আরোহী পর্ব ৯

0
201

#আরোহী
#sharmin_akter_borsha (লেখিকা)
#পর্ব_০৯
______________
“ এই পোলা এই তুই এত সুন্দর কেন? তোরে দেখলে বুকের মধ্যে আমার আনচান আনচান করে। তোরে দেইখা আমার প্রেম প্রেম পায় তোরে তো আমার ভাল্লাগছে। চল আমার লগে বিয়া করমু তোরে। ”

এক হাফ লেডিস ছেলের মুখে এমন জঘন্য কথা শুনে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে পরে আরাফ পাশ থেকে উচ্চ স্বরে হেসে উঠল আরোহী। হাফ লেডিস ছেলেটা আরাফের হাত ধরে টানাটানি করছে। আরাফ পরে গেছে বিপর্যায় এখানে কারো কাছে হেল্প চাইবে তারও উপায় নেই। জায়গাটা প্রায় নিস্তব্ধ মানুষের চলাচল খুবই কম। এমন এক জায়গায় এক হাফ লেডিস ছেলে আরাফের হাত ধরে টানাটানি করছে আর মুখে যা আসছে তাই বলছে। আরোহীর কাছে হেল্প চাইবে তার উপায় নেই তার তো হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। ছেলেটার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আরাফ। কিন্তু তার সাথে পেরে উঠছে না কেননা এই প্রথম এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে নার্ভাস হয়ে পরেছে সে বোধ বুদ্ধি লোভ পেয়েছে কি করবে বুঝতে পারছে না।

নিপার বার্থডে পার্টিতে গিয়েছিল ফিরতে অনেকটা রাত হয়ে যায়। আরোহী বলেছি শর্টকাট রাস্তা দিয়ে যেতে তাহলে তারাতাড়ি পৌঁছাতে পারবে। আরোহীর কথা শুনে শর্টকাট রাস্তায় এসে পোছতাতে হচ্ছে আরাফকে।

হাত ধরে টানতে টানতে বেশ অনেকটা দূরে চলে যায় আরাফ ও ছেলেটা। আরোহী মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে বসে হাসছে পাগলের মতো এ হাসি আর থামার নয়। তার বাবা মা চলে গেছে আজ এক মাস দশ দিন। এর মধ্যে আরোহী এত হাসেনি আজ মন খুলে হাসছে সে। তবে সে হাসি চিরস্থায়ী নয়। চোখের পলকে সব কাঁচের মতো ভেঙে ঘুরিয়ে যায়৷

হঠাৎ করে আরাফের মাথায় পেছন থেকে কিছু একটা দিয়ে কেউ আঘাত করল। আরাফ গুরুতর আঘাত পায় মাথা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে পেছনে ঘুরে তাকায়। দুই হাত চিপচিপে হয়ে যাচ্ছে রক্তে। সাত আট জন ছেলে হকিস্টিক হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আরাফ কিছু বুঝার আগেই আবারও তার মাথায় আঘাত করে। দূর থেকে আরোহী লক্ষ্য করলে “ আরাফ ” বলে চেচিয়ে উঠে। আরোহী ছুটে আসছে তার দিকে দেখে এগিয়ে যায় একজন পুরুষ। সাতজন ছেলের সাথে আরাফ কোনো ভাবেই একা পেরে উঠছিল না। সে লুটিয়ে পরে মাটিতে ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে আলোয় আবছা আবছা দেখার চেষ্টা করছে আরাফ। এই সেই ছেলে যাকে মাঝ রাস্তায় কুকুরের মতো পিটিয়ে ছিল আরাফ। মাহবুব প্রতিশোধ নিতে আসছে। মাটির উপর ভোড় দিয়ে আরাফ উঠার চেষ্টা করল।

