আমি ফাইসা গেছি পর্ব ১০

0
611

#আমি_ফাইসা_গেছি(১০)
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

তোড়া কুশানদের ফ্যামিলি সম্পর্কে বলতে ধরেও আর বলতে পারলো না।কারণ কুশান বার বার তোড়াকে রিকুয়েষ্ট করতে লাগলো সে যেনো কাউকে কিছু না বলে।তাকে যেনো তোড়া আরেকবার সুযোগ দেয়। পরবর্তীতে তার ফ্যামিলির লোকজন কিছু বললে কুশান নিজে নাকি তোড়ার হয়ে প্রতিবাদ করবে।তোড়া এখন বুঝতে পারছে না সে করবে টা কি?সে কি কুশানকে আরেকটিবার সুযোগ দিয়ে দেখবে?
তবে তোড়া তার ফ্যামিলির লোকজনদের কিছু না বললেও কুশানের সাথে সে কিছুতেই গেলো না। কুশান হাজার চেষ্টা করেও তোড়াকে আজ নিয়ে যেতে পারলো না।সেজন্য এক প্রকার বাধ্য হয়েই কুশানকেও আজ তোড়াদের বাড়িতেই থাকতে হলো।

জারিফ চৌধুরী এবার কামিনীর থেকে একটু দূরে সরে গেলো।আর তাড়াতাড়ি করে কুশানকে কল দিলো।
কুশান কল রিসিভ করতেই জারিফ চৌধুরী বললো,
বাবা তুমি কোথায় আছো এখন?

কুশান সাথে সাথে উত্তর দিলো এই তো আব্বু গাড়িতেই আছি। এখনো পৌঁছি নি।

জারিফ চৌধুরী সেই কথা শুনে বললো,তা পৌঁছাবা কেমনে?তুমি তো পিকনিকেই যাও নি।

কুশান তখন বললো, কে বললো তোমাকে?

জারিফ চৌধুরী এবার কুশানকে ধমক দিয়ে বললো,আমাকেও মিথ্যা কথা বলেছিস কুশান?তুই তো তোড়াদের বাড়িতে আছিস এখন।

কুশান তখন বললো তুমি তাহলে জেনে গেছো আব্বু?

–হ্যাঁ জেনে গেছি।তোড়ার আম্মু কল করে বলেছে।তিনি আমাদের কে দাওয়াত দিলেন আমরা যাতে সবাই মিলে গিয়ে তোদের নিয়ে আসি।

কুশান তখন বললো আম্মুও কি তাহলে জেনে গেছে?

–না জানে না।তোর আম্মুকে আমি বলি নি।তা এতো বড় সাহস কই পেলি কুশান?কাউকে কিছু না বলে কোন সাহসে একা একা চলে গেছিস?আমাকে তো একটিবার বলতে পারতিছ?

কুশান তখন বললো,তোমাকে বলা মানে আম্মু জেনে যাওয়া।সেজন্য বলি নি।
তখন দেখলে না কিভাবে আম্মু আর আপু সাফ জানিয়ে দিলো তারা নাকি আর তোড়াকে এ বাড়িতে ঢুকতে দেবে না।আমাকে নাকি আবার বিয়ে করাবে।সেজন্য আর দেরী না করে নিজেই নিতে আসলাম তোড়াকে।

জারিফ চৌধুরী তখন বললো ভালো করেছিস বাবা।
ওকে একটু ভালো করে বুঝিয়ে কালকের মধ্যেই নিয়ে আসিস।

কুশান তখন বললো হ্যাঁ আব্বু চেষ্টা করছি।কিন্তু ওকে তো কিছুতেই রাজি করাতে পারছি না।তবে ও তার আব্বু আম্মুকে এখনো কিছুই বলে নি।

জারিফ চৌধুরী তখন বললো,তোড়াকে আবার এই বাড়িতে দেখে কামিনী আরেকটা তুলকালাম শুরু করে দিবে।সামলাতে পারবি তখন?

