আমি ফাইসা গেছি পর্ব ৯

0
589

#আমি_ফাইসা_গেছি(০৯)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

তোড়াকে কাঁদতে দেখে মিসেস চামেলি বেগম আর গোলাপ সাহেব বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগলেন মা কি হয়েছে তোর?এভাবে কাঁদছিস কেনো তুই?
কিন্তু তোড়া কিছু বলতে পারলো না তাদের।সে অনবরত কেঁদেই চলছে।

তোড়া মনে মনে ভাবতে লাগলো আর বলেই বা কি হবে?তার যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে।সব তার নিজের ভুলে হয়েছে।সে যদি জিদ করে সেদিন কুশানকে বিয়ে না করতো তাহলেই সে ভালো থাকতে পারতো।

এরকম মেরুদন্ডহীন কাপুরষ ছেলের সাথে থাকতে এখন তার দম বন্ধ হয়ে আসতেছে।তোড়া এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না এই ছেলের সাথে সে এতোদিন প্রেম করেছে।যাকে সে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছে সেই প্রেমিক তার স্বামী হয়েও আর হইলো না।যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না,নেড়ে কুকুরের মতো মা আর বোনের পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়ায়, তারা যেটা করতে বলে সেটাই শুধু করে,যার নিজের কোনো কথা বলার ক্ষমতা নাই তাকে দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা করছে না তোড়ার।তোড়া ফাইনাল ডিসিশন নিয়েই ফেললো সে আর যাবে না কুশানের বাড়িতে।সে কুশানকে সত্যি সত্যি ডিভোর্স দিবে।

হঠাৎ স্বর্ণা হাঁপাতে হাঁপাতে এলো তোড়ার রুমে।আর বললো,তোড়া আপু!তোড়া আপু!কুশান দুলাভাই কে আসতে দেখলাম।

চামেলি বেগম আর গোলাপ সাহেব জামাই আসার কথা শুনে খুশি হলেও তোড়ার শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুঁটতে লাগলো।
চামেলি বেগম আর গোলাপ সাহেব সেজন্য রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।কিন্তু বাহিরে গিয়ে দেখেন কুশান এখনো আসে নি।তবে তারা একজন ভ্যানওয়ালাকে দেখতে পেলেন।ভ্যানের উপর ছিলো হরেক রকমের ফলমূল আর মিষ্টান্ন।

কুশান বিয়ের পর আজ প্রথম বার শশুড়বাড়িতে এসেছে।সেজন্য সে ব্যাগভর্তি ফলমূল আর হরেক রকমের মিষ্টি কিনেছে।তার এগুলো বহন করতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো সেজন্য সে ভ্যান ভরে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছে।

কিছুক্ষন পর কুশান ও আসলো।

কুশান চামেলি বেগম আর গোলাপ সাহেব কে দেখামাত্র তাদের পা ধরে সালাম করলো।কিন্তু গোলাপ সাহেব কুশানকে তার বুকে টেনে নিয়ে বললো,বাবা কি করছো?এভাবে পায়ে সালাম করতে নেই।তুমি আমার একমাত্র জামাই,তোমার স্থান সবসময় আমার বুকে।এই বলে গোলাপ সাহেব কুশানকে তার বুকে টেনে নিলেন।এদিকে চামেলি বেগম জামাই কে দেখে তার জন্য খাবার দাবার রেডি করতে গেলো।একমাত্র জামাই তাদের।তাছাড়া তোড়ার কোনো ভাই বোনও নাই।সে
জন্য কুশানকেই এখন তারা তাদের ছেলে ভাবে।

কুশান আসার কথা শুনে হেনা বেগমও এগিয়ে এলেন।কুশান তখন তোড়ার দাদীকেও সালাম করলো।
হেনা বেগম তখন বললো,লাগবে না সালাম করা।যা ঘরে গিয়ে বস।তোড়া ওর রুমেই আছে।আর হ্যাঁ,কোনোদিনও আর ওকে এভাবে একা একা পাঠাবি না।নতুন বিয়ে তোদের।সেজন্য দুইজনকে এখন থেকে একসাথেই আসতে হবে।

কুশান দাদীর কথা শুনে মাথা নাড়লো।

কুশান সবার এমন ব্যবহার দেখে মনে মনে ভাবতে লাগলো তোড়ার ফ্যামিলির লোকজন তাকে কত ভালোবাসে!অথচ তার ফ্যামিলির লোকজন তোড়াকে সহ্য করতেই পারে না।কতভাবে তাকে অপমান করে।আর সেও অপদার্থের মতো চুপচাপ শুধু দেখে যায়।মা আর বোনদের মুখে মুখে উচিত জবাব কেনো সে দিতে পারে না?

