ঈংরেজ সাহেবের বাঙালী বধূ পর্ব ১

0
1137

#ঈংরেজ সাহেবের বাঙালী বধূ
#লেখিকা : সামিয়া ইমাম নূর
#পর্ব : ১

ড. রায়হান খান আজ অনেক বছর পর লন্ডন থেকে নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশে আসছেন স্ব-পরিবারে। তিনি ডক্টরেট করার জন্য লন্ডন গিয়ে সেখানেই এক বিদেশিনীকে বিয়ে করেন এবং সেখানেই সেটল হয়ে যান। এর মধ্যে প্রায় কয়েকবারই তিনি বাংলাদেশে আসা যাওয়া করেন কিন্তু তার পরিবারকে নিয়ে শুধু একবারই এসেছিলেন বাংলাদেশে যখন তার ছেলে প্রিন্স আরিয়ান খানের বয়স ছিল মাত্র সাড়ে তিন বছর। এর পর আর প্রিন্সের মা মোনালিসা আর প্রিন্সের কখনো বাংলাদেশে আসা হয়নি। আজ প্রায় আটাশ বছর পর রায়হান খান আবার তার স্ত্রী এবং একমাত্র পুত্রকে নিয়ে দেশে ফিরছেন। কারণ দেশে তার আপন ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে। ভাইয়ের এবং ভাতিজির অনুরোধ ফেলতে না পেরে মোনালিসা আর আরিয়ানকে অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে দেশে নিয়ে আসছেন তিনি। তাছাড়া এবার আরিয়ানকে নিয়ে দেশে আসার পিছনে অন্য এক বিশেষ কারণও রয়েছে বটে। আর সেই কারণটা হচ্ছে প্রিন্স আরিয়ান খানের বিয়ে। রায়হান খানের ইচ্ছে তিনি একটা খাঁটি বাঙালী মেয়ে দেখে তার ছেলেকে বিয়ে করাবে। তিনি চান তার ছেলে একটা বাঙালি মেয়ের সংস্পর্শে এসে নিজের দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যগুলোকে আঁকড়ে ধরুক যেটা তিনি গত একত্রিশ বছরে কখনোই আরিয়ানকে শেখাতে পারেননি। আরিয়ান জন্ম থেকে লন্ডনে থাকার কারণে এবং তার মাও একজন বিলেতি নারী হওয়ার কারণে তার মা তাকে পুরোপুরিভাবেই বিদেশী সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত করে ফেলেছে। বিদেশী সংস্কৃতিগুলো তার মধ্যে একদম যেন ঠুসে ঠুসে পুরানো হয়েছে। যার কারণে আরিয়ানের নিজের দেশের প্রতি বিন্দুমাত্রও আগ্রহ বা টান নেই। সে ভাবে তার জন্ম যেহেতু লন্ডনে হয়েছে সেহেতু সে লন্ডনেরই ছেলে আর লন্ডনই তার আসল ঠিকানা এবং মাতৃভূমি। আর এই ব্যাপারগুলো নিয়ে প্রায়ই আরিয়ান এবং তার মায়ের সাথে প্রচুর কথাকাটিও হয়ে যায় রায়হান খানের। এই জন্যই তিনি সিদ্ধান্ত নেন এবার দেশে এসেই তিনি কোনো একটা ভালো বাঙালী মেয়ে দেখে আরিয়ানকে বিয়ে করিয়ে দেবে। আর তার বিশ্বাস একজন বাঙালী মেয়েই পারবে আরিয়ানকে ঠিক করতে এবং ঐ বিদেশী সংস্কৃতি থেকে বের করে এনে নিজের দেশকে ভালবাসতে শেখাতে, ইংরেজ সাহেব থেকে বাঙালী বাবু করে তুলতে। তবে একটা কাজে তিনি মোটামুটি সফল হতে পেরেছেন আর সেটা হল- তিনি বেশিরভাগ সময়ই বাংলা ভাষায় আরিয়ান এবং তার মায়ের সাথে কথা বলার কারণে আরিয়ান এবং তার মা দুজনেই বাংলা ভাষাটাকে মোটামুটিভাবে শিখে গেছে যদিও তাদের দুজনেরই বাংলা উচ্চারণ খুব একটা স্পষ্ট এবং শুদ্ধ নয়।

রায়হান খান দ্রুত রেডি হয়ে নিচে নামতে নামতে তার স্ত্রী মিসেস মোনালিসাকে ডাকতে লাগল,

রায়হান – মোনা… এই মোনা….! Where are you? আরে আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে তো। তোমার ছেলে কি এখনো রেডি হয়নি? এবার কি ফ্লাইট টা মিস করাবে নাকি?