–ও নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না আব্বু।আমি সামলাতে পারবো।পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।
তাছাড়া আম্মু আমাকে কতখানি ভালোবাসে তা তো তুমি জানোই।তোড়ার হয়ে কথা বললে হয়তো আম্মু একটু মন খারাপ করবে।আমার উপর রাগারাগি করবে।এর বেশি আর কি করবে?

জারিফ চৌধুরী এবার বললো,
তোর আম্মু তো এদিকে যুথিকে আনিয়েছে বাসায়।আমাকে আবার বলছে রুবাইয়াকেও ডাক দিতে।তোর আম্মু যে কেনো এরকম করছে সত্যি আমার মাথাতেই ঢুকছে না।

–আম্মু যুথিকেই আনুক আর রুবাইয়াকেই আনুক আমার তাতে কি।আমি যদি তোড়াকে না ছাড়ি।আমি যে করেই হোক তোড়াকে ম্যানেজ করতিছি।এই বলে কুশান কল কেটে দিলো।
?
তোড়া বিছানায় শুয়ে আছে।আর কুশান তোড়ার রুমের মধ্যে পায়চারি করছে।সে কিছুতেই তোড়ার সাথে কথা বলার সাহস খুঁজে পাচ্ছে না।এমনিতেই তোড়া যে চেঁতে আছে এখন কিছু বলা মানে তার রাগ আরো দ্বিগুন হয়ে যাওয়া।সেজন্য তোড়ার সাথে যত কম কথা বলা যায় ততই কুশানের জন্য ভালো।

কুশান হঠাৎ করে একা একাই বলতে লাগলো,কেনো যে সেদিন ভুল করে আমার বিকাশ একাউন্টে তোমার টাকা এসেছিলো?আর কেনোই যে সেই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য তুমি আমাকে কল করলে?আর কেনোই বা আমরা সেই থেকে রোজ রোজ কথা বলা শুরু করলাম?
আর কি দরকার ছিলো দেখা করার?দেখা না করলেই ভালো হতো।তাহলে তো আর দুইজন দুইজনার প্রেমে পড়ে যেতাম না।ওই দিন দেখেই তো একেবারে ফেঁসে গিয়েছিলাম।কে জানতো এই রুপের আড়ালে ভয়ংকর একটা চেহারা লুকিয়ে আছে?কে জানতো এই শান্ত শিষ্ট ভদ্র মেয়েটি কথায় কথায় শুধু রাগ করবে আর উঠতে বসতে আমাকে মারবে?

তোড়া হঠাৎ বিছানা থেকে নেমে এসে কুশানের শার্টের কলার টেনে ধরে বললো, কি বললি?আরেকবার বল?
কুশান তখন বললো কই কি বললাম?আমি তো জাস্ট সেই প্রথম দিনের কথা মনে করছিলাম।যেদিন প্রথম তুমি আমার সাথে দেখা করতে আসলে কি সুন্দর সেজেগুজে এসেছিলে, এখনো সেই নিষ্পাপ চেহারাটা চোখের সামনে ভাসছে আমার।কি মায়াবি কন্ঠ?তোমার কি মনে আছে সেদিন তুমি আমাকে ভাইয়া বলে ডেকেছিলে?
বলেছিলে ভাইয়া আপনাকে আমি কি বলে ডাকবো?তুমি বলবো না আপনি বলবো?
আমার সেদিন না ভীষণ হাসি বের হয়েছিলো।

