#ঈংরেজ সাহেবের বাঙালী বধূ
#লেখিকা : সামিয়া ইমাম নূর
#পর্ব : ১৫+১৬
১৫.
মোনালিসা – My son, সানা ডুবে যাচ্ছে। Please save her!
মাধূর্য ও আরিয়ানকে তাড়া দিয়ে বলল,
মাধূর্য – Please Mr. Ariyan, দ্রুত ওকে পানি থেকে ওঠানোর ব্যবস্থা করুন। ও ডুবে যাবে তো।
আরিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
আরিয়ান – Okey! okey! cool down please. আমি ওখে পানি থেখে ওঠানোর ব্যবস্থা খরছি। By the way Marine, আমি এখঠা খতা বলতেই বুলে গেছিলাম। থুমি জানো! গথ রাথে বারোঠার পড় আমি এই pond এর মধ্যে একটা ghost খে swim খরথে দেখেচি। ghost ঠা দেখথে খুবই ugly and horrible(ভয়ানক) ছিল।
আরিয়ান কথাটা শেষ করতেই সানা No বলে চিৎকার দিয়ে পানি থেকে ওঠতে নিলেই দ্রুত আরিয়ান সেখান থেকে খানিক দূরে সরে যায় যাতে সানা ভয় পাওয়ার উছিলা দিয়ে আবার তার উপরই গিয়ে না পড়ে। এদিকে সানা পানি থেকে ওঠেই তার খেয়াল এল সে যে এতক্ষণ সাতাঁর না জানার অভিনয় করছিল কিন্তু এখন সে মোনালিসা আর মাধূর্যের সামনে ধরা পড়ে গেল। সে আরিয়ানের দিকে একটা গরম দৃষ্টি ফেলে হন হন করে কাউকে কিছু না বলেই সেখান থেকে চলে গেল আর আরিয়ান মুচকি হেসে বোকা বনে যাওয়া তার মা আর মাধূর্যের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচালো। মাধূর্য আর মোনালিসা একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ হা হা করে হেসে ওঠল আর ওদের সাথে তাল মিলিয়ে আরিয়ানও হাসতে লাগল।
আজ রাহার গায়ে হলুদ। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল থেকে। বাড়িতে উৎসবমুখর পরিবেশ, হৈ-হুল্লোড়, চারদিকে নানা রঙের আলোর ঝলমলানি, কেউ নিজে সাজতে ব্যস্ত তো কেউ আবার অন্যকে সাজাতে। এর মধ্যে রাহাকে এসে সাজিয়ে গেছে পার্লারের কয়েকজন মেয়ে। পুরুষরা সারাদিন নানা কাজে ব্যস্ত থাকার পর বিকেল হলে নিজেরাও অনুষ্ঠানের জন্য তৈরী হতে শুরু করে। সব পুরুষরা আজ গ্রামীণ স্টাইলে পান্জাবী ও লুঙ্গি পরবে এবং কাঁধে থাকবে গামছা। আর নারীরা সব এককুঁচে হলুদ শাড়ি। ঐদিকে মাধূর্য মোনালিসাকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে নিজেও গেছে তৈরী হতে। সবার সব ঠিকঠাক আছে কিন্তু বিপত্তি বেধেছে আরিয়ানের পোশাক পরা নিয়ে। সে কিছুতেই লুঙ্গি পরতে চাইছে না। তাছাড়া সে কখনোই লুঙ্গির মতো এমন উদ্ভট পোশাক বাংলাদেশে আসার আগে দেখেওনি আর পরা তো দূরের কথা। তাকে প্রথম যখন এই লুঙ্গি এনে দেয়া হয় সে কৌতুহল বশত সবার সামনে পান্জাবী আর লুঙ্গিটা খুলে দেখতে লাগল। যখনই সে লুঙ্গিটা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগল তখন তো সে পুরোই অবাক। সে সবার উদ্দেশ্যে বলতে লাগল,
আরিয়ান – What is this? এঠা খিভাবে পরে and খোথায় পরে?
