#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [১২]
#sadiya_jannat_sormi (লেখিকা)
বাচ্চা ছেলের মত মাথা নিচু করে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে মাহদী। মাকে দেখে মনে হচ্ছে না যে আজ খুব সহজে তিনি শান্ত হবেন, এত বড় একটা ভুল করেছে ছেলে সেটা তিনি এতো সহজে ছেড়ে দিবেন না। আফরোজা চৌধুরীর রাগ ক্ষনে ক্ষনে বাড়ছে, ভবিষ্যতে ছেলের বউয়ের সামনে মুখ দেখাতে পারবেন না তিনি। ছেলের বউ যদি মুখ ফসকে জিজ্ঞেস করে যে তার ছেলে এতো ভীতু কেন তাহলে কি জবাব দিবেন তিনি সেটা ভেবেই হাই প্রেশার বাড়াচ্ছেন।একটু পরে মাহদীর সামনে এসে বসে পড়লেন, তার পর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,,
তুমি কি আমার ছেলে মাহদী? আমার ছেলে হয়ে তুমি এতো টা ভীতু স্বভাবের হবে সেটা তো আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। ভবিষ্যতে যাকে তুমি তোমার জীবন সঙ্গী বানাতে চলেছো তুমি কি না তাকেই ভয় পাচ্ছো ,ছিঃ(আফরোজা চৌধুরী)
আফরোজা চৌধুরীর কথা শুনে মাহদী তোতলাতে শুরু করলো। তোতলাতে তোতলাতে ই বললো,,
স স সরি মা,আর কখনো এমন টা হবে না।আর আর আমি তো ওকে ভয় পেয়ে ওইভাবে লুকিয়ে চিরকুট টা দিইনি। আ আমি তো ওকে শুধু স সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম এ এই আর কি। তুমি শুধু শুধু আমা আমাকে ভ ভুল ভাবছো মা, আমি আমি কোনো ভীতু ছেলে না।(মাহদী)
আগে মাহদীর উপর যা ও সামান্য বিরক্ত ছিলেন আফরোজা চৌধুরী কিন্তু মাহদীর তোতলামি তে আরো বেশি বিরক্ত হলেন। বিরক্তি স্বরে বললেন,,
সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছো ভালো কথা,এতে এতো তোতলানোর কি আছে। কথা টা কি ভালো করে বলা যাচ্ছিল না, নাকি এখন তোতলামি ও আয়ত্ত করে নিয়েছো?(আফরোজা চৌধুরী)
মায়ের ধমক শুনে মাহদী কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল। অনেক্ষণ ধরে কান ধরে ছিল, সেজন্য হাত ব্যথা উঠে গেছে কিন্তু ব্যথার কথা মাকে বলতে ও পারছে না। এটা শুনলে মা আরো বেশি রেগে যাবেন, তখন রেগে গিয়ে হয়তো এটা বলে উঠবেন যে তোমাকে দিয়ে সংসার করা হবে না, সামান্য একটু কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারো না তুমি। মায়ের কথা গুলো আগাম মনে রিপিট করে নিলো মাহদী, আফরোজা চৌধুরী এখন নিচের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছেন।কিয়ৎক্ষন পরে কি একটা ভেবে তিনি মাহদী কে কান থেকে হাত নামিয়ে তার পাশে বসতে বললেন। মাহদী বাধ্য ছেলের মতো গিয়ে মায়ের পাশে বসে পড়লো, কিছুক্ষণ চললো পিনপতন নীরবতা।কারো মুখে কোন কথা নেই, আফরোজা চৌধুরী ও চুপ সাথে মাহদী ও। হঠাৎ নিরবতা ভেঙ্গে আফরোজা চৌধুরী মাহদী কে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন,, আচ্ছা মাহদী তুমি তো আমাকে সেদিন মেয়েটার ব্যাপারে কিছুই বললে না। মেয়েটি কেমন, কোথায় থাকে এইসব কিছুই তো আমার জানা হলো না। তুমি আজকে আমাকে মেয়েটির ফুল ডিটেইলস দাও, আমি সবকিছু জেনে কালকেই ওর বাসায় যাবো তোমার আর তার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। আমি বুঝতে পেরেছি তুমি বিয়ে করতে চাইছো, এতো দিন আমি তোমার কানের কাছে বিয়ের কথা বলে ঘ্যান ঘ্যান করেছি তখন তুমি বিয়ে করতে চাও নি,আর এখন যখন আমি আর বিয়ের কথা বলছি না তোমাকে তাই তুমি এসব শুরু করেছো যাতে তোমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়ে দিই।
মায়ের কথায় মাহদী যারপরনাই লজ্জিত হলো, লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল সে। তারপর হালকা একটু হেসে বললো আমি তোমাকে ওর সমস্ত কিছু বলছি।মা, ওর নাম অনু মেঘা রহমান।ও এইবার অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে।জানো মা, ওর বাবা মা কেউ নেই, ওর যখন জন্ম হয় তখন ওর বাবা ওকে আর ওর মাকে ছেড়ে চলে যায়।তার কিছু দিন পরে ওর মা ও মা/রা যায়, এরপর থেকে ও ওর খালামনির বাসায় থেকেই বড় হয়েছে।ওর খালামনি ওকে খুব আদর করেন, কখনো কোনো অংশে নিজের মেয়ের থেকে কম দেখে না। এরকম মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি যারা অনু মেঘার মতো অনাথ মেয়ে কে নিজের মেয়ের মতো আদর যত্ন করে।মেঘা কে আমি অনেক আগে থেকেই প,,,