কুশান এবার সোজা তোড়ার রুমে চলে গেলো।সে জানে তোড়া তাকে দেখে ডাইরেক্ট একশন শুরু করে দিবে সেজন্য কুশান রুমে ঢোকামাত্র আগে দরজা লাগিয়ে দিলো।

তোড়া কুশানকে তার রুমে দেখামাত্র একদম বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে গেলো।আর কুশানকে ইচ্ছামতো মারতে লাগলো।
কুশান কোনো প্রতিবাদ করলো না।এমনকি তোড়াকে থামানোর ও চেষ্টা করলো না।সে জানে তোড়া তাকে মারতে মারতে এমনিতেই ক্লান্ত হয়ে থেমে যাবে।
তোড়া কুশানকে চুপচাপ থাকা দেখে বললো, এই তোর কি লজ্জা শরম নাই?এইভাবে যে আমার হাতে মার খাচ্ছিস তবুও কিছু বলছিস না?তুই কি সত্যি পুরুষ মানুষ?
কুশান তখন বললো তোমার যত খুশি আমাকে আঘাত করো।যা মন চায় বলো। আজ আমি কিছুই বলবো না।কারণ এরপর থেকে তুমি অন্য কুশানকে দেখতে পারবে।

তোড়া তখন হাসতে হাসতে বললো,বিড়াল সবসময় ম্যাঁও ম্যাঁও করেই ডাকে।বিড়াল কি আর বাঘের গর্জন করতে পারবে?

–সেটা সময় হলেই দেখতে পারবে।

তোড়া তখন বললো আজেবাজে না বকে আগে বল কি জন্য এসেছিস এখানে?আমার বাড়িতে তোকে কে আসতে বলেছে?

কুশান তখন বললো আমি তোমার বাড়িতে কেনো আসতে যাবো?এটা আমার শশুড় বাড়ি।আমি আমার শশুড় বাড়িতে এসেছি।

কুশানের কথা যেনো শুনতেই ইচ্ছে করছে না তোড়ার।সে তখন রাগ করে বললো,যা বের হয়ে যা আমার রুম থেকে।শুধু রুম না তুই আমাদের বাড়ি থেকে এখনি এই মুহুর্তে চলে যাবি।এই বলে তোড়া দরজার ছিটকিনি খুলে কুশানকে বের করে দিলো।আর ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো,আর আসবি না কখনো এ বাড়িতে।আমি আর জীবনেও তোর মুখ দেখতে চাই না।

তোড়ার এমন পাগলামি দেখে চামেলি বেগম আর গোলাপ সাহেব চিল্লাতে লাগলো।আর বললো, এই মা কি করছিস এটা?পাগল হয়ে গেলি নাকি?
তোড়া তখন নিজেও চিল্লাতে চিল্লাতে বললো হ্যাঁ আমি পাগলই হইছি।তোমরা এই অপদার্থ টাকে কেনো এই বাড়িতে উঠতে দিয়েছো?ওকে চলে যেতে বলো প্লিজ।তা না হলে কিন্তু ওকে আমি খুন করবো।

গোলাম সাহেব তোড়ার এমন ব্যবহার দেখে সবার সামনে তোড়ার গালে কষে কয়েকটা চড় মারলো।আর বললো, কোনোদিন কিছু বলি না দেখে একদম মাথায় উঠে গেছিস।নিজের স্বামীর সাথে কেউ এরকম ব্যবহার করে?