মাহবুব ও ওর ভাড়া করা গুন্ডারা সব একসাথে আরাফের উপর হামলা করল। মাটিতে লুটিয়ে পরল আরাফ মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে মাটিতে টুপটুপ করে পরছে। আরোহী আরাফের দিকে হন্ন হয়ে ছুটে আসছে। দেখতে পাচ্ছে আরাফ মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে চিৎকার দিয়ে শুধু একটা নামই উচ্চারণ করছে “ আরাফ ”। এদিকে আরাফ এক হাত উপর উঠিয়ে বারণ করতে লাগল সে যেনো এদিকে না আসে। কিন্তু আরোহী বুঝলো না আরাফের সতর্ক বার্তা। কিছুটা সামনে আসলে মাহবুর আরোহীর হাত খোপ করে ধরে দেয়। চোখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয়। আরোহী আরাফের দিকে তাকিয়ে কান্না করে যাচ্ছে। বারংবার মিনতি স্বরে বলছে, “ আরাফকে ছেড়ে যাও প্লিজ ওকে কিছু কোরো না তোমরা। ও ছাড়া আমার কেউ নেই। আরাফ ”

আরোহীর প্রতিটা আর্তচিৎকার আরাফের কানে বাজছে। সে অশ্রুসিক্ত নয়নে আরোহীর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। উপর থেকে তার শরীরে আঘাত করা হচ্ছে। মাহবুর শয়তানি হাসি দিয়ে আরোহীর হাত ছেড়ে দেয় ঠোঁট জোড়া বাঁকা করে বলে, “ হাত ছেড়ে দিয়েছি যা। ”

হাত ছাড়া পেয়ে আরোহী ছুটে চলে আরাফের দিকে তখনই বেঈমানী করে বসে মাহবুব। হকিস্টিক দিয়ে বারি মেরে বসে আরোহীর মাথায়। অতিরিক্ত জোরে আঘাত লাগায় আরোহী জ্ঞান হারিয়ে আরাফের সামনে পরে যায়। রাস্তার মধ্য স্থানে দু’টি দেহ পরে আছে। একটি দেহ অচেতন আরেকটি সচেতন।

আরাফ “ আরোহী” বলে চিৎকার দিয়ে উঠে। সব কিছু উপেক্ষা করে উঠে দাঁড়ায়। দুজনকে পাল্টা আঘাত করে আরাফ কিন্তু লাভ হয় না। পেছন থেকে পিঠে ছুড়ি চালায় মাহবুব।

পেছনে ঘুরে মাহবুবের গলা চেপে ধরে আরাফ। সামনে থেকে আবারও পেটের মধ্যে ছুড়ি ঢুকিয়ে দেয়। মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বের হয়ে আসল, “ আল্লাহ ” পেটে ঢুকানো ছুড়ির মাথায় সজোরে লাণ্থি মারে মাহবুব মুখ দিয়ে গলগলিয়ে শক্ত বের হয় আরাফের। ছিটকে পরে যায় আরোহীর হাতের কাছে। চোখ জোড়া খুলে খোলা আকাশের দিকে এক নজর তাকিয়ে আরোহীর হাত নিজের হাতের মধ্যে শক্ত করে চেপে ধরল আরাফ।

আরোহীর মুখটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, “ ভালোবাসি আরোহী তোমাকে। কখনো তোমাকে বলার সাহস হয়নি আজ বলছি কিন্তু আফসোস তুমি শুনতে পাচ্ছো না। আর কখনো শুনতে পাবেও না। আমার অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসেছে আরু কিন্তু আমি তোমার হাত ছুঁয়ে কথা দিচ্ছি। আমি আমার কথা রাখবো সর্বদা ছায়ার মতো তোমার আশেপাশে থাকবো। তোমাকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবো। আমি আরোহী তোমার পাশে ছিলাম। তোমার পাশে থাকবো। আমি থাকবো আরোহী, আমি থাকবো, বাতাসে মিশে থাকবো ছায়া হয়ে থাকবো। ”
___________
হঠাৎ ঘুমের মধ্যে “আরাফ” বলে চেচিয়ে উঠল আরোহী। চোখ খুলে চার পাশে চোখ বুলিয়ে নিলো। সবকিছু ঠিকঠাকই আছে তাহলে এতক্ষণ যা দেখলো সেটা কি ছিল ভাবতে ভাবতে বিছানা থেকে নামল। খারাপ স্বপ্ন ছিল ভেবে নেয় সে। রুমের দরজা খুলে রুম থেকে বের হলো। বাড়ির নিচ থেকে অনেক মানুষের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে আরোহীকে অনেক মানুষের কোলাহল শোনা যাচ্ছে। আরোহী কৌতুহল বসত সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে গেলো। প্রথম এত মানুষ দেখে সে কিছুই বুঝতে পারল না।