ব্যাস আমি আর কিছু শুনতে চাই না মাহদী, হাত উঠিয়ে মাহদী কে থামিয়ে দিলেন আফরোজা চৌধুরী। মায়ের হঠাৎ এমন আচরণে অবাক হয়ে গেল মাহদী, মা এইভাবে ওকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিল কেন। মায়ের মুখের দিকে তাকাতেই মাহদী বুঝতে পারলো মা কোন কারণে খুব রেগে গেছেন,ফর্সা মুখ টা লাল হয়ে গেছে রাগে। মাহদী আর টু শব্দটি পর্যন্ত করলো না, চুপ করে রইলো। কিছুক্ষণ পর আফরোজা চৌধুরী নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করে কড়া গলায় মাহদী কে বললেন,,,
তোমার কি রুচি, কি মন মানসিকতা তোমার মাহদী? তোমার মা একজন সিনিয়র মেডিক্যাল ডক্টর, তুমি নিজেও একজন মেডিক্যাল ডক্টর আর সেই তোমার কিনা এই পছন্দ। একটা অনাথ এতিম মেয়ে কে তুমি পছন্দ করেছো নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে? তুমি ভাবলে কি করে মাহদী যে ওই মেয়ের মতো একটা অনাথ এতিম,পরাশ্রয়ে বড় হওয়া একটা মেয়ে কে আমি আমার ছেলের বউ করবো। সমাজে, আশপাশের মানুষ দের কাছে তোমার আমার একটা সম্মান আছে মাহদী, তুমি তো সেই সম্মান টাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছো। তুমি ত,,(আফরোজা চৌধুরী)
এনাফ, মা এনাফ। মাঝপথে আফরোজা চৌধুরী কে থামিয়ে দিলো মাহদী। অনেক বাজে কথা বলেছো তুমি কিন্তু আর নয় প্লিজ, আমি হাত জোড় করছি এবার তুমি থামো। সম্মানের কথা বলছো তো, তাহলে এবার আমি বলছি আর তুমি শোনো। ছোট থেকে তুমি আমাকে তোমার হাতের পুতুলের মত করে বড় করেছো আমাকে। তোমার যা কিছু পছন্দ আমাকে তাই করতে বাধ্য করেছো তুমি, নিজের পছন্দ অপছন্দ কে মাটি দিতে হয়েছে তোমার জন্য। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে যখন কলেজে গেলাম, তখন একটা ছেলের সাথে হালকা ঝামেলা হয়েছিল বলে তুমি আমাকে পুরো কলেজের সামনে থা*প্প*র মে*রে*ছি*লে। সেদিন তো তুমি আমার সম্মানের কথা ভাবো নি, তোমার রাগ টাই সেদিন বড় ছিল। তুমি জানো সেদিন তোমার হাতে মা/র খাওয়ার পর থেকে সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো, যদিও সেদিন আমার কোনো দোষ ছিল না।যখন আমার মেডিক্যাল কলেজে চান্স হলো, তখন তোমার একটা প্রতিবেশীর সাথে ঝামেলা হয়েছিল।ভর জনসম্মুখে যখন আমি তোমাকে আমার মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার খবর টা দিয়েছিলাম তখন তুমি ওই প্রতিবেশীর উপর হওয়া রাগ আমার উপর ঝাড়লে।সবার সামনে যা করেছিলে সেটা আমি আর বলতে চাই না, সেদিন ও তুমি আমার সম্মানের কথা ভাবো নি। আমি ছোট খাটো কোনো ভুল করলেও তুমি আমাকে শাস্তি দাও, সবাই জানে তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো কিন্তু আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো না বরং আমার উপরে বাবার উপর হওয়া রাগের প্রতিশোধ নাও। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই তুমি আমাকে বাবার কাছ থেকে রেখে দিয়েছিলে, তোমার জন্য আমি এতদিন আমার কোনো ভালো লাগাকেই প্রোয়োরিটি দেই নি কিন্তু সেদিন যখন মেঘা কে দেখলাম তখন আমার মনে হলো আমার এই জীবনে ওর খুব প্রয়োজন। ভালো বেসে ফেললাম ওকে, তোমাকে বলতাম না পাছে তুমি যদি ওকে পছন্দ না করো। কিন্তু আমার ভুলের জন্য যখন তুমি জেনেই ফেললে তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তুমি জানার পর ওকে পছন্দ করবে না তার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম আমি। কিন্তু তোমার যে এতো নোংরা মন মানসিকতা সেটা জানার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি মা,ও অনাথ এতিম বলে আজ তুমি ওকে ঘৃণা করছো, তাহলে তো মা তোমার আমাকেও ঘৃনা করা উচিত কারণ তোমার জন্য আজ বাবা থাকতেও এতিম আমি।(মাহদী)
কথা গুলো বলে মাহদী হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল, এখানে আর একটা মুহূর্ত ও থাকতে পারবে না ও।
#চলবে