তোড়া কুশানের কথা শুনে তার মোবাইল টা হঠাৎ মেঝেতে ফেলে দিয়ে বললো,
এই যন্ত্র টাই আমার যন্ত্রণার মূল কারণ।এই শালা না থাকলে আজ আমার কপালে এতো দূঃখ হতো না।এই শালার জন্য আজ আমার এমন একটা গাধার সাথে পরিচয় হয়েছে।যে গাধার কোনোই বুদ্ধি নাই,যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না,আস্ত একটা মাকাল ফল যে,যার শুধু বাহিরের এই চেহারা খান,ভিতরে যার কিছুই নাই,একদম শূন্য যে।এই বলে তোড়া আবার কুশানের শার্টের কলার টেনে ধরলো।আর বললো,
তুই সেদিন বোধ হয় আমাকে বশ করেছিলি?তা না হলে আমি কোন দুঃখে তোকে দেখে পাগল হইছিলাম?আমি এতো টা বোকা কেনো ছিলাম?এখন তোরে দেখলে আমার পুরো শরীর রাগে গরম হয়ে যায়।

কুশান তখন তোড়ার কোমড়ে ধরে তার দিকে হেঁচকা টেনে ধরে বললো,
আমাকে এখন একটুও ভালো লাগে না?দেখলেই রাগ উঠে যায়?খুন করতে ইচ্ছে করে?তাহলে করে ফেলো খুন।জীবনে তো ভালো কিছুই করতে পেলাম না অন্তত সংবাদ শিরোনামের হেডলাইন হয়ে যাই।
বউ এর হাতে স্বামী খুন।

তোড়া কুশানের প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে তার কোমড় থেকে কুশানের হাত সরিয়ে দিতে লাগলো।কুশান তখন তোড়াকে আবার তার কাছে টেনে নিলো আর বললো,
তোড়া!পারিবারিক কলহ থাকবেই।একটা পরিবারের সবাই কিন্তু এক হয় না।আমি তো ঠিক আছি তাই না?আমি কি তোমাকে কখনো অপমান করেছি?সবকিছু ভুলে যাও প্লিজ।প্লিজ।হাত জোড় করে রিকুয়েষ্ট করছি।

তোড়া তখন বললো কি ভুলবো কুশান?তুমি তো একটা দুইটা ভুল করো নি?একের পর এক ভুল করেই যাচ্ছো।আর আমি কোনো ভুল করতে চাই না।

–আমার থেকে দূরে থাকতে পাড়বে তুমি?আমাকে না তুমি ভালোবাসো?তুমি না প্রতিজ্ঞা করেছিলে মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তোমার নাকি আমাকেই শুধু চাই।

তোড়া কুশানের কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো, সেই জন্যই তো বললাম কত বোকা ছিলাম আমি?আর কত সহজে তোমাকে বিশ্বাস করে আপন করে নিয়েছি।আমি যে কুশান কে চিনি আর এখন যে কুশানকে দেখছি দুইজন সম্পূর্ণই আলাদা টাইপের।আমি যে কুশানকে ভালোবাসতাম সে আমার থেকেও দ্বিগুন ভালোবাসতো আমাকে।কিন্তু তুমি তো সেই কুশান নও।তোমার চোখের সামনে তোমার পরিবারের লোকেরা আমাকে যা নয় তাই বলছে আর তুমি তা চুপচাপ শুধু শুনছো।কোনো প্রতিবাদই করছো না।আমি কার জন্য ওই বাড়িতে যাবো?

কুশান তখন বললো আমাদের মাত্র বিয়ে হয়েছে তোড়া।এখনি যদি প্রতিবাদ করি সবাই আমাকে সন্দেহ করবে।কেউ তো আর জানে না আমরা দুইজন প্রেমিক প্রেমিকা।দুই এক দিন যেতে দাও। তারপর যদি আমি কিছু না বলি তখন রাগ করে থাকিও।তোমার যা মন চায় করিও।

তোড়া তখন বললো তোমাদের পরিবারের কোনো মানুষ ই তো সুস্থ নয়।মনে হচ্ছে সবাই মানসিক রোগী।এই পরিবারে থাকলে নিশ্চিত আমিও একদিন পাগল হয়ে যাবো।তুমি প্লিজ ভুলে যাও আমাকে।আমি আর কখনোই তোমাদের ঐ বাড়িতে যাবো না।

কুশান তখন বললো তাহলে কি আমি একা একাই চলে যাবো?

