আমৃত্য পর্ব ৩

0
844

#আমৃত্য পর্ব ৩

লেখক: মো: শাহরিয়ার

– মেয়েটাকে তো এখনি মেরে ফেললেই হয়। এতো অপেক্ষা কেন করছি আমরা?

– আরে বোকা আগে বস আসুক। সে আবার মেয়ে দেখলে লোভ সামলাতে পারে না।

– তার মানে বস মেয়েটাকে ধর্ষন করবে?

– হ্যা।

– আচ্ছা মেয়েটার নাম যেন কি?

– নীলিমা নাম। আমি তো তাই শুনলাম।

– মেয়েটাকে দেখে তো ভালোই মনে হচ্ছে। ওকে হত্যা করতে বলল কেন?

– আমি কীভাবে বলবো? আমাদের কাজ হচ্ছে টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন করা। আমাদের অতো কিছু দেখার দরকার নেই।

– হ্যা। তাও ঠিক। তা আমাদের বস এখনো আসছে না কেন?

ঠিক তখনি গাড়ির হর্নের আওয়াজ পেল তারা।

– ওইতো বস মনে হয় এসে গেছে।

একটা গাড়ি এসে সেখানে থামলো। কিন্তু গাড়িটার দরজা খোলার পর তারা যা দেখলো তা দেখার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। দরজা খোলার সাথে সাথেই তাদের বসের কাটা মাথা সেখান থেকে পড়লো তাদের সামনে। এটা দেখে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। তারা তাদের পিস্তল বের করে ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে এগোতে লাগলো। সকলের মনে এক অজানা ভয় কাজ করছে। একজন গাড়ির কাছে গিয়ে দরজা খুলে দেখলো গাড়িতে কেউ নেই। যেটা দেখে উপস্থিত সবাই অবাক। তখনি গাড়ির ভিতর থেকে রেডিওর ঝির ঝির শব্দ শোনা গেল এবং কিছুক্ষন পরই একটি কন্ঠস্বর শোনা গেল।

– মেয়েটাকে কিডন্যাপ করে তোরা অনেক বড় ভূল করে ফেলেছিস। এখন তোদের আর কেউ বাচাতে পারবে না। তোদের বসের যে অবস্থা হয়েছে ঠিক একি অবস্থা তোদেরও হবে। কিছুক্ষনের মধ্যেই তোদের মৃত্যুদূত আসছে। So be Prepared………,

এটা বলার সাথে সাথেই তাদের পুরো রুমের লাইট অফ হয়ে গেল। এখন যেহেতু রাত আর তাদের আস্থানাটা যেহেতু গভীর জঙ্গলের ভিতরে তাই পুরো রুম অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন টর্চলাইট জ্বালিয়ে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো। সবার মনে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তখনি একজনের চিৎকার শোনা গেল। সবাই পিছনে তাকিয়ে দেখলো একটা টর্চলাইট নিচে পরে আছে। কিন্তু টর্চলাইটের মালিক কোথাও নেই। আবার আরো একজনের চিৎকার শোনা গেল। আরো একজন উধাও হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে যেন অন্ধকার গ্রাস করে নিয়েছে। এখন মাত্র দুজন লোক আছে। তারা দুজন একসাথে একে অপরের হাত ধরে পালানোর চেস্টা করছে। কিন্তু তারা কোনো পথ খুজে পাচ্ছে না। তখনি হঠাৎ তারা সামনে একটি কালো অবয়ব দেখতে পেল। অবয়বটিকে দেখে তারা থমকে দাড়ালো। কারণ অবয়বটির হাতে একটি রক্তমাখা তলোয়ার রয়েছে। তাদের টর্চলাইটের আলোয় তলোয়ারটা ঝকঝক করছে। তখনি অবয়বটা বলল,