আরিয়ানের কথা শুনে সবাই হু হা করে হাসতে লাগল। আরিয়ান অবাক হয়ে সবার হাসির কারণ জানার জন্য জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকাতে লাগল। রাহার মামা কিসমত বলল,
কিসমত – আরিয়ান ইয়া হাবিবী! এটা হচ্ছে লুঙ্গি আর এর মতো আরামের পোষাক তুমি আর একটাও পাবে না। এটা এমন এক পোশাক যেটা পরলে তোমার নিচের দিক দিয়ে সুড়সুড় করে বাতাস ঢুকে ফুরফুর করে তোমায় মন চাঙ্গা করে দেবে। এমন মনে হবে যেন তুমি হাওয়ায় ভাসছ। তবে মনে রেখ, ঘুমোনোর সময় যদি লুঙ্গি পরে ঘুমোও বিশেষ করে পাশে অন্য কেউ থাকলে, তবে অবশ্যই অতি সাবধান ও সচেতন হয়ে ঘুমোতে হবে। নইলে মান-ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে ভাগ্নে। সকালে ওঠে দেখবে তুমি ঠিক জায়গায় থাকলেও তোমার লুঙ্গি ঠিক জায়গায় নাই। আর এই লুঙ্গি দূর্ঘটনার শিকার আমি নিজেও বহুবার হইয়াছি। তাই না দুলাভাই????
কিসমতের কথা শুনে সব পুরুষরা হু হা করে হেসে ওঠল আর মহিলারা সব শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে লাগল। এদিকে আরিয়ান আর তার মা তো কিসমতের কথার মাথামুণ্ড কিছুই বুঝতে পারছে না। আমান বলে ওঠল,
আমান – তুমি থামো তো কিসমত মিয়া। কোথায় কি বলতে হয় এটাও জানো না। যাগ্গে, বাবা আরিয়ান! তুৃমি একদম চিন্তা করো না। পোশাক পরার সময় না হয় কিসমতই তোমাকে লুঙ্গি পরা শিখিয়ে দেবে। কেমন?
আরিয়ান – Okey Uncle.
এই হল সকালের ঘটনা কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি হল, কিসমত নিজে তৈরী হওয়ার আগে আরিয়ানকে এসেছে লুঙ্গি পরিয়ে দিতে। আরিয়ান আপাতত পান্জাবীর সাথে একটা জিন্স পরে আছে। কিসমত আরিয়ানের লুঙ্গিটা হাতে নিয়ে বলল,
কিসমত – ইয়া হাবিবী! লুঙ্গিটা ধর আর পেন্টটা খুলে ফেল বাবা।
আরিয়ান বসা থেকে লাফিয়ে ওঠে বলল,
আরিয়ান – What? প্যান্ট খি খরব?
কিসমত – বলছি যে তোমার প্যান্টটা খুলে ফেলো।
আরিয়ান চোখ বড় বড় করে উচ্চ শব্দে বলে ওঠল,
আরিয়ান – No! it’s impossible, it’s just impossible. listen ya habibi, i am not gay. So don’t try to do anything like that with me. okey?
কিসমত সাথে সাথেই বলে ওঠল,
কিসমত – আসতাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ, লা হাওলা ওলা ক্বুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। ইয়া হাবিবী! তুমি এই সব কি বললে আমার অতিপ্রিয় ভাতুষ্পুত্র? আমি ও ঐরকম নই আর তোমার সাথেও ঐরকম কিছুই করতে চাইছি না। তওবা তওবা!
আরিয়ান – Then, থুমি খেন বললে আমাখে প্যান্ট খুলথে?
কিসমত এবার হু হা করে হেসে ওঠে বলল,
কিসমত – ওহ হো! তাহলে এই জন্য তুমি এতটা ভয় পাচ্ছিলে? আরে আমি তো তোমাকে প্যান্ট খুলতে বলেছি কারণ লুঙ্গি পরলে তো তোমাকে আর প্যান্টা পরে থাকার প্রয়োজন নেই। তাই লুঙ্গিটা মাথার উপর দিয়ে ঢুকাও আর প্যান্টটা খুলে ফেল।
আরিয়ান – Oh no! লুঙ্গি খি থাহলে মাথায় পরে? কিন্তু লুঙ্গি যদি মাথাথেই পরে থাহলে প্যান্ট খেন খুলথে হবে আমায়? I don’t understand what are you saying. প্যান্ট খুলে আমি নিছে খি পরব? Just underwear? Oh no! it’s totally impossible. It’s so funny man! এরখম এখটা long জামার সাথে just underwear? This is too boring and Embarrassing.
