উত্তরণ পর্ব_৩৯

0
659

#উত্তরণ
পর্ব_৩৯

হঠাৎ হিয়া আরোহীকে উদ্দেশ্য করে বলে۔۔

হিয়া: চিপ টা ডিকোড হয়েছে?

আরোহী: হ্যাঁ সেটা হয়েছে কিন্তু অন্য জায়গায় আটকে গেছি আমরা۔۔

হিয়া: কি জানতে পারি۔۔۔۔ মানে আপনাদের আপত্তি না থাকলে. তাছাড়া আমার একটু অধিকার তো আছেই জানার তাইনা? এর জন্য মরতে বসেছিলাম একেবারে, আবার কিডন্যাপড ও হয়েছি (বলেই ওর স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে হেসে ওঠে).

হিয়ার কথা বলার ভঙ্গিতে উপস্থিত সবাই হেসে ফেলে. আরোহী একবার উজানের দিকে তাকায়. এবার উজান এগিয়ে এসে হিয়া কে সেই ভয়েস নোট কোড টা দিয়ে বলে পুরো ব্যাপারটা۔۔۔

হিয়া পেপার টা হাতে নিয়ে বলে: এটা তো টেক অফের সময় ক্যাপ্টেন-ইন-কম্যান্ড এর এনাউন্সমেন্ট۔۔

উজান: হ্যাঁ, কিন্তু হার্দিকের ভয়েস নয়۔۔

হিয়া: তাহলে কি মনে হচ্ছে?

উজান: অন্য কাউকে দিয়ে হার্দিক এটা বলিয়েছে যেটা ও রেকর্ড করে পাসওয়ার্ড হিসেবে ফিড করেছে. এখন আমাদের সেই ব্যক্তিকে খুঁজে۔۔۔۔۔

উজানের কথা মাঝপথেই থেমে যায় হিয়ার দিকে দৃষ্টি পড়তেই. হিয়া ভীষণ অস্থির হয়ে উঠেছিল. যদিও এই অস্থিরতার কোনো শারীরিক বহিঃপ্রকাশ নেই, কিন্তু ওর চোখের তারার ক্রমাগত চলনশীলতা ওর অস্থিরতার সাক্ষী হয়ে উঠেছে. হিয়াকে দেখে মনে হচ্ছিলো যেন ওর চোখের সামনে ঘটে যাওয়া কোনো দৃশ্য দেখছে. হিয়া ঘামতে শুরু করে۔۔۔

হিয়াকে ওই অবস্থায় দেখে উজান আর আরোহী একটু ঘাবড়ে যায়. উজান দুবার হিয়াকে ডাকে কিন্তু ওর কানে উজানের ডাক প্রবেশ করে না. তখন আরোহী হিয়ার কাঁধ ধরে হালকা ঝাঁকুনি দিলে হিয়া সব ভুলে সর্বসমক্ষে উজানের একটা হাত আঁকড়ে ধরে. উজানও হিয়ার হাতের উপর নিজের হাত রেখে ভরসা দেয়۔۔

উজান চিন্তিত হয়ে: কি হয়েছে আপনার? শরীর খারাপ লাগছে?

হিয়ার চোখ বিস্ফারিত. কম্পিত গলায় বলে۔۔

হিয়া: উ۔উজান স্যার۔۔۔۔۔۔۔আমি۔۔۔۔۔ক্যাপ্টেন কাশ্যপ۔۔۔۔۔۔গলায় ব্যথা۔۔۔۔۔আমাকে বলেন۔۔۔আমি জানতাম না বিশ্বাস করুন۔۔۔۔

ততক্ষনে হিয়ার এই অর্ধেক বলা কথাগুলো থেকে উজানের অভিজ্ঞ মস্তিষ্ক না বলা কথাগুলো উদ্ধার করে ফেলে. উজানের বুকের মধ্যে তখন কয়েকশো দামামা বাজছে. তাও উজান নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখে. ও পুরোটা হিয়ার থেকেই শুনতে চায় কারণ ভুল করার বা ভুল শোধরানোর সময় এখন নেই ওদের হাতে۔۔۔

উজান: মিস মিত্র۔۔۔۔۔রিলাক্স۔۔۔۔ শান্ত হন আপনি۔۔۔ কি বলতে চাইছেন শান্ত হয়ে বলুন۔۔۔

ততক্ষন ওদের ঘিরে অফিসের সবাই উপস্থিত. উজান হিয়াকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়. একজন জল এগিয়ে দিলে সেটা খেয়ে হিয়া একটু ধাতস্ত হয়. আরোহী হিয়ার পিঠে হাত রাখে ভরসার. হিয়া কিছুটা শান্ত হলেও উত্তেজনায় ওর গলা কাঁপতে থাকে.

