#উত্তরণ
পর্ব_৪৪
হিয়ার অনুরোধে উজান খেতে বসে, যদিও মন খারাপ তাও হিয়ার সংস্পর্শ ওর কষ্ট কিছুটা লাঘব করে۔۔
হিয়া: যাবার আগে একবার মায়ের সাথে কথা বলে যাবেন۔۔
উজান: হিয়া۔۔۔۔۔আমার আপনাকে কিছু কথা জানানোর আছে۔۔
হিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে۔۔
উজান: আপনার আমার সম্পর্কে সবটা জানা দরকার. (একটু থেমে) ক্যাপ্টেন সমরেশ চ্যাটার্জী আমার বাবা হন۔۔
হিয়া চমকে ওঠে. ও আন্দাজ করেছিল সমরেশ আর তার পরিবারের সাথে উজানের একটা সম্পর্ক আছে, কিন্তু সেটা যে পিতা-পুত্রের তা ভাবেনি. হিয়াকে চুপ থাকতে দেখে উজান বোঝে হিয়ার মনে অনেক প্রশ্ন তৈরী হয়েছে. উজান হিয়াকে সবটা খুলে বলে. হিয়াকে এখনো চুপ থাকতে দেখে অস্বস্তি হয় উজানের.
উজান: কি ভাবছেন?
হিয়া নিজেকে সামলে নেয় দ্রুত. একটু হেসে বলে: ভাবছি কাকিমাকে এখানে কিভাবে নিয়ে আসবো.
উজান হাঁফ ছাড়ে. যাক হিয়ার ওর থেকে দূরে যাবার কোনো উপসর্গ দেখা যাচ্ছেনা. যদিও ওর বিশ্বাস ছিল যে সেটা ঘটবেনা, তাও মনের কোনো এক কোনায় একটুকরো আশঙ্কা কখন যে ঘর করেছিল সেটা উজানও বোঝেনি. হয়তো ভালোবাসায় এরকমই হয়, ছোট্টো ছোট্টো গুরুত্বহীন আশঙ্কাগুলোও কখনো কখনো বড় কোনো ঝড়ের অশনি সঙ্কেত বলে মনে হয়۔۔
উজান: যা করবেন খুব ভেবেচিন্তে করবেন (ও জানে হিয়াকে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়)
হিয়া: সে বিষয়ে নিশ্চিত থাকুন. মান-অভিমানের যে পাহাড়টা তৈরী হয়েছে সেটাকে ভাঙতে হবে তো. তবে এটা ওনাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত বিষয়, তাই সেটা ওনাদের নিজেদের মতো করেই ভাঙতে দিতে হবে. আমরা বাইরে থেকে শুধু সেই পরিবেশটা তৈরী করে দেব. আমাদের কাজটা কিছুটা ক্যাটালিস্টের বলতে পারেন.
উজান: এই “আমাদের” টা কে কে?
হিয়া: আমি আর ঠাম্মি. যদি সব কিছু হিসেব মতো চলে, তাহলে ফিরে এসে আপনি আপনার পুরো পরিবার একসাথে ফেরৎ পাবেন۔۔
হিয়া মিষ্টি করে হেসে উজানের হাতের উপর হাত রাখে. ওর এখন আর কোনো অস্বস্তি হয়না উজানকে স্পর্শ করতে, কারণ ওর মন জানে মুখে স্বীকারোক্তি না হলেও ওদের সম্পর্কটা দুই হৃদয়েরই অনুমোদনপ্রাপ্ত. উজানের মন ভালো লাগায় ভোরে যায়. এবার হিয়ার হাতের উপর নিজের হাত রাখে উজান যেটা নিঃশব্দে হিয়াকে বলে ও হিয়াকে বিশ্বাস করে, ভরসা করে, ভালোবাসে۔۔
কিছু মুহূর্ত এইভাবেই কেটে যায়, তারপর একসময় উজান বলে۔۔
উজান: এবার আমাকে যেতে হবে.
হিয়া: আবার কখন আসবেন?
উজান: যাবার আগে আপনার সাথে দেখা করে যাবো. এখন যাই, অনেক কাজ বাকি. আরও একটা কথা۔۔۔
হিয়া: কি?
উজান: দেখুন আজ যা হলো আমি তার জন্য দুঃখিত. তখন আসলে হার্দিকের খুনিদের কথা ভাবছিলাম আর সেই সময় আপনি۔۔۔۔۔۔۔
পুরোটা কথাটা শেষ করতে পারেনা۔۔একটু চুপ করে আবার বলে۔۔
উজান: আমরা যে পেশার সাথে যুক্ত তাতে আমাদের অবচেতন মন সবসময় সজাগ থাকে. অন্যমনস্ক অবস্থায় আরো বেশি করে সেটা সজাগ হয়ে ওঠে. আপনাকে অনুরোধ করছি, ভবিষ্যতে যদি দেখেন আমি অন্যমনস্ক আমাকে এভাবে পেছন থেকে আচমকা ছোঁবেন না۔۔۔۔ হাতের চাপ আর একটু বেশি হলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারতো আপনার۔۔۔কি করতাম তখন? (শেষ কথাটা উজান আত্মগ্লানি আর আশঙ্কা মিশ্রিত সুরে বলে ওঠে)
হিয়া হেসে মাথা নেড়ে বলে: জ্ঞানতো আপনি আমার কোনো ক্ষতি করতে পারেন, এ আমি সুদূর কল্পনাতেও ভাবতে পারিনা. তবে আমি আপনার কথা মাথায় রাখবো۔۔
এরপর উজান হিয়ার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে যায়. কি মনে হতে সমরেশ কে একটা ফোন করে۔۔
সমরেশ: বলো রাজা۔۔
উজান: কমপ্লিটলি ডিকোডিং হয়ে গেছে. আট জায়গায় ব্লাস্টের প্ল্যান. Tomorrow we will move…
সমরেশ: প্ল্যানিং হয়ে গেছে?