আরিয়ানের কথা শুনে কিসমতের এবার মাথায় হাত। বাধ্য হয়ে সে নিজেই এবার পোষাকের উপর দিয়ে আরিয়ানের লুঙ্গিটা পরে নিল। তারপর বলল,
কিসমত – এই যে দেখ, লুঙ্গি মাথায় নয় এখানে পরে আর আমি যেভাবে পরলাম সেভাবেই পরে। শুধু পরার পর লুঙ্গির নিচে থাকা প্যান্টা খুলে ফেলতে হবে। বুঝতে পেরেছ এবার?
আরিয়ান – ওহ হো! আগে বলভে থো? Now i understand. দাও পরিয়ে দাও।
হলুদের আয়োজন করা হয়েছে বাড়ির ছাদে। প্রথমে গ্রামীণ নিয়মে পানতেল নামক একটি অনুষ্ঠান সেড়ে তারপর হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে। রাহাকে তার বান্ধবী আর কাজিনরা মিলে স্টেজে নিয়ে গেছে। আস্তে আস্তে সবাই এসে হাজির হচ্ছে ছাদে। আরিয়ানের মা আর বাবা একসাথে হাতে হাত ধরে এলো স্টেজের সামনে। সানা আর সানার মাও চলে এসেছে। সানা এসেই এদিকে-ওদিক আরিয়ানকে খুজতে লাগল। কিন্তু আরিয়ান এখনো আসেনি এখানে। এদিকে মাধূর্যকে দেখেই মোনালিসা তাকে ডেকে নিজের কাছে নিয়ে বলল,
মোনালিসা – খুব মিষ্ঠি লাগছে থোমাখে।
মাধূর্য – Aunty আপনাকেও জাস্ট অসাধারণ লাগছে। আর Uncle এর সাথে আপনার জুটিটাও একদম perfect।
মোনালিসা হাসল আর রায়হান বলল,
রায়হান – ধন্যবাদ মামনি। তা তোমার বাবা-মা আসবে তো কাল?
মাধূর্য – জ্বী uncle, আসবে। আচ্ছা uncle and aunty, আমি আমার phone টা ঘরে ফেলে এসেছি। আপনারা বসুন, আমি গিয়ে phone টা নিয়ে আছি।
রায়হান মাথা নেড়ে সম্মতি দিল আর মোনালিসা বলল,
মোনালিসা – Okey sweety.
মাধূর্য রাহাকে বলে চলে গেল ফোন আনার জন্য নিচে। মাধূর্য সিঁড়ির কাছে যেতে নিলেই হঠাৎ কারো একজনের সাথে খুব জোরে ধাক্কা খেয়ে উল্টোদিকে পড়ে যেতে নিলেই ধাক্কা দেয়া মানুষটা তাকে দ্রুত টেনে ধরে নিজের কাছে নিয়ে গেল। মাধূর্যের ভয়ে হার্টবিট বেড়ে গেছে। বন্ধ চোখজোড়া খুলে ভিতু ভিতু দৃষ্টিতে তাকে ধরে রাখা মানুষটার মুখের দিকে তাকাতেই তার হার্টবিট হঠাৎ করে হার্টবিট বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তাকে ধরে রাখা মানুষটা আর কেউ নয় বরং তার ইংরেজ সাহেব। হ্যাঁ, এই এক সপ্তাহে নিজের অজান্তেই সে আরিয়ানের প্রতি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে কিন্তু এই দুর্বলতার কারণ সে এখনো বুঝতে পারেনি। আর ঐদিকে আরিয়ানও আজ ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে মাধূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম সে মাধূর্যকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখল আর শাড়ি পরলে যে কাউকে এতটা সুন্দর লাগে সেটা মাধূর্যকে না দেখলে হয়ত সে বুঝতেই পারত না। কারণ বাংলাদেশে আসার পর থেকে অনেক শাড়ি পরা মেয়ে দেখেছে সে এমনকি দুপুর থেকে এ বাড়িতে যতজন মহিলা বা মেয়ে মানুষ তার সামনে পড়েছে তাদের সবার পরনেই হলুদ শাড়ি ছিল কিন্তু কাউকে তার কাছে এতটা special আর সুন্দরী মনে হয়নি যতটা মাধূর্যকে লাগছে।
