আলোছায়া ২

0
880

#আলোছায়া
#কলমে_লাবণ‍্য_ইয়াসমিন
#পর্ব_২

জুনায়েদ রক্তাক্ত হাতটা মুঠোয় নিয়ে বাড়িতে ফিরে দেখলো মেয়েটি ডাইনিং রুমের সোফায় বসে আছে। জুনায়েদ নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। ও সামনে এগিয়ে গিয়ে ভ্রু কুচকে জিঙ্গাসা করলো, “তুমি এখানে?” ওর এমন প্রশ্ন শুনে মেয়েটা মলিন হেসে চোখ বন্ধ করলো। জুনায়েদের শরীরে উত্তেজনা খেলা করছে। কেমন মৃদু মৃদু কাঁপছে। মনে হাজারো প্রশ্ন, কিছুক্ষণ আগে যাকে কিলারের হাতে তুলে দিয়ে এসেছে সে বাড়িতে কিভাবে ফিরে এসেছে।? জুনায়েদ কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে চিৎকার করে নিজের মাকে ডাকলো। পারভীন বেগম রান্নাঘরে ছিলেন। হঠাৎ ছেলের চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসলেন কিন্তু জুনায়েদের হাত পায়ের এমন অবস্থা দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না। চিৎকার করে ছুটে গিয়ে ধরলেন। ততক্ষণে উনার স্বামী ছৈয়দ হক বেরিয়ে এসেছেন। উনি ডাক্তারকে ফোন করে ছেলের কাছে এসে দাঁড়ালেন। পারভীন বেগম বারবার জিঞ্জাসা করছেন এসব কিভাবে হলো। জুনায়েদ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সোজাসুজি প্রশ্ন করে বসলো,
> আম্মু ও এখানে কেনো?
> এখানে থাকবে না তো কী? ওকে ফিরিয়ে দিয়েছিস দরজা থেকে। বেচারী তখন থেকে ওখানে বসে আছে। তবে ভালো করেছিস বাবা। যদি ওর কিছু হতো।
জুনায়েদ ভ্রু কুকচে তাকালো মেয়েটির দিকে। মেয়েটার মুখে ওর জন্য ভয় দেখতে পাচ্ছে তাছাড়া কিছুই নেই। একদম সরল সোজা মুখ। কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার এসে ওর হাতটা ব‍্যান্ডেজ করে ওষুধ দিয়ে গেলেন। সবাই চলে যাওয়ার পরে জুনায়েদ ফোনটা বের করে লোকগুলোকে ফোন করলো কিন্তু ফোন বন্ধ কিছুতেই ধরছে না। জুনায়েদের মনে হতে লাগলো এসব হয়তো অনিক করেছে। ওর সব রাগ ক্ষোভ গিয়ে জমা হলো অনিকের উপরে। ছেলেটা ইচ্ছে করে ওর সঙ্গে এমন করেছে। ও জুনায়েদের ভালো চাইনা। ওর এসব ভাবনার মধ্যেই ফোনটা বেঁজে উঠলো। ও চমকে উঠে ফোনের দিকে চোখ রাখলো। পিউ ফোন করেছে। জুনায়েদ নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে ফোন তুলে কানে ধরলো। ওপাশ থেকে প্রশ্ন আসলো,
> বেবী কাজ কতদূর? টেনশনে আমার ঘুম আসছে না। আমি জানি তুমি পারবে।
> পিউ তোমার সঙ্গে আমি পরে কথা বলবো। অসুস্থ আমি।
> আচ্ছা কিন্তু বলে তো রাখো কাজ কতটা এগিয়েছে?
>আমাকে নিয়ে দেখি তোমার কোনো চিন্তা নেই আছে শুধু আমার বউকে নিয়ে।
জুনায়েদের মুখে বউয়ের কথা শুনতে পিউয়ের গা জ্বলে উঠলো। ও কথার উত্তর না করে ফোন রেখে বিড়বিড় করে বলল, “সব পুরুষ মানুষ এক। যেই দেখেছে হাতের নাগালে কোনো মেয়ে অমনি প্রেমিকাকে ভূলে গেছে। কিন্তু আমি তো এটা হতে দিবো না। আমাকে অপমান করার শাস্তি ঠিক পেয়ে যাবে। ”