হিয়া: সেদিন ক্যাপ্টেন কাশ্যপের সাথে ফ্লাই করছিলাম. ককপিটে ওঠার পর থেকেই দেখি ক্যাপ্টেন কাশ্যপ খুক খুক করে ক্রমাগত কেশেই চলেছেন. জিজ্ঞাসা করতে বললেন হঠাৎ করেই একটু কাশি হচ্ছে, মনে হয় ঠান্ডা লেগেছে. এনাউন্সমেন্টের সময় এলে দেখা গেলো উনি এতটাই কাশছিলেন যে ওনার পক্ষে এনাউন্সমেন্ট করা সম্ভব না. তখন ক্যাপ্টেন কাশ্যপ আমাকে এনাউন্সমেন্ট করতে বলেন ক্যাপ্টেন ইন কমান্ডের নাম উহ্য রেখে. আমি সেই মতো এনাউন্সমেন্ট করি ক্যাপ্টেনের হয়ে. ক্যাপ্টেন কাশ্যপ সেটা নিজের ফোনে রেকর্ড করে নেন, বলেন আমাকে পরে শোনাবেন আমি কেমন এনাউন্স করেছি.

উজান: Are you sure?

হিয়া: এক মিনিট۔۔۔۔আমার মোবাইল۔۔۔۔۔রুমে আছে۔۔۔

উজানের ইশারায় আরোহী মিনিট খানেকের মধ্যেই হিয়াকে ওর মোবাইলটা রুম থেকে এনে দেয়. হিয়া ওর মোবাইলে কিছু খুঁজতে থাকে. তারপরই অফিস রুমে ভেসে ওঠে হিয়ার কণ্ঠস্বর:
“Good evening ladies and gentlemen, this is your captain in command”…

এতক্ষন সকলে বিস্ফারিত চোখে হিয়াকে দেখছিলো. এবার যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে সকলের. উজান সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার উদ্দেশ্যে মুরুগেশকে বলে হিয়ার ফোনের রেকর্ডিং টা কপি করে পাসওয়ার্ড হিসেবে পুট করতে. মুরুগেশ সেটা করতেই কম্পিউটার স্ক্রিনে ফুটে ওঠে “পাসওয়ার্ড গ্রান্টেড”. সমস্ত অফিস জুড়ে একটা হুল্লোড় ওঠে. আরোহী সব ভুলে হিয়াকে জড়িয়ে ধরে۔۔۔

উজান আতঁকে ওঠে۔۔ ওর প্রেমিক সত্তা আরেক সত্তা কে আঙ্গুল তুলে বলে۔۔۔۔۔বড্ডো ভুল করে ফেলেছো উজান চ্যাটার্জী. এতো বড় ভুল করলে কি করে? হিয়ার প্রতি তোমার আরো সতর্ক হাওয়া উচিৎ ছিল. যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটতো তাহলে পারতে আমার হিয়াকে ফিরিয়ে দিতে?

উজান ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ে. সত্যি উজান খুব বড় ভুল করে ফেলেছিলো. হিয়াকে উজান শুধুমাত্র ক্যরিয়ার ভেবেছিলো, কিন্তু হিয়া তো কোডের আসল এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ চাবি. সেইজন্যেই ওরা এতো ডেসপারেট ছিল হিয়াকে মারতে. ভাগ্গিস উজান আর ওর টিম হিয়ার প্রতি কোনো গাফিলতি করেনি. তবে উজানের হিয়ার প্রতি আরো সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল. হিয়ার ভাগ্যের জোরে আর NIA এর তৎপরতায় ও হিয়াকে হারাতে হারাতে ফিরে পেয়েছে বারবার. মনে মনে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেয় উজান. ওর ভাগ্য ভালো যে হিয়ার কোনো বড় ক্ষতি হয়নি নাহলে আজ হিয়ার সাথে হাজার হাজার মৃত্যুর জন্যও দায়ী হতো উজান۔۔۔

মুরুগেশের ডাকে হুঁশ ফেরে উজানের. মুরুগেশ ততক্ষনে মেন চেম্বারে ঢুকে ইনফরমেশন উদ্ধার করেছে. উজান চিফ কে ফোন করে সব আপডেট দেয় তারপর কি মনে হতে সমরেশ কেও ফোনে সবটা জানায়. দেশ জুড়ে আটটা বোম্ব ব্লাস্টের ইনফরমেশন ওরা আগেই পেয়েছে. RAW এই টেররিস্ট এক্টিভিটির ডেট ইনফর্ম করেছে আগেই, কিন্তু স্থান আর সময়টা বলতে পারেনি. কোডে যে ইনফরমেশন গুলো আছে সেখান থেকেই বাকি ইনফরমেশন গুলো পাবে ওরা۔۔۔

দেখা যাক কিভাবে উজান-হিয়া বাকি ইনফরমেশন গুলো খুঁজে পায়–!!

(পাঠকগণ দের অসংখ্য ধন্যবাদ বেখেয়ালী কলমের পাশে থাকার জন্য–সবসময় এমন ভাবেই বেখেয়ালী কলমের পাশে থাকবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here