তোড়া তখন কাঁদতে কাঁদতে বললো, ও আমার স্বামী হয় না।আমি ওকে স্বামী হিসেবে মানি না।ও একটা অপদার্থ, কাপুরুষ।এই বলে তোড়া কাঁদতে কাঁদতে তার রুমে চলে গেলো।

চামেলি বেগম আর গোলাপ সাহেব এবার কুশানের হাত ধরে বললো বাবা কিছু মনে করো না তুমি।আমার মেয়েটার একটু রাগ আর জিদ বেশি।ও একটুতেই রেগে যায়।এটা ওর ছোটোবেলার অভ্যাস।

কুশান তার শশুড় শাশুড়ির কথা শুনে চুপ করে রইলো।
তোড়ার বাবা তখন হঠাৎ করেই বললো,কি হয়েছে বাবা? ও এই বাড়িতে দেখি আসার পর থেকে কাঁদছে?কিছু বলছেও না,শুধু কেঁদেই যাচ্ছে,কেঁদেই যাচ্ছে।আর তোমাকেও কেনো জানি সহ্য করতে পারছে না।

কুশান তখন বললো একটু ঝামেলা হইছিলো আম্মু আর আপুদের সাথে।আমি ওর পক্ষে কথা বলি নি দেখে তাই রাগ করেছে আমার উপর।সেজন্য একা একা চলে এসেছে।আর বলেছে সে নাকি আর ফিরবে না ওই বাড়িতে।আমাকে নাকি সে ডিভোর্স দেবে।

চামেলি আর হেনা বেগম কুশানের কথা শুনে মাথায় হাত রেখে বললো,ছিঃ ছিঃ কি সব অলুক্ষনে কথা?বিয়ের সপ্তাহ না পুরতেই ডিভোর্সের কথা?

চামেলি বেগম কুশানের কথা শুনে সোজা তোড়ার রুমে চলে গেলো।আর বললো,মাত্র একদিন হইছে বিয়ে হয়েছে।আর তাতেই শশুড় বাড়ির লোকের সাথে ঝগড়া করে এসেছিস?তুই কি বড় হবি না কখনো?
এখন তোর বিয়ে হয়েছে।বাস্তবতা বুঝতে হবে তো এখন।

তোড়া তখন বললো, আমি যে শশুড় বাড়ি থেকে ঝগড়া করে এসেছি সেটা তোমাদের কে বললো? ওই হাদারাম টা বলেছে তাই না?

চামেলি বেগম তখন তোড়ার মুখে হাত দিয়ে বললো,তুই জামাই কে কি বলছিস এসব?কিসের হাদারাম?জামাই বাবাজি একটু সহজ সরল মানুষ।কথা কম বলে।তাই বলে তুই তাকে হাদারাম বলবি?

তোড়া তখন বললো, আম্মু তুমি এবার জামাই এর গুনগান গাওয়া থামাবে।তুমি শুনতে চাও ওই বাড়ির ইতিহাস?শুনলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে?

–কেনো?কি হয়েছে?

তোড়া তখন বললো সবাইকে ডাকো।আমি বার বার এক কথা সবাইকে বলতে পারবো না।আব্বু,দাদী,চাচা,চাচি সবাইরে ডাকো।আজ আমি তোমাদের ওই বাড়ির সবার কথা বলবো।তোমরা কোন পরিবারে আমাকে বিয়ে দিয়েছো যা শুনলে নিজেরা কিছুতেই ঠিক থাকতে পারবে না।

চামেলি তখন বললো আগে আমাকে বল।কি হয়েছে?

ঠিক তখনি কুশান আবার এলো রুমে।সে তখন চামেলি বেগম কে বললো, আম্মু আপনি একটু বাহিরে যাবেন প্লিজ।আমি একটু তোড়ার সাথে কথা বলতে চাই।

চামেলি বেগম তখন বললো, আচ্ছা বাবা।এই বলে চামেলি বেগম চলে যেতে ধরলে তোড়া বললো, আম্মু আমিও যাবো তোমার সাথে।আমি এই ছেলেটাকে কিন্তু মোটেও সহ্য করতে পারছি না।

কুশান তখন চামেলি বেগমের সামনেই তোড়ার হাত ধরে বললো, বিয়ে যখন করেছো তখন সহ্য করতেই হবে।আমার থেকে পালানোর আর কোনো উপাই নাই।

তোড়া তখন কুশানের হাত ঝাটকা দিয়ে ফেলে দিয়ে বললো,কুশান ভালো চাইলে চলে যাও আমার সামনে থেকে।আমি তোমার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না।

