#উত্তরণ
পর্ব_৬
পরেরদিন সকালে উঠে হিয়া সবার আগে মি: সংকল্প সেনের কাছে এপয়েন্টমেন্ট নেয় তারপর তৈরী হয়ে এয়ারপোর্ট পৌঁছোয়. গাড়িটা আনেনি আজ, যত কম লোক জানবে ওর গতিবিধির কথা ততই ভালো. গতকাল রাতের স্বপ্নটা হিয়ার মন ও মস্তিস্কে গেঁথে গেছে.
অফিসে ঢোকা মাত্র নতুন সিডিউল ওর হাতে আসে. এমন সময় সোনাল প্রায় উড়তে উড়তে ওর কাছে আসে. হিয়া একটু অবাক হয় সোনালকে দেখে.
হিয়া: কি হলো? এরকম লাফাচ্ছিস কেন?
সোনাল: গেস হোয়াট
হিয়া: হোয়াট হাপেন্ড?
সোনাল: এই মাসে আমার তিনটে ফ্লাই ওনার সাথে.
হিয়া: কার সাথে?
সোনাল: ক্যাপ্টেন উজান চ্যাটার্জী.
হিয়া: ওহ. তা এতে এতো লাফানোর কি হলো? কারোর না কারোর সাথে তো ফ্লাই করতেই হবে.
কালকের রাতের বিরক্তিটা আবার ফিরে আসে হিয়ার.
সোনাল: কেয়া বোল রেহি হ্যায়? ইটস উজান চ্যাটার্জী ম্যান (চোখে মুখে বিস্ময়). সবাই আমার উপর জেলাস, এক্সসেপ্ট ইউ. আর ইউ নরমাল? সিওর?
হিয়া: শাট আপ (নিজের সিডিউল টা থেকে চোখ না সরিয়েই বলে) নিকুঞ্জ জানে?
সোনাল: কিসকা নাম লে লিয়া ইয়ার? ও তো জানিস কিরকম. এর আগেও ক্যাপ্টেন ইউসুফের সাথে কিরকম ঝামেলা করেছিল. এবারো না সেই রকম কিছু করে বসে (চিন্তিত হয়ে পরে).
তখনি সোনালের পেছনে এসে দাঁড়ায় নিকুঞ্জ.
নিকুঞ্জ: কি নিয়ে এতো আলোচনা করছো তোমরা?
সোনালের মুখটা সাদা হয়ে যায়. ও পিছিয়ে এসে হিয়ার কাছে দাঁড়ায়.
নিকুঞ্জ সোনালের বয়ফ্রেইন্ড. এমনি খুব ভালো ছেলে, খুব হাসিখুশি, ভীষণ হেল্পফুল. শুধু খেপে যায় যদি কেও সোনালের সাথে ঘনিষ্ট হবার চেষ্টা করে. কখনো কখনো সেটা মারাত্মক রূপ নেয়. সেটা খুবই স্বাভাবিক, তাই অনেকেই ওকে প্রচ্ছন্নভাবে সমর্থন করে, যাদের মধ্যে হিয়াও একজন. কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে ও বেশ নিখুঁত, কাজের প্রতি ওর ডেডিকেশন ওর সব দোষ ঢেকে দেয়.
হিয়া: তেমন কিছু না. এই আমার নতুন সিডিউল নিয়ে আলোচনা করছিলাম.
নিকুঞ্জ: সবারই নতুন সিডিউল হয়েছে নতুন ক্যাপ্টেন জয়েন করেছেন তাই. তোমার সিডিউল দেখেছো? (প্রশ্নটা সোনালকে করে)
সোনাল কোনো উত্তর দেবার আগেই۔۔
নিকুঞ্জ: আমি দেখে নিয়েছি. এই মাসে তোমার তিনটে ডিউটি আছে উজান স্যারের সাথে.
সোনাল নিকুঞ্জের পরবর্তী রিঅ্যাকশনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে.
নিকুঞ্জ: স্যার খুব ভালো মানুষ, অনেক কিছু শিখতে পারবে. ঠিক করে নিজের কাজ কোরো আর ভুলেও ওভার স্মার্টনেস দেখতে যেওনা, তাহলে কেও তোমায় বাঁচাতে পারবেনা. স্যার ছেলে-মেয়ে আলাদা করে ট্রিট করেননা. Just a suggestion.
নিকুঞ্জের রিঅ্যাকশন এতটাই অস্বাভাবিক যে হিয়া আর সোনাল দুজনেই হাঁ করে তাকিয়ে থাকে নিকুঞ্জের দিকে. সোনাল এখনো ঠিক বুঝতে পারেনা নিকুম্ভ যা বললো সেটা মন থেকে, না কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস. উজান চ্যাটার্জীর মতো মানুষের প্রতি জেলাস হওয়াটাই তো স্বাভাবিক, অন্তত নিকুঞ্জের ক্ষেত্রে তো সেটা খুবই স্বাভাবিক.
সোনাল: (সন্দেহের দৃষ্টিতে) তুমহে কোই প্রবলেম নেহি?
নিকুঞ্জ: (সোনালের দিকে তাকিয়ে বলে) নেহি. উজান স্যারের সাথে 365 days ডিউটি করলেও আমার প্রব্লেম নেই. উনি আমার গুরু, ওনার আন্ডারে আমি ট্রেনিং করেছি, আর۔۔۔۔۔۔ (বলে থেমে যায় নিকুম্ভ)
হিয়া এবং সোনাল দুজনেই প্রায় একসাথে জিজ্ঞাসা করে: আর?
নিকুঞ্জ হেসে : এতো তাড়া কিসের? কাম তো করোগী উনকে সাথ, তবহি জান জায়োগি. সব আগে থেকে বললে তো জানার আগ্রহটাই থাকবেনা. So be preapare for new era… (চলে যায় নিকুঞ্জ)
নিকুঞ্জ কে এতো রিলাক্স হতে এর আগে কখনো দেখেনি কেউ. হিয়া আর সোনাল একে ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকে হাঁ করে.
দেখা যাক উজান-হিয়ার কর্মক্ষেত্রে নতুন পথচলা কেমন হয়…!!!