– গুড নাইট ফরএভার।

এরপরই একটি বিকট চিৎকার শোনা গেল।

সকাল ৬ টা ৩২ মিনিট।

আসিফ পাগলের মতো নীলিমাকে খুজে বেড়াচ্ছে। সারারাত ধরে সব জায়গায় সে নীলিমা কে খুজেছে কিন্তু কোথাও পায় নি। তার চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গিয়েছে। রাস্তার ফুটপাত ধরে সে হাটছিল আর নীলিমাকে খুজছিল ঠিক তখনি এক আগন্তুকের সাথে সে ধাক্কা খেল। সে দেখলো আগন্তুকের কাছ থেকে একটি কাগজ পরে গিয়েছে। আসিফ কাগজটি উঠিয়ে সেই আগন্তুককে ডাক দেওয়ার জন্য পিছনে ফিরলো কিন্তু পিছনে ফিরে দেখলো কেউ নেই। সে বুঝতে পারলো না লোকটা এত দ্রুত কীভাবে চলে গেল? তখন সে কাগজটির দিকে খেয়াল করলো এবং যা দেখলো তাতে তার ঘুম উধাও হয়ে গেল। কাগজটিতে লেখা, “লেকের ধারে ২০২ নাম্বার বেঞ্চে নীলিমা আছে।”

আসিফ বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি ছুটে গেল লেকের ধারে এবং কাগটির লেখা অনুযায়ী সে ২০২ নাম্বার বেঞ্চের উপর নীলিমাকে খুজে পেল। সে দেখলো নীলিমা ঘুমিয়ে আছে বেঞ্চের উপর। আসিফ নীলিমাকে জাগিয়ে তুলল এবং জিজ্ঞেস করলো,

– কি হয়েছিল তোর নীলু?

নীলিমা ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষন আশেপাশে তাকালো এবং অবাক দৃষ্টিতে বলল,

– আমি এখানে কেন? আমি তো বাসায় ছিলাম।

আসিফ কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি তার সেই কাগজটার কথা মনে পড়লো। সে কাগজটাকে উল্টিয়ে দেখলো সেখানেও কিছু লেখা আছে।

“নীলিমার গতকাল রাতের ব্যাপারে কিছুই মনে নেই। তাই ওকে জিজ্ঞেস করে কোনো লাভ হবে না। হয়তো মনে প্রশ্ন জাগছে যে আমি কে? এর উত্তর তুমি খুব শিঘ্রই জানতে পারবে। তবে এখন এতটুকু জেনে রাখো যে নীলিমা অনেক বড় একটা বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। এখন তোমার দায়িত্ব রনির খুনিকে খুজে বের করে তাকে শাস্তি দেওয়া আর নীলিমার ভরনপোষনের দায়িত্ব পালন করা। যার প্রতিশ্রুতি তুমি রনিকে দিয়েছিলে।”

লেখাটা পড়ে রনি কিছুটা অবাক হলো। কিন্তু তারপর নীলিমাকে বাচানোর জন্য অজানা সেই লোকটাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিল। কারণ নীলিমার কিছু হয়ে গেলে সে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতো না। এরপর আসিফ নীলিমাকে তার নিজের বাসায় নিয়ে গেল এবং তার মা কে সকল ঘটনা খুলে বলল, আর এটাও বলল যে নীলিমা এখন থেকে তাদের এখানে থাকবে। আসিফের বাবা নেই। তবে তার বাবা মারা যাওয়ার আগেই তাদের ভরনপোষনের ব্যবস্থা করে রেখে গিয়েছিলেন। আসিফদের কয়েকটা বাড়ি আছে যেগুলো ভাড়া দিয়ে তারা মাসে অনেক টাকা পায়। আর তাদের দাদাবাড়ির জমিতে ধান, শাক-সবজি সবকিছু আছে। বড় পুকুর আছে যেখানে মাছ চাষ করে তারা। একটা বড় গরুর খামার আছে। মুরগীর ফার্ম আছে। এমনকি প্রায় সব ফলমূলের বাগান ও আছে। তাই তাদের কোনোকিছুরই অভাব নেই। আসিফ একটু অলস প্রকৃতির তাই সে চাকরি করতে চায় না। পড়াশোনা শেষ করে সে এসবকিছু দেখাশোনা করবে। আপাদত তার দুজন চাচা এগুলো দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন। যাইহোক মূল ঘটনায় ফিরি। সকাল ১০ টার দিকে আসিফ রনিদের বাসায় গেল। গিয়ে দরজায় নক করতেই রনির সৎ মা দরজা খুলে দিল। রনির মা আসিফকে দেখে ভ্রু কুচকে আসিফকে জিজ্ঞেস করলো,

– কী ব্যাপার তুমি এখানে?