কুশান তখন বললো বলতেই হবে।
এই বলে দুইজনে আবার ঝগড়াঝাটি শুরু করে দিলো।

চামেলি বেগম তার মেয়ে আর জামাই এর এমন ঝগড়া দেখে ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।
কুশান তখন সাথে সাথে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলো।

তোড়া তখন বললো কুশান দরজা খোলো বলছি।সবার সামনে এটা কি ধরনের অভদ্রতা?এমন ভাব দেখাচ্ছো যে তুমি একজন পারফেক্ট স্বামী আমার।

কুশান তখন বললো,তোমার জন্য আমিই তো পারফেক্ট তোড়া?এই যে আমাকে এতো এতো মারো অন্য কোনো ছেলে হলে মারতে পারতে?উলটো তোমাকেই মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলতো।এই যে বকাবকি গুলো করো অন্য ছেলে হলে নির্ঘাত তোমাকে জ্যান্ত পুতে ফেলতো।এই আমি দেখে কিছু বলি না।

তোড়া তখন বললো আমার এতো ভদ্র ছেলে লাগবে না।যে অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে চুপচুপ বসে থাকে সেরকম ছেলে আমি চাই না।

কুশান তখন বললো, ওকে।আজ থেকে প্রতিবাদ করবো।এবার তুমি তোমার মাথাটা একটু শান্ত করো।তারপর আমার কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শোনো একটু।

–কিছুই শুনতে চাই না আমি।আর কিছু বুঝতেও চাই না।যা বোঝার সব বুঝে ফেলছি।আর যা করার এখন সে সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলছি।

কুশান তখন বললো,ঠিক আছে।তোমার যা মন চায় করো তুমি।এখন ঝটপট রেডি হয়ে নাও দেখি।আমি তোমাকে নিতে এসেছি।

–মানে কি কুশান?আমি কি যাওয়ার জন্য এসেছি নাকি?এতোকিছুর পরও কি করে ভাবলে আমি ওই বাড়িতে যাবো আবার?আমি যাবো না ওই বাড়িতে।
শুধু আমি না।আমার আব্বু আম্মুও আর পাঠাবে না।আমি সবাইকে সবকিছু বলেছি।

কুশান তখন বললো, আমি জানি তুমি এখনো আব্বু আম্মুকে কিছু জানাও নি।আশা করছি কিছু জানাবেও না।ওসব কথা শুনলে ওনারা ভীষণ মন খারাপ করবে।সেজন্য ওনাদের না জানানোই ভালো।
কুশান এবার তোড়ার হাত ধরে বললো,আম্মু আর আপুরা তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।আমি কি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি কখনো?তাহলে ওদের করা রাগ আমার উপর ঝাড়ছো কেনো?

তোড়া তখন বললো, তোমার আম্মু আর আপুরা আমাকে অপমান করবে আর সেটা আমি বসে থেকে শুনবো?যে বাড়িতে আমার কোনো দাম নেই, যে বাড়িতে আমি আমার স্বাধীন ভাবে চলতে পারবো না সে বাড়িতে যাবো না আমি।

কুশান তখন তোড়ার দুই হাতে তার নিজের হাত রেখে বললো,এখন থেকে তোমার যেভাবে মন চায় তুমি সেভাবেই চলবে।চলো আমার সাথে।এরপর থেকে কেউ কিছু বললে আমি প্রতিবাদ করবো।এই যে কথা দিলাম।

তোড়া তখন কুশানকে ধাক্কা দিয়ে বললো,লাগবে না প্রতিবাদ করা।আমি বলেছি যাবো না তো যাবো না।আমার তোমার মতো হাদারাম স্বামী চাই না,আর তোমাদের মতো এমন আজগুবি ফ্যামিলিও চাই না।

হঠাৎ হেনা বেগম তোড়া তোড়া বলে ডাকতে লাগলো।আর বললো,কি রে তোদের কি কথা বলা শেষ হয় নি?একটু বাহিরে আয় দেখি।
কুশান দাদীর ডাক শুনে নিজেই খুলে দিলো দরজা।

হেনা বেগম রুমে প্রবেশ করেই তোড়াকে বললো,ঘরের দরজা লাগিয়ে স্বামীর সাথে গল্প করলেই কি স্বামীর পেট ভরবে?না তাকে কিছু খেতে দিতে হবে?চল কুশান,আর তোড়া তুই ও আয়।এই বলে দাদী দুইজনেরই হাত ধরে বাহিরের রুমে নিয়ে গেলো।

চামেলি বেগম জামাই আসার কথা শুনে আগেই সবকিছু রান্না করে রেখেছেন।কুশান এতো এতো আয়োজন দেখে বললো, আম্মু,কতদিন ধরে এসব রান্না করেছেন?

