#উত্তরণ
পর্ব_৩৩
উজান দৃঢ়তার সাথে কথাগুলো বললেও প্রতিটা শব্দের সাথে অভিমানের উপস্থিতি স্পষ্ট۔۔۔
হিয়া: আমি আপনাকে এই ভাবে আঘাত করতে চাইনি, আসলে۔۔۔
হিয়াকে কথা শেষ করতে দেয়না উজান۔۔
উজান: আসলে আমার এখানে আসাটাই উচিৎ হয়নি. এই কেস টাও আমার হ্যান্ডেল করার কথা ছিলোনা, যেহেতু হার্দিক ইনভল্ভ ছিল সেজন্যই আমি আসি. যদি না আসতাম তাহলে আপনার সাথে দেখাও হতোনা আর আপনাকে এতো বিরক্তও হতে হতোনা.
এক নিঃস্বাসে কথা গুলো বলে যায় উজান۔۔
এতক্ষন খেয়াল না করলেও এবার উজান লক্ষ্য করে যে হিয়া মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে আর তার এক হাত আরেক হাতের মুঠোয় শক্ত করে বন্দি. উজানের রেগে বলা কথাগুলো হিয়ার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়েছে.
উজান এবার একটু এগিয়ে এসে হিয়ার সামনে দাঁড়ায়. ওর বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়না হিয়ার বর্তমান অবস্থা. রাগের মাথায় কথাগুলো বলে এবার উজানের নিজেরই খুব খারাপ লাগে. খুব ইচ্ছে করে নিজের হাতে হিয়ার মুখটা তুলে ধরতে, কিন্তু সেই অদম্য ইচ্ছেকে নিজের ইচ্ছেশক্তি দিয়ে পরাস্ত করে শেষ পর্যন্ত. হিয়াই নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে, ওর গলা কেঁপে যায়۔۔
হিয়া: আমি অন্য কথা বলতে চেয়েছিলাম. আসলে অনেক্ষন পর আপনি এসেছিলেন তাই মনে মনে একটু অভিমান হয়েছিল আপনার উপর. ভেবেছিলাম আপনি নিজেই বুঝবেন, কিন্তু আপনি তো মুখে না বললে কিছুই বোঝেন না۔۔۔ (একটু থেমে) সরি۔۔
হিয়ার কথা উজানের মধ্যে মুহূর্তে আলাদা একটা অনুভূতির সৃষ্টি করে. কিছুক্ষন আগের রাগ, বিরক্তি সব কোথায় যেন উধাও হয়ে যায় নিমেষের মধ্যে۔۔
উজান এবার শান্ত গলায়: আমাকে যদি মিস করছিলেন তাহলে একটা ফোন করলেই পারতেন۔۔
হিয়া: ভেবেছিলাম একবার۔۔۔ কিন্তু আমার সিম টা তো নষ্ট করে দিয়েছি. তাছাড়া ভাবলাম আপনি হয়তো ব্যস্ত আছেন. এখানে আপনি ছাড়া আর কাউকেই তো চিনিনা তাই۔۔۔
উজান: শুধু তাই?
হিয়া: হ۔۔হ্যাঁ۔۔۔তাই
উজানের মুখ এই অবস্থায় ওর মনের প্রতিবিম্ব হয়ে ওঠে. হিয়া এতক্ষন মাথা নিচু করেই কথা বলছিলো, এবার ও মুখ তোলে, তুলেই ওর চোখ স্থির হয়ে যায় উজানের মুখে. মুহূর্তে দুজনেই হারিয়ে যায় একে ওপরের মধ্যে۔۔
ঘোর কাটে ফোনের নোটিফিকেশনের আওয়াজে. উজান ফোন বের করে দেখে চিফের মেসেজ. মেসেজে লেখা একজন সিনিয়র অফিসার আসছেন উজানের সাথে দেখা করতে.
মেসেজ পড়ে উজানের ভ্রু তে ভাঁজ পরে. ও এই অপারেশন এর সাথে যুক্ত সবাইকেই চেনে চিফ থেকে আর্দালি পর্যন্ত, তাহলে কে এই নতুন মানুষ আর সে কেনইবা উজানের সাথে দেখা করতে আসছে?