–হ্যাঁ।

–তার মানে তুমি সত্যি সত্যি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাচ্ছো?

–হ্যাঁ।

–তারপর কি করবে?

–সেটা সময় হলেই দেখা যাবে।

কুশান এবার তোড়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো কিন্তু আমি তো তোমাকে ছাড়বো না।একবার যখন বিয়ে হয়েছেই আমাদের তাহলে আর কারো শক্তি নাই আমাকে তোমার থেকে আলাদা করার।এই বলে কুশান জোড় করেই তোড়াকে কোলে ওঠালো।তোড়া তখন চিৎকার করে বললো কুশান ছাড়ো আমাকে।বাহিরে সবাই আছে।

–না ছাড়বো না।সবার সামনেই তোমাকে নিয়ে যাবো বাড়িতে।

তোড়া তখন বললো, প্লিজ কুশান ছেড়ে দাও আমাকে।আব্বু আম্মু দাদীরা দেখলে কি হবে?তাছাড়া পাড়াপ্রতিবেশিরা নানা ধরনের কথা বলবে কিন্তু।

–কেউ কিছুই বলবে না।তাছাড়া আমার বউকে আমি কোলে করে নিয়ে যাবো না ভ্যানে করে নিয়ে যাবো সেটা আমার ব্যাপার।এই বলে কুশান দরজা খুলে বের হলো।

তোড়া তখন চিৎকার করে বললো,আচ্ছা যাবো আমি।এখন ছেড়ে দাও।

–আগে কথা দাও।তারপর বিশ্বাস করবো।

তোড়া তখন বললো দিলাম কথা।নামাও এখন।

এরই মধ্যে দাদী এসে গেলো কুশানের সামনে।কুশান দাদীকে দেখামাত্র তাড়াতাড়ি করে নেমে দিলো তোড়াকে।

দাদী হঠাৎ কুশান আর তোড়ার হাত ধরে তার রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসালো আর বললো এবার সত্য করে বল দেখি তোদের মধ্যে কি হয়েছে?আমি কিন্তু বুঝতে পারছি তোদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক নাই।আর এটাও বুঝতে পারতিছি তোড়া রাগ করে চলে এসেছে এখানে।
আমি তো তোদের দুইজনেরই দাদী হই।তোরা আমার কাছে সব কথা শেয়ার করতেই পারিস।তোদের সমস্যা টা কোন জায়গায়?আর হয়েছে টা কি?

দাদীর প্রশ্ন শুনে কুশান আর তোড়া দুইজন দুইজনার দিকে তাকালো।কিন্তু কেউ কিছুই বললো না।

দাদী তখন বললো ওভাবে কি দেখছিস?আমার দিকে তাকিয়ে কথা বল।কিছু না বললে আমি বুঝবো কি করে?আর তোদের সমস্যার সমাধানই বা করবো কি করে?

তোড়া এবার আর চুপ থাকলো না।সে তখন বললো, দাদী!কুশানের আম্মু আর বোনদের ব্যবহার খুবই বাজে।তারা আমার সাথে বাজে ব্যবহার করে।

দাদী তোড়ার কথা শুনে বললো,একদিনেই সেটা বুঝে গেলি তুই?আরো কিছুদিন গেলে তবেই না বুঝতে পারতিছ?

তোড়া তখন বললো দাদী তুমি বুঝতে পারছো না ব্যাপার টা।এরা আমাদের মতো স্বাভাবিক মানুষ না।এরা খুবই নিকৃষ্ট।যারা নতুন বউ কে প্রথম দিনই যা নয় তাই বলে,নানাভাবে অপমান করে তারা কি করে সুস্থ মানুষ হতে পারে?
এই বলে তোড়া সমস্ত ঘটনা খুলে বললো দাদীকে।

কুশান তো লজ্জায় একদম নিচ মুখ হয়ে থাকলো।সে এখন মুখ দেখাবে কি করে সবার সামনে?