উজান: মোটামুটি প্ল্যান ছকে নিয়েছি. যেটুকু বাকি আছে সেটা কিছুক্ষনের মধ্যেই হয়ে যাবে.
সমরেশ: আমিও যাবো তোমার সাথে রাজা۔۔
উজান: না বাবা, সেটা হবেনা۔۔
সমরেশ: কেন?
উজান: প্রথমত, এই মিশনের দায়িত্বে আমি আছি তাই আমিই কমপ্লিট করবো. দ্বিতীয়ত, তোমাকে এখানে থাকতে হবে, কারন মা আসতে পারে. তৃতীয়ত, আমার কিছু হলে তোমাকে মাকে সামলাতে হবে. আমি একসাথে আমার আর তোমার জীবন বাজি রাখতে পারিনা. মা কে একসাথে সব হারাতে দিতে পারিনা۔۔
সমরেশ উজানের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়. ওর গলায় অবিশ্বাস ঝরে পড়ে: বাসবী কলকাতায় আসবে? বাসবী বলেছে?
উজান একটু চুপ থেকে বলে: হিয়া বলেছে۔۔
সমরেশও কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলে: যদি হিয়া বলে থাকে তাহলে অবশ্যই আসবে۔۔
উজান: আমিও সেটাই বিশ্বাস করি. আসলে উনি তো হিয়া, তাই ওনার পক্ষে অনেক কিছুই সম্ভব.
সমরেশ: হিয়া জানে সব কিছু?
উজান: হুম۔۔۔ওনার তো সবটা জানা উচিৎ۔۔
সমরেশ হালকা হেসে : হুম۔۔۔۔۔۔সব কিছু তো বলেছো, কিন্তু নিজের মনের কথাটা কি বলেছো?
উজান: এখনো সেটা বলার সময় আসেনি বাবা. যদি মিশন কমপ্লিট করে ফিরতে পারি তাহলে বলবো. তবে আমি জানি, আমি মুখে না বললেও উনি সবটা বোঝেন. ঠাম্মি কে বোলো ফিরে এসে ঠাম্মির হাতের চালতার চাটনি খাবো. এখন থেকে যাবার পর ওটা আমি আর কোনোদিন খাইনি. এখন রাখি, অনেক কাজ বাকি. তুমি সবার খেয়াল রেখো۔۔۔۔۔۔(কয়েক সেকেন্ড থেমে) হিয়ারও (বলতে বলতে উজানের চোখে জল এসে যায়).
ফোন রেখে দেয়. উজান জানে হিয়া ওর কথা রাখবে, কিন্তু নিজের পুরো পরিবার কে একসাথে দেখার জন্য ও ফিরে আসতে পারবে কিনা সেটা উজান এখনো জানেনা۔۔۔
উজান ফোন রেখে দিয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়ে۔۔ ক্লান্তি কাকে বলে জানেনা উজান তবুও চোখ আর মাথাকে একটু সময়ের জন্য বিরতি দেওয়া দরকার মনে হয় ওর. সামনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তাই মন ও মস্তিষ্ককে সবল রাখা জরুরি. ওর পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে উজান শিখেছে যে মন আর মস্তিষ্ক কে একসাথে চালনা করতে পারলে বিপদের প্রাবল্য কম থাকে۔۔۔
হঠাৎই উজান তড়িৎ পৃষ্ঠের মতো উঠে বসে۔۔ এই কথাটা ওর মাথা থেকে কি করে বেরিয়ে গেলো? কে সে? দ্রুত নিজের ল্যাপটপ অন করে চিফের পাঠানো সমস্ত cctv ফুটেজ দেখতে থাকে۔۔۔ কয়েকটা ফুটেজ বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে۔۔۔ কয়েক ঘন্টা কেটে যায় কিন্তু কিছু ক্লু আর cctv ফুটেজ থেকে শেষ পর্যন্ত ওর ক্ষুরধার মস্তিষ্ক যাকে খুঁজছিলো তাকে সনাক্ত করে ফেলে۔۔ দ্রুত একটা নম্বর ডায়াল করে উজান۔۔۔
দেখা যাক উজান কোন পথে মোড় নেয় উজানের জীবন–!!
(কেমন আছেন মহান ব্যাক্তিবর্গ গণ—কপির কাজকর্ম ঠিকঠাক চলছে তো–যদি সমস্যা হয় তাহলে যথাস্বাধো ভাবে আপনাদের সাহায্য করার চেষ্টা করবো???)