#আমৃত্য পর্ব ৬ শেষ পর্ব
লেখক: মো: শাহরিয়ার
আসিফ কারাগারের ভিতরে বসে আছে। তখনি তার মা আসিফের সাথে দেখা করতে এলো।
– মা তুমি এখানে?
– কী হয়েছে তোর? তুই নাকি কাউকে খুন করেছিস?
– বিশ্বাস করো মা আমি কাউকে খুন করিনি। আমাকে ফাসানোর চেস্টা করছে।
– কিন্তু কে তোকে ফাসাবে?
– মিস্টার শাহরিয়ার।
আসিফের কথা শুনে তার মা অবাক হয়ে গেল।
– কিন্তু শাহরিয়ার তোকে কেন ফাসানোর চেস্টা করবে?
– কারণ রনিকে তিনিই খুন করেছেন এখন আমি তা জেনে গিয়েছি দেখে আমাকেও ফাসাতে চাইছেন।
– তূই কোনো চিন্তা করিস না বাবা। আমি একজন ভালো উকিল দেখে তোকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবো।
– না মা। তার দরকার নেই। আমি অন্যায়ভাবে মুক্তি পেতে চাই না। আর আমি মুক্তি পেলেও মিস্টার শাহরিয়ার আবার আমাকে ফাসানোর চেস্টা করবে। তাদের সকল ষড়যন্ত্র ফাস না করে আমি এখান থেকে যাবো না।
– কিন্তু তুই নিজেকে নির্দোশ প্রমাণ করবি কীভাবে?
– তার চিন্তা তুমি করো না মা। তুমি এখন বাসায় যাও।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আবার আসবো। আর নীলিমা তোর সাথে কথা বলতে চাইছে।
– হ্যা নিয়ে আসো ওকে।
আসিফের মা নীলিমাকে নিয়ে আসলো। আসিফ দেখলো নীলিমা কান্না করে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
– কী হয়েছে পাগলীটা? কান্না করছিস কেন?
নীলিমা কান্না করতে করতে বলল,
– ভাইয়া আমার জন্য তোমার আজকে এই অবস্থা। আমি আমার এক ভাইকে হারিয়েছি। তাই তোমাকে আবার হারাতে চাই না।
– আরে বোকা আমার কিছু হবে না। তোর ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তারা সবাই শাস্তি পাবে। তুই একদম টেনশন করিস না।
– কিন্তু কীভাবে ভাইয়া?
– কালকে কোর্টে আসিস মায়ের সাথে। তখনি দেখতে পাবি।
এরপর নীলিমা ও তার মা চলে গেল।
রাত ১ টা
কারাগারের ভিতরে মশার কামড়ে আসিফ ঘুমাতে পারে নি। সে এখনো দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। পুরো কারাগার এখন অন্ধকারে পরিপূর্ণ। পাশে একটি ছোট জানালা দিয়ে পূর্ণিমার চাঁদের আলো আসছে। হঠাৎ কারাগারের এক কোনায় আসিফ কাউকে দেখতে পেল। কিন্তু এখানে আসিফ ছাড়া আর কারো তো থাকার কথা না। লোকটা একটু এগিয়ে আসতেই আসিফ বুঝতে পারলো এটা সেই কালো অবয়বটি। কিন্তু আজ তার মুখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা নেই। চাঁদের আলোতে সে অবয়বটার মুখমন্ডল ভালোভাবেই দেখতে পাচ্ছে। একদম তার মতোই চেহারা। জমজ ভাইদের চেহারায় ও এত মিল থাকে না যা আসিফের আর কালো অবয়বটার চেহারার মধ্যে রয়েছে।
– এখনো ঘুমাওনি কেন?
অবয়বটার কথা শুনে আসিফের হুশ ফিরলো। সে বলল,
– না মানে ঘুম আসছিল না। তা তুমি এখানে কীভাবে আসলে?
– আমি যেকোনো জায়গায়ই যেতে পারি।
– ওহ আচ্ছা। তা তোমার চেহারা আর আমার চেহারা হুবহু এক কীভাবে তা তো বললে না।
– এটা তুমি ভবিষ্যতে জানতে পারবে। আমি যদি এখন তোমাকে বলে দেই তাহলে সময়ের নিয়তি ভঙ্গ হবে। যা আমি চাই না। তবে এতটুকু জেনে রাখো তুমি আর আমি আলাদা কোনো ব্যাক্তি না। আমাদের মধ্যকার পার্থক্য হচ্ছে সময়ে।
আসিফ কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি কেউ তার নাম ধরে ডাক দিল। আসিফ পিছনে ফিরে দেখলো রনি তার পাশে দাঁড়িয়ে। আসিফ আবার সামনে ফিরতেই সে দেখলো অবয়বটা আর সেখানে নেই। উধাও হয়ে গিয়েছে।
– কেমন আছিস আসিফ?