চামেলি বেগম সেই কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো, দূর বোকা ছেলে?কত দিন ধরে রাঁধতে যাবো কেনো?তুমি যখন ফোন করে বললে আসতেছো তখন থেকে রান্না করা শুরু করেছি।

–এতো খাবার আমি কত বছরে শেষ করবো?

চামেলি বেগম তখন হাসতে হাসতে বললো,বসো তাড়াতাড়ি। খেয়ে নাও।তোমার যতক্ষন মন চায় ততোক্ষনই খাবে।

কুশান তখন বললো আব্বু কোথায়?আব্বু কে ডাক দিন।

চামেলি বেগম তখন বললো তোমার শশুড় একটু বাজারে গেছে বাবা।তুমি খেয়ে নাও।
তোড়া মুখ গোমড়া করে আছে।সে যে কাউকেই তার কষ্ট বোঝাতে পারছে না।কুশান তার পরিবারের সাথে এমনভাবে আচরণ করছে মনে হচ্ছে কিছুই হয় নি।সে যেনো স্বামীর সংসারে বেশ সুখেই আছে।

তোড়াকে চুপচাপ দেখে কুশান তার মুখে খাবার তুলে দিয়ে বললো, খাও।ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?আম্মু কি শুধু আমার একার জন্য রান্না করেছে?তোমার জন্যও তো করেছে।

তোড়া কুশানের এমন কান্ড দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো।কুশান তার মা আর দাদীর সামনে করছে টা কি?

অন্যদিকে চামেলি বেগম লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো আম্মা আপনি একটু কুশান বাবাকে খাবার বেড়ে দিয়েন।আমার একটু কাজ আছে।এই বলে চামেলি চলে গেলো।

হেনা সেই কথা শুনে বললো আমাকেও থাকতে হবে না।ওরা দুইজন একা একাই নিতে পারবে।এই বলে হেনা বেগমও চলে গেলো।

সবাই চলে যাওয়ার পর তোড়া বললো,আমার বাড়িতে এসে কি বউ এর দরদ উছলে উছলে পড়তেছে?আম্মু আর দাদির সামনে খাবার তুলে দিলে কেনো মুখে?

কুশান তখন বললো সবাইকে বোঝাতে হবে না জামাই তাদের মেয়েকে কতখানি ভালোবাসে?

তোড়া কুশানের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে উঠে দাঁড়ালো।কুশান তখন বললো দাঁড়ালে কেনো?কিছুই তো খেলে না?

তোড়া তখন বললো সবাইকে তো দেখালেই কত ভালোবাসো আমায়।আর কি জন্য থাকতে হবে এখন?
কুশান তখন নিজেও দাঁড়ালো।আর বললো,তোড়া আমি তোমাকে কিন্তু লোক দেখানো ভালোবাসি না।আমি সত্যি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি।প্লিজ রাগ করে থেকো না আর।তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে আমার সাথে চলো।

তোড়া কুশানের কথা না শুনে আবার তার রুমে চলে গেলো।

এদিকে চামেলি বেগম কামিনীর কাছে কল করলো।চামেলি চাইছিলো তোড়া আর কুশান কিছুদিন এখানেই থাক।পরে কুশানের পরিবারের লোকজন যেনো সময় সুযোগ বুঝে এদের দুইজনকে এসে নিয়ে যায়।সেজন্য দাওয়াত দেওয়ার জন্য কল করলো চামেলি।কিন্তু চামেলি তো আর জানে না কুশান কাউকে না বলেই শশুড় বাড়ি এসেছে।