দাদী তোড়ার কথা শুনে একদম আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে গেলো।তোড়া এসব কি বলছে?এই জঘন্য পরিবারে তারা তোড়ার বিয়ে দিয়েছে?দাদী তো ভেবেছিলো এমনিতেই দুইজনের মনোমালিন্য হয়েছে কিন্তু এটা তো খুবই সিরিয়াস ব্যাপার।

দাদী তখন কুশানের মাথা উপর করে বললো,কি রে তুই কিছু বলিস না তোর মা আর বোনদের?তারা কেনো এরকম করছে তোড়ার সাথে?

কুশান কিছু বলার আগেই তোড়া বললো,তুমি এই প্রশ্ন একে করছো?এই তো একদম হাদারাম দাদী।যাকে বলে নাম্বার ওয়ান বলদ।ওর মাও এখনো ওকে ফিডার খাওয়ায়।মায়ের আঁচলের তলে তলে যে ছেলে ঘুরে বেড়ায় সে কিসের প্রতিবাদ করবে?ও যদি ঠিক থাকতো তাহলে আমি কখনোই এভাবে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতাম না দাদী।যে মানুষটার জন্য আমি আমার পরিবার কে ছেড়ে অন্য একটা বাড়িতে গিয়ে থাকবো সেই মানুষ ই যদি ঠিক না থাকে তাহলে কি করতাম আমি?তুমিই বলো।

কুশানকে চুপচাপ থাকা দেখে দাদী বললো, কি রে কথা বলিস না কেনো?তোড়া যা বলছে তা কি ঠিক?

কুশান তখন বললো দাদী মাত্র বিয়ে হয়েছে আমাদের।এই একদিনে আমি কি প্রতিবাদ করবো?তাছাড়া আমার আম্মু আর বোনদের মুখের উপর কখনোই কোনো কথা বলি নি আমি।সেজন্য আমার তো একটু সময়ের প্রয়োজন।যে ছেলে তার মা আর বোনদের চোখের দিকে তাকিয়ে কখনোই কথা বলতে পারে নি সে একদিনেই কি প্রতিবাদ করবে?

দাদী তখন বললো, তাই বলে তুই কিছুই বলবি না?আমার তো এখন নিজেরই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।ইচ্ছা করছে তোরে এখনি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই।চামেলি আর গোলাপ শুনলে তো তোড়াকে আর কখনোই ও বাড়িতে যেতে দিবে না।আর তোকে তো একদম জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে।

কুশান তখন দাদীর পায়ে পড়ে বললো,দাদী প্লিজ ওনাদের কিছু বলো না।প্লিজ দাদী।

দাদী তখন কুশানকে বললো, পা ছেড়ে দে কুশান।কান্নাকাটি করে কোনো লাভ নাই।যদি ভালো চাস তাহলে চলে যা এ বাড়ি থেকে।এতোকিছু শোনার পর কোনো পরিবারই তাদের মেয়েকে আর পাঠাতে চাইবে না।আমাদের মেয়ে কি বেশি হইছে?ওকে যদি তোরা খুন করিস?বা আমাদের মেয়েই রাগ করে যদি খারাপ কিছু করে তখন আমরা মেয়ে পাবো কোথায়?তুই চলে যা ভাই।গোলাপের কানে যদি এই কথা যায় তাহলে গোলাপ কিন্তু তোকে আর বেঁচে রাখবে না।

কুশান তখন আবার দাদীর পায়ে পড়লো।প্লিজ দাদী এবারের মতো ক্ষমা করে দাও আমাকে।আর কখনোই কেউ তোড়াকে অপমান করতে পারবে না।আমি এবার নিজে প্রতিবাদ করবো।আমি ওকে ভালোবাসি দাদী।আর আমাদের কিন্তু এক বছরের রিলেশন। প্লিজ দাদী।