জুনায়েদ সোফায় বসে ফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিল এমন সময় মেয়েটা ভেতরে প্রবেশ করলো। ও ফোন থেকে চোখ নামিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল,
> বাড়িতে ফিরলে কিভাবে?
জুনায়েদের কথায় মেয়েটা মনে হলো অবাক হলো। কিছুই বুঝতে পারছে না । ওর মুখের এমন ভাব দেখে জুনায়েদ কথা ঘুরিয়ে বলল,
> নাম কি তোমার?
> নীলু।
> আগে পিছে কিছু নেই?
> হুম আমার ঘুম পাচ্ছে।
মেয়েটা ছোটছোট করে উত্তর করছে। জুনায়েদের মেজাজ চরম খারাপ হলো। এই মেয়ে কি ঘুম ছাড়া কিছুই বুঝে না? কুম্ভকর্ণের ছোট বোন। ওর ইচ্ছে করলো চিৎকার চেচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলতে কিন্তু ও নিজেকে বুঝিয়ে শান্ত করলো। এভাবে রাগারাগী করলে কিছুই হবে না। কিছু একটা করতে হবে। সুবাসের দিতে কাজ হয়নি তো কি,নিজেই কিছু একটা করবে নয়তো নতুন লোকের খোঁজ করবে। এবার আর অনিককে নিলে চলবে না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ওর চোখটা বুজে আসলে। কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে। নীলু মেয়েটা ততক্ষণে বিছানার অর্ধেক জায়গা দখল করে নিয়েছে। জুনায়েদের সেখানে গিয়ে ঘুমাতে একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না কিন্তু সোফায় কিভাবে ঘুমাবে। একটু পাশ ফিরলেই ধপাস করে নিচে পড়বে। ও বাধ্য হয়ে বিছানায় গিয়ে জড়সড় হয়ে শুয়ে পড়ল। গভীর রাত নিস্তব্ধ রুম। ড্রিম লাইট জ্বলছে। এলোমেলো হাওয়াতে নীলুর চুলগুলো উড়ে গিয়ে জুনায়েদের মুখের উপরে আছড়ে পড়ছে। ঘুমের মধ্যে এমন অসহনীয় অত‍্যাচারে ওর মুখটা কুচকে গেলো। বেশিক্ষণ ঘুম হলো না ও জেগে উঠলো। মনের মধ্যে আক্ষেপ হলো, বিবাহিত জীবনের প‍্যারা শুরু হয়ে গেছে। একটু ঘুমিয়েও শান্তি নেই। কথাগুলো ভেবে ও মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে নীলুকে ডাকতে গিয়ে থমকে গেলো। ঘুমালে কোনো মেয়েকে এতোটা সুন্দর দেখাই ওর আগে জানা ছিল না। ভালোভাবে কখনও মেয়েটার দিকে তাকানো হয়নি। গ্রামের অশিক্ষিত মেয়ে কথাটা শুনেই কেমন অস্বস্তি হয়েছিল তারপর আবার মেয়েটার এমন ঘুম। সব মিলিয়ে জুনায়েদের মনে হয়েছিল এই মেয়েটা ওর উপযুক্ত না। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে কথাটা ভিত্তিহীন। জুনায়েদ নিজের অজান্তেই হাতটা নীলুর মুখের উপরে রাখতে গেলো কিন্তু রাখতে পারলো না। মেয়েটা পাশ ফিরে ফেলল। জুনায়েদ তাড়াতাড়ি হাত টেনে নিয়ে নিজেও পেছনে ফিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এভাবেই রাতটা পার হলো। ভোররাত থেকে জুনায়েদের ভীষণ জ্বর শুরু হলো। গতকাল গাড়ির কাচে হাত কাটার ফলাফল হিসেবে ব‍্যাথার জন্য এই জ্বরটা। যার জন্য এতোকিছু সে বেশ ভালো আছে। জুনায়েদের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। পারভীন বেগম জুনায়েদের দেখাশোনা করছেন। বন্ধু মহলে খবর যেতেই সবাই হৈহৈ করে দেখতে চলে আসল। জুনায়েদ বিছানা