– কিছু কাজ ছিল তাই এসেছি।

– কী কাজ? আর কাল রাতে তুমি আমার বাসার তালা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করেছিলে কেন?

এটা শুনে আসিফ হকচকিয়ে উঠলো। কারণ সে যে রনিদের বাসায় কাল রাতে এসেছিল তা রনির মা কীভাবে জানলো? আসিফ জিজ্ঞেস করলো,

– তা আপনি কীভাবে জানলেন?

– আমার এই পুরো বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে।

এটা শুনে আসিফ চমকে উঠলো। পুরো বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে তার মানে তো রনির রুমেও সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। তাহলে সেই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করলেই তো বোঝা যাবে যে আসলেই রনি আত্নহত্যা করেছিল নাকি খুন হয়েছিল?
আসিফকে কিছু না বলতে দেখে রনির মা আবারো জিজ্ঞেস করলো,

– কী হলো কথা বলছো না কেন?

তখন আসিফ জবাবে বলল,

– আমি গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য। আপনার বাড়িতে তদন্ত করতে এসেছিলাম।

এটা বলে আসিফ একটা কার্ড দেখালো। আসলে আসিফ মিথ্যে কথা বলেছে। সে গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য না। মিস্টার শাহরিয়ারের সাথে আসিফের ভালো সম্পর্ক থাকায় তিনি আসিফকে একটি কার্ড তৈরি করে দিয়েছিলেন যাতে আসিফ বিপদে পড়লে এটা দেখিয়ে উদ্ধার পেতে পারে। কিন্তু আজকে কার্ডটা যে এভাবে কাজে লেগে যাবে সেটা আসিফ ভাবেনি। আসিফের কথা শুনে রনির মা একটু চমকে উঠলো। তার মুখে স্পষ্ট ভয় দেখা গেল। সে আসিফকে জিজ্ঞেস করলো,

– তুমি গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য হলে কবে থেকে? আর আমার বাড়িতে তদন্ত কেন?

– সেটা বলছি আগে আপনি বলুন যে নীলিমা কোথায়?

রনির মা কিছুক্ষন চুপ থেকে শান্ত গলায় বলল,

– ওটা একটা বজ্জাত মেয়ে। ওর বাবা আর ভাই মারা গেছে সেই সুযোগে ও অন্য আরেক ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছে।

কথাটা শুনে আসিফের প্রচন্ড রাগ হলো। কি সহজভাবে মহিলাটা মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু সে শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলো,

– নীলিমা যে পালিয়ে গিয়েছে সেটা আপনি এত নিশ্চিতভাবে কীভাবে বলছেন?

– ও পালিয়ে যাওয়ার আগে একটা চিঠি লিখে রেখে গিয়েছিল।

– চিঠিটা আছে আপনার কাছে?

– হ্যা।

– তাহলে আমাকে দিন।

– কিন্তু কেন?

– যা বলছি তাই করুন। আর আপনি চুপ থাকুন।

এরপর আসিফ ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে চিঠিটা হাতে নিল। চিঠিতে লেখা,

“মা আমাকে ক্ষমা করে দিও। কিন্তু আমি রায়হানকে ভালোবাসি। আমি জানি রায়হানকে তোমরা কোনোদিন মেনে নিবে না। তাই আমি ওর সাথে চলে যাচ্ছি। আমি যেতে চাইনি কিন্তু কিছুই করার নেই। আমি ওকে ভালোবাসি।”