হঠাৎ গোলাপ সাহেব আর তোড়ার কাজিন সায়ক আসলো দাদীর রুমে।সাথে সায়কের বন্ধুরাও আছে।সায়ক রুমে ঢুকেই হঠাৎ কুশানকে হেঁচকা একটা টান মেরে কয়েকটা কষে চড় মারলো।আর তার বন্ধুদের বললো,শালারে আগে ভালো করে বেঁধে রাখ।তারপর যার যেমন মন চায় তেমন করেই মারবি।আমাদের বাড়ির মেয়ের সাথে ফাজলামি?

গোলাপ তখন বললো বাবা সায়ক আগেই মারধর করো না।আগে ওর পরিবারের লোকদের খবর দাও।যখন সবাই আসবে তারপর সবাইরে একসাথে মিলে উচিত শিক্ষা দিও।

কুশান তখন বললো আব্বু কি করেছি আমি?কেনো এরকম করছেন?

–চুপ থাক।কে তোর আব্বু?তোরা ভেবেছিস আমরা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আর কোনো খবর নেই নি?মাত্র এক দিন হলো বিয়ে হয়েছে।আর তোরা আমার মেয়ের উপর নির্যাতন শুরু করে দিয়েছিস?বাড়িতে পুলিশ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিস।তোর মা নিজেই নিজের হাত কেটে আমার মেয়ের নামে নালিশ করে।কত বড় ছোটো লোকের বাচ্চা তোরা?আমার ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।এই বলে গোলাপ ও কয়েকটা চড় মারলো কুশানকে।
আর বললো,যে পুলিশ কে তোরা নিয়ে গিয়েছিস সে আমার বন্ধু হয়।আমার মেয়েকে সে ভালো করেই চেনে।সে চাইলে সাথে সাথে একশন নিতে পারতো। কিন্তু সে সেটা করে নি।বরং আমাকে জানিয়েছে।এখন আমি যা সিদ্ধান্ত দিবো ও সেটাই করবে।তুই যখন নিজেই এসেছিস আমাদের বাড়িতে এখন তোর পুরো পরিবারও নিশ্চয় আসবে।সবকয় টারে একসাথে হাজতে ঢুকাবো।আমার মেয়ের সাথে ফাজলামি মারাও তোমরা?

কুশান আর একটা কথাও বললো না।কারণ তোড়ার ফ্যামিলির লোকজন তো আর ভুল বলছে না।সে চুপচাপ সবার মার সহ্য করলো।

সায়ক আর তার বন্ধুরা কুশানের হাত পা বেঁধে রাখলো।আর সায়ক কুশানকে মারতে লাগলো।

কুশানের এ অবস্থা দেখে তোড়ার বুকটা কেমন যেনো হু হু করে কেঁদে উঠলো।কুশান যত অপরাধই করুক না কেনো সে তো তার ভালোবাসার মানুষ হয়।আর এখন কুশান তার স্বামী।সে রাগ করে অনেক কথা বললেও আজ কুশানের এমন অবস্থা দেখে তোড়া কাঁদতে কাঁদতে বললো,ভাইয়া ওকে আর মেরো না।প্লিজ ছেড়ে দাও ওকে।ওর কোনো দোষ নাই।ও খুবই সহজ সরল মানুষ।

গোলাপ তখন বললো, না। কোনো ছাড়াছাড়ি নাই।আগে ওর বাবা মাকে ফোন লাগা সায়ক।দেখি কত বড় সেয়ানা তারা?আজ সকল কে একসাথে বেঁধে রেখে পিটাবো।তারপর পুলিশে দেবো।

সায়ক গোলাপ সাহেবের কথা শুনে কুশানকে বললো,তোর ফোন কই?ফোন বের কর?এই বলে সায়ক নিজেই কুশানের শার্টের পকেট থেকে ফোন বের করলো। আর জারিফ চৌধুরী কে কল দিলো।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here