উত্তরণ পর্ব_১৬

0
682

#উত্তরণ
পর্ব_১৬

হিয়া টেবিলে বসতে বসতে বলে: আপনাকে কে বললো আজ আমার জন্মদিন?

উজান চমকে ওঠে, আমতা আমতা করে বলে: হোয়াট? আজ আপনার জন্মদিন?

হিয়া: মোটেই না۔۔۔

উজান মারাত্মক রকম বিরক্ত হয়: তাহলে বললেন কেন?

হিয়া খুব শান্ত গলায়: আমার উপর এতো রাগ করার পরও এতো ভালো ভালো খাবার আনালেন তাও এত্ত বড় রেস্টুরেন্ট থেকে۔۔۔۔۔۔তাই ভাবলাম কেউ আপনাকে হয়তো ভুল খবর দিয়েছে.

উজান বিরক্তি ভরে চামচ টা প্লেটের উপর নামিয়ে রাখে: আটার ননসেন্স.

হিয়া মুচকি হাসে۔۔۔

উজান: আপনি জাস্ট ইম্পসিবল. এগুলো আপনার দ্বারাই সম্ভব. যতই ভাবি আপনার উপর রাগ করবোনা, আপনি সেটা হতে দেবেন না (এক নিঃশ্বাসে বলে যায় কথাগুলো)

হিয়া: আমি কি খুব রেগে যাওয়ার মতো কথা বললাম ক্যাপ্টেন? আপনার না সেন্স অফ হিউমার বলে কিচ্ছু নেই.

উজান: যখন বুঝে গেছেন তখন আপনার হিউমার আমার উপর এপ্লাই করার চেষ্টা দ্বিতীয় বার আর করবেন না আশা করি.

হিয়া মুচকি হেসে: আপনার নাকের ডগাটা কি সব সময়ই লাল হয়ে থাকে?

উজান: কি?

বয়েলিং পয়েন্টে পৌঁছনোর পর আরো বেশী রাগ করা কি সম্ভব? আজ ক্যাপ্টেন উজান চ্যাটার্জী ফার্স্ট অফিসার হিয়া মিত্রর সকাল থেকে এখনো পর্যন্ত একটা গুগলি ও খেলতে পারেন নি. নিজের প্রতি করুনা হয় উজানের.

হিয়া: না۔۔۔۔۔ কি۔۔۔কিছু না ۔۔۔ (তারপর নিজের দুকান ধরে বলে) আচ্ছা সরি, আর হবেনা. এবার আর রাগ করে থাকবেন না প্লিজ.

উজান: হ্যাঁ۔۔۔۔۔আপনি আমাকে রাগিয়ে দেবেন আর তারপর সরি বলবেন. আপনার এই কাজটা সাইক্লিক ওয়ে তে চলতে থাকে.

হিয়া আর কোনো উত্তর দেয়না, উজানের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে থাকে. হিয়াকে খাবার বেড়ে দিতে দেখে উজানও আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু করে. খেতে খেতেই উজান লক্ষ্য করে ওর রাগ টা কখন উধাও হয়ে গেছে.

সবে মাত্র কয়েক চামচ খাবার মুখে দিতেই হিয়া হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে: উজান স্যার۔۔۔۔۔

উজান: আবার কি হলো?

হিয়া: আপনি ঠিকই বলেন, আমি একটা ইডিয়ট.

উজান: আমি জানি, আমাকে মনে পড়ানোর দরকার নেই. এখন বলুন কি মনে পড়লো.

হিয়া: জন্মদিন স্যার۔۔۔

উজান কপালে হাত দিয়ে: উফ۔۔۔ নট এগেইন মিস মিত্র.

হিয়া: আরে স্যার, আজ তো ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জি মানে সমরেশ স্যারের জন্মদিন. আর দেখুন একটা উইশ পর্যন্ত করিনি, কত বেলা হয়ে গেলো.

উজান স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে হাতে চামচ টা ধরে, আর গলা দিয়ে খাবার নামেনা. কিভাবে ভুলে গেলো ও? সমরেশের থেকে দূরে থেকেও আজ পর্যন্ত কোনোদিন ভোলেনি, তাহলে আজ কি করে ভুলে গেলো? নিজের ওপর রাগে বিরক্তি তে চামচটা ছুঁড়ে ফেলতে গিয়েও সামলে নেয় নিজেকে. সব রাগ গিয়ে পড়ে হিয়ার উপর.

উজান (মনে মনে): সব মিস মিত্রর জন্য. না উনি সকালে আসতেন, না উজান হিয়ার পিছু নিতো, আর না অসুস্থ হিয়াকে বাড়িতে আনতো. বাড়িতে আনলো বলেই এতো ঝামেলা আর তাই ও সমরেশের জন্মদিনও ভুলে গেলো. (ওর এই ভুলের পেছনে যুক্তি খোঁজে উজান).

এদিকে হিয়া মোবাইলে বারং বার সমরেশকে ধরার চেষ্টা করে কিন্তু পায় না. শেষে হিয়া কাউকে ফোন করে.

হিয়া: হ্যালো ডার্লিং? স্যার কোথায়?۔۔۔۔۔۔ওহ গ্রেট۔۔۔ আমরা আসছি۔۔۔۔তুমি চেনোনা তবে তোমার খুব পছন্দ হবে۔۔۔۔۔বিয়ের পাত্র? (একবার আড় চোখে উজানকে দেখে নিয়ে) তোমাকে না করতেই পারবেনা۔۔۔۔এসে কথা বলছি۔۔۔۔আর এটা কিন্তু সারপ্রাইজ۔۔۔টাটা.

এতোক্ষন উজান হাঁ করে হিয়ার কথা শুনছিলো. বিয়ের কথা শুনে উজানের হৃৎপিণ্ড টা লাফিয়ে ওঠে.

উজান (মনে মনে): মিস মিত্র আমাকে নিয়ে করতে টা কি চান? আমাকে বিয়ের পাত্র ভেবেছেন নাকি? নাহ আর সহ্য করা সম্ভব নয়. এনাকে এই মুহূর্তে এখান থেকে তাড়াতে হবে. বিয়ে? সিরিয়াসলি? রিডিকুলাস۔۔۔

উজান হিয়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই হিয়া টেবিল থেকে উঠে পরে বলে: উঠুন আর এখন চলুন আমার সাথে.

উজান বিরক্ত: আমি কোথাও যাবোনা আপনার সাথে. আপনি একটা۔۔۔۔

উজানের কথা শেষ হবার আগেই হিয়া উজানের ফোন আর গাড়ির চাবিটা নিয়ে নেয়. তারপর উজানের একটা হাত ধরে এক প্রকার টেনে নিয়ে যেতে থাকে. হিয়ার হঠাৎ করে হাত ধরাতে উজান হতবম্ব হয়ে যায়, এটা ওর আশাতীত.

উজান একটু ধাতস্ত হয়ে বলে: বাড়ির চাবিটা টা তো নিতে দিন এটলিস্ট.

হাত বাড়িয়ে কীবোর্ড থেকে বাড়ির চাবিটা নিয়ে নেয় উজান. ও কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারে ওদের গন্তব্যস্থল.

দেখা যাক হিয়ার কথা শুনে কেনই বা উজান বিয়ের কথা ভাবলো–আর কি এমন অপেক্ষা করছে উজান-হিয়া র নতুন গন্তব্যস্থলে–!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here