চিঠিটা পড়ে আসিফ যেন আকাশ থেকে পড়লো। কারণ সে যতটুকু জানে নীলিমা এই ধরনের মেয়ে না। সে খুবই ভালো একজন মেয়ে। আর রায়হান নীলিমার পিছনে সারাদিন ঘুরঘুর করতো। অনেকবার নীলিমাকে প্রপোজ ও করেছিল কিন্তু নীলিমা তাকে পাত্তা দেয় নি। কারণ নীলিমা অনেক ধার্মিক মেয়ে।
আসিফ চিঠিটা পড়ে মিস্টার শাহরিয়ারকে কল করলো এবং রনির বাসায় আসতে বলল। কিছুক্ষনের মধ্যে মিস্টার শাহরিয়ার তার কিছু লোকজন নিয়ে রনিদের বাসায় উপস্থিত হলো। আসিফ তাকে সকল ঘটনা খুলে বলল। আসিফের সব কথা শুনে মিস্টার শাহরিয়ার বলল,

– চলো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আগে চেক করি আমরা।

এরপর তারা রনির রুমের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করলো। কিন্তু না। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে যে রনি নিজেই ফ্যানের সাথে দড়ি বেধে ফাসি দিয়ে আত্নহত্যা করেছে। আসিফ বারবার ফুটেজটাকে দেখলো কিন্তু কোনো ক্লু খুজে পেল না। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখার পরও আসিফের কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছিল না। রনি এভাবে আত্নহত্যা করতে পারে না। এরপর তারা রনিদের বাসা থেকে বের হলো। বের হয়েই মিস্টার শাহরিয়ার আসিফকে বলল,

– তো আসিফ আমরা তো সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও দেখলাম। এখানে স্পষ্টই দেখতে পেলাম যে রনি আত্নহত্যা করেছে। ওকে কেউ খুন করেনি।

– হ্যা কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। কারণ রনির মতো ছেলে কোনোদিন আত্নহত্যা করতে পারে না।

– আসলে মানুষ কখন যে কি করে না বোঝা মুশকিল।

– কিন্তু নীলিমার ব্যাপারে কি বলবেন? রনির মা তো পুরো মিথ্যে কথা বলছে।

– হ্যা ঐ ব্যাপারটা আমি দেখছি। তুমি এক কাজ করো রায়হানের খোজ করো।

– আচ্ছা ঠিক আছে।

এদিকে আসিফ এবং মিস্টার শাহরিয়ার ও তার টিম রনিদের বাসা থেকে চলে যাওয়ার পরই রনির মা কাউকে ফোন করলো। ফোন রিসিভ করতেই,

– হ্যালো। কী ব্যাপার? তুমি আমাকে এই অসময় কেন ফোন দিয়েছো?

– আরে শোনো ঝামেলা হয়ে গিয়েছে। রনির একটা বন্ধু আছে আসিফ নামে। ও আজকে বাসায় এসেছিল গোয়েন্দা নিয়ে।

– কিন্তু গোয়েন্দা নিয়ে কেন এসেছে?

– ও বলছে যে রনি আত্নহত্যা করে নি। ওকে খুন করা হয়েছে।

– কেন ওদেরকে তুমি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখাও নি?

– হ্যা দেখিয়েছি তো। কিন্তু আমার ওই ছেলেটাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না। ও আমাদের সকল পরিকল্পনা ফাস করে দিতে পারে।

– (মুচকি হেসে) সে চিন্তা করার দরকার নেই তোমার। আসিফের ব্যাপারটা আমি দেখছি। ও যদি দুনিয়াতেই না থাকে তাহলে তো আর আমাদের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। তাই ওকেও রনির কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।

বিকাল ৪ টা

আসিফ রায়হানদের বাসায় এসেছে। বাড়ির সামনে এসে সে দরজায় কড়া নাড়লো। কিছুক্ষন পর এক বৃদ্ধ বয়সী মহিলা দরজা খুলে দিল। আসিফকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,

– তুমি কে বাবা?

আসিফ উত্তরে বলল,

– আমি কে তা চিনবেন না। রায়হান কি বাসায় আছে?

রায়হানের কথা শুনেই মহিলাটি কেদে দিলেন। কাদতে কাদতে বললেন,

– রায়হানকে কালকে রাত থেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। কালকে রাতে রনির বাবাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিল। এরপর আর বাসায় ফিরে নি।

এটা শুনে আসিফ অবাক হলো। তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। রায়হানের আবার কি হলো? রনির মা ওকে গুম করে দেয়নি তো? যাতে তার মিথ্যে কথাটাকে সত্যি বানিয়ে দিতে পারে?

রাত ১ টা ২৪ মিনিট।

রায়হানের চোখ খুলতেই সে নিজেকে একটি গুদামঘরে আবিষ্কার করলো। তার হাত পা চেয়ারে বাধা অবস্থায় রয়েছে। সে হাত পা ছাড়ানোর চেস্টা করতে লাগলো। ঠিক সেই মূহুর্তে সে একটি কালো অবয়বকে তার সামনে দেখতে পেল। ডিম লাইটের আলোয় অবয়বটার হাতের তলোয়ারটাকে দেখতে বেশি বেগ পেতে হয়নি তার। সে ভয়মিশ্রিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

– কে তুমি? আমাকে এভাবে বেধে রেখেছো কেন? আমি কি করেছি?

অবয়বটা মুচকি হেসে বলল,

– কি করেছিস? তুই একটা অমানুষ। সামান্য কিছু টাকার জন্য নিজের ভালোবাসাকে বিক্রি করে দিয়েছিস। তোর মতো অমানুষের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। সো গুড নাইট ফরএভার।

সকাল ৭ টা ৬ মিনিট।

জামাল সাহেব প্রতিদিনের মতো আজকেও জগিং করতে বেড়িয়েছেন। জগিং করতে করতে লেকের ধারে আসতেই তিনি একটি কারো কাটা মাথা দেখতে পেলেন। যা দেখে তিনি ভয়ে চিৎকার করলেন।

১০ টা ৩২ মিনিট।

পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে। আসিফও খবর পেয়ে সেখানে গেল। কিন্তু গিয়ে যা দেখলো তাতে তো অবাক হলোই আর মনে অনেকগুলো প্রশ্ন তৈরি হলো। কাটা মাথাটি আর কারো না। এটা রায়হানেরই। কিন্তু আসিফ একটা জিনিস বুঝতে পারছে না যদি রনির মা ই রায়হানকে গুম করে তাহলে ওকে তো হত্যা করার কথা না। কারণ তাতে তো ওনার বানানো গল্পটা মিথ্যে হয়ে যাবে।

এদিকে রনির মা ঘটনাটা জেনে আবার কালকের সেই লোকটাকে ফোন করলো। ফোন করেই বলল,

– আজকের ঘটনা শুনেছো?

– হ্যা শুনলাম এইমাত্র। রায়হানকে খুন করেছে কেউ।

– কিন্তু কে খুন করেছে? আমরা তো রায়হানকে শুধু আটকে রাখতে বলেছিলাম। খুন করতে নয়।

– শুধু এই ঘটনাই না। নীলিমাকে খুন করার জন্য যাদের ঠিক করেছিলাম তাদেরও লাশ সেই জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছে।

– কী বলো? তাহলে নীলিমা কি বেঁচে আছে? আর এসব কে করলো?

– সেটাই তো বুঝতে পারছি না।

রায়হানের কাটা মাথা যেখানে পাওয়া গিয়েছিল তার পাশেই একটি আট তালা বিল্ডিংয়ের উপর থেকে কেউ একজন ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করছে। লোকটা আর কেউ না। সেই কালো অবয়বটি। তার চেহারা দেখা যাচ্ছে না। কিছুক্ষন পর কালো অবয়বটি মুচকি হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,

“দ্যা নাইটমেয়ার বিগিনস।”

(চলবে)

(কে ছিল এই কালো অবয়ব? আর রনির মায়ের সাথে ফোনে কথা বলা লোকটিও বা কে? জানতে হলে আইডিতে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়ে যুক্ত থাকুন।)

(আজকের পর্বটি পোস্ট করতে একটু লেট হয়ে গিয়েছে। কারণ আমি আজকে কাজের ব্যস্ততায় লেখার সময় পাই নি। তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দু:খিত।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here