দুজনেই দুজনের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এখনো ঠিক একই অবস্থাতে। ঐদিকে বাড়ির সবাই ছাদে চলে এসেছে কিন্তু আরিয়ান এখনো নিচে একা আছে ভেবে সানা ফন্দি আঁটল এই সুযোগে গিয়ে আরিয়ানকে আজ বাধ্য করবে ওকে বিয়ের জন্য রাজি হতে। তাই সে দ্রুত রাহার কাছ থেকে সরে এসে তার মা’কে নিচে যাওয়ার কথা বলে চলে যায় সিঁড়ির রুমের কাছে। সিঁড়ির কাছাকাছি যেতেই সে দুটো ছায়ামূর্তি দেখতে পেল আর শুনতে পেল একটা মেয়ে কন্ঠ আর একটা ছেলে কন্ঠ। সানার আর বুঝতে বাকি নেই এখানে কে বা কারা কথা বলছে। দ্রুত সানা তাদের দিকে কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখল আরিয়ান আর মাধূর্য মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।
আরিয়ান – You’re looking so pretty. Bengali মেয়েরা এত সুন্ডর হয় সেঠা থোমায় না দেখলে জানথেই পারথাম না।
মাধূর্য – আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে। একদম বাঙালী বাঙালী লাগছে আজ। By the way, আপনার মা’কে দেখেছেন? উনাকেও কিন্তু শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে।
১৬.
আরিয়ান – Mom খে? হ্যাঁ, mom খে দেখেছি সে উপরে আসার আগেই আমাখে ডাকতে গেছিল। তা তুমি খোথায় যাচ্ছ মেরিন?
মাধূর্য – ওহ, আমি আমার phone টা নিচে ফেলে এসেছি আর ঐটাই আনতে যাচ্ছিলাম।
আরিয়ান – ওহ আচ্ছা। আমিও আসবো তোমার সাথে?
মাধূর্য – না না তার প্রয়োজন নেই। আপনি বরং ঐ দিকে যান, uncle-aunty নিশ্চয়ই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি গিয়ে phone টা নিয়ে আসছি হ্যাঁ?
আরিয়ান – Okey miss bengali lady. থবে থাড়াথাড়ি ছলে এসো খিন্তু।
মাধূর্য – হুম আচ্ছা।
বলেই মাধূর্য আরিয়ানের পাশ কেটে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল। আরিয়ান কিছুক্ষণ মাধূর্যের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে একটু মুচকি সামনের দিকে ঘুরতেই সানা এসে সামনে হাজির। সে চোখ গরম করে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলল,
আরিয়ান – What? What are you doing here? আর আমার দিখে এবাভে খি দেখছ? সরো আমি ছাদে যাব।
সানা – এখানে কি করছি এই প্রশ্নটা আমাকে না জিজ্ঞেস করে বরং তুমি আমাকে বলো তুমি এখানে কি করছ আরিয়ান baby?