আবার নোটিফিকেশনের আওয়াজ۔۔۔উজান দেখে আবার চিফের মেসেজ: Hold your breath…there is a surprise for you…
উজানের ভ্রুর ভাঁজ আরো একটু গভীর হয়. হিয়া সবকিছুই লক্ষ্য করতে থাকে. ও বুঝতে পারে কিছু একটা উজানকে চিন্তিত করে তুলেছে.
হিয়া: Any problem?
হিয়ার কথায় উজান বাস্তবে ফিরে আসে. হিয়ার কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখে উজান হিয়াকে এক চোট নেওয়ার লোভ সামলাতে পারেনা۔۔
উজান: হুম۔۔۔۔ প্রবলেম তো আছেই. আপনি আছেন আর প্রবলেম থাকবেনা তা কখনো হয়?
হিয়া আকাশ থেকে পরে : মানে? এখানে আমি আবার কোথা থেকে এলাম? আর আমি থাকলে প্রবলেম থাকবে মানে টা কি হ্যাঁ?
উজান: আপনার সাথে সমস্যার যা সখ্যতা۔۔۔۔۔۔ আপনার থেকে দূরে থাকতেই পারেনা.
প্রথমে হিয়ার উজানের কথা শুনে বেশ রাগ হচ্ছিলো, কিন্তু কথার ফাঁকে সন্তর্পনে উজানের হাসি গোপন হিয়ার চোখ এড়ায় না. ওর বুঝতে বাকি থাকেনা উজানের আসল উদ্দেশ্য. হিয়াও মাঠে নামে উজানের প্রতিপক্ষ হয়ে.
হিয়া: বুঝলাম. আপনি দেখছি আমার সখ্যদের
ব্যাপারে বেশ ওয়াকিবহল. এটাও কি আপনার গোয়েন্দাগিরির ফল?
উজান: গোয়েন্দাগিরি আমি করেছি ঠিকই, কিন্তু সেটা আমার কাজের জন্য. তবে কি জানেন, আপনার সাথে কিছুদিন কাটালেই বোঝা যায় যে আপনি সমস্যা কাঁধে নিয়ে ঘোরেন. তার জন্য গোয়েন্দাগিরির দরকার পড়েনা.
উপযুক্ত উত্তর দিতে পেরে উজানের মুখে একটা তৃপ্তির হাসি খেলে যায়, অবশেষে হিয়াকে মাত্ দিতে পেরেছে.
হিয়া: তা ফেলুদা কে আমার একটা জিজ্ঞাস্য আছে, যদিও আগে প্রশ্নটা করেছি কিন্তু এখনো সঠিক উত্তর পাইনি.
হিয়ার মুখে “ফেলুদা” শুনে উজানের তৃপ্তি একটু হোঁচট খায়. নিজের অজান্তেই ওর ভ্রু কুঁচকে যায়. কোন দিকে এগোচ্ছে হিয়া? মাঝে মাঝে উজানের হিয়াকে বোঝার থেকে টেরোরিস্টদের গতিবিধি বোঝা অনেক সহজ বলে মনে হয়.
উজান: কি ?
হিয়া: আমাকে নিয়ে এতই যখন সমস্যা তখন খামোখা এই সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু কে কোলে তুলতে গেলেন কেন?
উজানের তৃপ্তি এবার আর শুধু হোঁচট খায়না, একেবারে জবাব দিয়ে থেমে যায়۔۔۔
দেখা যাক–হিয়ার প্রশ্নের কি এমন উত্তর দেয় উজান–!!
(পুরোটা ধৈর্য্য ধরে পড়ার সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ–আজকে কিছু কারণে #ভালোবাসার_নীড় পোস্ট করা সম্ভব না–আগামীকাল পোস্ট করার ট্রাই করবো??।আর মহান মানুষদের কপি করার জন্য নেমন্তন্ন রইলো–মনে করে নিজ দায়িত্বে কপি করবেন–অার কোনো সমস্যা হলে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন??