটা চলেই এলো তার মাঝে। এতদিন যখন কেউ খেয়াল করেনি বিষয়টা, আজকে কেন করতে হলো তাহলে? অপ্রস্তুত ভাবটা গিলে বললো,
“আঙুলে দাগ পড়ে যাচ্ছিল, তাই খুলে রেখেছিলাম।”

শারমিন ইরতিজার হাতটা হঠাৎ নিজের হাতে নিয়ে এলেন। হাত ভালো করে দেখে বললেন,
“কোথায় তোমার আঙুলে দাগ?”

ইরতিজার ভয় করতে লাগলো। হৃৎপিণ্ড লাফাচ্ছিল। এমন সময় লিভিং রুম থেকে ডাকটা দুঃসময়ের বন্ধু হয়ে ছুটে এলো,
“টিজা…”

রিশনের গলা। ইরতিজা ব্যাপারটা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে বললো,
“রিশন ডাকছে।”
বলে মায়ের হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে এনে কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো দ্রুত।
লিভিং রুমে এসে দেখলো নওরিন ফিরে এসেছে। রিশনের সাথেই গিয়েছিল শপিং মলে। রিশন ইরতিজার গলায় একটা নীল স্কার্ফ পেঁচিয়ে দিয়ে বললো,
“আমার চ্যানেলের ভিডিয়োগুলো এখনও দেখোনি তুমি। সব ভিডিয়োগুলো দেখবে কিন্তু, ঠিক আছে?”

রিশন দু হাত দিয়ে ইরতিজার দুই গাল টেনে দিয়ে হেসে চলে গেল।
ইরতিজা অপলক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। রিশন আবারও তার গাল টেনে দিয়েছে! সত্যিই বাচ্চা ভাবে না কি তাকে? আর স্কার্ফ দিয়ে ভিডিয়ো দেখার কথা কেন বললো? ভিডিয়ো যাতে দেখে সেজন্য কি ঘুষ দিলো?

_________________

ফজরে সালাত আদায়ের জন্য আব্বু ডেকে দেওয়ার পর আর ঘুম হয়নি ইরতিজার। নামাজ পড়ে বাসার ভিতর কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করেছে। এরপর রিশন যখন ওয়াকিংয়ের জন্য বাইরে বের হচ্ছিল তখন ওর সাথে বের হয়েছিল। ওয়াকিং শেষে বাসায় ফিরে অবাক হলো ইরতিজা। হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইল হাস্যজ্জ্বল মানব মুখটির দিকে। অকারণেই হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে চললো!

(চলবে)

_________

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here