আরিয়ান কিছুটা রেগে গিয়ে বলল,
আরিয়ান – Hey you! আমি এখানে খি খরছি তার answer খি আমি থোমায় দেব? Who the hell are you and why you always call me baby? listen, i am not your baby. okey? so, don’t call me baby. থবে হ্যাঁ, You can call me bro. আমি থোমার মামাথো ভাই থাই থুমি আমাখে ব্রো বলে ডাখথে পারো যেমন রাহা ডাখে। এখন পথ ছাড়ো আর আমাখে যেতে দাও।
বলেই আরিয়ান সানার পথ ছাড়ার অপেক্ষা না করেই তার পাশ কাটিয়ে চলে যায় ছাদের দিকে। এদিকে সানা ফুঁসতে ফুঁসতে বলতে লাগল,
সানা – খুব বড় ভুল করে ফেললে আরিয়ান। You have to pay for this. আমি তোমাকে ছাড়ব না। আর ঐ মেয়েটাকে তোমার খুব ভালো লাগে, তাই না? খুব ভাব হয়েছে ওর সাথে তাই তো? আগে তো ঐ মেয়েটাকেই শায়েস্তা করব আমি। Even, এখনই ওর খবর নিচ্ছি আমি। নিচে এখন তেমন কেউ নেই আর ঐ মেয়েটাও নিচে গেছে। যাই এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে হবে আমায়।
ঐদিকে মাধূর্য রাহার ঘর থেকে নিজের phone টা হাতে নিয়ে বের হতেই তার সামনে পড়ল কিসমত। সে এদিক দিয়েই ছাদে যাচ্ছিল। হঠাৎ মাধূর্য কে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ল। মাধূর্য ও কিসমত দুজনেই হাসি বিনিময় করল একে অপরকে দেখে। কিসমত বলল,
কিসমত – মাশাআল্লাহ! বহুত খুবসুরত লাগছে তোমাকে মামনি। তা তুমি এখানে কি করছ এখনো? ঐদিকে তো অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে মনে হয়।
মাধূর্য – আসলে মামা, আমি আমার phone ফেলে গেছিলাম ভুলে। তাই এটা নিতেই আবার এসেছিলাম। তা আপনি এখনো যাননি যে ছাদে?
কিসমত খানিক হেসে বলল,
কিসমত – আসলে একটু important talk করছিলাম আমার এক শেখ বন্ধুর সাথে। দুবাই থেকে phone করেছে বুঝলে? বলছে আমাকে ছাড়া পুরো দুবাই শহরটাই নাকি মরা মরা হয়ে আছে। তাই তাড়াতাড়ি যেন আমি সেখানে ফিরে যাই। আসলে তোমরা তো জানো না দুবাইয়ে আমার কত power আর কত সম্মান। একটা গোপন কথা বলি শুনো, দুবাইয়ের যে বুর্জ খলিফা আছে না? ঐ বুর্জ খলিফার মালিকও আমাকে অনেক সম্মান করে আর আমাকে sir ডাকা ছাড়া তো কথাই বলে না। আর দুবাইয়ের বাদশা তো আমার ইয়ার, দোস্ত। আমাকে পেলেই হাবিবী হাবিবী বলে বলে গলা শুকিয়ে ফেলে। ???
কিসমতের কথা শুনে মাধূর্যর শুকনো কাশি ওঠল। কিসমত একজন মজার মানুষ সে জানত কিন্তু সে যে এতবড় চাপাবাজ তা সে এইমাত্র জানতে পারল। আর মাধূর্যকে কাশতে দেখে কিসমত ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
কিসমত – একি, তোমার কাশি হয়েছে নাকি? ঔষুধ খাওনি? দাঁড়াও দাঁড়াও আমি পানি নিয়ে আসি।
মাধূর্য দ্রুত নিজেকে কোনোরকমে সামলে নিয়ে বলল,
মাধূর্য – না না মামা, আমি ঠিক আছি আর পানি আমি নিজেই গিয়ে খেয়ে নেব। আপনি বরং ছাদে যান হ্যাঁ? আমি পানি খেয়ে আসছি।
কিসমত – আচ্ছা আচ্ছা। তাড়াতাড়ি যাও আর কাশির ঔষুধ থাকলে খেয়ে নাও হ্যাঁ? আমি যাই উপরে, নইলে আবার হয়ত দেখা যাবে আমার জন্য অপেক্ষা করে ওরা ওদিকে অনুষ্ঠান শুরু করতে পারছে না। যাই হ্যাঁ?