চামেলি অনেক কয়বার কল দিলো কামিনী কে। কিন্তু কামিনী রিসিভ করলো না কল।চামেলি সেজন্য এবার জারিফ চৌধুরীর কাছে কল দিলো।জারিফ চৌধুরী কল রিসিভ করতেই কামিনী বললো,
আসসালামু আলাইকুম,বিয়াই সাহেব।কেমন আছেন?
জারিফ চৌধুরী তখন নিজেও হেসে উত্তর দিলো ওয়ালাইকুম আসসালাম বিয়াইন।জ্বি ভালো আছি।

চামেলি তখন বললো কুশান আর তোড়া যখন এসেছেই তাহলে কিছুদিন একটু থেকে যাক এখানে।

জারিফ চৌধুরী চামেলি বেগমের কথা শুনে বললো কুশান আপনাদের বাড়ি গিয়েছে?

–হ্যাঁ।কেনো আপনাদেরকে বলে আসে নি কুশান?

–হ্যাঁ হ্যাঁ বলেছে।ও আমাকে না বলে কোথাও যায় না।

চামেলি তখন বললো বেয়াইন কই বিয়াই সাহেব?একটু দিন না ফোন টা।

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো যা বলার আমাকেই বলেন বেয়াইন।ও একটু ব্যস্ত আছে।

চামেলি তখন বললো দুই তিন দিন পরে বেয়াইন কে সাথে করে নিয়ে তোড়াকে নিয়ে যায়েন।অগ্রিম দাওয়াত দিলাম কিন্তু।

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো আমরা একটু ব্যস্ত আছি বেয়াইন।কুশান একাই নিয়ে আসতে পারবে।

–সেটা হয় নাকি বেয়াই?আপনাদের বাড়ি থেকে যে কাউকে আসতেই হবে।

–আচ্ছা দেখছি।

চামেলি বেগম তখন বললো ইরা,মিরা লিরা মা রা কই?ওদের কে না হয় আসতে বলেন।বা শাহিন,মাহিন,তুহিন বাবারা এলেও হবে।

হঠাৎ কামিনী প্রবেশ করলো রুমে।জারিফ চৌধুরী কে কথা বলা দেখে বললো,
এভাবে ফিসফিস করে কার সাথে কথা বলছো?

জারিফ চৌধুরী কামিনীর কন্ঠ শোনামাত্র কল কেটে দিয়ে বললো,কই কার সাথে কথা বলছি?

কামিনী তখন বললো ফোনটা একটু দাও তো।

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো তুমি এই বয়সে এসেও কি আমাকে সন্দেহ করছো?এখন কি আমার প্রেম পিরিতি করার বয়স আছে?

কামিনী জারিফ চৌধুরীর কথা শুনে বললো,দিন দুপুরে কি ভুলভাল বকছো?আজ আবার কিছু গেলো নি তো?

–তাহলে ফোন চাচ্ছো কেনো?

কামিনী তখন জারিফ চৌধুরীর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বললো,আমার বাবু সোনাকে একটু কল করবো।বন্ধুদের সাথে পিকনিকে গেছে।দেখি এখন কতদূর?

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো, আমি কথা বলেছি।এখনো পৌঁছে নি।এই বলে জারিফ চৌধুরী তার ফোন টা কেড়ে নিলো কামিনীর থেকে।

–তুমি কথা বললে হবে নাকি?দাও ফোন টা?এই বলে কামিনী আবার জারিফ চৌধুরীর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো।

জারিফ চৌধুরী তখন আবার ফোন টা কামিনীর থেকে নিয়ে নিলো।আর বললো, আমার ফোনে টাকা নাই তো।কি দিয়ে কথা বলবে?

কামিনী তখন বললো, জারিফ?ব্যাপার কি?তোমাকে আজ কেনো জানি অন্যরকম লাগছে?হয়েছে টা কি?আজ বেশ উচ্চস্বরে কথা বলছো আমার সাথে?আর বার বার ফোন কেড়ে নিচ্ছো?

জারিফ চৌধুরী তখন বললো, তা কি সারাজীবন শুধু নিচু গলাতেই কথা বলবো?আমাকে তো স্বামী হিসেবে একটুও মূল্যায়ন করো না।সেজন্য আজ তোমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে আমার সাহস দেখালাম।এই বলে জারিফ চৌধুরী রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

কামিনী কিছুই বুঝতে পারলো না।আজ হঠাৎ জারিফের কি হলো?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here