থেকে উঠতে পারলো না। ডাইনিং রুমের সোফায় সবগুলো বেশ আয়েশ করে বসে আড্ডা দিলো। পারভীন বেগম নীলুর সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। মোটামুটি সবার পছন্দ জুনায়েদের বউকে দেখে। শুধু পিউয়ের মুখে কথা নেই। ওরা জুনায়েদকে দেখে ফিরে গেলো। এভাবে আরও দুদিন পার হলো। শেষমেশ ও মোটামুটি সুস্থ। সেদিন রাতে জুনায়েদ বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে বেরিয়েছিল। বন্ধুরা বলল রাতের ডিনার করে ফিরবে তাই ওরা একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়লো। সঙ্গে বেশ কিছু ছেলেমেয়ে আছে। ওরা হৈচৈ করে খাবারে খেতে বসতেই পাশ থেকে ওর বন্ধু আরিফ ফিসফিস করে জুনায়েদকে বলল,
> দোস্ত পাশের টেবিলে তাকিয়ে দেখ সেখানে ভাবি কি করছে?
আরিফের কথা শুনে জুনায়েদ পাশ ফিরে আড় চোখে তাকিয়ে অবাক হলো। সাদা গাউন পরে নীলু বসে আছে। ওর সামনে আরও দুজন মেয়ে বসে আছে। দেখতে ওর মতো সুন্দর না হলেও কম না। তিনজনের পোশাকের কেমন অদ্ভুত মিল। মনে হচ্ছে শুধু রঙটা আলাদা কিন্তু ডিজাইন গুলো এক। জুনায়েদ ভ্রু কুচকে ফেলল। নীলুকে ও শাড়ি ছাড়া এসব পোশাকে কখনও দেখেনি। জুনায়েদ খাবার রেখে উঠতে গেলো কিন্তু পাশ থেকে পিউ ওকে টেনে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
> খাবার শেষ না করে কোথাও যাবেনা।
ওর এমন ব‍্যবহারে জুনায়েদের বেশ রাগ হলো। এই মেয়েটা সব কাজে বাগড়া দেওেয়াতে উস্তাদ। ও ভ্রু কুচকে পিউয়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে আসলো কিন্তু কাউকে পেলো না। টেবিলে অর্ধেক খাওয়া বার্গার আর নুডুলস পড়ে আছে। জুনায়েদ খাবার সার্ভ করেছে ছেলেটিকে ডেকে জিঙ্গাসা করলো,
> এখানে যে তিনজন মেয়ে ছিল ওদেরকে চিনেন আপনি?
> নীলিমা আপুদের কথা বলছেন তো? উনারা প্রায় খেতে আসেন কিন্তু পরিচয় তো জানিনা।
জুনায়েদ ভ্রু কুচকে পকেট থেকে ফোনটা বের করে মায়ের নাম্বারে ডায়েল করলো। দুবার ফোন বাজার পরে রিসিভ হলো, জুনায়েদ ভনিতা ছাড়া প্রশ্ন করলো,
> নীলু কোথায় আম্মু?
> কোথায় আবার নিজের ঘরে আছে।
> ওকি বাইরে কোথাও এসেছিল?
> বাইরে কেনো যাবে? মেয়েটা শহরে নতুন একা একা বাইরে যেতে ভয় পাই। কেনোরে?
> এমনিই। আম্মু তুমি রুমে গিয়ে একটা ভিডিও কল করবে? পিউকে দেখবো।
জুনায়েদের এমন আবদারে পারভীন বেগম বেশ বিরক্ত হলেন। উনি ভ্রু কুচকে বললেন,
> বউকে এতোটা মিস করছিস তাহলে বাইরে পড়ে আছিস কেনো আহাম্মক? বাড়িতে এসে দেখে যা। রাখছি আমি ।
জুনায়েদ কিছু বলার আগেই পারভীন বেগম ফোনটা রেখে দিলেন। জুনায়েদ সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসলো। বাড়িতে গিয়ে দেখতে হবে সত্যিই নীলু বাড়িতে আছে কি না। মেয়েটার মধ্যে কেমন রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে।

(চলবে)

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

আসুস নামাজ ও কোরআন পড়ি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here