আসিফ উত্তর দিল,
– এইতো ভালো আছি।
রনি মুচকি হেসে বলল,
– তা তো দেখতেই পারছি যে কেমন আছিস তুই। আমার জন্য তোর এত ঝামেলা পোহাতে হলো। মাফ করে দিস আমাকে।
– আরে কী বলছিস এগুলো। তুই আমাকে যত সাহায্য করেছিলি তার তুলনায় এটা কিছুই না। তবে চিন্তার কারণ নেই। আমি কালকে সবকিছু প্রমাণ করে দিব।
রনি মুচকি হেসে বলল,
– তা আমি জানি।
সকাল ১১ টা
আসিফকে কোর্টে পেশ করা হয়েছে। সকল প্রমাণ এখন আসিফের বিরুদ্ধে। মিস্টার শাহরিয়ার আরো অনেকগুলো কেসে আসিফকে ফাসিয়েছে। জজ সাহেব আসিফকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– তো মিস্টার আসিফ আপনি তো দেখতেই পেলেন সকল প্রমাণ আপনার বিরুদ্ধে। এখন আপনি কি কিছু বলতে চান? তা নাহলে আমি রায় শুনিয়ে দিচ্ছি।
জবাবে আসিফ বলল,
– মাননীয় জজ সাহেব। আপনি তো জানেন আমার পক্ষের কোনো উকিল নেই। তাই আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার একটি সুযোগ চাই।
– আপনি সিউর যে আপনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবেন? তা নাহলে আদালতকে হয়রানি করার অভিযোগে কিন্তু আপনার শাস্তি হবে।
– অবশ্যই। শুধু আমি যা চাই তা আপনি আমাকে এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।
– আচ্ছা আপনাকে অনুমতি দেওয়া হলো।
– ধন্যবাদ। আমি কী একটা ল্যাপটপ পেতে পারি?
আসিফের এ কথা শুনে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেল। কিন্তু জজ সাহেব তাকে অনুমতি দিলেন। আসিফ ল্যাপটপ টি হাতে পেয়ে সেটিতে কিছু প্রোগ্রাম করতে লাগলো। এরপর আসিফ জজ সাহেবকে বলল,
– আদালতের যেকোনো একটি জায়গায় একটা বড় পর্দার টিভি টানানো হোক আর তাতে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হোক। যাতে প্রমাণগুলো আদালতে উপস্থিত সবাই দেখতে পায়।
তখনি বিরোধী পক্ষের উকিল উঠে বলল,
– মাননীয় জজ সাহেব এ শুধু শুধু আমাদের সময় অপচয় করছে।
কিন্তু জজ সাহেব উকিলের কথা না শুনে আসিফের কথা অনুযায়ী একটি বড় পর্দার টিভি আনার নির্দেশ দিল। টিভিটি এমন অবস্থানে রাখা হলো যাতে সবাই তা দেখতে পারে। এরপর আসিফ আবার ল্যাপটপে প্রোগ্রাম করতে লাগলো। আদালতে রনির সৎ মা এবং মিস্টার শাহরিয়ার ও উপস্থিত আছেন। তারা বুঝতে পারছে না আসিফ কি করছে চাচ্ছে? ঠিক তখনি আসিফ বলল,
– প্লিজ সবাই টিভির দিকে লক্ষ করুন।
সবাই টিভির দিকে তাকাতেই টিভি অন হয়ে একটি ভিডিও প্লে হওয়া শুরু করলো। ভিডিওটি দেখে রনির সৎ মা পুরো হতভম্ব। কারণ তিনি দেলোয়ারের সাথে আসিফের ব্যাপারে ফোনে যে কথা বলেছিলেন তা এখন টিভিতে দেখাচ্ছে। তখনি আসিফ বলল,
– তো মাননীয় জজ সাহেব আমি সেদিন রনিদের বাসায় গিয়ে তাদের সিসি ক্যামেরা চেক করি এবং রনির বিষয়ে কিছু তদন্ত করি। এতে রনির মা ভয় পেয়ে আমাকে মারার জন্য প্লান করেন তার প্রেমিকের সাথে। যে কীনা একজন তান্ত্রিক ছিল। তার সাথে প্লান করেই রনিকে এবং রনির বাবাকে হত্যা করা হয়েছিল শুধুমাত্র তাদের সম্পত্তি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য। শুধু এটাই না। এরপরের ভিডিওটি দেখুন।