মাধূর্য মাথা কাত করে সম্মতি জানালে কিসমত একটা আরবি গানে টান দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে লাগল। সিঁড়ির কাছ থেকে এতক্ষণ লুকিয়ে লুকিয়ে এসব দেখছিল সানা। সে মাধূর্যের দিকে আসতে নিলেই এমন সময় কিসমত চলে আসে মাধূর্যের সামনে। যাই হোক, কিসমত সিঁড়ির দিকে যেতে নিলেই সানা দ্রুত সিঁড়ির নিচের ফাঁকা জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। কিসমত গুনগুন করতে করতে চলে গেল সিঁড়ি বেয়ে উপরে। কিসমত যেতেই সানা দ্রুত সিঁড়ির নিচ থেকে বের হয়ে মাধূর্যের ঘরের দিকে যেতে লাগে। মাধূর্য ঐদিকে পানি খাওয়ার জন্য আবার ঘরে ঢুকে দেখে পানি নেই তাই সে পানির জন্য রান্নাঘরে যেতে লাগলেই হঠাৎ পিছন থেকে সানার ডাক শুনে থেমে যায় সে। মাধূর্য পিছন ফিরে তাকাতেই সানা একটা মেকি হাসি দিয়ে দ্রুত মাধূর্যর কাছে যেতে নিলেই গম্ভীর গলায় পেছন থেকে বলে উঠল আরিয়ান,
আরিয়ান – What are you doing here Marine and Sana?
সানা চমকে ওঠে পিছনে তাকাল। মাধূর্য মিষ্টি হেসে বলল,
মাধূর্য – আমি তো পানি আনতে যাচ্ছিলাম। আসলে খুব পানির তেষ্টা পেয়েছে। কিন্তু আপনি এখানে? এখনো যাননি ছাদে?
আরিয়ান – থোমার দেড়ি হচ্ছিল থাই দেখথে এলাম খোনো problem হল খিনা। থাছাড়া এখঠা cockroach এদিকে এসেছিল অনেখক্ষণ আগে খিন্তু সেঠাও আর ফিরে যায়নি। থাই বাভলাম cockroach ঠা আবার থোমার খোনো ক্ষতি খরে দেয় খিনা। থাই আমিও ছলে এলাম।
আরিয়ান যে সানাকে mean করে কথাগুলো বলছে সেটা সানা বুঝতে পেরে দাঁত কিড়মিড় করছে। আর মাধূর্য অবাক হয়ে বলল,
মাধূর্য – What? Cockroach? You mean আরশোলা? আরশোলা এসেছে এখানে আর সেটা আমার ক্ষতি করবে ভেবে আপনি এসেছেন আমাকে save করতে? Are you kidding me Ariyan? কি বলছেন এসব আরিয়ান? আরশোলা কি কোনো রাক্ষস যে আমায় খেয়ে ফেলবে?
আরিয়ান দুষ্টু হেসে বলল,
আরিয়ান – এঠা সেই আরশোলা নয় যেঠা থুমি বাভছ। এঠা অনেক বড় আর দুষ্টু আরশোলা। By the way, ছলো আমিও তোমার সাথে kichen এ যাচ্ছি।
মাধূর্য – আরে আপনি শুধু শুধু কষ্ট করবেন কেন? আমিই গিয়ে নিয়ে আসছি। তাছাড়া সানাও আমাকে কিছু একটা বলতে এসেছিল। সানা না হয় আমার সাথে যাক, তাহলে ও যেটা বলতে এসেছিল সেটাও বলা হয়ে যাবে আর আমার সাথে যেহেতু সানা আছেই তখন আর আরশোলারও ভয় থাকল না। কি বলো সানা?
সানা দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলল,
সানা – Yeah! Yeah! আব আমি যাচ্ছি মাধূর্যের সাথে আরিয়ান baby। You don’t worry about Madhurja. আমি তো আছিই, আরশোলা আমাকে দেখলেই দৌঁড়ে পালাবে।
আরিয়ান – Yes, you are right Sana. Actually, you know marine? সানা আরশোলাদের queen আর এই জন্যই ওখে দেখলেই আরশোলারা বয়ে পালায়।
চলবে-