মোনালিসা আরিয়ানের ঘর থেকে বের হতে হতে বলল,

মোনা – Why you are shouting Rayhan? তুমি তো জানোই প্রিন্স সবক্ষেত্রেই একঠু বেশি choosy। তার উপর আজ সে অন্য একঠা দেশে যাচ্ছে, তার জন্য dress choose খরা, রেডি হওয়া, এই সবের জন্য তো একঠু লেইঠ হবেই। থাই না?

রায়হান – আরে এরকম হলে তো আগেই ড্রেস চুজ করে রাখা উচিত ছিল তার। এখন কি ড্রেস চুজ করতে করতেই ফ্লাইট মিস করে দেবে নাকি সে?

ওদের চেঁচামেচির মাঝেই আরিয়ান রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে বলল,

আরিয়ান – What’s happened dad? Why you are shouting always like that?

রায়হান -কি বললে, আমি চিৎকার করি সবসময়? তা তোমরা চিৎকার করার মতো কাজ না করলেই তো আমাকেও চিৎকার করতে হয় না।

মোনালিসা – আচ্ছা Okey, okey, এখন father and son ঝগড়া শুরু খরে দিও না। ছলো এবার, We are ready to go to your so called motherland.

রায়হান – এই তুমি কি আমার মাতৃভূমি নিয়ে টিজ করছ আমাকে? আরে আমার মাদারল্যান্ড তোমার এই লন্ডনের থেকে অনেক বেস্ট বুঝলে?

মোনালিসা – Oh really ? Then, why you were come in London?

প্রিন্স – Oh mom and dad please , থোমরা ঝগড়া খরনা। And dad , এতক্ষণ থ থোমার ফ্লাইট মিস হয়ে যাচ্ছিল থা এখন বুঝি লেইঠ হচ্ছে না?

রায়হান দ্রুত তার হাত ঘড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,

রায়হান – ওহ হো! চলো চলো বেরিয়ে পড়ি, Let’s go.

বাংলাদেশ এয়ারপোর্টে পৌঁছে এক নম্বর টার্মিনালে এসে দাঁড়ায় আরিয়ানরা গাড়ির জন্য। আরিয়ানের চাচার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করার কথা তাদের জন্য। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই একটা সাদা রঙের গাড়ি এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়। গাড়ির ভিতর থেকে ড্রাইভার এবং আরেকজন লোক বেরিয়ে আসল। আর লোকটি হচ্ছে রায়হানের একমাত্র ছোটভাই আমান খান। রায়হান খান উত্তেজিত হয়ে তার ভাইয়ের সামনে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

রায়হান – আরে আমার ভাই, কতদিন পর তোকে সরাসরি দেখলাম। এতটা শুকিয়ে কেন গেছিস তুই?

আমান নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

আমান – আরে ভাই বয়স হচ্ছে তো। তার উপর আবার সামনে মেয়ের বিয়ে। বাবাদের কি টেনশনের শেষ আছে? এত টেনশন নিয়ে শুকাব না তো কি মোটা হব? তা আমার ভাবী আর ভাতিজা কই? দেখি সর ওদের সাথে দেখা করি।

রায়হান পিছনে ফিরে আরিয়ানের উদ্দেশ্যে বলল,

রায়হান – আরিয়ান মাই প্রিন্স, দেখ তো তোমার চাচাকে চিনতে পার কিনা?

আরিয়ান মৃদু হেসে তার চাচার দিকে এগিয়ে এসে বলল,

আরিয়ান – Hello uncle! How do you do?

আমান – হ্যাঁ! আরে ব্যাটা বাংলাদেশে এসেছ এইসব ইংরেজি ছেড়ে বাংলায় কথা বলো। বাংলা জানো তো? আর কি আঙ্কেল আঙ্কেল করছ? চাচা বলো চাচা, শুনেও শান্তি লাগে।

আরিয়ান কৃত্তিম হেসে তার মায়ের দিকে তাকাতেই তার মা এগিয়ে এসে বলল,

মোনালিসা – Hello Aman! How are you?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here