মানুষ ঠেলে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে দেখল আরাফ মসজিদের লাশবাহি খাটে শুয়ে আছে। চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো তার চিৎকার দিয়ে উঠল আরোহী। “আরাফ আরাফ” করে সামনে ছুটে যাচ্ছিল পেছন থেকে তিন চারজন মহিলা আরোহীকে শক্ত করে ধরে নিলো। আরোহী অঝোর ধারায় কেঁদে চলেছে। আরাফ আরাফ বলে বারবার চেচিয়ে উঠছে। এতজন মানুষ ও জেনো তাকে আঁটকে রাখতে পারছে না। আরোহী তাদের উপেক্ষা করে আরাফের কাছে যেতে চাচ্ছে। কেঁদে বুক বাসাচ্ছে কিন্তু পারছে না যেতে। দুই পাশ দিয়ে চারজন মহিলা তার দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে। যার জন্য সামনে এগিয়ে যেতে পারছে না। আর না পেরে মাটিতে বসে পরল আরোহী। “ আরাফ তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না৷ তুমি বলেছিলে আমাকে একা রেখে যাবে না। তুমি ককথা দিয়েছিলে আমার তো কেউ নেহহই তুমি ছাড়া শেষষে তুমিও ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে আরাফ। ”

কান্না করতে করতে বলতে লাগল কান্না ভেজা গলায় সবকিছু অস্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।

“ আরাফ তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারো না। হ্যাঁ আল্লাহ আমার বাবা মা কে নিয়ে তোমার শান্তি হয়নি? এখন আমার প্রিয় বন্ধু টাকেও নিয়ে নিলা আমার থেকে কেনো কেঁড়ে নিলা? আমাকে কেনো নিয়ে নিচ্ছো না? আমাকে নিয়ে নাও আমি আর বাঁচতে চাই না। ও আল্লাহ আমার আরাফকে তুমি বাঁচিয়ে দাও। ”

ততক্ষণে মিতা ও নিপা এসে উপস্থিত হয়। আরোহীকে জড়িয়ে ধরে। আরোহী কান্না করার জন্য মুখ দিয়ে কথা বলতে পারছে না। কয়েকজন লোক আরাফকে নিয়ে যাওয়ার জন্য খাটের চার কোণায় ধরে কাঁধে তুললো। আরোহী চিৎকার দিয়ে উঠল, “ নাহহ আমার আরাফকে নিয়ে আপনারা কোথাও যাবেন। ওর কিচ্ছু হয়নি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন ওকে? নামান বলছি আমার আরাফের কিছু হয়নি। ”

লোক গুলো চোখাচোখি করছে। আরোহী হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাচ্ছে তাদের দিকে পেছন থেকে আবারও তাকে ধরে ফেলল কয়েকজন মহিলা সাথে মিতা ও নিপা ধরেছে। মানসিক আঘাত পেয়েছে আরোহী যার জন্য সে এমন করছে। আরাফকে তারই চোখের সামনে নিয়ে যাচ্ছে দেখে সোজা উপুড় হয়ে মাটিতে পরে যায় আরোহী। শেষ বারের মতো আরাফের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ক্ষীণকন্ঠে চেচিয়ে বলে, “ আরাফফফ ”

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here