এই বলে আসিফ আরেকটি ভিডিও প্লে করলো। যেখানে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে মিস্টার শাহরিয়ার পরপর তিনবার সেই ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে যাকে হত্যা করার দায়ে আসিফ আজ এইখানে। এই ভিডিও দেখে মিস্টার শাহরিয়ার ৪৪০ ভোল্টের শক খেল। কারণ সে কল্পনাও করে নি যে আসিফ এটা ভিডিও করছে। এরপর আসিফ বলল,
– আমার শার্টে আমি একটি বাটন ক্যামেরা লাগিয়ে নিয়েছিলাম। যা থেকে এই ফুটেজটা রেকর্ড হয়েছে। এখানে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে মিস্টার শাহরিয়ার ওই ছেলেটাকে খুন করেছে কিন্তু আমি যেহেতু জেনে গিয়েছিলাম রনিকে হত্যার ষড়যন্ত্রে তারও হাত ছিল তাই তিনি আমাকে মিথ্যে মামলায় ফাসিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
এসব কথা শুনে আদালতে উপস্থিত সবাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগলো। মিস্টার শাহরিয়ার পরিস্থিতি খারাপ বুঝে পালানোর চেস্টা করতেই পুলিশ তাকে ধরে ফেলল। এরপর আদালত রনির মা এবং মিস্টার শাহরিয়ারকে যাবৎ জীবন কারাদণ্ড দিল আর আসিফকে মুক্তি দিল। রনির যেহেতু জানাযা পড়ানো হয় নি তাই আসিফ রনির কবর থেকে লাশ বের করে আবার জানাযা পড়ানোর চিন্তা করলো। কিন্তু রনির লাশ বের করার জন্য কবর খুড়ার পর আসিফ এবং উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেল। কারণ রনির লাশ এখনো আগের মতোই ছিল। মনে হচ্ছে যেন ও এইমাত্র মারা গিয়েছে। যাইহোক এরপর আসিফ রনির জানাযার নামাজের আয়োজন করলো। নামাজ শুরু হওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে আসিফ রনিকে তার লাশের পাশে দেখতে পেল। রনির মুখে রয়েছে তৃপ্তির হাসি। রনিকে দেখে আসিফও মুচকি হাসলো। তার আজ আনন্দ লাগছে। কারণ সে রনির ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছে।
দুইদিন পর
আসিফ তার ডায়রীতে কিছু লিখছে। সে সবসময়ই তার পুরো দিনের সমস্ত ঘটনা ডায়রীতে লিখে রাখে। তার পাশেই নীলিমা আসিফের ল্যাপটপে একটি মুভি দেখছিল। তখনি হঠাৎ ল্যাপটপটির স্ক্রিন পুরো কালো হয়ে গেল। নীলিমা কিছু বুঝতে না পেরে আসিফকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– ভাইয়া দেখো তো কি হয়েছে?
আসিফ ল্যাপটপ টি নিয়ে তাকে ঠিক করার চেস্টা করতে লাগলো। ঠিক তখনি ল্যাপটপের স্ক্রিনে একটি লোগো ভেসে উঠলো। আর সাথে সাথে একটি ভয়েস চালু হলো। ভয়েসটা এইরকম,
– Hello Mr. Doom. How are you? নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছো যে আমি তোমার এই পরিচয় কীভাবে জানলাম? যাইহোক এটা আমার কাছে তেমন কোনো বড় বিষয় না। তোমার একটা স্পেশাল প্রোগ্রাম আছে না? যার নাম “SpaceNova”. এটা সত্যিই অসাধারণ একটা প্রোগ্রাম। তবে আমার এটাকে চাই। যদি তুমি না দিতে চাও তাহলে সমস্যা নেই। আমি এটা তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবো। হয়তো জানতে চাইছো যে আমি বা আমরা কে? তাহলে জেনে রাখো, ” We are Immortals.”
(সমাপ্ত)